স্বপ্ন দেখে যাই...
গত বছর বর্ষার ঘটনা। আমাদের কয়েকজন বন্ধু লাউয়াছরা যাবে রাতের ট্রেনে। সন্ধার পরে ফোন দিল। রোজকার আড্ডায় দেখা হবেনা বলে বলল কমলাপুর গিয়ে দেখা করে আসতে। এমনিতেই এই টুর নিয়ে ঝামেলা হয়ে গেছে, এ যাবে সে যাবেনা করে ৫ জনের জন্য টিকেট কাটা হলেও যাচ্ছে ৩ জন।
ভাবলাম যাই দেখা করে আসি। ট্রেন ছাড়ার আধা ঘন্টা আগে পৌছলাম স্টেশন। ২ জন এসেছে বাকি আর একজন এয়ারপোর্ট স্টেসন থেকে উঠবে। বেশ ভালো কথা। আমরা আড্ডা দিচ্ছি এই সেই।
হঠাত ফয়সাল ভাই, আমাদের ভ্রমন জগতের সুপারম্যান বলল, তোরাও চল, কাল সকালে চলে আসব ! আরি !! বলে কি। বাসায় কি বলব? মেরেই ফেলবে রাতে বাইরে থাকলে। আগে থেকে কিছু জানাইনি। তার উপরে পায়ে চটি কাধে ঝোলা, ধুতি ফতুয়া পরে ট্রেকিং !! … কিছুতেই কিছু বোঝানো গেলনা। শক্ত নরম বিচিত্র কথার জালে ফেলে আটকে দিল।
বাসায় এই সেই বুঝ দিয়ে আল্লাহর নাম নিয়ে ট্রেনে চেপে থাকলাম। কিছক্ষনের মধ্যেই টেনশন ভুলে আমরা আড্ডায় মেতে গেলাম। রাতে ৩ টার দিকে স্টেশনে নেমে যথারীতি হাল্কা ঘুম দেয়ার ট্রাই করলাম। কোথায়? কেন স্টেশনের মেঝেতে . …আলো ফোটার পরে আমাদের আর কিছুতেই বসে থাকতে ইচ্ছে হোল না। একটা বড় সাইযের সি এন জি (শ্রীমঙ্গল এলাকায় ঢাকার চেয়ে বড় সাইজের সি এন জি আছে !) নিয়ে আমরা ছুটলাম লাউয়াছরার দিকে।
দিনের বেলায় ই বনের মধ্যে দিয়ে যাওয়া রাস্তাটা থাকে ছায়া ঢাকা। এই মাত্র অন্ধকার ফুড়ে বেরোনো সকাল রাস্তাটা ঝাপ্সা অন্ধকার… লাঊয়াছরা রিসার্ভ ফরেস্টে ঢোকার গেটে তখোনো কেউ আসেনি। কি আর করা। ঢুকে গেলাম আমরা। সদ্য আলো জেগে ওঠা সকাল বেলায় জংগল যে কত অন্যরকম হতে পারে তা লিখে বোঝানো একটু কঠিন।
পরে বা আগে যতবার লাউয়াছরা গিয়েছি, দিনের অন্য সময়ে জঙ্গল এমন থাকেনা। আস্তে আস্তে ঘুম ভেঙ্গে জেগে ওঠা প্রকৃতি একটু একটু করে আরমোড়া ভাঙ্গে চোখের সামনে। পাখির কিচির মিচির, পাতার ফাকে চুইয়ে নামা ধোয়াটে আলো সব মিলে অদ্ভুত পরিবেশ। আর শুধুমাত্র এইবার ই দেখেছিলাম অনেক অনেক উল্লুক। অত সকালে আর কোন টুরিস্ট ছিল না।
তাই হয়ত ওরা মনের আনন্দে গাছে গাছে লাফিয়ে বেরাচ্ছিল। মা উল্লুকের কোলে সাদাটে রঙের ছোট্ট বাচ্চা। পেটের সাথে চেপে রেখে এক ডাল থেকে আরেক ডালে লাফিয়ে যাচ্ছে। আরেক্টু বড় যেগুল মা কে ছাড়া চলতে শিখে গেছে, অগুলোর সাহস বেশি। অথবা অভিজ্ঞতা কম।
মানুষ নামের প্রানীটাকে যে ভয় পেতে হবে সেটা এখনো চিনে উঠেনি। তাই মোটামুতি দৃস্টি সীমার মদ্ধেই লাফ ঝাপ দিচ্ছে। কেউ কেউ আবার বসে বসে তাকিয়ে দেখছে বনের ভেতরের দু পেয়ে জীবগুলোকে। আমার সাথে যুম লেন্স ছিলনা। তাই ছবি তুলতে পারিনি।
অবশ্য ছবিতে আর কি বোঝা যায় এই মজা?
বেশিক্ষন মাপ এ আকা ট্রেইল এ না হেটে আমরা যথারীতি ঝিরি ধরে হাটা শুরু করে এই সেই পথে হাটা শুরু করলাম… সেই পথ আবার কিছুদুর গিয়ে ২-৩ ভাগে ভাগ হয়ে যায়। আন্দাজ করে ট্রেইন লাইনটা কোন দিকে হবে ভেবে নিয়ে যাচ্ছি। এই বনের ভিতরের ট্রেইন লাইন টা দেখার মত বিষয়। ঘন ঝোপঝারের মাঝে রেল লাইন। সবুজ বনের মাঝখান থেকে যখন ঝিক ঝিক শব্দ করে লাল নীল ট্রেন টা চলে যায়, দেখতে বড়ই সুন্দর লাগে।
তো এদিক সেদিক বনের মদ্ধে ঘুরে ঘুরে ১২ টা বেজে গেল। কিন্তু ট্রেন লাইন আর পাইনা। ততক্ষনে বেশ ক্যেক্টা জোক পায়ের এইদেকে সেদিকে ধরে ফেলেছে… কেউ কেউ খেয়ে চলেও গেছে। কামড় দেয়ার জায়গা থেকে অনবরত রক্ত পড়ছে। যারা যোকের কামড় কেহ্যেছে চারা সবাই জানে যে জোকের কামরের যায়গাটা থেকে রক্ত সহজে বন্ধ হয়।
জোক একধরনের লালা দিয়ে যায়গাটা অবশ করে নিয়ে রক্ত খায় এবং এমন আর একটা লালা লাগায় যেটাতে রক্ত জমাত বাধতে পারেনা। যাই হোক আমরা শেষে বনের ভিতরের ট্রেন লাইনটা না খুজে পেয়ে পুরোনো চেনা ট্রেইল ধরে ফিরে আসলাম জঙ্গলের ভেতরের চা এর দোকান্টার কাছে। এইখানে একটা বাদর দেখলাম। বাদর লাঊয়াছরা জঙ্গলের প্রানী না। এটা নিশ্চই পোষা।
ছবি তুলতে যেয়ে দেখা গেল সে রীতিমত মডেল ! এই রক্ম সেই রকম পোজ দিচ্ছে ছবি তোলার। যাই হোক উল্লুক এর ছবি না তুলতে পারি, মন ভরে মডেল বান্দরের ছবি তুলে নিয়ে আসলাম…
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।