আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হঠাত দেখা অতঃপর...

**তবুও কিছু কথা না বলাই থেকে যায়**

আজ ভার্সিটি যেতে ইচ্ছা করছেনা। কেমন যেন আলসেমী লাগছে। অনেক দিন পর সব ভাই বোন একসাথ হওয়াতে রাতে ঘুমাতে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। গল্প করতে করতে কখন যে ঘড়ির কাটা চারটা অতিক্রম করেছিল কেওই টের পায়নি। সকাল নয়টা বাজে।

তারপরও চোখ মেলতে পারছিনা। রাজ্যের ঘুম যেন আমাকেই পেয়ে বসেছে। ধুর আজ আর ভার্সিটি যাবোনা। ক্লাসগুলার যা হবার হোক। এরচেয়ে বরং আরেকটু ঘুমিয়ে নেই।

ভাবা মাত্রই আবারো ঘুমের রাজ্যে ডুব দিলাম। মোবাইলে রিং হচ্ছে। রিসিভ করেই জানতে পারলাম আজ ক্লাস সাস্পেন্ড করে দেবে তাই সবাইকে আজ প্রেসেন্ট থাকতেই হবে। কি আর করা!অনিচ্ছাসত্তেও যেতে হল। দুটার দিকে ক্লাস শেষ করে ভার্সিটি থেকে বের হতেই মনে পড়ল সকাল থেকে তো পেটে কিছুই পড়েনি।

সাথে সাথেই যেন ক্ষুধাটা আরো পেয়ে বসলো। ফ্রেন্ডদেরকে নিয়ে পাশের ফাস্ট ফুড কর্ণারটায় ঢুকে পড়লাম। ঢুকা মাত্রই ভূত দেখাই মত চমকে উঠলাম। এখানেই এভাবে যে আট বছর আগে হারিয়ে যাওয়া আমার সবচাইতে ক্লোস ফ্রেন্ড শুভ্রার সাথে যে দেখা হয়ে যাবে ভাবিনি। শুভ্রার সাথে আমার ফ্রেন্ডশীপ হয় খুব ছোটবেলায়।

একসাথেই আমরা স্কুল জীবন শুরু করেছিলাম। কিন্তু একসাথে শেষ করতে পারিনি। কত মজারই না ছিল দিনগুলো। ভালো স্টুডেন্ট হওয়াতে আমরা স্যার মেডামদের পছন্দের তালিকায় ছিলাম। কেন যেন আমার আর শুভ্রার রোল সব সমই পাশাপাশি থাকতো।

যদিও ক্লাসে অলটাইম আমিই ফার্স্ট হতাম কিন্তু কখনও যদি ও ক্লাসে ফার্স্ট হত তখন ওর উপর এত্ত রাগ উঠতো যে মাঝে মাঝে কথা বলাও বন্ধ করে দিতাম। অথচ আমি ফার্স্ট হলে ওকে কখনই রাগতে দেখিনি। ক্লাস নাইনে উঠার পর আমাদের দুষ্টামী আর দূরন্তপনা যেন আরো বেড়ে গিয়েছিল। এ বছরটা আমরা এত্ত মজা করেছিলাম যা কখনই ভাষায় প্রকাশ করা যাবেনা। দুদিন যেতে না যেতেই এর বাসায় ওর বাসায় ঘুরতে যাওয়া প্রতিদিন বিকালে প্রাইভেট পড়া শেষে মোড়ের ফুচকার ভ্যান থেকে ফুচকা খাওয়া দুজনে মিলে রিক্সা করে কিছু দূর গিয়ে হেটে হেটে বাসায় ফেরা কোনটাই বাদ যায়নি।

যাই হোক ক্লাস টেন এ উঠার পর দুষ্টামীর পরিমান অনেকটা কমে আসে আর পড়ালেখার পরিমান পূর্বের চেয়ে দিগুন বেড়ে যায়। টেন এ উঠার এক মাস পর হঠাত কেন যেন শুভ্রা আর স্কুলে আসেনা। প্রথমে ভেবেছিলাম অসুস্থ কিন্তু দুদিন,এক সপ্তাহ,দশ দিন হয়ে গেল ওর আসার কোন লক্ষনই নেই। বাসার ল্যান্ড ফোনে যতই ফোন করছি কেওই রিসিভ করেনা। এরপর ওর বাসায় গিয়ে দেখলাম ইয়া বড় একটা তালা ঝুলছে।

এটা দেখে এত্ত কষ্ট লাগছিল যে বুক ফেটে কান্না আসছিল। নিজেকে নিয়ন্ত্রন করে পাশের বাসায় গেলাম শুভ্রাদের খবর নিতে। কিন্তু আন্টি যা বলল শুনে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনাই। শুভ্রার আম্মু নাকি তার বাবার খুব ক্লোস ফ্রেন্ডের সাথে একবারের জন্য চলে গেছে। আর সেও নাকি মায়ের উপর রাগ করে ওরচেয়ে ১৪ বছরের বড় প্রাইভেট টিউটরকে বিয়ে করে।

এই স্যার যে ওকে লাইক করত এ কথা শুভ্রা আমাকে বলেছিল। ওকে মাঝে মাঝে ওর স্যারের কথা বলে ক্ষেপাতাম। এমন রাগ করত যে ওর ফর্সা চেহাটা লাল হয়ে যেত। একদিন তো বলেই বসেছিল যে "আর যদি কখনই ওই বুড়াটার কথা বলিস তোর শাথে আমি ফ্রেন্ডশীপই কাট আপ করে দেব"। অথচ আজ ওই স্যারকেই শুভ্রা বিয়ে করেছে।

এরপর লজ্জায়, ক্ষোভে মায়ের উপর রাগ করে ওরা কোথায় যেন চলে গেছে কেও জানেনা। বাসায় ফিরে প্রচুর কান্না করেছিলাম। কেন এমন কিছু ঘটল ওর জীবনে?পড়তে বসতে লিখতে বসতে শুধু ওর কথাই মনে পড়ত। আজ শুভ্রাকে দেখা মাত্রই যেন অতীতের ফেলে আসা দিনগুলো এক নিমিষেই চোখের সামনে ভেসে উঠল। কথা বলার ভাষা যেন হারিয়ে ফেলেছি।

হঠাত করেই শুভ্রা কাছে এসে আমাকে খুব জোরে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষন পর আমাকে ছেড়ে আমার দু হাত ধরে বলল "তোকে একদিনের জন্যও ভুলিনি। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি খুব ভাল আছি। "বলে আমার হাত ধরে রেখেই বেশ কিছুক্ষন কাঁদল।

এরপর আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই খুব দ্রুতই চলে গেল। আমিও ঝাপ্সা চোখে অপলক দৃষ্টিতে শুভ্রা যে পথ দিয়ে চলে গেছে সেই পথের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। শুভ্রা, আজও আমি যেখানেই যাই আবারো তোর দেখা পাওয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকি। শুধু একটা কথা বলার জন্য। যেটা তোকে কখনই বলা হয়নি,আর বলা হবে কিনা তাও জানিনা।

তোকে অনেক ভালোবাসি। অনেক.......


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।