যুদ্ধাপরাধীর বিচার ও জামায়াতের রাজনীতি নিষিদ্ধ করার দাবী করছি
বিংশ শতাব্দীর গনহত্যাগুলির মধ্যে বাংলাদেশের ১৯৭১ এর ধ্বংসলীলার মাধ্যমে সংগঠিত গণহত্যা শতাব্দির সবচেয়ে নিবিড় গনহত্যাগুলো যেমন সোভিয়েট যুদ্ধবন্দী হত্যা (১৯৪১-৪২), ইহুদী হলোকাস্ট (১৯৩৩-৪৫) বা রুয়ান্ডার গণহত্যার (১৯৪৪) মতো বিশেষ গুরুত্বপূর্ন। এই চার গণহত্যা এই শতাব্দীর সবচেয়ে নৃশংষ ঘটনাগুলোর অন্যতম। ততকালীন পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতাকামী শক্তিকে ধ্বংসের প্রচেষ্টার অংশ হিসাবে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ বাঙ্গালীকে হত্যা করে।
১. পিছনের কথা
জাতি, ধর্ম অনুসারে দেশবিভাগের বিরুদ্ধে মহাত্মা গান্ধি ও অন্যান্যদের অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও বৃটিশ ও তৎকালীন উপমহাদেশের রাজনীতিবিদের কারনে ধর্মের ভিত্তিতে দুইটা দেশ গঠন করা হলে সংখ্যালঘুরা আদি নিবাস ছেড়ে অন্য প্রান্তে পাড়ি জমাতে বাধ্য হয় আর সেইসাথে শুরু হলো ধর্মগত দাঙ্গা।
পশ্চিম পাকিস্তানীদের পূর্ব পাকিস্তানীদের উপরে জোর জুলুম চালানোর কারনে আস্তে আস্তে অসন্তোষ দানা বাধঁতে শুরু হয়।
ভাষা নিয়ে ১৯৫২ সালে সংঘটিত হয় ভাষা আন্দোলন। এরপর ১৯৭০ সালের আগস্টের বন্যায় ত্রানের অপ্রতুলতা ও নানানভাবে প্রতিনিয়ত বঞ্চনা বাঙ্গালিদের মধ্যে বিদ্রোহী মনোভাবের জাগরণ ঘটায়। ফলশ্রুতিতে ডিসেম্বর মাসের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ট আসনে জয়লাভ করে। সেই সময়ের অন্যতম দাবী ছিল স্বায়ত্বশাসন ও মিলিটারি শাসনের অবসান। এই আন্দোলন আস্তে আস্তে স্বাধীনতার আন্দোলনে রূপান্তরিত হয়।
ফলশ্রুতিতে ১৯৭১ সালের ২২ এ ফেব্রুয়ারি পাকি জান্তা আওয়ামী লীগের নেতা ও সমর্থকদের উপরে একটি ক্র্যাক ডাউনের পরিকল্পনা করে।
সামরিক সরকারের প্রধান ইয়াহিয়া খান ফেব্রুয়ারী ‘৭১ এ একটি কনফারেন্সে ঘোষনা দেয় - “ আমরা ওদের মধ্যে ৩০ লক্ষ শেষ করে দেব আর বাকীরা আমাদের কাছে জীবন ভিক্ষা চাইবে”। (রবার্ট পাইন, ম্যাসাকার, পৃ. ৫০)।
জেনারেল ইয়াহিয়া খানের এই উক্তি থেকে সুস্পষ্ট ইংগিত পাওয়অ যায় যে, পাকিস্তানী শাসকচক্র তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীদের দমনের জন্যে একটা গনহত্যার পরিকল্পনা করেছিলো।
অবশেষে ২৫ এ মার্চ শুরু হয় সেই ইতিহাসের নির্মম ঘটনার।
পাকি মিলিটারি আক্রমণ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটি, ই পি আর ও অন্যান্য এলাকা। মানুষকে পাখির মত গুলি করে মারা শুরু হলো। এক রাতেই ৭০০০ জনের মত হতভাগ্য বাঙ্গালি মারা যায়। সেইটা ছিলো শুধুমাত্র শুরু।
“এক সপ্তাহের মধ্যে ঢাকায় অর্ধেক অধিবাসী পালিয়ে যায় এবং কমপক্ষে ৩০,০০০ এর মত নিরস্ত্র মানুষ নিহত হয়।
চট্রগ্রামও তার অর্ধেক জনসংখ্যা হারায়। সেই সময়ে (এপ্রিলের উপাত্ত অনুযায়ী) ৩০ মিলিয়নের মত মানুষ হতভম্বের মত দিশেহারা হয়ে দেশের ভিতরেই স্থানান্তর হয়ে মিলিটারিকে ফাঁকি দেবার চেষ্টা করছিলো” (রবার্ট পাইন, ম্যাসাকার, পৃ. ৪৮)।
অবশেষে ১০ মিলিয়ন বাঙ্গালি ভারতে পালিয়ে শরণার্থী হয়। উল্লেখ্য তখন সেই ভুখন্ডের সর্বমোট জনসংখ্যা ছিলো ৭৫ মিলিয়ন।
অবশেষে এপ্রিলের ১০ তারিখে আওয়ামীলিগের নেতৃত্ববৃন্দ স্বাধীনতা ঘোষনা করে।
ধীরে ধীরে মুক্তিবাহিনী সংগঠিত হতে থাকে এবং পাকিস্থানী সেনাবাহিনীর সাথে লড়াই শুরু করে। প্রাথমিক ভাবে দেশের ভুপ্রকৃতি ও জনগনের সহায়তায় গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে মুক্তিবাহিনীর কার্যক্রম শুরু হলেও পরে জনসমর্থনের কারনে একটা গণযুদ্ধে পরিনত হয়।
মুল রচনা: জেন্ডারোসাইট ওয়াচ
[জোন্টরোসাইট ওয়াচ সাধারন মানুষের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হত্যালীলার বিষয়ে গবেষনা করে। তাদের মতে নিরস্ত্র মানুষের উপর সংগঠিত হত্যাকান্ড বা গনহত্যা বর্তমান শতাব্দীতে বিশ্বমানবতার বিরুদ্ধে বড় একটা হুমকী]
(চলবে...)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।