আমি একজন নিরাপদ ব্লগার
জান্নাত আর আমি দুইজনেই বুয়েটের কোচিং করছি। কিন্তু রেজাল্ট খারাপ হওয়ার কারনে আমি আর জান্নাতদের বাসায় যাই না।
আমাকে যে করেই হোক, বুয়েটে চান্স পেতেই হবে এই মানসিকতা নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে যাচ্ছি । আর এদিকে জান্নাত তার বড় ভাই( যে কিনা বুয়েটে পড়ে) তার সহায়তায় জটিল জটিল অংক গুলো সল্ভ করে যাচ্ছে। আর আমি পাচ্ছি না কোন সহায়তা কারো কাছ থেকে।
জান্নাত কোচিংএর প্রথম পঞ্চাশ জনের মধ্যে নিজের অবস্থানের কথা জানান দিল। এবার তার সি.এস.ই তে চান্স পাওয়া ঠেকায় কে?
২০০০ সাল। বাংলাদেশ তীব্র কম্পিউটার জ্বরে আক্রান্ত। সিএসই তে চান্স পাওয়া মানেই নিশ্চিত ভবিষ্যত । ইতোমধ্যে বুয়েটের একটি দল বিশ্বে এগারতম স্থান অধিকার করে।
ছেলে- মেয়ে যেই হোক তাকে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার বানাতে হবে এ ধরনের মানসিকতা সবার মধ্যে। আবার প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সিএসই খুলছে হরদমছে।
অবশেষে বুয়েটের পরীক্ষা এসে গেল । ৩০ অক্টোবর ২০০০ সাল আমার জীবনের একটি স্মরনীয় দিন। আগের দিন রাত থেকেই কাল বৈশাখী ঝড় হচ্ছিল।
সকাল বেলায়ও এ ঝড় থামল না। রাস্তায় বেড়িয়ে দেখলাম রাস্তা প্রায় ফাকা। অনেক কষ্টে একটি বাস পেলাম। তখনও মুসলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল। অনেক কষ্টে দশটা বাজার পনের মিনিট আগে পৌছলাম বুয়েটে।
আমার স্বপ্নের বুয়েটে। তখন বৃষ্টি একটু কমল,কিন্তু কমলে কি হবে? বুয়েটের পুরু রাস্তা জুড়ে পানি আর পানি। পানির বাধ ভেঙ্গে আমি পৌছলাম নির্ধারিত আসনে।
ইলেক্ট্রিসিটি না থাকায় আর প্রতিকুল আবহাওয়ার কারনে পরীক্ষা শুরু হল এগারটার দিকে। বাইরে প্রচন্ড ঝড় আর আমরা সবাই পরীক্ষার হলে ।
আমি-জান্নাত আরো অনেকে। গণিত ও পদার্থ বিজ্ঞান অংশ ভালভাবে দেয়ার চেষ্টা করলাম। ইংরেজীও দিলাম মোটামুটি। সমাধানগুলো করার সময়, আমার মাথায় এটাই কাজ করছে, আমাকে চান্স পেতেই হবে । পরবর্তী পর্ব হল রসায়ন ।
কিন্তু আমি রসায়ন এ ছিলাম মারাত্মক দুর্বল। যা হবার তাই পুরা সময়টা বসে থাকলাম। টুকটাক কয়েকটা প্রশ্নের উত্তর দিলাম।
পরীক্ষা শেষ করে বেড়িয়ে দেখি পানির সাগরে ভাসছে বুয়েট। গাছপালার ডাল গুলো ভেঙ্গে পরে আছে যত্রতত্র।
এক মেয়ে তো রাস্তায় চলতে চলতে সুয়ারেজের গর্তে পড়ে গেল। পাশে আরেক বান্ধবী থাকায় তার রক্ষা।
বুয়েটে পরীক্ষার দুইদিন পর ছিল জাবিতে পরীক্ষা। নেচে গেয়ে পরীক্ষা দিলাম। অনেকটা বেড়াতে যাওয়ার মত করে।
আমার তো এখানে আর সি.এস.ই তে হবে না। স্বাভাবিক ভাবে এ বিম্ববিদ্যালয়ে আমি পড়ছি না। শেষ বারের মত জাবিকে প্রদক্ষিন করলাম। কি সুন্দর ক্যাম্পাস(আসলেই)।
এর কয়েকদিন পর জান্নাতের বাবার সাথে দেখা।
তিনি আমাকে কাছে ডেকে,বললেন-
-বুয়েটে পরীক্ষা কেমন হল?
-মোটামুটি।
-জান্নাতের তো পরীক্ষা ভাল হয়নি। সে তো কেঁদে কেটে অস্থির। বাবা, তুমি একটু যাবে ওর সাথে দেখা করতে।
-ঠিক আছে যাব।
মানুষের পরিচয় তো বিপদের সময়। এক জনের দুর্সময়ে আমি যাব না, তা কি করে হয়।
(চলবে)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।