আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হকার হান্নান,স্যালুট আপনাকে

হকার হান্নান । পনের-ষোল বছর ধরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের বাসে-বাসে চানাচুর, চকোলেট-সিগারেট বিক্রি করে জীবন চালাছ্ছেন। বললে বাড়িয়ে বলা হয়না এ হকারের প্রতিবাদী চেতনা এবং মানবিক তৎপরতার ফলেই গত বৃহস্পতিবারের ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের চলন্তবাসে পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণ করার ঘটনা জনসম্মুখে এসেছে এবং জনসম্মুখে এসেছে বলেই ধরা পড়েছে দুই ধর্ষক, ড্রাইভার দিপু ও হেলপার কাশেম । প্রতিদিনের মত একটি দিন,বৃহস্পতিবার। চানাচুর-চকলেট-সিগারেটের ব্যাগ নিয়ে বাসের অপেক্ষায় মহাসড়কের বাগজান স্পীডব্রেকারের কাছে যথারীতি দাঁড়িয়ে ছিলেন হান্নান।

মানিকগঞ্জের দিক থেকে আসছে শুভযাত্রা পরিবহনের একটি মিনিবাস । এ পরিবহনের বাস সাধারণত এদিকে আসে না । অনেকটা উঁচু স্পীডব্রেকারের কাছে মিনিবাসটি গতি কামাতে বাধ্য হলে হকার হান্নান ঐ গাড়িতে উঠতে চেষ্টা করে ব্যর্থ হলেও কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই তিনি দেখেন ড্রাইভার ছাড়া গাড়িতে কেবল একটি মেয়ে আর একটি ছেলে, ছেলেটির সাথে মেয়েটির ধস্তাধস্তি হচ্ছে। গাড়িটি স্পীড ব্রেকার দ্রুত পার হয়ে আরিচার দিকে যায়। হান্নানের সন্দেহ জন্মায় গাড়িতে কিছু একটা ঘটছে ।

সিদ্ধান্ত নিতে বিলম্ব করেননি হান্নান। একটু পরেই আরেকটি গাড়ি আসতেই তিনি উঠে বসেন লক্ষ্য তার যাত্রীশূন্য শুভযাত্রার গাড়ি । তরা ব্রিজের কাছে আসতেই হান্নান দেখতে পান যাত্রীশূন্য শুভযাত্রা পরিবহনের গাড়িটি ফিরে আসছে মানিকগঞ্জের দিকে। হান্নান দ্রুত নেমে পড়েন আরিচামুখী গাড়ি থেকে। আবার উঠে পড়েন মানিকগঞ্জমুখী আকেটি গাড়িতে।

গাড়ি বদলে নিতে লেগে যায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট। ফিরতি পথের গাড়ি তখন মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যাণ্ড থেকে আধা কিালোমিটার দূরে, চোখ আটকে যায় মানরা ব্রিজের কাছে ক্রন্দনরত একটি মেয়েকে দেখে । মানরায় নেমে কথা বলেন মেয়েটির সাথে। নিশ্চিত হন এ মেয়েটিই ছিল ঐ যাত্রীশূন্য শুভযাত্রায়,ধস্তাধস্তি হচ্ছিল তারই সাথে। ঝুঁকি আছে জেনেও মেয়েটিকে সাথে করে নিয়ে যান মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যাণ্ডে পরিবহন শ্রমিক নেতাদের কাছে ।

শ্রমিক নেতারা বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করে ড্রাইভার দিপুকে ধরে আনে, পিটুনি দিয়ে হাতে তুলে দেয় পুলিশের হাতে,রাতে শ্রমিক নেতাদের তৎপরতােই ধরা পরে হেলপার কাশেম। হকার হান্নান মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার গড়পাড়া গ্রামে। অভাবী পিতা জামির হোসেনের সাত ছেলের মধ্যে সবার বড় হান্নান। বিশ বছর আগে বিয়ে করেছেন, ৬ আর ১৫ বছরের দুটি ছেলেও আছে তার। ছোট ভাইদের অর্থিক অবস্থা তারই মত,কেউবা বেকার ।

হকারী জীবনের আয় দিয়েই সবাইকে নিয়ে কোন রকমে জীবন চালাচ্ছেন হান্নান। আর্থিক অনটনে ছেলেদের ছেলেদের লেখাপড়া কার্যত বন্ধ,সাধ-শখ ধুসর হয়েছে বহু আগে,নিভে গেছে স্বচ্ছলতার স্বপ্ন । বয়স বেড়েছে খাঁটতে পারেন না আর আগের মত,কত দিনই বা চলে এমন ঘাণিটানা জীবন। তবুও নিভেনি তার মানবিক মন,সাহসের দীপাবলী। স্যালুট হান্নান আপনাকে,ধন্য আপনার অভাবী পিতা,পরিবার।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.