আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দ্রব্য মূল্য কে কতটুকু দায়ী?

রাজনীতি ও অর্থনীতি এই দুই সাপ পরস্পর পরস্পরকে লেজের দিক থেকে অনবরত খেয়ে যাচ্ছে

আমি বিশেষজ্ঞ নই। ব্যবসায়ীও নই। শিক্ষা জীবনে অর্থনীতি ছিল আমার লেখাপড়ার বিষয়বস্তু। তারপরেও উর্ধমুখী জিনিষ পত্রের দামের তাত্বিক ব্যাখ্যাও আমার কাছে নেই। আমি একজন ভোক্তা এবং সংবাদপত্র কর্মী।

সুতরাং আমি কোন ত্বাত্ত্বিক আলোচনা না করে বরং কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই। ১.নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্রের দামের উর্ধগতির জন্য আমরা দায়ী করছি আন্তর্জাতিক বাজার মূল্যকে। কথাটা আমার কাছে অর্ধসত্য মনে হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে যে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে এবং সামনে আরও বাড়বে সেটি কি আমরা জানতাম না? সরকারে যারা ছিলেন তারা কি এসব জানতেন না। নিজ যোগ্যতায় যদি না জানেন, তাদের জন্য পত্রিকায় তো এসব লেখা হয়েছিল।

তারা কি পত্রিকা পড়তেন না। নাকি এগুলো সব সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে মনে করতেন? মন্ত্রীদের কথা বাদ না দিলাম। বাণিজ্য ও অর্থমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তারা কি করেছেন। নাকি দায়িত্বপ্রাপ্ত আসলে কেউই ছিলেন না। ২. বলা হচ্ছে বাংলাদেশ আমদানি নির্ভর দেশ।

আমি বলি বাংলাদেশ একই সঙ্গে চোরাচালান নির্ভর দেশ। চাহিদার একটি বড় অংশই আসে চোরাচালান হয়ে। সরকারি হিসাবেই বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের চাহিদা, স্থানীয় উৎপাদন এবং আমদানি তথ্যের মধ্যে কোনো মিল নাই। যেমন, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে দেশে চিনির চাহিদা ছিল ১২ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার টন।

আর আমদানি হয় ৫ লাখ ২৪ হাজার টন। বাকি ৫ লাখ ৪৩ হাজার টন কোথা থেকে আসে। মশুরের ডালের চাহিদা ৩ লাখ ১৮ হাজার টন, দেশে উৎপাদন হয় ১ লাখ ২১ হাজার টন আর আমদানির পরিমাণ ছিল ৯৪ হাজার টন। বাকি ১ লাখ ৩ হাজার টন ডাল কোথা থেকে এসেছিল? দেশে পেঁয়াজের চাহিদা ৭ লাখ ৩৫ হাজার টন। উৎপাদন হয় আড়াই লাখ টন এবং আমদানি হয় আরও ৩ লাখ ২ হাজার টন।

বাকি এক লাখ ৮৩ হাজার টনের তাহলে কি হবে? একইভাবে মরিচের চাহিদা ৪ লাখ ৪০ হাজার টন, দেশে উৎপাদন হয় ১ লাখ ৫৫ হাজার টন আর আমদানি হয় মাত্র ১৫৫ টন। অর্থাৎ প্রায় ২ লাখ ৮৫ হাজার টনেরই কোনো হিসাব সরকারের কাছে নাই। একই চিত্র হলুদ, রসুন ও আদার েেত্রও। ‘গ্রে এরিয়ার’ মধ্যে ভোগ্য পণ্যের এত বড় একটি অংশ রেখে কিভাবে সরকার পরিকল্পনা করে তা আমার জানা নেই। ৩. ভারত সীমান্তে এখন কড়াকড়ি আরোপ করে রেখেছে।

তারা হয়তো অনেকখানিই সফল। ফলে ভোগ্য পণ্য তেমন আসছে না। বলে রাখা ভাল চোরাচালান মানে এই নয় যে মাথায় বস্তা নিয়ে দৌড়ে কেউ সীমান্ত পার করে এসব পণ্য নিয়ে আসে। বৈধ পথেই এসব পণ্য আসে। হয়তো চার ট্রাকের বদলে আসে ৮ ট্রাক কিংবা চালের কথা বলে আসে ডাল।

এখন কেন এসব তেমন আসছে না? ভারত চাচ্ছে না বলেই আসছে না। ভারত যদি সফল হয় তাহলে আমরা কেন হইনা। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানোর ক্ষেেত্রও চোরাচালানই তো একটা বড় যুক্তি ছিল। ভারতে নাকি ডিজেল পাচার হয়ে যায়। কারণ সেখানে দাম বেশি, আর আমাদের কম।

আর বোরো মৌসুমে এই যে তেলের দাম বাড়ানো হলো তাতে বেড়ে গেল বোরোর উৎপাদন ব্যয়। জ্বালানি তেলের দাম কি আরও এক মাস পরে বাড়ানো যে তো না? এতোদিন অপক্ষা করতে পারলাম, আর এক/দের মাস কি অপো করা যেতো না? ৪. বোরো ছিল সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়ার একটা সুযোগ। সেই সুযোগও তো কাজে লাগানো গেলো না। জ্বালানি তেলের কারণে সেচ ব্যয় বেড়ে গেল। সার চাহিদা অনুযায়ী কৃষকরা পেয়েছে তা বলা যাবে না।

মূল্যস্ফীতির চাপের এমন একটা সময়ে বোরো মৌসুমে আমরা কি বেশি পরীক্ষা নীরিক্ষা করে ফেলেছিলাম? ৫. দ্রব্যমূল্য বা মূল্যস্ফীতি কেবল আমাদেরই সমস্যা নয়। প্রতিবেশি ভারতসহ অনেক দেশই এসব নিয়ে সমস্যার মধ্যে আছে। সব মহল থেকেই ভারতের উদাহরণ দেওয়া হয়। ইন্টারনেট খুলে দেখুন, দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি নিয়ে দুজনের বক্তব্য পাবেন। একজন অর্থমন্ত্রী পি চিদাম্বরম, আরেকজন রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্ণ ভানুগোপাল রেড্ডি।

আমি অনেক খুঁেজও বাণিজ্যমন্ত্রীর কোনো কথা পেলাম না। উল্টোটা আমাদের দেশে। জোট সরকারের সময় একাধিক বাণিজ্যমন্ত্রীর বদল হয়েছে। আর অর্থমন্ত্রী কেবল বক্তৃতা দিয়ে বেড়িয়েছেন। জিনিষ পত্রের দাম কমাতে প্রয়োজন রাজস্ব ও মুদ্রা নীতির সমন্বয়।

বাণিজ্যমন্ত্রীর এখানে তেমন কাজ নেই। ব্যবসায়ীরা এলসি খুলে পণ্য আনবেন। এখানে থাকে ব্যাংক। এ ক্ষেত্রেও বাণিজ্য মন্ত্রীর কাজ নেই। আগের বাণিজ্য মন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সম্পর্ক ভাল ছিলা না বলেই আমরা জানি।

এখন তো দুজন একই ব্যক্তি। আগামি সরকারে এরকম নাও থাকতে পারে। আমরা তাহলে ভবিষ্যতের জন্য এখন কি ব্যবস্থা তৈরি করে রেখে যাচ্ছি? অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজার পরিস্থিতির তদারকি এবং সব পরে মধ্যে সমন্বয় কিভাবে হবে? এখন কি এর ভাল কোনো ব্যবস্থা হচ্ছে? ৬.ভারতে আছে এমএমটিসি, এসটিসি, পিইসির সব সরকারি প্রতিষ্ঠান। যারা বাজারে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে সরবরাহ স্থিতিশীল রাখে। আমাদের আছে টিসিবি।

মৃতপ্রায়। দাতারা নাকি চান না সরকার আমদানি করুক। আর একারণে টিসিবিকে অকার্যকর করা রাখা হয়েছে। দাতাদের যতো কথা আমরা শুনছি, সাহায্য তত কমছে। তাহলে দাতাদের কথা শুনে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো বা টিসিবিকে প্রায় বন্ধ করে রাখার কি যুক্তি আছে আমার সেটাও প্রশ্ন।

৭. সিন্ডিকেট বা বাজার নিয়ন্ত্রণের কথা বলছি। মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান ৭০ শতাংশ ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। চিনির বাজারও কয়েকজনের হাতে। ১৯৯৪ সালের দিকে সরকার বাজারে যাতে কেউ একচেটিয়ামূলক নিয়ন্ত্রণসহ অসাধু ব্যবসা না করতে পারে সে জন্য এন্টি মনোপলি বা এন্ট্রি ট্রাস্ট ল’ করার উদ্যোগ নিয়েছিল। আজও কেন সেই আইন করতে পারলাম না? ৮. নতুন সরকার দায়িত্ব নিল জানুয়ারিতে।

তখন তো প্রায় সব ধরণের পণ্যের আন্তর্জাতিক বাজার ছিল এখনকার তুলনায় অন্তত একশ ডলার কম। বিশেষ করে ডাল ও ভোজ্য তেল। আমরা তো জানতাম ভারত থেকে এগুলো পাওয়া যাবে না। ভারত রপ্তানি বন্ধ করে দিয়েছে। এগুলোর সরবরাহ বাড়ানোর জন্য তাহলে কি করেছি আমরা? তখন আমদানির উদ্যোগ নিলে এখন তো কিছু কম দামে পেতাম।

কমাতে না পারি, স্থিতিশীলও কি আমরা রাখতে পারবো না?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.