আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“হঠাত- জ্বিহবাতে পানি”, মিশন “চাঁপাইনবাবগঞ্জ” (গিগা - এডভেনচার)

আমার লিখা পূর্বের আণুবীক্ষণিক গল্প সমূহ : ১। অনাবৃতা পরিণীতা একটি ফুল । ( আণুবীক্ষণিক গল্প – ০১ ) ২। বিছানায় একটি কোল-বালিশ ( আণুবীক্ষণিক গল্প – ০২ ) হঠাত ! এর আভিধানিক অর্থ বা সমার্থক শব্দ যে কী তা আমাদের অর্থাৎ আমাদের গুটু কয়েক বন্ধু-বান্ধবের যেন কোন বিবেচ্য বিষয়-ই নয়। আমাদের কাছে “হঠাত” মানে, যেন এক নব প্রাণের চাঞ্চল্য, এখন-ই যেমন আছি সেভাবে।

অনেক ঘটনায় হৃষ্ট-পুষ্ট আমাদের এই “হঠাত” । তবে সব ঘটনার মাঝে যে কিছু অঘটনের উঁকি নেই, ফোকলা দাঁতের হাঁসি নেই, নেংড়া পায়ের দৌড় নেই, পিঠে দুটো বাড়ি নেই, চম্পট দেবার ইতিহাস নেই, চার রাত ঘুম নেই ইত্যাদি ইত্যাদি তা কিন্তু নয় । আছে, অনেক আছে । এত সব না হয় পরে হবে কোন দিন । আজ “হঠাত” এর ই একটি কাহিনী বলে ফেলি ।

৮ই ফাল্গুন, ১৪১৯ বঙ্গাব্দ, বসন্তকাল। প্রকৃতিতে যতই বসন্ত বিরাজমান হোক না কেন, আমাদের বন্ধুদের বেশির ভাগই খরার তাপদাহ বুকে নিয়ে, ফেটে চৌচির গাঙ্গের মাঝেই এখন ও পড়ে আছে। দু-একটি বন্ধুর অবশ্য পাতা শূণ্য গাছে দু-একটি করে নতুন পাতা গজাতে শুরু করেছে। কোকিলের মধুর গান নাকি তাদের কান অব্ধি পৌছায়। নতুন ফুলের সুগন্ধভরা সুবাস তাদের আর খুব বেশি দূরে নয় ।

আমরা অবশ্যি একটা কথা ভেবে মনে মনে শান্তনা নেবার আপ্রাণ চেষ্টা করি যে, তারা খুব তাড়াতাড়ি “আজীবন স্বশ্রম কারাদন্ডে দন্ডিত” হতে যাচ্ছে। কী করবো বলুন, আঙ্গুর ফল তো মাঝে মাঝে টকও হয় । এমনি এক দৃশ্যপটে আমরা পাঁচ বন্ধু মিলে তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা এর মত আমাদের ঠিকানা “বর্ণালীর মোড়ে” বসে সকাল ১০ ঘটিকা হতে চুটিয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এর মধ্যে যেটি না বললে বলাটা অপূর্ণ থাকে যে, আমাদের বন্ধুদের মাঝে এমনও ঘটেছে যে বর্ণালীর মোড়ে একদিন না আসার দরূন তার পরিপাক ক্রিয়ায় সেদিন ব্যপক গন্ডগোল পরিলক্ষিত হয়েছিল, বুঝুন তাইলে । এমন সময় “হঠাত-ই” বাষ্পশকট আমাদের কর্ণ-গহ্বরে তার অত্যন্ত কর্কশ ভেপুর শব্দ প্রবেশ করিয়ে রাজশাহী স্টেশন এর দিকে দ্রুত গতিতে চলে গেল।

এই দ্রুত গতি যে কতটা দ্রুত তা পরে হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছিলুম । হঠাত আমাদের এক বন্ধু রাসেল সেই “হঠাত” নামক তিন অক্ষরের শব্দটির সদব্যবহার করে বলে উঠল “চল এখনই দূরে কোথাও হতে ঘুরে আসি”। আসিফ ও বলে উঠল মন্দ কীসে । এই আসিফকেই একবার ফোকলার হাঁসি হাঁসতে হয়েছিল, সে ছিল এক মজার কাহিনী। রূপম ভাই, মনি আর আমিও বললুম তথাস্ত।

এই বারটি আর না বললে হয়তো পাঠক ভূল ভেবে না বসাটাই অস্বাভাবিক যে, মনি আমাদের ছেলে বন্ধু মেয়ে নয়। সে মাঝে মাঝে তাদের ব্যবসা দেখাশোনা করছে। রূপম ভাই আমাদের বন্ধু হলেও ভাই, ইঞ্জিনিয়ারির পাস করে এখন তিনি একটি বিদ্যুত কেন্দ্রে চাকুরী করছেন। রাসেল বিবিএ পাস করে চাকুরী খুঁজছে পাশাপাশি তাদের ব্যবসা দেখাশোনা। আসিফের পড়াশোনা শেষের দিকে, চারু ও কারুকলায়।

আমি আর আমার আর এক বন্ধু সুফিয়ান ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে বছর খানেক চাকুরীর পর এখন ভবঘুরে অর্থাৎ ভাল চারুরীর খোঁজে। চাকুরীতে চাকরের স্বভাবটা যে কী পরিমানে বিদ্যমান থাকতে হয় সে সম্পর্কে আমরা আর অনবগত নই। ওদিকে রনি ও প্রিন্স একটি মাস অবধি প্রকল্পে জড়িত থাকায় আমাদের এই “হঠাত প্রকল্পে” যোগদানে অসমর্থিত হল। আরিফ আর সুফিয়ানও ব্যস্ততার কারনে বঞ্চিত। আমাদের রুবেলকে ফোন করার সাথে সাথে সে তো এক পায়ে খাঁড়া।

আর দিন আষ্টেক পরেই সে এক মধূর বন্ধনে আবদ্ধ হতে যাচ্ছে। আহারে বেচারা! দুই হাতেই তার হাতকরা পড়তে যাচ্ছে ) । আমরা যে কজন বীর-সেনা “হঠাত” এর মান মর্যাদা অক্ষুন্ন রাখার তরে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম তাদের মনবল অটুট থাকলেও পকেট কিন্তু গড়ের মাঠ, অর্থাৎ খাঁটি বাংলা ভাষায় ঠনঠনে। আমার পকেটে সাকুল্যে ১০০ টাকা, রূপম ভায়ের ৩০০ টাকা, রাসেলের ১০০ টাকা আর আসিফ ও মনির পকেট যে আমাদের পর্যাপ্ত সাহস যোগাবে তা কিন্তু নয়, যদিও আমাদের সাহসে এত টুকু চির নেই। আমাদের সেই সময়ের পোষাকের বর্ণানা দিয়ে আমরা যে পারি তা না হয় আর জাহির নাই করলুম।

অতপর আমরা রেল-লাইন ধরেই হাঁটতে শুরু করলাম রাজশাহী স্টেশনের উদ্দেশ্যে, তখন মোটামোটি বেলা ১২ টা। আমাদের দাঁতগুলো তখন ভয়ংকর সুন্দরভাবে নিজেদের মেলে ধরার এক প্রতিযোগীতায় মত্ত। ১২ টা ২০ মিনিটে আমরা রাজশাহী স্টেশনে। গন্তব্য চাঁপাই-নবাবগঞ্জ। ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে পশ্চিম দিকে মুখ করে।

খোঁজ নিয়ে জানলাম ট্রেন দুপুর ১ টা ৪৫ মিনিটে। এখনও অনেক সময় থাকায় সুফিয়ানকে আবার ফোন করা হল। সে জানাল আসবে। মনটা যে কী খুশী হয়েছিল তা বোঝা যায় যখন ট্রেন ছাড়ার ১৫ মিনিট আগে তার একটি মেসেজ আসল আমার মোবাইলে-“দোস্ত আমি যাব না তোরা যা”। ইতোমধ্যে রুবেল চলে এসেছে।

রাসেল কিনে এনেছে এক সেট প্লে-কার্ড যার প্রয়োগ হবে ট্রেনের কামরায়। পর্যাপ্ত সময় থাকাতে আসিফকে পাঠানো হয়েছিল কিছুদিন আগে কেনা তার ডি.এস.এল.আর ক্যামেরাটা নিয়ে আসার জন্য। যখন সে ফিরে আসল, আমাদেরকে অবাক করে সে শুধু ক্যামেরা নিয়ে ফেরেনি, বরং পায়ের রংচটা চটির পরিবর্তে শোভা পাচ্ছে এক জোড়া কেডস। গায়ে গেঞ্জির পরিবর্তে শার্ট এবং জ্যাকেট আর মুখে শোভা পাচ্ছে দুই পাটি সাদা দাঁত যা আগেও যথাস্থানে ছিল, কিন্তু লুকায়িত। তাকে দেয়া আমাদের সবার ঝাড়ির পরিমানের অবশ্যি কমতি হল না কোন অংশেই যদিও তার দন্তপাটিদ্বয়কে সামান্যতমও ঢাকতে আমরা অসমর্থিত ঘোষিত হলুম।

ট্রেন ছাড়ে ছাড়ে এমন সময় ট্রেনের কাছে প্ল্যাটফর্মে গিয়েই আমাদের ছয়-দু-গুলে বারটি চক্ষু একসাথে কপালে উঠল। ট্রেনে যে তীল ধারনের জায়গা নেই। শেষ সম্বল নামাজের কামরাটি পর্যন্ত পরিপূর্ন। সিন্ধান্ত হল যে ভাবেই হোক আমরা নামাজের কামরায় ঢুকব এবং যাবই যাব। রুবেলের দিকে তাকিয়ে আমরা আবিষ্কার করলাম যে তার চোখ জোড়া বহু কষ্টে কপাল হতে যথাস্থানে নামিয়ে ট্রেনে না চড়ে বসে থাকল প্ল্যাটফর্মে।

আমরা অবশেষে উঠলাম নামাজের কামরায়। এই সময় আসিফ এর চোখ যেন দুটো ইয়া বড় রসগোল্লা আর আমাদের দুই ঠোঁটের কিনারাদ্বয় গিয়ে ঠেকেছে দুই কান অবধি কারন, তার পায়ের জুতো বার বার খুলতে হবে আর পড়তে হবে মসজিদের কামরাতে ঢুকতে আর বের হতে। বুঝ ব্যাটা এবার জুতোর ঠেলা। মসজিদের কামরায় আমরা ঠেলাঠেলি করে জায়গা করে নিয়ে বসতেই ট্রেন ছেড়ে দিল। ট্রেন সমেত আমরা চলতে শুরু করলাম।

রুবেলও প্ল্যাটফর্ম এ চলতে শুরু করে দিয়েছে। তবে সে চলেছে বাড়ির দিকে আর আমরা চলেছি চাঁপাই এর দিকে, এই হল পার্থক্য। শুরু হল আমাদের কার্ড খেলা, স্প্রেড-টার্ম। রুপম ভাই এর খেলার চেয়ে খেলা দেখতেই বেশি পছন্দ হওয়ায় আমরা বাকি চার জন আমি, আসিফ, রাসেল ও মনি খেলতে খেলতে খেলার গভীরে প্রবেশ করলাম। অনেক পরে আমরা বুঝতে পারলাম আমাদের সবার পায়ে ঝিঁ ঝিঁ লেগে গেছে।

তাতে আর কী, পর্যাপ্ত স্থান না থাকায় উপায় নেই একটু ছড়িয়ে বসার। আহ-উহ ধ্বনি করতে করতে আর খেলায় মসগুল থেকে আমরা বুঝতেই পারলাম না কখন আমনূরা জংশন স্টেশনে পৌছে গেছি। ইতোমধ্যে আমরা পেরিয়ে এসেছি দুটি ঘন্টা। ইঞ্জিন বদলানোর দরুন ট্রেন এই স্টেশনে কিছুক্ষন থামে। তাই আমরা নামলাম এবং দিক-বিদীক জ্ঞানশূন্য হয়ে খুঁজতে থাকলাম কোথায় একটু হিসি (ছোট কাজ) করতে পারি।

প্রাকৃতিক কাজ সম্পন্ন করে আমরা সিংগারা, কলা, চা ইত্যাদি খেলাম। প্ল্যাটফর্মের যেখানে আমি বসে ছিলাম সেখান থেকে ক্ষনিকের জন্য উঠতেই দুটি মেয়ে এসে আমার জায়গা দখল করে নিল। সান্তনা এই, মনে মনে ভাবলাম, লেডীস ফাস্ট। ওদিকে বাকি চার জনের মুখে হাঁসির হো হো রব উঠেছে, যেন ওরা খুব মজা পেয়েছে। মজা তো পাবেই, আমরা তো মজা করতেই এসেছি তাই রাগ করা বোকামি ছাড়া আর কী।

ট্রেন আবার ছাড়ল, আমরা ট্রেনের সেই একই নামাজের কামরায় উঠলাম। এবার আমাদের মুখে কালো ছায়া ফেলে আসল টিটি। টিটি লম্বা পাতলা গড়ন আর মুখে খোঁচা খোঁচা দাড়ি। এসেই খনখনে গলায় বলে উঠল “টিঁকেঁটঁ”। আমরা চুপচাপ সাটি-কাপ মেরে অন্যদিকে চেয়ে বসে আছি আর অন্যদের সাথে টিটি এর কথা শুনছি।

এক যাত্রী আমাদেরই সমবয়সী বলল টিকিট কাটতে পারি নি। টিটির মনের কথাটি যেন আমরা শুনতে পেলাম, “টিঁকেঁটঁ তোঁ আঁমিঁ বাঁবাঁ কাঁটঁতেঁওঁ বঁলিঁনিঁ, যাঁ আঁছেঁ টাঁকাঁ আঁমাঁরঁ হাঁতেঁ দাঁওঁ”। একজন নিরীহ গেঁয়ো গোছের ছেলেকে টিটি ধমকে উঠল, “টিঁকেঁটঁ কাঁটঁনিঁ, চঁলঁ পুঁলিঁশেঁ দেঁবঁ”। জানি ভয় দেখাচ্ছে। যে যা পারল টাকা টিটির হাতে দিল।

হাতে টাকা পড়তেই টিটির ৩২ টি দাঁত উঁকি দিল। আমরাও দিলুম পাঁচ জন মিলে পঁয়ত্রিশ টাকা। পাঠক ভাববেন না যে আমরা সেই যুগে চলে গেছি যে যুগে টাকায় আট মন ধান পাওয়া যেত। আমরা বর্তমান যুগেই আছি যে যুগে চাল পঁয়তাল্লিশ টাকা কেজি। টেনের প্রকৃত ভাড়া এক এক জনের চল্লিশ টাকা করে।

আধা ঘন্টা পর আমরা পৌঁছলাম গন্তব্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ স্টেশনে। অত্যাধিক ভীড় হওয়ায় দরজা দিয়ে না নেমে সবাই নামলাম জালানা দিয়ে। আহ: এখন আমরা চাঁপাই এ। বিকেল ৪.৩০ এ চাঁপাই স্টেশনে নামার পর কালাই এর রুটির মনমুগ্ধকর সুবাস যেন আমাদেরকে টানতে লাগল কালাই এর রুটির দোকানের দিকে। আকাশে বাতাসে যেন কালাই এর ছড়াছড়ি।

ঢুকলুম সবাই মিলে একটি ভালমানের কালাই হোটেলে। হাত মুখ ধোয়ার সময় আসিফ তার বস্ত্র খুলতে খুলতে এমন এক পরিস্থিতিতে অবতীর্ন হবার উপক্রম করল যে তাকে হালকা হলেও দিগম্বর আখ্যায়িত করা যায় । ম্যানেজারকে কী কী আছে কালাই রুটির সাথে জিজ্ঞেস করতেই মুখে যেন পট পট শব্দ তুলে খই ফুটতে আরম্ভ করল। বলল – মরিচ-পিয়াজ, বেগুন ভর্তা, টমেটো সালাদ, গরুর বট, হাঁসের মাংস, গরুর মাংস, গরুর শিক কাবার, ইতাদি ইত্যাদি। সবার সিদ্ধান্তক্রমে অর্ডার হল- মরিচ-পিয়াজ, বেগুন ভর্তা, টমেটো সালাদ, গরুর বট আর দুটি করে ইয়া বড় সাইজের কালাই এর রুটি।

টেবিলে খাবার আসতেই কারো মুখে যেন আর কথা নেই। সবাই উদরপূর্তিতে মহা ব্যস্ত। কিছু সময় পার হতেই সবার চোখ-মুখ দিয়ে পানি ঝরতে আরম্ভ করল আর কান দিয়ে বেরুল আগুন। অসম্ভব ঝাল। আমার অবশ্যি খুব বেশি ঝাল লাগেনি কারন আমি ঝালে অভ্যস্ত, যা আমাকে অভ্যাস করতে হয়েছিল ঢাকায়।

যথাযথ উদরপূর্তির পর ঘুরতে বেরুলুম। তখন বিকাল ৫.৩০ । বিকাল ৬.৩০ এ ফিরতি ট্রেন। এভাবে কী আর সময় বেঁধে বেড়ানো যায়? ঠিক হল আগে ভালভাবে ঘুরে নেই পরে চিন্তা করা যাবে ফেরার। আমরা ১১ নম্বর ভ্যানে চড়ে অর্থাৎ পায়ের উপর ভর করে স্টেশন থেকে নিউ মার্কেট পর্যন্ত গেলাম।

এখানকার নিউ মার্কেট টিতে ক্রেতার সংখ্যা ভালোই কারন আশেপাশে মার্কেট নাই বললেই চলে। নিউ মার্কেটে কিছু সময় অতিবাহিত হবার পর ব্যাটারিচালিত অটো ভাড়া করে নিউ মার্কেট থেকে গেলাম মহানন্দা ব্রীজে। এই সময়টুকু আসিফের মুখে সুর উঠল, “একদিন মাটির ভেতর হবে ঘর ও মন আমার কেন বান্ধ দালান ঘর ………”। নদীতে এ সময় বিশেষ পানি না থাকায় নদীর দু ধারে লাগানো হয়েছে ধানের চারা। দু-কূল ছেয়ে আছে সবুজে আর নদী তীরে গড়ে ওঠা ইঁট ভাটার চিমনি দিয়ে ওঠা সাদা কাল মেশানো ধোঁয়ায় যেন এক অদ্ভুত দৃশ্যের অবতারনা করেছে।

এ যেন ধোঁয়ার ধুম্রজালে সবুজের শাসন। আমরা হেঁটে ব্রীজ পার হয়ে নদীর ও পারে গেলাম এবং এমন এক দুধ চা খেলাম যা সারা জীবন আমাদের জ্বিহবাতে লেগে থাকবে। একেবারে গরুর খাঁটি দুধের চা। আর আমারা শহরের মানুষরা খাই একেবারে খাঁটি গরুর দুধের চা, অর্থাৎ গরু খাঁটি কিন্তু দুধে এক বালতি পানি মেশানো  । চা শেষ হতে হতে অন্ধকার নেমে এসেছে।

আবার সেই হেঁটে ব্রীজ পার হলাম। আমরা অনুভব করলাম ব্রীজটি অনেকখানি নড়াচড়া করে। যখনই ব্রীজটি কেঁপে উঠছিল আমরা মনের মধ্যে খুব শিহরিত হচ্ছিলাম। অপর প্রান্তে পৌছে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এবার ফিরতি পথ ধরা প্রয়োজন। শেষ বাস সন্ধ্যে সাত টায়।

আমরা বাসস্ট্যান্ডে পৌছুলুম একটি ভুটভূটিতে চড়ে। আজ হরতাল হবার করনে তেমন বাস নেই। অবশেষে আমরা ঢাকার লোকাল কোচ “যাত্রী-সেবায়” উঠলাম। আমি, রূপম ভাই আর মনি সিট পেলাম কিন্তু আসিফ আর রাসেল সিট না পাওয়ায় তারা আমাদের সাথে একটা খেলা খেলল। বাসের টাকা তোলা লোক এসে জিজ্ঞেস করল, “কোথায় যাবেন”? আমরা বললাম, “রাজশাহী”।

আসিফ আর রাসেল এমন ভাবে হাঁসতে লাগল যে সে মনে করল আমরা সামনেই নেমে যাব। তাকে আর কোন ভাবেই বোঝাতে পারলাম না যে আমরা রাজশাহী যাব।  অগত্যা সিট ছেড়ে আমরা তিন জন রাসেল ও আসিফের সাথে বাসে বাদুর ঝোলা হয়ে দাঁড়িয়ে রাজশাহীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা, কারন এরপর আজকে আর বাস নেই । আমার লিখা পূর্বের আণুবীক্ষণিক গল্প সমূহ : ১। অনাবৃতা পরিণীতা একটি ফুল ।

( আণুবীক্ষণিক গল্প – ০১ ) ২। বিছানায় একটি কোল-বালিশ ( আণুবীক্ষণিক গল্প – ০২ ) ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৬ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।