আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ইলেভেন ষ্টার ফুটবল ক্লাব



ইলেভেন ষ্টার ফুটবল ক্লাব একবার ফুটবল খেলার নেশা মাথায় উঠেছিল। দলও গঠন করেছিলাম। দলের নিয়ম কানুন, চাঁদা আদায়ের পরিমান, চাঁদা দেয়ার সময়সীমা সবকিছু কাগজে লিপিবদ্ধ করা হল। জার্সির রঙ এবং ডিজাইন নিয়ে খেলোয়াড়রা দুভাগে বিভক্ত হয়ে যাওয়াতে মতভেদ দেখা দিল। কেউ ব্রাজিল আবার কেউ আজের্ন্টিনার মত জার্সির পক্ষে রায় দেয়ায় আপাতত জার্সির বিষয়টা স্থগিত করা হল।

খেলার মাঠ, কোচ নির্বাচন করা হল। কিন্তু সবকিছু ঠিক হবার পর যে সমস্যা দেখা দিল তা মোটামুটি গুরুতর। আমাদের দলের বল নেই! সবাই চাঁদা দিয়ে বল কিনব সেটাও সম্ভব হচ্ছে না! বিকেল বেলায় গিয়ে আমরা মন খারাপ করে থাকি। কোচ আমাদের পিঠে থাবা দিয়ে বলেন, 'আরে এত মন খারাপের কি আছে! দেখো কিছুদিনের মধ্যেই বল পেয়ে যাবে। এখন শুধু বসে না থেকে দৌড়ের প্র্যাকটিস করো, বেশী দম ধরে রাখা শেখো।

ফুটবল এত সহজ খেলা না, খুবই জটিল খেলা। ল্যাং মারা শিখতে হয়, কাচ্চি মারা শিখতে হয়। দৌড়ের সময় বিপরে খেলোয়াড়কে কিভাবে কনুই দিয়ে গুতা মেরে ফেলে দিতে হয় তাও শিখতে হয়!' তারপর একটা পাঁচ নম্বর সাইজের ডিয়ার বল জোগাড় করেছিলাম। প্রথমে আমরা আমবাগানে খেলতাম। আমি কোন পজিশনেই খেলতে পারতাম না।

তবু অবধারিতভাবেই দলে থাকতাম আর সারা মাঠ বলের পেছনে ছুটে বেড়াতাম কিন্তু খুব কম সময়েই পায়ে বল ছোয়াতে পেরেছি! তবু কোন সময়ে যদি বল পেতাম তা বেশীর ভাগই ভুল পাশ দিতাম! কিভাবে যেন আমি একটা জার্সি জোগাড় করেছিলাম। সাদা জার্সির উপর কালো রঙে পাঁচ নম্বর দেয়া ছিল। জার্সি গায়ে দিলেই আমার ভেতর খেলোয়াড়ি ভাব জেগে উঠত! ফুটবল খেলার জন্য পায়ে এ্যানকেট পরা দরকার। এ্যানকেটের দাম দশ টাকা। কিভাবে টাকা জোগাড় করা যায় সে চিন্তা করতে গিয়ে নতুন পথের সন্ধান পেয়ে গেলাম! আমার ছোট বোন যুথী মাটির ব্যাংকে পয়সা জমাতো।

সিদ্ধান্ত নিলাম সেখান থেকে পয়সা চুরি করতে হবে! ব্যাংকটাকে জায়গামত সরালাম। একদিন সুযোগ বুঝে টেবিলের নীচে বসে পয়সা বের করলাম। মাটির ব্যাংক থেকে পয়সা বের করা সহজ কর্ম নয়। অনেক ধৈর্যশীল হতে হয়। ব্যাংকটাকে চোখের উপর ধরে তীক্ষ্ণ চোখে একটানা তাকিয়ে থাকাটাও কঠিন কাজ।

প্রথমেই মাথায় রাখতে হয় একটু নাড়াচাড়া করলেই ঝনঝন শব্দ হবে! তবু ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পয়সাকে মুখের কাছে নিয়ে আসতে হয়। তারপর ব্লেড দিয়ে বের করতে হয়। প্রথম দিন সফলতার সাথে সাড়ে চার টাকার মত বের করতে পেরেছিলাম! কিন্তু বের করার পর পয়সা গুলোকে কোথায় লুকিয়ে রাখব এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়লাম। শেষমেষ বাইরের ইটের ওয়ালে একটা ইট সরিয়ে সেখানে পয়সাগুলোকে রেখে উপরে কয়লা দিয়ে ঢেকে রেখেছিলাম। দ্বিতীয় দিন নতুন উদ্যেমে আবার পয়সা বের করতে গিয়ে যুথীর কাছে হাতেনাতে ধরা পড়ে গেলাম! তবু অস্বীকার করার উপায় নেই এ পয়সা চুরির প্রক্রিয়াটি আমাকে ধৈর্য্যশীলতা শিখিয়েছে!! কিছুদিনের মধ্যে আমাদের ফুটবল দল বেশ জমে উঠল।

প্রতিদিন সন্ধ্যায় খেলে ফেরার সময় এক আইসক্রীমওয়ালা আসে। কারো কোথাও আঘাত লাগলে তার কাছ থেকে পানি বরফ নিয়ে ঘসে দিই। তারপর সবাই আইসক্রীম চাটতে চাটতে বাড়ি ফিরি। আইসক্রীমের ভেতর বাঁশের যে কাঠি থাকে তা চিবিয়ে দাঁতন বানাতাম এবং দাঁত পরিষ্কার করতাম। সে সময়েই আমার প্রথম দাঁত পরিষ্কারের অভ্যাস গড়ে ওঠে! তার আগে নাস্তায় বসার সময় যুথী বলতো, ‘মা দ্যাখো তোমার ব্যাটা দাঁত মাজেনি!’ মা হা করতে বলতো।

আমি কসম খেয়ে উদ্ধার পেতাম। এভাবে কতদিন দাঁত না মেজে কাটিয়েছি! দলে ততদিনে জার্সির ব্যবস্থা হয়েছে। এখন জুতার ব্যবস্থা করা গেলে ভাল লাগে। কিন্তু সে পথ মাড়াতে কেউ রাজি হল না। তবু সবাই কালো মোজা কিনল।

একদিন বিকেলে জার্সি আর মোজা পরে সবাই খেলতে নামলাম। খেলা বেশ উপভোগ্য হল। মাঠে চরতে আসা কিছু গরু ছাগল আর কয়েকটা ন্যাংটো পিচ্চি মিলিয়ে দর্শকও বেশ ভালো হল। কিন্তু খেলার শেষে দেখা গেল সবার মোজা অসংখ্য চোরা কাঁটায় ভরে গেছে! সবাই সবার মোজার চোরা কাঁটা ছাড়াচ্ছে। আঁখি আপা তখন রাজশাহী কলেজে পড়ত, রাজশাহীতেই থাকে।

মাঝে মাঝে বাড়িতে আসে। আমার একটা হাতঘড়ির ভীষণ শখ। কিন্তু সে কথা কাউকে বলতে পারি না। আব্বাকে যদি বলি তবে নির্ঘাত পিটিয়ে আমার হাত পা ভেঙ্গে ফেলবেন। হাফ প্যান্ট পরে সারাদিন বনে বাদাড়ে ঘুরে বেড়াই।

তার আবার ঘড়ির কি দরকার। আব্বা বলতেন, কোন ‘বাইটকামু’ চলবে না। আমার মত ছোট বয়সে ঘড়ি হাতে দেওয়াটাও আব্বার চোখে এক ধরনের ‘বাইটকামু’। ‘বাইটকামু’র মানেটা আমার কাছে মনে হত রংবাজ ধরনের। তো আঁখি আপা একবার বাড়ি এসেছে।

আমি পরিকল্পনা করছি কিভাবে তার ঘড়িটা আটকানো যাই! কয়েকদিন বাড়িতে থাকার সময় আপার ঘড়িটা বন্ধ হয়ে গেল। পরদিন ব্যাটারি পাল্টিয়ে ঘড়ি আবার চালু করা হল। আমি ভাবলাম এর থেকে আর ভাল সুযোগ হতে পারে না। দুপুর বেলায় যখন সবাই ঘুমিয়েছে তখন ব্লেডের কোনা দিয়ে ঘুরিয়ে ঘড়ির পেছনের প্যাচ খুলে ব্যাটারি বের করলাম। ঘড়ি বন্ধ হয়ে গেল।

আমি নিশ্চিত আপা ঘড়িটা রেখে চলে যাবে। বিকেলবেলা ঘড়ি আবার দোকানে পাঠানো হল। ভেতরে ব্যাটারি নাই দেখে মেকার আশ্চর্য হয়ে গেল। কিন্তু তারচেয়ে বেশী আশ্চর্যের বিষয় হল আপা প্রথমেই আমাকে চার্জ করল। কি আশ্চর্য! আমি এমন কাজ করতে পারি? দুনিয়ায় যত কসম থাকতে পারে সব খেয়ে ফেললাম।

আপা বিশ্বাস করল কিনা জানি না তবে ঘড়িটা রক্ষা করতে পারলাম না।


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।