আমার ব্লগ আমি আমার ডায়েরীর মতো করে ব্যবহার করি। এখানে আমি একটা গল্প অথবা কবিতা লিখতে পারি, অথবা আজকে কিসের তরকারী দিয়ে ভাত খেলাম, সেইটাও লিখতে পারি। । এক
নিনিতাকে প্রথম যেদিন প্রপোজ করেছিলাম, ঠাশ করে একটা চর বসিয়ে দিয়েছিলো আমার গালে। দ্বিতীয়বার যেদিন প্রপোজ করলাম, সেদিনও চর খেলাম।
তৃতীয়বার প্রপোজ করার সময় আর ভুল করলাম না। পর্যাপ্ত দূরত্ব বজায় রেখে প্রপোজ করে দিলাম। তেড়ে এসে যদি আক্রমন করে বসে সেই কথা মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থাও নিয়ে রাখলাম। অবশেষে কাচুমাচু করে বলে দিলাম,
"আই লাভ ইউ"
নিনিতা কিছুক্ষণ আগুন মাখা চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রাস্তার পাশে পড়ে থাকা পাঁচ-ছয় হাত লম্বা বাশের টুকরাটা হাতে তুলে নিলো। আমি আর কালবিলম্ব না করে দিলাম এক দৌড়।
এক দৌড়ে বড় দেয়ালের কাছে গিয়ে একবার পেছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি নিনিতা হাসছে।
এরপর একসপ্তাহ আর নিনিতার সামনে যাইনি আমি। একসপ্তাহ পর একদিন বন্ধুদের সাথে কলিমের দোকানে আড্ডা দিচ্ছিলাম। হঠাৎ বন্ধুরা কিছু না বলেই মাথা নিচু করে প্রস্থান করলো। আমি কিছু বুঝে ওঠার আগেই নিনিতা পেছন থেকে আমার শার্টের কলার টেনে ধরে বললো,
"এই একসপ্তাহ কই ছিলা!!!"
আমি শার্ট ঠিক করতে করতে খুক খুক করে কাশলাম।
--------------------------------------------------------------------
দুই
সকাল বেলা। বস্তির কাকেরা বিরামহীন ডেকে চলেছে। ঘুম থেকে উঠে মন্তাজ নিম গাছের একটা ডাল ভেঙ্গে দাত মাজতে লাগলো। মন্তাজের বৌ সালেহা উঠেছে অনেক আগেই। মন্তাজ দাত মাজতে মাজতে তাঁর রিক্সাটা পাতলা কাপর দিয়ে মুছে নেয়।
বস্তির টিউবওয়েল থেকে হাত-মুখ ধুয়ে ঘরে এসে দেখে মন্তাজ আর সালেহার দেরবছর বয়সী একমাত্র মেয়ে মুমু খাটের ওপর শুয়ে কাঁদছে। এই সাত-সকালে মেয়েটাকে ঘরে রেখে সালেহা কই গেল সেকথা ভেবে মন্তাজের মেজাজ গরম হয়ে যায়। মন্তাজ মুমুকে কোলে নিয়ে কান্না থামানোর চেষ্টা করে। একটু পর সালেহা থালা-বাসন নিয়ে ঘরে ঢোকে। মন্তাজ মুমুকে খাটের ওপর রেখে সালেহার দিকে হন্তদন্ত হয়ে ছুঁটে যায়।
সালেহার চুলের মুঠি ধরে ছুঁড়ে ফেলে দেয় কয়েকহাত দূরে। সালেহার হাত থেকে থালা-বাসন পড়ে গিয়ে ঝনঝন আওয়াজ তোলে। মন্তাজ সালেহাকে লক্ষ্য করে বলে,
"ওই মাগী! আমার মাইয়ারে ঘরে একলা রাইখা তুই কই গেছিলি?"
সালেহা রাগ আর কান্না মেশানো কন্ঠে উত্তর দেয়,
"থালা-বাসন মাজতে গেছিলাম। "
মন্তাজ আরও রেগে গিয়ে বলে,
"হারামজাদী! তোর থালা-বাসনের মায়রে… আমার মাইয়ারে খালি ঘরে রাইখা গেছিস, যদি কোন অঘটন ঘইটা যাইতো?"
মন্তাজ গামছাটা কাঁধে নিয়ে রাগে ঘোঁৎ ঘোঁৎ করতে করতে রিক্সাটা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে ব্যস্ত শহরে। সারাদিন রোদে পুড়ে রিক্সা চালায়।
শহরের এত ব্যস্ততার মাঝে সে নিজেকে একজন সুখী মানুষ হিসেবে আবিষ্কার করে। মন্তাজের কাছে মনেহয়, দুনিয়াটা কত অদ্ভূত। সারাদিন রিক্সা চালিয়ে বিকেল বেলা খেয়াল করে, রিক্সার পেছনের একটা চাকা কিছুটা বাঁকা হয়ে গেছে। রিক্সায় আজ আর যাত্রী ওঠানো যাবেনা। মন্তাজ রিক্সা থেকে নেমে কাঁধের গামছাটা দিয়ে মুখের আর গলার ঘাম মুছে নেয়।
রাস্তার পাশে এক চুরিওয়ালাকে দেখে ধীর পায়ে এগিয়ে যায়। মন্তাজের সাথে চুরিওয়ালার কিছুক্ষণ দর কষাকষি চলে। মন্তাজ বাইশ টাকার বিনিময়ে লাল রঙের বারোটা কাচের চুরি কিনে নেয়। খালি রিক্সা নিয়ে মন্তাজের বাড়ি ফিরতে রাত হয়ে যায়। ঘরে ঢুকে প্রথমেই মুমুকে কোলে নিয়ে চুমু খায়।
বাবার ছোট ছোট ছিদ্র আর ঘামের গন্ধযুক্ত শার্টটা মুমু ছোট ছোট হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে। সকালের ব্যবহারের কারনে সালেহা এখনও মুখ ভোতা করে আছে। মন্তাজ রাতের খাবার খেয়ে নেয়। সালেহা আর মন্তাজ কোন কথা বলেনা। মন্তাজ ভাত খেয়ে হাতে কিছু যন্ত্রপাতি নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে আসে।
রিক্সার চাকাটা ঠিক করতে হবে। ঘন্টা খানেক কাজ করার পর মন্তাজ ডাকে,
"সালেহা! অই সালেহা কই গেলি! এক গেলাস পানি নিয়া আয়তো!"
মন্তাজ রিক্সার সিটে উঠে বিশ্রাম নেয়ার ভঙ্গিতে বসে। সালেহা হাতে পানির গ্লাস নিয়ে আসে। মন্তাজ পানির গ্লাস হাতে নিতে নিতে বলে,
- মুমু কী করে?
- ঘুমায়।
- দাড়ায় আছিস ক্যান? রিক্সায় উইঠা বয়।
সালেহা রিক্সায় উঠে মন্তাজের গা ঘেষে বসে। মন্তাজ সালেহাকে লক্ষ্য করে বলে,
- আইজকা কী পূন্যিমা?
- হ।
- তর হাতটা একটু দে তো বৌ।
সালেহা আস্তে করে হাতটা মন্তাজের দিকে বাড়িয়ে দেয়। মন্তাজ লুঙ্গির কোচা থেকে লাল রঙের কাচের চুরি গুলো বের করে সালেহার হাতে পড়িয়ে দেয়।
চাদের আলোতে কাচের চুরি গুলো চিকচিক আলো ছড়ায়। সালেহা চোখ বড় বড় করে বলে,
"আল্লারে! কত্ত সোন্দর!"
সালেহার বিশ্বাস হতে চায়না, এই মানুষটাই সকাল বেলা তার চুলের মুঠি ধরে ছিটকে ফেলে দিয়েছিলো। সালেহা মন্তাজকে জড়িয়ে ধরে খিলখিল করে হাসতে থাকে। সে হাসি পূর্ণিমার আলো আর রাতের বাতাসে মিলিয়ে যায়।
--------------------------------------------------------------------
তিন
আমি ওর চোখের দিকে অনেক্ষণ চেয়ে থেকে অবশেষে বললাম,
- তোমার চোখে এত নেশা কেন?
- আমাকে তুমি এত ভালবাসো যে তাই।
- তুমিও কী আমাকে ততটাই ভালবাসো, যতটা আমি বাসি?
- উঁহু। তারচেয়েও বেশি।
- তুমি অবশ্যই জানো, আমার একটা মরনব্যধি আছে? খুব শিঘ্রই আমি মরে যাব?
- হুম জানি।
- জেনেও আমাকে ছেড়ে যাচ্ছনা কেন?
- অনেক ভালবাসি যে তাই।
- আমি মরে গেলে তোমার অনেক কষ্ট হবে তাইনা?
খেয়াল করলাম মেয়েটার চোখে জল এসে গেছে।
কাজলে আকা আঁকা চোখ- জল ছলছলে। টুপটুপ করে জলের ফোটা গালের উপর পড়ছে। আমি জানি, আমি মরে গেলে মেয়েটার কতটা কষ্ট হবে। অসহ্যকর কষ্ট- ওর সহ্য করার ক্ষমতা নেই। আমি ওর গাঁ ঘেষে বসলাম।
তারপর বললাম,
- আমি মরে গেলে তোমার কতটা কষ্ট হবে তা আমি জানি। ওই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে চাও?
- হুম চাই!
আমি মুখটিপে হাসলাম। ড্রয়ার থেকে রিভলবারটা বের করলাম। ওর আঁচল দিয়ে রিভলবারে লেগে থাকা ধুলোবালি পরিষ্কার করে নিলাম। ওর কপালে তাক করে হঠাৎ ট্রিগারটা চেপে ধরলাম।
বিকট একটা শব্দ। দেয়ালে লেগে থাকা মগজের কিছুটা অংশ। ঘরটা মাখিয়ে যাওয়া রক্ত। লাল আর লাল- ভালবাসা। ভালবাসা গড়িয়ে দরজার নিচ দিয়ে গলগল করে বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে।
জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকছে বারান্দায় জ্বালিয়ে রাখা টিউবলাইটের আলো, অতঃপর রক্তের সাথে মাখামাখি খেলছে। আমার কষ্ট হচ্ছে। প্রচন্ড এবং অসহ্যকর কষ্ট। যেই কষ্টটা মেয়েটারও হতে পারতো। রিভলবারের সামনের দিকটা নিজের দিকে তাক করলাম।
ট্রিগারটা আরেকবার চেপে ধরার আগে খেয়াল করলাম- দূরে। নিকষ কালো অন্ধকার… ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।