ঘুমনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল মেয়েটি। পরিপাটি করে চুলবেধেছেদে বেডে যাবার মুহূর্তে বেজে উঠর ল্যান্ডফোনটা।
এতো রাতে ফোন!
কোনো কারণ ছাড়াই কী এক আশঙ্কা বোধ করল সামিয়া। ফোনটাকে আরও কিছুক্ষণ বাজতে দিল। এরমধ্যে পাশের রুম থেকে বাবা চলে এলেন।
কীরে! ঘুমিয়েপড়েছিস নাকি?, ফোন বাজছে...
বাবাকেও কেমন চিন্তিত মনে হচ্ছে সামিয়ার।
কেন, কী হয়েছে বাবা? আমি একটু ব্যস্ত ছিলাম।
না, আগে ফোন! কোনো ইমার্জেন্সি ফোনওতো হতে পারে!-বলে বাবা চলে গেলেন ঢুলুঢুলু পা ফেলে। বোঝাই যায় ঘুম চোখে তার।
বাসায় ফোনটাকে সবাই ভীষণ গুরুত্বের চোখে দেখে।
কোনো নন ইম্পর্টট্যান্ট কাজে ফোন ব্যবহার এ বাড়িতে চলে না। জরুরি কথাবার্তা, আর আলাপ পরামর্শ ব্যাস!
ল্যান্ডফোনই হোক আর মোবাইল ফোনই হোক এর মিস ইউজ বন্ধকরা উচিৎ। বিশেষকরে যারা শখকরে মোবাইল কেনেন তাদের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা উচিৎ। যে কোনো মিসইউজের জন্য যেকোন বড় দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।
সেদিন যেমন হলো-
বড় আপু ভীষণ অসুস্থ।
আর একমাস দেড়মাস পর তার ডেলিভারি ডেট দিয়েছে ডাক্তার। আমরা সবাই বুবুকে নিয়ে ভীষণ টেনশনে কাটাই। প্রথম বাচ্চা। তার উপর বয়সও বেশি না। মাত্র একুশ।
স্বামীর কষ্টহবে বলে এখনও বাড়িতে আসছে না। বলেছে ১৫দিন আগে চলে আসবে। প্রথম সন্তান মেয়ের বাপের বাড়িতে হবে।
কিছুদিন থেকে একটা লোক উটকো এক ঝামেলা শুরু করেছে বাবার ফোনে। বিরক্ত হয়ে বাবা ফোনটা ডিসকানেক্ট করে ঘুমান।
আর ঘটনাটাও ঘটল সেদিন। আপুর হঠাৎ পেইন শুরু। আমিতো এম্নিতেই মোবাইল বন্ধকরে অথবা সাইলেন্ট করে ঘুমাই। আর আব্বুতো ল্যান্ডফোন, সেলফোন দুটোই বন্ধকরে রেখেছেন! আপুরা চেষ্টা করতে করতে না পেয়ে কীযে অসুবিধায় পড়ল!
দুলাভাইর বাসায় কেউ নেই। দিনের বেলায় একমহিলা এসে কাজকরে দিয়ে যায়।
রাতে তারা একা। একটা মহিলা, একটা আপন মানুষ নাই তাদের পাশের দাঁড়াবার!...
সেই রাতটির কথা অনুভব করতে গেলে বয়ে আর কান্নায় গায়ের পশম কাটা দেয় সামিয়ার।
একটি মেয়ে পেটের ব্যথায় বারবার চিৎকারকরে তার মাকে ডাকছে, মাকে ফোন দিচ্ছে কিন্তু পাচ্ছে না। এদিকে পানি না রক্ত ঝরছে! এটা কীসের তাও তারা জানে না। সেকি মরে যাবে? এটাকি বাচ্চা হওয়ার লক্ষণ? না তা কেন হবে এখনও প্রায় একদেড়মাস বাকী!মৃতূ্যর আতঙ্ক নিয়ে মেয়েটি তার মাকে একবার ফোনে পেতে চায়, কিন্তু সে পায় না।
শেষে ব্যাথা যখন চরমে তখন অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। ডাক্তার বলে পানি সব শেষ, সিজার করতে হবে। এদিকে মেয়েটির যা অবস্থা এখন সেন্সলেস করলে সেন্স ফিরবে কি না কে জানে!
এসবের কিছুই সামিয়ারা সে রাতে টের পায়নি। ওরা ঘুমিয়েছে, নিশ্চিন্তে! আরামে। সামিয়ার দুলাভাই মনের ক্ষোভে-দুখে প্রতিজ্ঞা করেছেন আর কোনোদিন শ্বশুরবাড়ির কারও মুখ দেখবেন না।
....
রাতের ফোনে সেকারণেই এতো ভয় সবার!
থেমে যাওয়া ফোনটা আবার বাজল। এবার প্রাইওরিটি দেওয় হলো ফোনটাকেই। তাছাড়া সামিয়া ফোনের জন্যই বসেছিল।
আসসালামু আলাইকুম!
ফোন ধরেই সালাম দেওয়া ওর অভ্যেস। ল্যান্ডফোনে সাধারণত পারিবারিক ফোনই আসে, এবং বেশিরভাগই ওর গুরুজন! তাই যথাসাধ্য আতিথেয়কণ্ঠে রিসিভ করে।
ওয়ালাইকুমুস সালাম।
কে বলছিলেন, প্লিজ!
দেখুন আপনি আমাকে চিনবেন না, আমি...
জ্বি ,বলুন!
সত্যিকথা বলতে কি আমি আপনার একজন ভক্ত!ভীষণ ভক্ত!
হোয়াট! এইসব ভক্তটক্ততো হয় সেলিব্রেটিদের, আর্টিস্টদের! আমিতো সেসব কিছুনই!
দেখুন ম্যাডাম! ডাক্তারদেরও ভক্ত থাকতে পারে।
কিন্তু আমিতো ডাক্তারও নই!
আপনি ডাক্তার সামিয়া নন?
আমি সামিয়া, ঠিক আছে কিন্তু ডাক্তারতো নই! আপনি বোধয় ভুল করছেন!
সামিয়ার বুটা কেঁপে ওঠে! লোকটিরও কি সেরকম কোন বিপদ! সামিয়ার খুব ইচ্ছা করে লোকটিকে সাহায্য করে, কিন্তু কীভাবে করবে?
লোকটি বলে- হ্যাঁ, ভুলও হতে পারে, রাখি তাহলে?
সামিয়া তবু ফোন ধরে থাকে। লোকটিও
কই রাখুন!-সামিয়া বলে।
না মানে আপনার অনুমতি ছাড়া কীভাবে রাখি!
একজন অপরিচিতের সঙ্গে এত সৌজন্য না দেখোলেও চলে।
স্যরি! ম্যাডাম! আমি আপনার সঙ্গে একমত নই। বরং অপরিচিতের সঙ্গেই সৌজন্য দেখাবার প্রয়োজন বেশি। কারণ যে চেনে, তাকেতো আমি শালাও বলতে পারি, যদি তেমন সম্পর্কের কেউ হয়। সে কিছু মনে করবে না। কিন্তু অপরিচিত কারও সঙ্গে কথা বললে...
জ্বি, ঠিক আছে! এবার বোধয় রাখা যায়!
কিন্তু এবারও ফোনটা কেউ রাখল না।
বোধয় ভদ্রতার খাতিরে।
১মিনিট নীরবতার পর সামিয়াই বলল
কী ব্যাপার বলুনতো! ফোন রাখছেন না কেন?
আমি আপনি রাখার অপেক্ষা করছিলাম!...ওকে বাই! গুডনাইট!
লোকটি ফোন রাখতে গিয়েও রাখল না, কৌতূহল! মেয়েটি রাখে কি না,
আশচর্য আপনি...
না মানে ভেবেছিলাম গুডনাইটের আনসারটা না শুনে রেখে দিলে আপনি কী মনে করেন!
ওকে আল্লাহ হাফেজ! বলে মেয়েটি ফোন রাখল।
সামিয়ার ভেতরটা হাসিতে ভরে যাচ্ছে। এক কারণ ফোনটা কোনও খারাপ খবর আনেনি, দুই ছেলেটির আচরণ! মুখে শুধু উচ্চারণ করল- বেশি ভদ্রলোক!
মোবাইলে ঘড়ি দেখে শুয়ে পড়ল সামিয়া। ওর ধারণা আজ ঘুম থেকে উঠতে দেরি হয়ে যাবে।
সকাল হতে না হতেই ব্যস্ত হয়ে যায় শহরের রাস্তাগুলো। গাড়ির শব্দে আবার আগের স্থানে ফিরে যায় রাজধানী
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।