আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শৈশবের ট্রেন ও স্বপ্নেরা ...

শৈশবের ট্রেন প্রতিটি মানুষের মধ্যে মাত্র একবারের জন্য হলেও, শৈশবে ফিরে যাওয়ার এক সলাজ আকুতি থাকে। স্বপ্নের প্রকট আকালেও, ঘুমহীন পথচলাতে,- সামনে এসে দাঁড়ায় রেল ক্রসিং, সিগন্যালে লাল বাতি জ্বালিয়ে- শৈশবের সবুজ ট্রেনটা ঝন ঝন ঝড়ো গতিতে দিগন্তে মিলিয়ে যায় ... বেঁচে থাকার মধুচন্দ্রিমা ছেলেবেলা পেরিয়ে, মধ্যাহ্নের কোন এক রোদেলা স্টেশনে নেমে, জনঅরণ্যে পথ হারিয়ে ফেলার পর থেকেই ;- মিলনের প্রথম শয্যায় আর কখনও ফিরতে না পারার মতন ... ছুড়ে দেওয়া ভুল তীরের পেছনে ছুটতে ছুটতে হেরে যাওয়ার মতন ... কেটে যাওয়া কোন ঘুড়ির লাটাইয়ে ফিরতে না পারার মত ... শত চেষ্টাতেও আমি কখনও আর স্টেশনটা খুঁজে পেলামনা ! শুধু এই সব দিন রাত্রির মাঝে আমার এই বেলা অবেলার পথ চলাতে, সামনে এসে দাঁড়ায় সেই রেল ক্রসিং, সিগন্যালে লাল বাতি জ্বালিয়ে,- শৈশবের ট্রেনটা সবুজ টিয়া পাখি হয়ে, ঝন ঝন ডানা মেলে উড়ে যায়। শৈশবের স্বপ্নেরা ... খুব ছোটবেলায়, তখন আমরা বেনাপোল থাকি। ছয়, সাত বছর বয়স। আমরা একটা একতলা পুরনো বাড়িতে থাকতাম ।

বাড়ির সাথে একটু উঠান। পেছনের গেট বের হলে একটা পুকুর, ঐ পুকুরেই আমি প্রথম সাঁতার শিখেছি। বাড়ির সামনে একটু জায়গা ছেড়ে বেনাপোল সড়ক। দুইপাশে অনেক বছরের পুরনো সব শিশু গাছ। গাছগুলোর গায়ে পরগাছা ছেয়ে গেছে,দেখে বুড়ো মানুষের লোম মনে হয়।

অনেক হনুমান আসত তখন। বাড়ির পেছনে একটা নোংরা জায়গা,ময়লা আবর্জনা ফেলা হয়, গাছপালা আছে। ওখান থেকে মাঝে মাঝে রাতের বেলা পিচাশ বের হত। আমি কখনও পিচাশ দেখিনি। তবে পিচাশ যে খুব ভয়ংকর শ্রেণীর নোংরা একটা ভুত ছিল এটা জানতাম।

যে রাতে সবাই বলত যে পিচাশ বের হয়েছে, তখন যে ভয়ে কেমন সিঁটিয়ে থাকতাম! যে বাড়িতে থাকতাম তার ছাদে ছিল অনেকগুলো ফুটো। বৃষ্টি শুরু হলে নানা জায়গা দিয়ে পানি পড়ত। আমরা মগ, হাড়ি, বালতি, গ্লাস যা যা পেতাম তায় নানা জায়গায় বসিয়ে দিতাম। মজায় লাগত। বৃষ্টি আসলে অ্যাডভেঞ্চারাস একটা ব্যাপার ঘটে যেত! রাতে আমরা তিন ভাইবোন একসাথে ঘুমাতাম,ওদের মধ্যে আমি সবথেকে ছোট।

মশারি টাঙ্গিয়ে মেঝেতে একটা হারিকেন জ্বালান থাকত । আমি হারিকেনের সলতের আগুনটুকু দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়তাম তা আমি কখনও মনে করতে পারিনি। ছোট বেলার স্বপ্ন গুলোও যে কেমন আজব হত, এটা বর্ণনা করার মত ভাষাও মানুষ আবিষ্কার করতে পারেনি। তো মাঝে মাঝে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে যেত, তখনও দেখতাম হারিকেন জ্বলছে, সলতেয় ভোতা ঘোলাটে একটা আগুন, আমি মশারীর মধ্যে দিয়ে তাকিয়ে আছি। তখনকার স্বপ্নগুলোও এমন জীবন্ত ছিল, ঘুম ভেঙ্গে গেলেই খুব বিভ্রান্ত হয়ে যেতাম।

স্বপ্নের মধ্যে যখন পুরো ঢুকে গেছি, ঐ জীবনটাই সত্যি মনে হচ্ছে, ঠিক তখনি ঘুমটা ভেঙ্গে যেত আর আমি হারিকেনের দিকে তাকিয়ে আছি। আস্তে আস্তে বড় হয়েছি, কিন্তু মাঝে মাঝেই ভেবেছি, আঁতকে উঠেছি, ভয় পেয়েছি, আশা করেছি, আমার এখনকার জীবনটাও বোধহয় কোন স্বপ্ন। হঠাৎ করে ঘুম ভাঙবে আর দেখব আমি মশারির মধ্যে দিয়ে হারিকেনের দিকে তাকিয়ে আছি। সলতেটা জ্বলছে আর জ্বলছে। তাকিয়ে থাকতে থাকতে আবার ঘুমিয়ে পড়ব।

আবার স্বপ্ন দেখা করব, নতুন একটা জীবন শুরু হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না ঘুমটা আবার ভেঙ্গে যায়... ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।