জীবনদৃষ্টি বা দৃষ্টিভঙ্গি কথাটার মানে হচ্ছে জীবনকে আমি কীভাবে দেখছি। জীবন সম্পর্কে আমার সিদ্ধান্ত কেমন হওয়া উচিত-এ বিষয়ে একটা সুস্পষ্ট অভিমত। আর জীবনকে সুন্দর করার জন্যে যে একটি জিনিসের প্রয়োজন, তা হলো সঠিক জীবনদৃষ্টি। বাকি সবকিছু তখন এমনিই চলে আসে। কারণ চাবি যদি ঠিক থাকে আপনি তালাটা খুলতে পারবেন।
তা না হলে আপনার কাছে, যত চাবি থাকুক যদি ঐ তালার চাবি না হয়, তাহলে তালা খোলা যাবে না।
জীবনের তালা, জীবনের বন্ধ দরজা খোলার জন্যে যে সঠিক চাবিটির দরকার সেই চাবিটি অর্জন করার জন্যে প্রয়োজন সঠিক জীবনদৃষ্টি।
আসলে সকল বাস্তবতার নির্মাতা মস্তিষ্ককে যথাযথভাবে ব্যবহার করার জন্যে প্রয়োজন সুসংহত মানসিক প্রস্ত্ততি। আর মানসিক প্রস্ত্ততির ভিত্তি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি, নিয়ত বা অভিপ্রায়। কারণ মন পরিচালিত হয় দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত দ্বারা।
আর মস্তিষ্ককে চালায় মন।
বিজ্ঞানীরা দীর্ঘ গবেষণা করেছেন মন ও মস্তিষ্কের সম্পর্ক নিয়ে। ড. এলেন গোল্ডস্টেইন, ড. জন মটিল, ড. ওয়াইল্ডার পেনফিল্ড ও ড. ই রয় জন দীর্ঘ গবেষণার পর বলেছেন, একজন প্রোগ্রামার যেভাবে কম্পিউটারকে পরিচালিত করে, তেমনি মন মস্তিষ্ককে পরিচালিত করে। মস্তিষ্ক হচ্ছে হার্ডওয়ার আর মন হচ্ছে সফটওয়ার।
নতুন তথ্য ও নতুন বিশ্বাস মস্তিষ্কের নিউরোনে নতুন ডেনড্রাইট সৃষ্টি করে।
নতুন সিন্যাপসের মাধ্যমে তৈরি হয় সংযোগের নতুন রাস্তা। বদলে যায় মস্তিষ্কের কর্মকাঠামো। মস্তিষ্ক তখন নতুন দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে নতুন বাস্তবতা উপহার দেয়।
নতুন বাস্তবতা ভালো হবে না খারাপ হবে, কল্যাণকর হবে না ক্ষতিকর হবে তা নির্ভর করে মস্তিষ্কে দেয়া তথ্য বা প্রোগ্রামের ভালো-মন্দের ওপর। কল্যাণকর তথ্য ও বিশ্বাস কল্যাণকর বাস্তবতা সৃষ্টি করে আর ক্ষতিকর তথ্য বা বিশ্বাস ক্ষতিকর বাস্তবতা উপহার দেয়।
তাই নিঃসন্দেহে বলা যায়, জীবনের নতুন বাস্তবতার চাবিকাঠি হচ্ছে দৃষ্টিভঙ্গি বা নিয়ত।
বিজ্ঞানীরা বলেন-দৃষ্টিভঙ্গি দুধরনের।
এক, প্রো-একটিভ। দুই, রি-একটিভ।
প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতিতে উত্তেজিত বা আবেগপ্রবণ না হয়ে ঠান্ডা মাথায় চিন্তা-ভাবনা করে সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপ গ্রহণ।
প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে অন্যের কাজের প্রতিক্রিয়া হিসেবে কোনো কাজ বা আচরণ না করা। সর্বাবস্থায় নিজের লক্ষ্য ও দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে আচরণ ও কর্মপন্থা অবলম্বন করা। প্রো-একটিভ অর্থ হচ্ছে কী কী নেই তা নিয়ে হা-হুতাশ না করে যা আছে তা নিয়েই সুপরিকল্পিতভাবে কাজ শুরু করা। প্রো-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় সাফল্য ও বিজয় ছিনিয়ে আনে।
অপরদিকে রি-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি সবসময় ব্যর্থতা, হতাশা ও অশান্তি সৃষ্টি করে।
রি-একটিভ হলে নিয়ন্ত্রণ নিজের হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। আপনি যখন অন্যের কথায় কষ্ট পান, অন্যের কথায় রেগে যান, অন্যের আচরণে ক্রোধে ফেটে পড়েন, অন্যের তোষামোদিতে উৎফুল্ল হয়ে ওঠেন, চাটুকারিতায় গলে যান, অন্যের কথায় নাচেন, তখন নিয়ন্ত্রণ আর আপনার হাতে থাকে না। নিয়ন্ত্রণ চলে যায় অন্যের হাতে। রি-একটিভ দৃষ্টিভঙ্গি জীবনে নেতিবাচকতা সৃষ্টি করে
মহাজাতক
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।