হেথায় কিছু লিখব বলে চায় যে আমার মন, নাই বা লেখার থাকল প্রয়োজন!
বারো দিন ত্রিপলীতে কাটিয়ে এলাম। গিয়েছিলাম 27 তারিখে, ফিরে এলাম 9 তারিখে। ত্রিপলীতে গেলে আমি সাধারণত বাংলাদেশ এম্বাসীর ড্রাইভার জসীম আঙ্কেলদের বাসাতেই উঠি। এবারও সেখানেই উঠলাম। 1 তারিখ রবিবার বিকেল বেলা আমার হাতে কোন কাজ ছিল না।
বসে বসে কি করা যায় ভাবছিলাম, এমন সময় অ্যাম্বাস্যাডরের বাসার কেয়ারটেকার রোকন ফোন করে বলল, সে আমার সাথে একটু ইন্টারনেটে যেতে চায় - স্যাটেলাইট চ্যানেলের ফ্রিকোয়েন্সি সার্চ করার জন্য। কাজেই তাকে নিয়ে ইন্টারনেটে চলে গেলাম।
কয়েকটা হিন্দী এবং স্পোর্টসের চ্যানেল আর বাংলাদেশের দেশ টিভি, ইসলাম টিভি ছাড়া নতুন কোন দেখার মতো চ্যানেল পাওয়া গেল না। ইন্টারনেট থেকে বেরিয়ে রোকনের সাথে অ্যাম্বাস্যাডরের বাসায় গেলাম। রোকন বসে বসে চ্যানেলগুলো সার্চ করতে লাগল আর আমি ঘুরে ঘুরে বাসাটা দেখতে লাগলাম।
বলে রাখা ভালো, বিশাল এই বাসাটিতে এখন মাত্র দুইজন কেয়ারটেকার থাকে - রোকন এবং খায়েজ আঙ্কেল। গত মার্চ মাসে তত্ত্বাবধায়ক সরকার লিবিয়ায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল জামিল উদ্দীন আহসান, বীর প্রতীক, পি.এস.সি এর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করার পর নতুন কোন রাষ্ট্রদূত নিয়োগ না পাওয়ায় শুধু এই দুইজনকেই বাসাটায় থাকতে হচ্ছে।
অ্যাম্বাস্যাডরের বাসা, বাংলাদেশ হাউসে অবশ্য এটা আমার দ্বিতীয় যাত্রা। এর আগে গত বছর 26 মার্চে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ডিপ্লোম্যাটিক পার্টিতে আমি প্রথম সেখানে যাই। তখন অবশ্য শুধু বাহির থেকে আর বেসমেন্টে নেমে বাড়িটা দেখেছিলাম।
ভেতরে গিয়ে পুরোটা দেখা সম্ভব হয় নি। তবে যতটুকু দেখেছি, ততটুকুই আমার মতো সাধারণ একজনকে ভড়কে দেবার পক্ষে যথেষ্ট ছিল। সাধারণ বাংলাদেশীদের একটা চলনসই বাড়ির ভাড়া যেখানে 150 থেকে 300 দিনারের মধ্যে হয়, সেখানে 3000 দিনার ভাড়া বিশিষ্ট বাড়িটি যে এলাহি কারবার টাইপের হবে, সেটা আর আশ্চর্য কি?
প্রথমবার ভেবেছিলাম বাসাটা বোধহয় তিনতলা। কিন্তু এবার ভেতরে গিয়ে দেখলাম সেটা আসলে সাড়ে তিনতলা। অবশ্য ইচ্ছে করলে পৌনে চারতলাও বলা যায়, যদি ছাদে উঠার অংশটাকেও হিসাবে ধরা হয়।
পেচানো সিড়ি বিশিষ্ট বাড়িটার ডিজাইন এত জটিল আর রুম সংখ্যা এত বেশি যে, অ্যাম্বাস্যাডর আর তার স্ত্রী - মাত্র এই দুইজন মানুষ এতবড় বাড়ি দিয়ে কি করতেন, সেটা রীতিমতো গবেষণার বিষয়। যদি দুইটা বেডরুম থাকতো, তাহলে না হয় বুঝতাম যেদিন রাষ্ট্রদূত মহোদয় তার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করবেন, সেদিন দুজনে দুই ঘরে ঘুমাবেন। কিন্তু এত বেশি সংখ্যক বেডরুমের কি কাজ, কে জানে?
এত বিলাসবহুল বাড়ি, তবে মূল দরজার সামনে ফিট করা একটা গোপন ভিডিও ক্যামেরা ছাড়া সিকিউরিটির তেমন কোন ব্যবস্থা নেই। অবশ্য লিবিয়াতে কোন রাষ্ট্রদূতের বাসায় বা দূতাবাসেই সিকিউরিটি গার্ডের ব্যবস্থা নেই। আসলে এখানকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এত ভালো যে, সিকিউরিটি গার্ডের কোন দরকারই হয় না।
মিসরীয় দূতাবাসের সামনে অবশ্য সবসময় দুইজন সিকিউরিটি গার্ড থাকে। তবে তা আসলে দূতাবাসের জন্য নয়, ব্যাংকের জন্য। মিসরীয় দূতাবাস যে ভবনে অবস্থিত, তার নিচের তলায় কি যেন একটা ব্যাংক আছে - তার জন্যই এই পাহারা।
প্রথমে যেদিন বাহির থেকে বাড়িটা দেখেছিলাম, সেদিন ভেতরের মূল ডিজাইনটা বুছতে না পারলেও রুমের সংখ্যা যে এত বেশি হবে আর সেগুলো যে এরকম জটিল ভাবে বিন্যস্ত থাকবে, সেটা ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম। তখনও বাংলা ভাইদের গ্রেপ্তার হওয়ার ঘটনাটা খুব বেশি পুরানো হয় নি।
কাজেই আমরা বলাবলি করতে লাগলাম, শায়খ আব্দুর রহমান যদি এরকম একটা বাড়িতে এসে লুকাতো, বাড়ির অধিবাসীদের চোখে না পড়েই অন্তত এক বছর কাটিয়ে দিতে পারতো।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।