আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সুপারহিরো থ্রিলারঃ নিশাচর (The Sleeping Predator) হাসবেন না কিন্ত

আমি লেখক খারাপ হতে পারি কিন্তু ছেলে ভাল আমার নাম নাফিজ। আমি নিশাচর। এই মুহুর্তে আমি আধো আলো-আধো অন্ধকার একটি ঘরের ভেতর নগ্ন দাঁড়িয়ে আছি। গায়ে একসুতা কাপড়ও নেই। বেশ শীত শীত লাগছে।

নিজের অজান্তেই আমি একটু একটু কাপছি। এখন অনেক রাত। বাইরে আকাশে বড় একটা রুপালি চাঁদ ঝুলছে। ঘরের একমাত্র খিড়কির ফাঁক গলে চাঁদের এক চিলতে নিলাভ আলো আমার গায়ে এসে পড়েছে। সেই আলোয় দেখতে পাচ্ছি আমার নগ্ন দেহ রক্তে ভেসে যাচ্ছে।

ঘরের মেঝেতে রক্ত, দেয়ালে রক্ত। আমার মুখের ভেতরও রক্তের নোনতা স্বাদ অনুভব করছি। চাঁদের আলোয় রক্তের রঙ লাল দেখায় না। এই রক্তের রঙ কুচকুচে কালো। আমার পায়ের কাছে একটা লাশ পড়ে আছে।

একটি মেয়ের লাশ। তার পোশাক শত ছিন্ন। ঘন কালো চুলে তার মুখ ঢেকে আছে। আমি চুল সরিয়ে তার মুখটা দেখার সাহস পাচ্ছি না। মেয়েটির শরীর এখনও উষ্ণ।

আমি কি মেয়েটিকে খুন করেছি? আমি জানি না। আমার কিচ্ছু মনে পড়ছে না। আমি এখন কোথায়, কিভাবে আমি এখানে আসলাম, এসে কি কি করেছি, কিচ্ছু না। আমার স্মৃতি জট পাকিয়ে আছে। বাইরে তীক্ষ্ণ প্রলম্বিত হুইসেলের শব্দ হচ্ছে।

শব্দটা ক্রমেই বাড়ছে। সম্ভবত পুলিশ আর খুব বেশি দূরে নেই। আমাকে পালাতে হবে, এক্ষুনি। আমি ঝুঁকে মেয়েটির কপাল থেকে চুলগুলো সরিয়ে দিলাম। মুখটি আমার পরিচিত।

ভীষণ পরিচিত। কিন্তু মেয়েটি কে আমি মনে করতে পারছি না। শুধু এটুকু বুঝতে পারছি সে আমার অতি আপন কেউ। আমি দরোজার দিকে পা বাড়ালাম। দরোজার পাল্লা ভাঙা, ওপাশে সরু করিডোর।

একটা পুরানো টিউব লাইট মৃগী রুগীর মত কেঁপে কেঁপে আলো ছড়াচ্ছে। করিডরের দুপাশের রঙ উঠা দেয়ালে ছোপ ছোপ কালচে রক্তের দাগ। এখানে যেন একটা ছোটখাটো টর্নেডো বয়ে গেছে। করিডোরের শেষ মাথায় একটা সিড়ি খুঁজে পেলাম। সিড়ি বেয়ে উঠে এলাম একটা ন্যড়া ছাদে।

নিচে অনেক মানুষ। পুলিশ বাড়িটা ঘিরে ফেলেছে। আমাকে পালাতে হবে। আর সময় নেই। পাশের বাড়ির ছাদটা প্রায় দশ ফিট দূরে।

আমার জন্যে এমন কোন দুরুত্ব নয়। আমি দৌড়ে ছাদের কিনার পর্যন্ত গিয়ে লম্বা লাফ দিলাম। আমি হাওয়ায় ভেসে চলেছি। ওপাশের ছাদটা দ্রুত আমার দিকে ছুটে আসছে। ছাদের কার্নিশ লক্ষ করে আমি হাত বাড়িয়ে দিলাম।

পিচ্ছিল কার্নিশে আমার রক্তে ভেজা হাত ফসকে গেল। আমি পড়ে যাচ্ছি। অনেক নিচে পিচ ঢাকা কালো রাস্তা আমায় ডাকছে। *** ধরমর করে উঠে বসলাম। তার স্বরে বাজছে এল্যার্ম ঘড়িটা।

সেটার দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল দশটা বাজে। কি সর্বনাশ! ঘড়ি কতক্ষণ ধরে এল্যার্ম দিয়ে যাচ্ছে কে জানে। একেবারে মরার মত ঘুমিয়েছি। দ্রুত হাত মুখ ধুয়ে তৈরি হয়ে নেয়া দরকার। কিন্তু বিছানা ছেরে উঠতে মন চাইছে না।

শরীর কেমন ক্লান্ত লাগছে। মনে হচ্ছে শরীরের উপর দিয়ে কেউ একটা বুলডোজার চালিয়ে নিয়ে গেছে। আশ্চর্য, এত গভীর ঘুম দেয়ার পর তো শরীর চাঙা লাগার কথা। “ভাই আপনার চা। ” করিম পেয়ালা হাতে দাঁড়িয়ে আছে।

আমি সাধারণত ঘুম থেকে উঠে চা খাই না। আজ খেতে ইচ্ছে করছে। করিম আগে থেকেই কিভাবে টের পেয়ে গেল? ছেলেটা কি মাইন্ড রিডিং জানে? কাপে চুমুক দিয়েই আমার শরীরটা জুরিয়ে গেল। বেশ ভালো চা হয়েছে। ও চায়ে আলাদা কিছু মিশিয়েছে নাকি কে জানে, কেমন একটা ভিন্ন ফ্লেভার আসছে।

“বাহ, তুই তো বেশ ভালো চা বানাতে পারিস। ” করিম আমার স্তুতির উত্তর দিল না। পা টেনে টেনে ঘর থেকে বের হয়ে গেল। ছেলেটার বা পা’টা একটু বাঁকা। ছোটবেলায় নাকি পোলিও থেকে ওমনটা হয়েছে।

দেখলে খারাপই লাগে। ওর কতই বা বয়স, এগারো কিংবা বারো। বেশ মায়াকাড়া চেহারা। হঠাত দেখলে রাস্তার ভাসমান শিশুদের একজন বলে মনেই হয় না। জসিম চাচা ওকে গত সপ্তাহে রাস্তা থেকে কুড়িয়ে এনে বাসার কাজে লাগিয়ে দিয়েছে।

ছেলেটা এমনিতে চুপচাপ হলেও দ্রুত এই বাসার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিয়েছে। চা শেষ করে বাথরুমে ঢুকে গেলাম। ব্রাশে পেস্ট লাগিয়ে মুখে দিতেই পেট মুচড়ে উঠল। তারপর হড়হড় করে বমি হয়ে গেল। পেট থেকে দুর্গন্ধময় সবুজাভ তরল ঠেলে বের হয়ে আসছে, আমি চেস্ট করেও নিজেকে থামাতে পারছি না।

প্রায় মিনিট দুয়েক বিরতিহীন বমি করে বাথরুমের মেঝেতে এলিয়ে পড়লাম। শরীরে আবার আগের ক্লান্তিটা ফিরে এসেছে। নাকের কাছে কেমন চটচটে অনুভূতি হল। আঙুল ছুইয়ে দেখি রক্ত। নাক বেয়ে সরু ধারায় রক্ত নেমে আসছে।

কি হচ্ছে এসব!? পোশাক পালটে নিচে ডাইনিং এ গিয়ে দেখি জসিম চাচা গম্ভীর মুখে খবরের কাগজ পড়ছেন। আমার উপস্থিতি টের পেয়ে কাগজ থেকে চোখ না সরিয়েই বললেন, “এতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠলে? শরীর খারাপ নাকি?” “নাহ এমনি ক্লান্ত লাগছে। কেন জানি না। ” চাচা এবার মেখের সামনে থেকে পেপার সরিয়ে বললেন, “তুমি কি কাল রাতে আবার...??” “না চাচা” আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম, “তুমি জানো আমি আর রাতে বের হই না প্রায় বছর খানেক হতে চলল। ” “হুম, কিন্তু আমাদের সাবধান থাকতে হবে।

আজ বিকেলে কি একবার ডাক্তার দেখাবে?” “আরে নাহ, জাস্ট শরীর টায়ার্ড লাগছে। এটা ডাক্তার দেখানোর মত কিছু না। ” আমি চাচার কথা উড়িয়ে দিলাম। চাচা জানে না গত এক সপ্তাহ থেকে আমার প্রায়ই এমন শরীর টায়ার্ড থাকে, আর যখন তখন বমি হয়। আজ নাক দিয়ে রক্ত পড়াটাও যুক্ত হল।

চাচাকে শুধু শুধু দুশ্চিন্তায় ফেলতে মন চাইছে না। হয়তো এসব কিছুই না। জসিম চাচা নিজেই যে কিস্র মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন কে জানে। গত বছরের সেই এক্সিডেন্টের পর চাচা প্রায় ছয় মাস হাসপাতালে ছিলেন। এর মধ্যে প্রথম একমাস ছিলেন ডিপ ক্যটাটনিক স্টেজে।

মেরুদণ্ডে আঘাত লেগেছে। কোমরের নিচ থেকে শরীরের বাকিটা প্যরালাইসিস। থেরাপি চলছে। এখন হুইল চেয়ারে চলাফেরা করতে পারেন। চাচা অবশ্য বেশির ভাগ সময় এখন তার ঘরেই থাকেন।

সারা দিন বই পড়েন। আমার আজিমপুরের বাসা থেকে বুয়েট ক্যম্পাসে পৌছতে পনেরো নিমিট লাগে। তারপরেও ক্লাসে প্রায় আধঘন্টা লেট। সকালে ঘুম থেকে উঠতে এরই হওয়াটাই এর জন্যে দায়ি। অবশ্য আমি তেমন গা করি না।

ক্লাসের প্রতি আমার তেমন কোন টান নেই। করতে হয় বলে করি। টিচাররাও এতোদিনে বুঝে গেছে আমার স্বভাব। তাই আমাকে এখন আর ঘাটায় না। বেসিক ইলেক্ট্রিক্যল ইঞ্জিনিয়ারিং এর ক্লাস চলছে।

ক্লাস নিচ্ছেন সায়মা ম্যম। ম্যমের বয়েস কম, দেখতে ভালো। ছেলেরা উৎসাহ নিয়ে তার ক্লাস করে। এই ম্যডামের নামে ভয়াবহ একটা রিউমার আছে। ম্যডাম নাকি লেসবিয়ান।

থার্ড ইয়ারের এক ছাত্রির সাথে নাকি তার সম্পর্ক আছে। ক্লাসে আমি এমনিতে কারো সাথে গায়ে পড়ে কথা বলি না। গত বছরটা আমার নষ্ট হয়েছে, একটা পরিক্ষাও দিতে পারিনি। এখন জুনিয়রদের সাথে রিএড নিতে হয়েছে। এদের সাথে কথা বলতে ভালো লাগে না।

পাশের ডেস্ক থেকে রুমন কনুইর গুতো দিয়ে বলল, “কি বস, এত দেরি কেন?” আমি কিছু না বলে হালকা কাঁধ ঝাকালাম। ক্লাসের এই একটা ছেলের সাথেই আমার হালকা কথাবার্তা হয়। রুমন নিজে থেকেই কথা বলতে আসে। ছেলেটা এমনিতে বেশ ফানি। মজার মজার কথা বলে ক্লাস মাতিয়ে রাখে।

রুমন বলল, “ম্যডামের শাড়িটা দেখসেন? উহ যা লাগতেসে না!” আমি বললাম, “ব্লাউজের রঙের সাথে তো তোমার শার্টের কালার মিলে গেছে। দুইজন প্ল্যন করেই পড়ছ নাকি?” “হে হে হে, ভাই এইটা তো খেয়াল করি নাই। ” রুমনের সাথে আমার সম্পর্ক ভালো থাকার আরেকটা কারন আছে। রুমনের হাত ধরেই আমার সিনথিয়ার সাথে পরিচয়। রুমনের হালকা গাঁজার অভ্যেস আছে।

আর মাঝে মধ্যে নাইট ক্লাবে যায়। আমাকে একবার সাথে নিয়ে গিয়েছিল। সেখানেই সিনথিয়ার সাথে পরিচয়। হ্যাঁ, সিনথিয়া একজন কলগার্ল। ওর সাথে পরিচয়ের পর সুস্মিতাকে আর তেমন মিস করি না।

সারাটা দিন ক্লাসেই কেটে গেল। বিকেলে ক্যম্পাস থেকে বের হয়ে মনস্থির করতে পারলাম না এরপর কোথায় যাব। সিন্থিয়ার ওখানে যাওয়া যায়। ও এখন কি করছে? বিকেলের এই সময়টায় ও সাধারণত কি করে? এই সময়ে কখনো ওর সাথে দেখা করা হয়নি। সিন্থিয়া অবশ্য বলে দিয়েছে আজকে আর আগামি কাল ওর সাথে দেখা হবে না, ও ব্যস্ত থাকবে।

কি কাজে ব্যস্ত সেটা বলেনি। আমিও জিজ্ঞেস করিনি, উত্তরটা আমার জন্য বিশেষ স্বস্তিকর হবে না ভেবেই। এখন হঠাত গিয়ে ওকে চমকে দেয়া কি ঠিক হবে। উল্টো যদি নিজেকেই চমকে যেতে হয়? আচ্ছা সিন্থিয়ার প্রতি আমার এই আনহেলথি ইনফ্যচুয়েশনটার কারন কি? আমি কি ওর প্রেমে পড়েছি? মনে হয় না, পড়ার কোন কারন নেই। কিন্তু কেন যেন ওকে না দেখে থাকতে পারি না।

ওর সাথে দেখা হলেও তেমন কোন কথা হয় না। দুইজন পাশাপাশি চুপচাপ বসে থাকি। মাঝে মাঝে ও নিজে থেকেই টুকটাক প্রশ্ন করে, আমি জবাব দেই। ঘন্টাখানেক এভাবে কাটিয়ে চলে আসি। আমি এমনকি ওর সম্পর্কে তেমন কিছু জানিও না।

সিন্থিয়া ওর আসল নাম কিনা কে জানে। চায়ের দোকানের বেঞ্চে বসে থাকা মানুষটা আমাকে লক্ষ করছে। তার চোখে কালো সানগ্লাস। সুঠাম দেহ দেখে মনে হয় সেনাবাহিনীর লোক। এই মুহুর্তে সে তাকিয়ে আছে দোকানে ঝুলানো কলার দিকে।

কিন্তু কয়েক মুহুর্ত আগেও সে আমাকে আর চোখে দেখছিল। আমার সেন্স অত্যন্ত করা। সরাসরি না তাকিয়েও আমি অনেক কিছু টের পাই। এটাও আমার রক্তে নিটোজেনের বিশিষ্ট কিনা কে জানে। আমি দ্রুত পা চালাচ্ছি।

কালো সানগ্লাস তার বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। আমি না তাকিয়েও বুঝতে পারলাম সে একটা জানালাবিহিন সাদা মাইক্রোবাসে উঠে গেল। মাইক্রো বাসটি ধির গতিতে এগিয়ে আসছে। হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলাম। বাসটা আমার পিছু নিয়েছে।

আমি হঠাত দৌড়াতে শুরু করলাম। ছুটে একটা চিপা গলিতে ঢুকে গেলাম। পেছনে বাসটা থেমে গেছে। বোধ হয় এবার কি করবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। সুর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে।

আঁধার নামতে শুরু করেছে। মাইক্রোবাসটা গলির আশে পাশে ঘুরঘুর করছে। কিন্তু গাড়ি থেকে নেমে কেউ গলির ভেতর ঢুকছে না। কারা ওরা? আমার কাছে কি চায়? পুলিশের লোক, ডিবি? কিন্তু এতো দিন পর কেন আবার......?? বাবার মৃত্যুর পর পুলিশ আর আমাকে ঘাটায়নি। ওরা কি এখনো আমাকে সন্দেহ করে?? সেলফোন থেকে দ্রুত চাচাকে একটা ম্যাসেজ পাঠালাম, “ফিরতে দেরি হবে” তাকে এখনি উদ্বিগ্ন করতে চাই না।

মাইক্রোবাস থেকে কালো পোশাকের সুঠাম দেহি দুই ব্যক্তি নেমে এসেছে। বোধ হয় ওদের ধৈর্যের বাধ ভেঙে গেছে। ওদের পড়নের কোটের নিচে কোমড়ের কাছে আবছা ভাবে ফুলে আছে। কোমরের বেল্টে ছোট কোন আগ্নেয়াস্ত্র গুজে রাখলে যেমনটা হয়। কাআআআআ... তীব্র প্রলম্বিত ডাকে আম্র মনযোগ ভেঙে গেল।

এই ডাকটা আমার চেনা। সুরু গলির উপরে একচিলতে আকাশ দেখা যায়। সেই আকাশ থেকে কালো একটা ছায়া আমার দিকে ধেয়ে আসছে। একটা কাক। পল!! পল উড়ে এসে আমার কাঁধে বসল।

পল আমার পোষা কাক। প্রায় মাসছয়েক ওর সাথে দেখা নেই। কোথায় গিয়েছিল কে জানে? আমি ওর ঠোঁট নেড়ে দিয়ে বললাম, “কই ছিলিরে তুই এতো দিন?” পল জবাবে বলল, “কা...কাআআ” দিনের আলো নিভে গেছে। আমি বুঝতে পারছি আমার রক্ত সঞ্চালনের গতি বেড়ে গেছে। বুকের ভেতর হৃদপিণ্ডটা ধ্বক ধ্বক করছে।

পরিবর্তন আসছে, পরিবর্তন। আমি দ্রুত গলির ভেতরে একটা অন্ধকার কোণ খুঁজে নিলাম। পাশেই একটা ময়লা ডাস্টবিনে একটা লোমঊঠা বিড়াল নোংরা ঘাটছে। বিড়ালটা আমাকে দেখে ম্যও করে উঠল। জবাবে আমার কাঁধ থেকে পল কর্কশ গলায় ধমক দিল।

তীব্র আক্ষেপে আমার শরীর মুচড়ে আসছে। দেহের প্রতিটি শিরা উপশিরায় যেন বিদ্যুতের ফুলকি ছুটাছুটি করছে। বুকের খাচায় হৃদপিণ্ডটা পাগল হয়ে উঠেছে। আমার শরীরটা পালটে যাচ্ছে। পুর্ন পরিবর্তন আর বেশি দূরে নেই।

প্রায় এক বছর পর...... নিশাচর আসছে। ...... আমি চোখ মেলে তাকালাম। অন্ধকারেও আমি পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছি। সেই মানুষ দুটো টর্চের আলো ফেলে আমাকে খুঁজছে। তারা আমাকে এখনো দেখতে পায়নি, দুজনেই আমার দিকে পেছন ফিরে আছে।

তীক্ষ্ণ ডাক ছেরে পল ডানা মেলে উড়ে গেল। পলের ডাকে চমকে ফিরে তাকাল লোক দুজন। আমাকে দেখেই তাড়াহুড়ো করে কোমর থেকে পিস্তল টেনে বার করল। তাদের চোখে নির্জলা আতঙ্ক। আমি হেসে উঠলাম।

...... দুটো দেহ দুমড়ে মুচড়ে পড়ে আছে। একজন সংজ্ঞাহীন। অপর জনের এখন চেতনা আছে। আমি চুলের মুঠি ধরে ওর মুখটা নিজের কাছে টেনে নিলাম। আমি বললাম, “আস্তে আস্তে নিঃশ্বাস নাও, হুম এই তো এই ভাবে।

এবার বল তোমরা কারা? পুলিশ? আমার পেছনে লেগেছ কেন?” মানুষটি জবাব দিচ্ছে না। পিচিক করে এক দলা রক্ত ফেলে চুপ করে গেল। আমি আরেকবার আঘাত করতে হাত তুললাম। হঠাত পেট মুচড়ে বমি হয়ে গেল। পেটে যেন কেউ ভীষণ জোরে ঘুষি মেরেছে।

আমি হাঁটু ভেঙে মাটিতে পড়ে গেলাম। নাক দিয়ে আবার রক্ত উঠে আসছে। কষ্ট কষ্ট কি কষ্ট... আমি শ্বাস নিতে পারছি না। আমার মাথা ঘুরছে। দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসছে।

সেই মাইক্রোবাসটা আমার মাথার কাছে এসে থেমেছে। গাড়ি থেকে আরো দু’জন মানুষ নেমে এসেছে। তারা প্রথমে তাদের আহত সঙ্গীদের চেক করল। তারপর এসে দাঁড়াল আমার কাছে। ওরা আমাকে গাড়িতে তুলে নিচ্ছে।

আমি বাঁধা দিতে পারছি না। নিস্তেজ হাতদুটোতে ওরা হ্যন্ডকাফ পড়িয়ে দিয়েছে। ওটা না পড়ালেও চলত। আমার শরীরে একবিন্দু শক্তিও নেই। আমি জ্ঞান হারাচ্ছি।

*** “নাফিজ, আমার কথা মনযোগ দিয়ে শোন। তোমার একটা রেয়ার টাইপের ব্লাড পয়জনিং হয়েছে। তোমার রক্তের নিটোজেন থেকেই এর উৎস। তোমার বডি নিটোজেন মিউটেশনকে রিজেক্ট করতে শুরু করেছে। দুইভাবে তোমার মৃত্যু হতে পারে; ম্যসিভ ইন্টারনাল হ্যামারেজিং অথবা কার্ডিয়াক এরেস্ট।

তোমার হাতে খুব বেশি হলে আর দুই সপ্তাহ সময় আছে। তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছ?” আমি মাথা নাড়লাম। আমার সামনে বসে থাকা আমেরিকানটির নাম ফেলিক্স স্টীভেনসন। সে ক্রুজ রেইসের একজন ডক্টর। ক্রুজ রেইস পৃথিবীর টপ বায়োইঞ্জিনিয়ারিং ল্যবরেটরিগুলোর একটি।

আমার বাবা অ্যামেরিকায় থাকতে ক্রুজ রেইসে কাজ করতেন। এখান থেকেই তিনি নিটোজেনর ফর্মুলা চুরি করে দেশে পালিয়ে আসেন। স্টিভেনসন আবার বলতে শুরু করলেন, “থ্যঙ্কস টু ইউ আমরা নিটোজেনের রহস্য উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছি। নিটোজেন এখন আমাদের কাছে একটা খোলা বইয়ের মত। তোমার ব্লাড পয়জনিং কিউর করার মত এন্টিডোট আমাদের কাছে আছে।

” আমি চোখ তুলে স্টিভেনের দিকে তাকালাম। স্টিভেন বললেন, “See, you don’t have to die. We can cure you. But first you have to do something for us. All right?” আমি কোন কথা বললাম না। স্টিভেন মাথা ঝাকিয়ে বললেন, “Well, you don’t have any other choice. Take a look at this picture.” স্টিভেনসন তার ল্যপটপের স্ক্রিনে আমার দৃষ্টি নির্দেশ করছে। আমি স্ক্রিনের ছবিটির দিকে তাকালাম। শাড়ি পড়া একজন মহিলার ছবি।

স্টিভেন বললেন, “We need you to kill this woman for us.” ছবির মহিলাটি শেখ হাসিনা। (to be continued) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.