কেবল সমুদ্র পারে শুষে নিতে সব, যা কিছু বিপ্রতীপ, ভেসে আসে নিদারুণ কষ্টের নীলজলে..
আজ যে বিষয়টি নিয়ে লিখতে যাচ্ছি- তা আমার জন্য এক আবেগময় স্মরণীয় ঘটনা...। সামহয়্যারের সাথে পরিচিত হবার পর থেকে এই অত্যুজ্জ্বল শিহরণময় ঘটনাটির জন্য আমি বোধহয় দীর্ঘকাল মনে মনে ভীষণ অপেক্ষায় ছিলাম....। এবং অবশেষে সামহয়্যারের ব্লগারদের সেই পিকনিকের দিনটিতে (২৯শে ফেব্রুয়ারী, ২০০৮) অবসান ঘটেছে সে অপেক্ষার....।
কিন্তু যা বলতে যাচ্ছি, সেই মূল বিষয়ে যাবার আগে আপনাদের দিয়ে ফেলছি আরো একটি উল্লেখযোগ্য খবর। অবশ্য এই উল্লেখযোগ্য খবরের সাথে আজকের লেখার মূল বিষয়টিরও একটা ঘনিষ্ট সম্পর্ক আছে।
আসুন, প্রথমেই জেনে নেই সেই উল্লেখযোগ্য খবরটি।
প্রিয় ব্লগারদের অনেকেরই হয়তো মনে আছে, নোকিয়ার মোবাইল সেটে বাংলায় সামহয়্যার ইন ব্লগ পড়তে পারার বিষয়টি জানিয়ে আমি ২০০৬ সালের ২রা নভেম্বর এই ব্লগে একটি লেখা পোষ্ট করেছিলাম, যার শিরোণাম ছিল- রাস্তার জ্যামে আটকে পড়ে মোবাইল ফোনে পড়তে থাকুন সামহয়্যারইন ব্লগ ....
Click This Link
। আমার সেই লেখায় নোকিয়ার যে সেটটির কথা সেদিন তুলে ধরেছিলাম, সেই নোকিয়া ৬০৩০ সেটে বাংলা পড়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় অসুবিধা ছিল এই যে, সেটটির ডিসপ্লে খুব ছোট বলে (রেজ্যুলেশন:১২৮ :১২৮) একসাথে বেশী লাইন পড়া যেতোনা। ফলে বারবার স্ক্রল করে পড়তে গিয়ে মহা বিরক্তি আসতো।
সেই লেখা পড়ে যারা জানতে চেয়ে ছিলেন, কবে নোকিয়ার বড় ডিসপ্লে যুক্ত হাই এন্ড মোবাইলে বাংলা আসবে, তাদের জন্য আজকের আনন্দময় সুখবরটি হচ্ছে, অতঃপর নোকিয়ার বড় ডিসপ্লে (২ ইঞ্চি এবং ২.২ ইঞ্চি, রেজ্যুলেশনঃ ২৪০:৩২০) যুক্ত বেশ কয়েকটি ‘হাই এন্ড মোবাইল’-এ যুক্ত হয়েছে বাংলা ইউনিকোড ফন্টের সাপোর্ট।
ফলে মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহার করেই সেসব সেটের বড় ডিসপ্লে-তে আপনি সহজেই পড়তে পারবেন যে কোন ইউনিকোড বাংলা সাপোর্টেড ওয়েবসাইট (অপেরা মিনি ব্রাউজার এর সাহায্যে) । সেইসাথে আমাদের প্রিয় এই ‘সামহয়্যার ইন ব্লগ’ তো পড়তে পারবেনই...।
অতএব ছোট ডিসপ্লেতে বিরক্তির সাথে বাংলা পড়ার দিন শেষ হয়ে এলো। এখন আপনি বড় ডিসপ্লেতে একসাথে অনেকগুলো বাংলা লাইন পড়ার সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। বারবার স্ক্রল করার ঝামেলায় আর আপনাকে বেশী জড়াতে হচ্ছেনা।
অবশ্য এসব সেটে যে ইউনিকোড বাংলা ফন্টের সাপোর্ট যুক্ত হয়েছে, তা অত্যন্ত ছোট বলেই বাংলা পড়ার সময় অপেরা মিনির সেটিংস এ গিয়ে আপনাকে ফন্ট সাইজ Largest করে নিতে হবে, না হলে চোখের আরাম হবে না।
নোকিয়ার যেসব হাই এন্ড মোবাইলে বাংলা ইউনিকোড ফন্টের সাপোর্ট যুক্ত হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষনীয় ফোনটি হচ্ছে ২৩,০০০ টাকা দামের ৩.২ মেগাপিক্সেল ক্যামেরা সমৃদ্ধ নোকিয়ার ৬৫০০ স্লাইড ফোনটি। আমি নিজে এই ফোনটিতে চমৎকারভাবেই বাংলায় সামহয়্যার ইন ব্লগ পড়েছি।
নোকিয়ার ৬৫০০ স্লাইড সেটটি ছাড়া আর কোন হাই এন্ড সেটে কি বাংলা ইউনিকোড ফন্টের সাপোর্ট নেই ? আছে । আমি নিজে নোকিয়ার মিউজিক এক্সপ্রেস সেট ৫৩১০ তে একইভাবে বাংলার সাপোর্ট দেখতে পেয়েছি।
এবং আমার অনুমান যদি মিথ্যে না হয়, তবে নোকিয়ার মিউজিক এক্সপ্রেস সেট ৫৬১০ এবং নোকিয়ার ৬৫০০ ক্ল্যাসিক সেটটিতেও বাংলার সাপোর্ট থাকার কথা।
নোকিয়ার এই হাই-এন্ড সেটগুলো তাদের Series 40 5th Edition (Feature Pack-1) এর আওতাভূক্ত প্রকাশনা। এই প্যাকের আওতায় ৬৫০০ স্লাইড ফোনটি রিলিজ হয় ৩১-০৫-২০০৭ তারিখে। এর পরবর্তী সময়ে, অথাৎ মে,২০০৭ থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত এই Series 40-র আওতায় ক্রমান্বয়ে আরো যেসব সেট বেরিয়েছে, সেগুলো হচ্ছে- ৬৫০০ ক্ল্যাসিক, ৭৯০০ প্রিজম, ৫৩১০ মিউজিক একসপ্রেস, ৫৬১০ মিউজিক একসপ্রেস,৬৩০১, ৮৮০০, ৩১২০ ক্ল্যাসিক এবং ৬৩০০ আই (তথ্যসূত্রঃ নোকিয়া ফোরাম)।
উল্লেখ্য যে- এই সবগুলো সেটেরই স্ক্রীণ রেজ্যুলেশন খুব হাই তথা ২৪০:৩২০ এবং অনেকগুলোরই ডিসপ্লে-তে রয়েছে ১৬ মিলিয়ন কালার এর উজ্জ্বলতম ছোঁয়া।
আমি অনুমান করছি, একই ধরনের অপারেটিং সিষ্টেম সমৃদ্ধ বলে এই সেটগুলোর সবটাতেই ইউনিকোড বাংলা ফন্টের সাপোর্ট থাকার সম্ভাবনা খুব প্রবল, কেননা এ তালিকার অন্তর্ভুক্ত ৫৩১০ তে আমি নিজেই পরীক্ষা করে বাংলা দেখতে পেয়েছি (ব্লগারদের যাদের কাছে এই সেটগুলো আছে , তারা পরীক্ষা করে দেখতে পারেন)।
পক্ষান্তরে নোকিয়ার Series 60 Symbian Operating System সমৃদ্ধ ফোনগুলোতে বাংলা ফন্টের সরাসরি কোন উপস্থিতি নেই। একারণেই নোকিয়ার N-Series এর হাই এন্ড ফোনগুলোতে সরাসরি বাংলা ফন্ট পাওয়া যাচ্ছে না। তবে জেনেছি থার্ড পার্টি সফটওয়্যার ব্যবহার করে .tft ফাইল এক্সটেনশনযুক্ত বাংলা ফন্টকে .gdr এক্সটেনশনযুক্ত বাংলা ফন্টে রূপান্তরিত করে তারপর বিশেষ নিয়মে এসব সেটের সি ড্রাইভে তা ইন্সটল করে –বাংলা ফন্ট পাওয়া যাচ্ছে।
আমি জানি, এ লেখা যারা ধৈর্য্য ধরে পড়ছেন, ইতিমধ্যে তাদের অনেকেরই মনের মধ্যে একটি প্রশ্ন জেগে উঠেছে।
.....কি সেই প্রশ্ন ?
প্রশ্নটি হচ্ছে - নোকিয়ার ৬৫০০ ফোনটি দিয়ে আমাদের সামহয়্যার ইন ব্লগে কোন লেখা বা মন্তব্য পাঠানো যাবে কি না? এর বিপরীতে খুব কষ্টদায়ক হতাশাব্যঞ্জক উত্তর হচ্ছে- 'না, যাবে না' । কারণ নোকিয়ার ৬৫০০ এর Writing language -এ শুধু হিন্দী ও ইংরেজী ভাষায় কোন কিছু লেখার সুযোগ রয়েছে, কিন্তু বাংলা ভাষায় কোন কিছু লেখার সুযোগ বা option নেই। .........
তবে আমাদের জন্য বিস্ময়কর আনন্দের সংবাদ হচ্ছে এই যে, নোকিয়ার অপেক্ষাকৃত কম দামের যেসব সেটে ইন্টারনেট অথবা ওয়াপ অপশন সহ বিভিন্ন কী অথবা বাটনের মধ্যে বাংলা বর্ণমালা খোদিত আছে, সেসব সেট দিয়ে আপনি ইন্টারনেটে ঢুকে সামহয়্যার ব্লগে বাংলায় মন্তব্যও পাঠাতে পারবেন (যেমন নোকিয়া ৬০৩০ অথবা নোকিয়া ৬০৭০)। আবার যেসব সেটের কী বা বাটনে বাংলা বর্ণমালা খোদিত নেই, এমন দুটি নোকিয়ার সেট দিয়েও আপনি সামহয়্যার ব্লগে মন্তব্য পাঠাতে পারবেন (যেমন নোকিয়া ৩১১০ এবং নোকিয়া ৩৫০০)।
আমি নিজে সামহয়্যার ব্লগের ব্লগারদের পিকনিক যাত্রার স্মরণীয় সেই দিনটিতে এ ঘটনাটি প্রথম পরীক্ষা করে দেখেছি।
আসুন একটি বর্ণনা দেই- সেই দিনটির স্মৃতি থেকে....। বর্ণনাটি হয়তো একটু আবেগময়ই হবে। ....
নিত্য দিনের চেনা পৃথিবীতে সেই দিনটি হয়তো একটু অন্যরকম-ই ছিল। তারিখটা ছিল ২৯ শে ফেব্রুয়ারী, ২০০৮। আমাদের প্রিয় ব্লগার সারিয়া তাসনিমের আহবানে হঠাৎ করেই পিকনিকে যাবার ব্যাপারে রাজী হয়ে গেলাম আমি।
এই রাজী হওয়ার পেছনে মূলত দুটি কারণ ছিল। একটি হচ্ছে, প্রায়শঃই অনিয়মিতভাবে লেখালেখির কারনে খুব পরিচিত ব্লগারদের কাছ থেকেও আমি কেমন যেন খুব দূরে চলে যাচ্ছিলাম, ক্রমশঃই খুব বেশী বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছিলাম। আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে, ব্লগে প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা পড়ে আমার অনুমান হচ্ছিলো- ব্লগে প্রচুর প্রতিশ্রুতিশীল নবীন ও তরুণ লেখক এসেছেন, তাদের সংগে পরিচিত হবার একটা প্রচন্ড মানসিক তাগিদও অনুভব করছিলাম। ...
একারণেই পিকনিক যাত্রায় রাজী হওয়া। একারনেই টিকাটুলীর মোড় থেকে পিকনিকের বাসে উঠে চুপচাপ পেছনের একটি সিটে বসে পড়া।
...
বাস চলছে। সময় গড়াচ্ছে, ব্লগারদের হৈ চৈ-ও চলছে। আমি চুপচাপ বসে আছি। একটু সংকুচিত হয়েই বসে আছি। আমাকে মনে হয় কেউ খুব একটা চিনছে না।
...
কী মুশকিল । ওরা কতো আনন্দ করছে সবাই মিলে। কতো হৈ হল্লা , কতো কিছু....। কিন্তু আমি? আমি পারছি না কেন? ....
দুই সারি সামনের সিটে বসেছে জয়িতা। ওকে নানারকম কথা বলে হৈ চৈ আর আড্ডায় মেতে উঠেছে কয়েকজন তরুণ ব্লগার।
আমি খুব মজা করে শুনছিলাম ওদের কথা। সেদিন সেই বাসে- এটা ছিল খুবই একটা স্বাভাবিক ব্যাপার যে- ওরা কেউ- সুনীল সমুদ্রকে চেনে না...।
আমি অপলক চোখে ওদেরকে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম-এরাইতো মাতিয়ে রাখে ব্লগ। এরাইতো প্রতিদিন চোখ রাখে প্রিয় এক অনবদ্য জানালায়। জাগায় রূপময় প্রাণোচ্ছল আকুলতা –সামহ্য়্যার ইন ব্লগের কারুকাজময় শব্দ বাগানে।
তাই প্রাণের স্বঃতস্ফূতর্তা তো থাকবে এখানেই। ওদের অন্তরেই.....।
ওদের হাতের মুঠোতেই তো ফুটে উঠবে আমার প্রাণের বাংলা ভাষার অপরূপ কথামালার অক্লান্ত সৌন্দর্য্য মাধুরী !
একটু পরেই চোখ গেল পেছনের একটা সীটে। সেখানে বসে ছিল নাঈম। ওর হাতে নোকিয়া ৩১১০ এর একটা সেট।
আমার চোখ যেন আটকে গেল সেখানে।
আমি জানতাম- নোকিয়া ৩১১০ এর Writing language-এর অপশনে ‘বাংলা’ Include করা আছে। তাই সেই সেটের কী বা বাটনে বাংলা অক্ষর না থাকলেও Writing language হিসেবে Bangla সিলেক্ট করে নিলে তা দিয়ে বাংলা লেখা সম্ভব। .... আমার ভেতরে কেমন যেন একটা চিত্ত চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়ে গেল। ... অতঃপর একসময় সব দ্বিধা ঝেড়ে ফেলে নাইমকে বলেই ফেললাম কথাটা।
বললাম, দিন –আপনার মোবাইলে আমি আমার গ্রামীনের সিম ভরে একটু সামহয়্যার ব্রাউজ করে দেখি। নাঈম স্বাচ্ছন্দ্যেই আমার হাতে তুলে দিল তার মোবাইলটা।
অনেকেরই নিশ্চয়ই মনে আছে- আমাদের সেদিনের বাসযাত্রায় আমাদের একজন ব্লগারের সাথে একটি ল্যাপটপও ছিল। সেটি ব্যবহার করে তখন সবেমাত্র পিকনিক যাত্রার বিষয়ে একটি পোষ্ট দিয়েছেন সারিয়া তাসনিম যার শিরোনাম ছিল-চড়ুইভাতি লাইভ আপডেট Click This Link
পোষ্টটি সেদিন সারাদিন ষ্টিকি হিসাবে প্রথমপাতায় ছিল। পোষ্টে বলা হয়েছিলো পিকনিকের প্রতি মুহুর্তের খবরা খবরের লাইভ আপডেট থাকবে সেই পোষ্টে।
ঠিক সকাল ৯ টা ৫ মিনিটে দেওয়া হয়েছিল সেই পোষ্ট। আমি দেখলাম, কিছুক্ষণের মধ্যেই পোষ্টটিতে মন্তব্য লিখতে শুরু করেছে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা সামহয়্যারের প্রিয় ব্লগাররা....। কিন্তু আমার মাথায় তখন কাজ করতে শুরু করেছে একটা নতুন পরিকল্পনা- নোকিয়ার ৩১১০ মোবাইলটিকে হাতে পাওয়ার কারণে সেটিকে কেন্দ্র করে একটি বিষয় পরীক্ষা করে দেখবার পরিকল্পনা.....।
আমি নাঈমের দেওয়া সেই নোকিয়া ৩১১০ মোবাইলের অপেরা মিনি ব্রাউজার এর সাহায্যে ঢুকে পড়লাম সামহ্য়্যার ইন ব্লগে.... তারপর ঢুকে পড়লাম সারিয়ার পিকনিক বিষয়ক সেই পোষ্টে..... এমনকি আমার ইউজার নেম আর পাসওয়ার্ড বসিয়ে লগ ইন-ও করে ফেললাম সাকসেসফুললি..... !!
কিন্তু এরপর ? এরপর চরম এক উত্তজনা ! মোবাইলের এই ছোট্ট স্ক্রীণে বাংলা লেখা পড়েছি অনেক আগেই... কিন্তু ব্লগে মন্তব্য প্রেরণ? না , তা হয়নি কখনো। এইতো ২০০৬ সালে যখন এই ব্লগে নোকিয়ার ৬০৩০ মোবাইলে বাংলা লেখা পড়তে পারার সুযোগের খবরটি জানিয়ে অনেক দীর্ঘ পোষ্টটি দিয়েছিলাম, তখনও ঐ মোবাইল থেকে বাংলা মন্তব্য লিখে ব্লগে প্রেরণ করা সম্ভব হয়নি।
.... আমার এখনো মনে পড়ে- ২০০৭ এর ফেব্রুয়ারী মাসে সামহয়্যার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আয়োজিত সামহয়্যারইনব্লগের প্রথম সেমিনারের দিনটিতে- যখন অরিল আর হাসিন হায়দার এর সাথে আমার দেখা হয়েছিল, তখন আমার হাতে ছিল নোকিয়ার ৬০৭০ মোবাইল, যাতে বাংলার সাপোর্ট থাকায় ব্লগ পড়া যাচ্ছিলো ঠিকই কিন্তু সেটা দিয়ে ব্লগে কোন মন্তব্য প্রেরণ করা যাচ্ছিলো না। অরিল সেদিন খুব আগ্রহ নিয়ে মোবাইলের স্ক্রীণে বাংলা লেখাগুলো দেখছিলেন এবং বারবার আমাকে জিজ্ঞেস করছিলেন, তুমি কি হাসিনকে এটা দেখিয়েছো? হাসিন কি এটি দেখেছে?’
সেদিন হাসিন ভাইয়ের সাথেও আমার কথা হয়েছিলো অনেকক্ষণ। আমি হাসিন ভাইকে জানিয়েছিলাম, ঐ মোবাইল থেকে গুগল সার্চে বাংলা শব্দ ইনপুট করা যাচ্ছে, অথচ ব্লগের পাতায় মন্তব্য লেখা যাচ্ছে না । ...এটি কেন হবে?
হাসিন আমাকে কথা দিয়েছিলেন-বিষয়টি তিনি গুরুত্ব দিয়ে সমাধা করবেন। হাসিন যে তার কথা রেখেছেন তা অনেকদিন পরে হলেও বোঝা গেল ভালভাবেই।
পিকনিক যাত্রার সেই দিনটিতে বাসের সিটে বসে নোকিয়া-৩১১০ দিয়ে ব্লগে লগইন করার পর বেশ কিছুটা সময় কোথা দিয়ে যেন তীব্র উত্তেজনায় কেটে গেলো আমার....। সারিয়ার পোষ্টের মন্তব্য লেখার স্পেসে গিয়ে মোবাইলের কী গুলো ব্যবহার করেই নির্দিষ্ট নিয়মে খুব ধীরে ধীরে বাংলায় লিখলাম ছোট্ট একটি লাইন- “আমিও যাচ্ছি সবার সাথে” । এরপর?
এরপর সেই মন্তব্য সেন্ড করার পালা। হবে কি -হবে কি ??
শেষপর্যন্ত হবে কি??? সম্ভব হবে কি মন্তব্য পাঠানো???...
আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে। ভীষণ একটা উত্তেজনা অনুভব করছি।
মোবাইল ফোনে আমি বাংলা পড়তে চেয়েছি বা বাংলায় লিখতে চেয়েছি আসলে সামহয়্যার কে ভালবাসি বলেই। আমি চেয়েছি দিবসের সকল ব্যস্ততায় যখন যেখানে থাকি, সামহ্য়্যার জ্বল জ্বল করে ফুটে থাকুক আমার পকেটে- মোবাইলের পর্দায়। আমি যখন যেখানে থাকি- সেখান থেকেই যেন মন্তব্য পাঠাতে পারি -যে কোন প্রিয় ব্লগারের প্রিয়তম কোন লেখায়।
আমার স্বপ্ন তো এভাবেই একটু একটু করে বর্ধিত হয়েছে- আসলে সারাক্ষণ সামহয়্যারকে কাছে পাবার জন্যই !
তাহলে ? তাহলে শেষ পর্যন্ত কি হবেনা? আমি কি পারবোনা মোবাইল থেকেই বাংলায় মন্তব্যটি পাঠাতে?
সকল রুদ্ধশ্বাস সময় অবসানের পর সারিয়ার লেখার মন্তব্য প্রেরণের ঘরের নির্ধারিত বাটনে ক্লিক করলাম।
দূরের শহরে হয়তো ঠিক সেই মুহূর্তে একটি নাম না জানা পাখী আনন্দে ডানা ঝাপটালো কিছুক্ষণ।
একটি রক্ত গোলাপ হয়তো ফুটে উঠলো কোন এক ব্লগারের বিমুগ্ধ নতুন বারান্দায়।
খুব বেশী মাত্রায় যেন বৃষ্টি নামলো শহরে ।
মুষলধারে অবিরাম-একটানা বৃষ্টি।
আনন্দের ! অপরূপ এক আনন্দের বৃষ্টিঁ !
দেখলাম- মন্তব্যটি যথাযথভাবেই সেন্ড হয়েছে ব্লগে। আমাদের পিকনিক বাসের ল্যাপটপে উকি মেরে দেখলাম- নোকিয়া ৩১১০ মোবাইল থেকে পাঠানো মন্তব্যটি শোভা পাচ্ছে সারিয়ার লেখার নীচের অজস্র মন্তব্যের ভীড়ে...।
মন্তব্যঃ
সুনীল সমুদ্র বলেছেনঃ
আমিও যাচ্ছি সবার সাথে।
*****************************
যদি এমন হয় যে, এর আগে আর কেউ এভাবে মোবাইল থেকে ব্লগে বা অন্য কোন বাংলা সাইটে বাংলাভাষায় মন্তব্য আপলোড করেননি, তবে সেদিনের সেই প্রেরিত মন্তব্যটিই সম্ভবতঃ বিশ্বের প্রথম বাংলা মন্তব্য যা মোবাইল ডিভাইস থেকে আপলোড হয়েছে ইন্টারনেটের কোন সাইটে। ....
অবশ্য প্রথম না হলেও ক্ষতি নেই।
নতুন কোন কিছু অর্জন বা প্রাপ্তির আনন্দের কাছে-প্রথম দ্বিতীয় বলে কিছু নেই।
শুধু প্রাপ্তিটাই নিঃসন্দেহে খুব বড়।
...
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।