যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
২. বাঙ্গালী পুরুষদের বিরুদ্ধে “জেন্ডারসাইড”
জেন্ডারসাইড বলতে বুঝায় নির্দিষ্ট লিঙ্গের মানুষের গণহত্যা। ৭১ সালের গণহত্যাও এই শ্রেনীর মধ্যে পরে।
২. ক পুরুষ মানুষের প্রতি আক্রোষ
এই গণহত্যার নির্দিষ্ট কিছু টার্গেট ছিলো। এন্থনি মাসকারেনহাসের মতে প্রধান টার্গেট ছিলোঃ (এন্থনি মাসকারেনহাস, দা রেইপ অফ বাংলাদেশ পৃ. ১১৬-১৭) – “গনহত্যার লক্ষ্য নিয়ে কোন দ্বিধা দ্বন্ধ ছিলো না”।
তার মতে - গনহত্যার লক্ষ্য ছিলো যথাক্রমেঃ
১. সেনাবাহিনীতে চাকুরিরত বাঙ্গালী জওয়ান, ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস, পুলিশ, আনদার ও মুজাহিদ
২. হিন্দু - আর জে রুমেল কুমিল্লাতে নিজ কানে শুনেন যে মিলিটারিরা বলছিলো, - “আমরা শুধু ছেলেদের হত্যা করার জন্য এসেছি, মহিলা ও শিশুরা নিরাপদ, আমরা কি কাপুরুষ যে তাদের হত্যা করবো” (ডেথ বাই গভার্নমেন্ট পৃ. ৩২৩) তাঁর মতে মিলিটারিরা নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করাকে নায়কোচিত কাজ বলে মনে করতেছিল।
অবশ্য অনেক ক্ষেত্রেই পুরো পরিবার হত্যাকান্ডের স্বীকার হয়েছিল।
৩. আওয়ামী লীগের নেতা, কর্মী ও সমর্থক।
৪. ছাত্র - কিশোর ও তরুন বয়সীদের প্রতিও পাকি মিলিটারির নির্মম আক্রোষ দেখা গিয়েছিলো। তারা অল্প বয়সী কেউকে দেখলেই মুক্তিবাহিনী বলে মনে করত এবং নির্বিচারে তাদের হত্যা করে। আর জে রুমেলের বর্নণায় অসংখ্য কিশোর ও তরুনদের মৃতদেহ দেখা গিয়েছিল মাঠে, নদীতে ভাসমান অবস্থায় বা আর্মি ক্যাম্পের আশে পাশে।
৬. বাঙালী বুদ্ধিজীবি - শিক্ষক ও অধ্যাপকদের মধ্যে সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে যাদের “সংগ্রামী” মনে হয়েছ - তাদেরকেই হত্যা করা হয়েছে (এন্থনি মাসকারেনহাস, দা রেইপ অফ বাংলাদেশ পৃ. ১১৬-১৭)
এন্থনী মাসকারেনহাসের লেখার সারমর্ম হলো এই যে, হত্যাকান্ডের সাথে লৈঙ্গিক ও সামাজিক শ্রেনীর (বুদ্ধিজীবি, অধ্যাপক, শিক্ষক, নেতা/কর্মী, এবং মুক্তিসংগ্রামীরা প্রায় সবাই পুরুষ ছিলো)। অনেক ক্ষেত্রে উপরোক্ত ব্যক্তিবর্গের পরিবারের সদস্যদেরও হত্যা করা হয় শুধু মাত্র পারিবারিক বা রক্তের সম্পর্কের কারনে।
এই সব বিষয় থেকে প্রমানিত হয় ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক একটা জেন্ডারোনাইড সংগঠিত হয়েছে।
ড. রওনক জাহানের মতে - “ মুক্তিযুদ্ধের সম্ভ্রাব্য যোদ্ধা হিসাবে সকল যুবকদের গ্রেফতার ও নির্যাতন চালায় আর্মি - পরে আধিকাংশকে হত্যা করা হয়। এই অবস্থার প্রেক্ষিতে শহর ও উপশহরগুলো যুবক শুণ্য হয়ে যায়।
তাদের অনেকে ভারতে গিয়ে আশ্রয় নেয় অথবা মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। ”
“সক্ষম যুবকদের মধ্যে যাদের খাতনা করা হয়নি তাদের জন্যে মৃত্যু অবধারিত হয়ে যায়”। (জেনোসাইড অব বাংলাদেশ, আর জে রোমেল, পৃষ্ঠা ২৯৮)
রোমেল আরো বলছেন - “পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দৃষ্টিতে প্রতিরোধ যুদ্ধে যেতে স্বক্ষম কিশোর যুবকদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান চালায় - সেই অভিযানে ধৃত যুবকদের আর কখনও জীবিত অবস্থায় দেখা যায়নি। তাদের মৃত দেহগুলো ভাসতে দেখা গেছে নদীতে, সেনা ক্যাম্পের কাছে। এই অভিযানে স্বাভাবিক ভাবে ভীত হয়ে পড়েছিলো সকল যুবক আর তাদের পরিবারবর্গ।
এই অব্স্তার প্রেক্ষিতে ১৫ থেকে ২৫ বছরের সকল যুবক গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে পালিয়ে বেড়িয়েছে - যাদের অনেকে ভারতে চলে গিয়েছিলো। যারা বাড়ী ছাড়তে চাইছিলো না - তাদের মা বা বোনেরা তাদের জোর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে - যাতে তাদের জীবন রক্ষা পায়। “ ( ডেথ বাই গভর্নমেন্ট)
রোমেলের বর্ননা মতে ( পৃষ্টা - ৩২৩) এই গা হিম করা গনহত্যার উৎসবটি অনেকটা নাজীদের “পুরুষ নিধন” কর্মসূচীর সাথে তুলনীয়-যাতে - “এটা ছিলো প্রদেশব্যাপী একটা গনহত্যা, যেখানে হিন্দুদের আলাদা করে হত্যা করা হয়েছে - সেই প্রক্রিয়ায় সেনা সদস্যরা ধৃতব্যক্তিদের খাতনার বিষয়টা নিশ্চিত হতো - যা মুসলমানদের জন্যে বাধ্যতামুলক - যদি খাতনা করা থাকতো - তাহলে হয়তো তাৎক্ষনিক মৃত্যু এড়ানো যেত। “
রবার্ট পাইন ঢাকা শহরের আশেপাশে গনহত্যার স্থানগুলোর বর্ননা করতে গিয়ে সেইগুলোকে পরিকল্পিত গনহত্যা - বিশেষ করে লৈঙ্গিক” গনহত্যার একটা ক্লাসিক উদাহরন হিসাবে দেখেন - যা লিঙ্গভিত্তিক ও নিরষ্ত্র মানুষের উপর সংগঠিত হয়ে ছিলো বলা হয়।
“ঢাকা ও তার আশেপাশে নির্জন প্রান্তগুলোতে মিলিটারি জান্তা গণহত্যার এক্সপেরিমেন্ট চালায় (বিশেষ করে পুরুষদের উপরে) যাতে করে সাংবাদিকদের চোখ এড়িয়ে যায় এই ঘটনাগুলো।
বুড়িগঙ্গার তীরে হরিহারাপারাতে এইরকম তিনটা প্রমান রবার্ট পাইন আবিষ্কার করেন – একটি বন্দীশালা (নদী তীরবর্তী গোডাউন), মৃত্যুদন্ড দেবার জায়গা (নদীর তীরে) ও তাদের লাশ ধামাচাপা দেবার উপায় (নদীতে ভাসিয়ে দিয়ে)। ছয় থেকে আট জন বন্দীকে দড়ি দিয়ে বেধে রাতের আধারে মেরে ফেলা হয়েছে। এই ঘটনা ঘঠেছে রাতের পর রাত। পাকিস্তান ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পনীর গোডাউনটি ছিল নদীর ধারে - সেখানে প্রতিরাতে দলে মানুষ ধরে আনা হতো - আট দশজনকে দড়ি দিয়ে বেধেঁ নদীর অল্প পানিতে নামিয়ে গুলি করা হতো। ভোরে কোন নৌকার মাঝিকে দিয়ে ভাসমান লাশগুলোর দড়ি কেটে আলাদা করে দিয়ে নদীর মাঝে টেনে নিয়ে যাওয়া হতো - যাতে স্রোতের টানে লাশগুলো আলাদা আলাদা ভাবে ভেসে যায় (রবার্ট পাইন, ম্যাসাকার, পৃ. ৫৫)।
উপরের বর্ননা থেকে এইটা বলা যায় যে, এই হত্যাকান্ডগুলো আর্মেনিয়া ও নানজিং (১৯৩৭) গনহত্যার সাথে সমাঞ্জ্যস্যপূর্ন।
মুল রচনা: জেন্ডারোসাইট ওয়াচ
http://www.gendercide.org/
[জোন্ডারসাইট ওয়াচ সাধারন মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যালীলার বিষয়ে গবেষনা করে। তাদের মতে নিরস্ত্র মানুষের উপর সংগঠিত হত্যাকান্ড বা গনহত্যা বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বমানবতার বিরুদ্ধে বড় একটা হুমকী]
১. পর্ব ১-সূচনা ও পূর্ব কথা
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।