আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কেইস নাম্বার ৫৩



আরশাদ আলী সাহেব বিরক্তি চেপে রাখার চেষ্টা করছেন, পারছেন না। আজ শুক্রবার। বৃহস্পতিবার তিনি গভীর রাত পর্যন্ত পড়ালেখা করেন এবং শুক্রবারে দেরিতে উঠেন। কিন্তু আজ পারলেন না। সাত সকালে এই মেয়ে কোত্থেকে উদয় হয়েছে কে জানে।

অবশ্য মেয়েটার চেহারা দেখে মায়াই লাগছে। কেমন যেন কুঁকড়ে আছে মেয়েটা। “আযাদকে প্রথম দেখি ভার্সিটির কেন্টিনে। আমি তখন অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। বাইরে প্রচন্ড বৃষ্টি।

হটাত্‍ দেখি একটা ছেলে কোত্থেকে কতগুলো কদম ফুল নিয়ে এদিকে আসছে। ফুলগুলো এত সুন্দর, দেখেই পছন্দ হয়ে গেল। ছেলেটা আমার সামনে দিয়ে চলে গেল এবং সাথে সাথেই ফিরে এলো। ‘নেন, ফুলগুলো আপনাকে দিলাম; আপনি চাচ্ছিলেন’। আমি পুরোপুরি হতভম্ব হয়ে গেলাম।

আমি চাচ্ছিলাম ঠিকই, কিন্তু সে বুঝল কেমন করে! সেই শুরু, তারপর থেকে আমাদের প্রায়ই দেখা হত এবং প্রত্যেকবারই আমি তাকে কোন কিছু বলার আগেই সে বুঝে ফেলত আমি তাকে কি বলতে চাচ্ছি। এভাবে দিন যেতে লাগল, আমাদের ঘনিষ্টতাও বাড়তে লাগল। কিছুদিন পর আমরা বিয়ে করলাম”। এক নিঃশ্বাসে সব বলে মেয়েটা হটাত্‍ চুপ হয়ে গেল। আরশাদ আলী চোখ বন্ধ করে ছিলেন, চোখ খুললেন।

সোজা হয়ে বসতে বসতে বললেন, আপনাদের বিয়ে হয়েছে কত বছর হল? ঃ ২ বছর, এক গ্লাস পানি খেতে পারলে ভাল হত। আরশাদ আলী পানি আনলেন, সঙ্গে দুই কাপ চা। মেয়েটা এক ঢোকে পানিটা শেষ করলো। এরপর আবার শুরু করলো, “বিয়ের পর থেকেই তার চেহারা বদলাতে শুরু করলো। আস্তে আস্তে জানতে পারলাম, সে অনেক অপরাধকর্মে জড়িত।

এক সময় মনে হতে লাগলো, আযাদ আসলে মানুষ না, পিশাচ। আমি তার দিকে তাকালেই সে বুঝে ফেলে আমি কি ভাবছি। মানসিক ভাবে আমি ভেংগে পড়তে লাগলাম। এর মধ্যে জানতে পারলাম, সে এইভাবে আরও অনেক মেয়ের জীবন নষ্ট করেছে। এসব নিয়ে একদিন তুমুল ঝগড়া করলাম।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখি সারা শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা। নড়াচড়ার ক্ষমতা নেই। মনে হচ্ছে আমার সব হাড্ডি গুড়া হয়ে গেছে। অথচ শরীরে একটা দাগও নেই। " ঃ আপনি আমার কাছে কেন এসেছেন? ঃ স্যার, আপনি আমাকে বাঁচান।

আমার জীবনটা নরক হয়ে গেছে। বহুবার পালিয়ে যাবার চেষ্টা করেছি, পারি নাই। মনে হয়, কোথায় জানি আটকে যাচ্ছি। চলে যাই, আবার ফিরে আসি। ঃ আপনি যে এখানে এসেছেন, আযাদ সাহেব কি সেটা জানেন? ঃ না, সে ২ দিনের জন্য চিটাগাং গেছে।

আমি অনেক কষ্টে আপনার ঠিকানা যোগাড় করে এখানে এসেছি। আরশাদ সাহেব চেয়ার থেকে উঠে কিছুক্ষণ পায়চারি করলেন। তারপর হাঁটা থামিয়ে বললেন, এখন আপনি আমার কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিন, প্রথম যেদিন আযাদ সাহেব ফুল নিয়ে আপনার সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি কি আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে ছিলেন? ঃ হ্যা। ঃ এমন কি কখনো হয়েছে, আপনি তার দিকে না তাকিয়ে তার ব্যাপারে কিছু ভেবেছেন; তিনি সেটা বুঝে ফেলেছেন? ঃ খেয়াল করিনি। তবে সম্ভবতঃ, না।

ঃ আযাদ সাহেব দেখতে কেমন? ঃ রাজপুত্রের মত। ঃ আপনি কি চাকরি-বাকরি কিছু করেন? ঃ না। ঃ করেন না কেন? ঃ সে পছন্দ করে না, তাই। আমি ওকে খুব ভয় পাই। আরশাদ আলী আবার ঘরময় পায়চারি শুরু করলেন।

বেশ কিছুক্ষণ পর তিনি তার চেয়ারে গিয়ে বসলেন। ঃ আমি লক্ষ্য করেছি, আপনি যখন আপনার সামনে উপস্থিত কারও সম্পর্কে কিছু ভাবেন তখন আপনার ঠোঁট কাপে, যেটা এর মধ্যে বেশ কয়েকবার হয়েছে। আমার ধারণা, আপনার মনের কথাগুলি অনেকসময় আপনার অজান্তেই আপনার ঠোঁটে প্রকাশ পায়। আযাদ সম্ভবত খুব ভালো লিপ-রিডার। সে কোনভাবে লিপ- রিডিংযের মাধ্যমে আপনার Thought রিড করতে পারছে।

তার রাজপুত্রের মত চেহারা, মনের কথা বলতে পারার ক্ষমতা সব মিলিয়ে আপনি তার প্রতি গভীর ভাবে মোহাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং তাকে অতিমানব ভাবা শুরু করেন। কিন্তু আসলে তার কোন অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা নেই। আমার ধারনা, আপনি যদি একটা চুইংগাম চিবুতে চিবুতে তার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কঠিন কোন গালিও দেন, সে ধরতে পারবে না। এবার আসি দ্বিতীয় প্রসংগে, আযাদের প্রতি অতিরিক্ত মুগ্ধতার কারনে বিয়ের পরে আপনি তার কাছে পুরোপুরি সমর্পিত হয়ে যান। ফলে তার আরেকটা সুবিধা হয়।

সে আপনাকে সহজেই হিপনোটাইজ করে ফেলে এবং প্রয়োজনমতো তাতে সে কিছু self – torturing hypnotic suggestions ব্যবহার করে। যেহেতু আমরা আমাদের শারীরিক সব অনুভূতি মস্তিষ্ক দিয়েই অনুভব করি, তাই ঘুম থেকে উঠে শরীরে কোন চিহ্ন দেখতে না পেলেও আপনি মনের যন্ত্রণাদায়ক সেই অনুভূতিগুলিই আপনার মস্তিষ্কের মাধ্যমে অনুভব করেছেন। এখন আপনার কাজ একটাই- এই আচ্ছন্নের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসা। আমার বিশ্বাস, এর প্রক্রিয়া অলরেডি শুরু হয়ে গেছে।


সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.