আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কানাই হাটের মানিকচাঁন (সূচনা পর্ব)

রঙ্গিন দুনিয়া গন্ডদেশের উত্তর পূর্ব সীমান্তে কানার হাট নামক গ্রামে একসম্ভ্রান্ত বংশে জন্ম মানিকচানের, বাবা জলিলমোল্লা স্হানীয় মসজিদের মোয়াজ্জেন। নিপাট ভদ্রলোক দ্বীনদারি মানুষ হিসেবে মহল্লায় সমধিক পরিচিত। সবাইকে দেখা মাত্র সালাম বিনিময় করতেন। সারাদিন মাঠঘাটে কাজ করতেন, বিরানভূমির মাঝে সবুজের ঢেউ তার মত কেউ তুলতে পারেনি। কাজের সময় কাজ ও নামাজের সময় মসজিদে আযান দিয়ে নামাজের জন্য আহবান করাই ছিল তার জীবনের রুটিন মাফিক চলাফেরা।

কর্মনিষ্ট সততার দরুন আজ তিনি চল্লিম বিঘা জমির মালিক তার চার ছেলে আজাদচান বাধনমোল্লা কামালচান ও মানিকচান। জলসামোল্লা তার আপন ভাইয়ের নাম, জলসা মোল্লা ছোটকাল থেকে বাবার সাথে স্হানীয় হাটে কচু কলা মূলা ও ধনিয়া পাতা বিক্রি করত, জলিল মোল্লা ভালবাসত চাষাবাদ করতে। গঞ্জের হাটে জলসা মোল্লা মানুষের মনোযোগ আকষর্ণের জন্য বিভিন্ন শ্লোক গাইত যেমন জলসা মিয়ার সতেজ ধইন্যা, পাকের সাথে রাধবে কইন্যা ইত্যাদি এতে বেচা বিক্রি ভাল হত। তাছাড়া জলসা মোল্লা ব্যবসা ভাল বুঝত কিভাবে মানুষের মনোযোগ আকর্ষন করতে হয় তা তার ভাল জানা। তবে গ্রামে একদিন জলসা মোল্লা তার চাচাতো বোন জরিনা বানু কে বিয়ের প্রস্তাব দেয়।

জরিনা বানু বাবার একমাত্র মেয়ে তার কোন ভাইবোন ছিল না। জরিনা বানুর বাবা শহর আলী অনেক সম্পদের মালিক, তাই জলসা মোল্লার সাথে জরিনা বানুর বিয়ের ব্যাপারে অসম্মতি প্রকাশ করে। কিছুদিন পর জরিনা বানুর বিয়ে হয়ে যায়, স্বামী কানাই হাটেই শশুরের সম্পত্তি দেখা শুনা করে ও শহর আলী একা মানুষ তাই জামাইকে তার কাছে রেখে দেয়। জরিনা বানুর স্বামীকে সবাই ঘরজামাই হিসেবে জানে। কারো কোনো প্রয়োজন পড়লে কানাইহাটের সবাই তাকে ঘরজামাই বাবু বলে ডাক দেয়।

এদিকে জলসা রাগে ক্ষোভে গ্রাম ত্যাগ করে। তারপর একদিন জরিনা বানুর বাবা শহর আলী মারা যান তাই গ্রামের সকলে মিলে দাফন কাফন সম্পূর্ন করে পাচ সপ্তাহ খানেক পর ঘরজামাই বাবু কে নিয়ে বিরাট খানা পিনার আয়েজন করে। এতে গ্রামের আত্তীয়স্বজন মাতব্বর মুসল্লি ইমাম শিক্ষিত অশিক্ষত সবাই অংশগ্রহন করে শহর আলীর জন্য দোয়া করে যায়। এতদিন শহর আলী ছিল বলে, ঘরজামাই বাবুর প্রয়োজন মানুষের লাগনি। তবে এখন শহর আলী নেই সমাজের আচার অনু্ষ্ঠানে ঘর জামাই বাবুর ডাক আসে।

ঘরজামাই শব্দটি কেমন যেন দৃষ্টিকটু লাগে, জরিনা বানুর স্বামীর নিকট। তাই সে জরিনা বানুর কাছে দু:খ করত, জামাই মানুষ তাই কাউকে কিছু মুখ ফুটে বলতে পারেনি তবে তার মাঝে এই নিয়ে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছিল। সময় যত গড়াল তার ক্ষোভ ও তত বাড়তে থাকে তাই একদিন রাগে দু;খে ক্ষোভে কানাই হাট ছেড়ে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। এদিকে কিছুদিন পর জরিনা বানুর কোল জুড়ে ফুটফুটে একটি কন্যা শিশুর জন্ম নেয়্ জরিনা বানু তার মেয়ের নামা রাখেন রুমা বানু তবে রুমা বানুর বাবা কখর ও ফিরে আসেনি তাই রুমা বানু হয় তার বাবার আদর থেকে বঞ্চিত। জরিনা বানু তার মেয়ে রুমা বানু নিয়ে কানাইহাটে খুব কষ্টে জীবর যাপন করতে লাগলেন, বিশাল সম্পত্তির দেখাশুনা করতে পারছিলেন না তাই সম্পত্তি বিক্রি করে জীবন নির্বাহ করতে লাগলেন এত তার খুব কম চাহিদা থাকলে ও মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়।

রুমা বানু একটু একটু করে এখন স্কুলে যাওয়া আসা করে। কানাইহাটের অধিকাংশ মানুষ নিরক্ষর তারা লিখতে পড়তে জানত না , সহজ সরল প্রকৃতরি মানুষের সংখ্যা বেশি। সামান্য কিছু লোকের কাছে অধিক সম্পত্তি পুঞ্জীভূত। তাদের মাঝে যারা বিচার শালিস করত তাদের কে বিচারের আগের রাতে সর্দারদের কাছে টাকা প্রদানের রেওয়াজ ছিল যদি ও এ ব্যাপারে কেহ মুখ খুলত না। ঘুষখোরদের মাঝে অন্যতম ছিলেন শানু সরকার ও ডিলার অন্যদিকে মান্নান মাষ্টার ছিলেন প্রথা বিরোধী প্রগতিশীল মনের।

ঘুষের টাকা তো দুরে থাক উনার কাছে খারাপ কিছু বলা কিংবা করার সাহস কানাইহাটের কেউ করত না। তার কারনে এখন ও কিছুটা কানাই হাটে শান্তির দেখা মিলে। মাষ্টার সাহেব গ্রামে শিক্ষাবিস্তারের লক্ষে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্হাপন করেন। গ্রামের সকল যুবকদের নিয়ে শিক্ষা সচেতনামুলক কর্মকান্ড, বাড়ির আঙ্গিনা পরিস্কার , স্যানিটারী ল্যাট্রিন ব্যবহারের তাগিদ দিতেন। এতে দিন দিন মান্নান মাষ্টারের জনপ্রিয়তা যেমন বাড়তে লাগল তেমনি কানাইহাটের পুরো চেহারা পাল্টে যেতে লাগল।

এদিকে শানু সরকার ও ডিলারের প্রভার প্রতিপত্তি দিনে দিনে কমতে থাকায় তাদের আতে গাঁ লাগে। তারা মান্নান মাষ্টার কে বিভিন্নভাবে হেয় প্রতিপন্ন করতে থাকে তবে তাদের এসব নোংরা কাজকর্ম মাষ্টারের জনপ্রিয়তা আরো বাড়তে থাকে। একদিন শানু সরকার ও ডিলার মিলে ষড়যন্ত্র করে নিজেদের পুকুরে বিষ দিয়ে মাষ্টারের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করে । পরের দিন দারোগা বাবু কানাইহাটে মামলা তদন্ত করতে আসলেন, কানাইহাটের জনগন তখন মামলার বিরুদ্ধে মিছিল সমাবেশ করতে থাকে , এতে দারোগা বাবু ফিরে গেলেন থানায় এবং মাষ্টার সাহেব কে থানা দেখা করতে বললেন। মাষ্টার সাহের ভদ্রলোক মানুষ থানায় দারোগা বাবুর সাথে দেখা করলেন, দারোগা বাবু অনেকক্ষন কথা বলে বুঝতে পারলেন যে কেসটা আসলে মিথ্যা এবং মামলা তুলে মাষ্টার সাহেব কে সসম্মানে বাড়িতে পৌছে দিলেন।

এদিকে শানু সরকার ও ডিলারের অস্হিরতা আরো বেড়ে গেল তারা নানান ফন্দিফিকির করতে শুরু এমনকি মাষ্টার কে হত্যা করার মনস্হির করলেন এবং ডাকাত বাড়া করলেন। কয়েকদিন পর রাতের অন্ধকারে স্কুল থেকে বাড়িতে আসার পথে পাশের গ্রামে মাষ্টারকে আক্রমন করে হত্যা করে। চতুর্দিকে রবরব উঠে গেল, মানুষের আর্তনাদে কানাহাটের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে গেল এ যেন হাজারো মানুষের ধন হারানোর বেদনা জানান দিচ্ছে। সেদিন থেকেই কানাইহাটের সন্ধাপ্রদীপ নিভে গেল। এবং শুরু হল শানু সরকার ও ডিলারের ত্রাসের রাজত্ব তাদের অত্যাচারে অনেক হিন্দু ত্রিপুরার বিশালনগরে দেশান্তরিত হয় এবং অনেক মুসলমান কানাইহাট ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নেয়।

কানাইহাট এখন শানু সরকার ও ডিলারের মগের মুল্লক, তারা যা চায় কানাইহাটের গাছপালা সেভাবে বায়ূ নির্গমন করে। জলিল মোল্লা নিয়মিত মসজিদে আযান দেয় আবার মাঝে মাঝে ইমাম সাহেবের অনুপস্হিতিতে নামাজের ইমামতি করে। তার বড় ছেলে আজাদচান বাপের জমিজামার দেখাশুনা করে, সবচেয়ে ছোট ছেলে মানিকচান লেখাপড়া করে। জলিলমোল্লা গ্রামের কোনকিছুর ধারধারে না আবার মুয়াজ্জিন ও আল্লাহ ওয়ালা লোক হওয়াতে কেউ তাকে তেমন বিরক্ত ও করে না ..............চলবে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.