৩ দিন আগের যে ঘটনাটা আমাকে চমকে দিয়েছিল তা অন্য যে কাউকেও চমকে দিতো...
সময় বেলা ১১ টা, স্থান পান্থপথ সিগনাল (পান্থপথ আর গ্রীনরোড যেখানে ক্রস করেছে)। প্রতিদিনকার মতো বাইক নিয়ে জ্যামে আটকে আছি। দেখলাম আর্মির একটা জীপও আছে। জীপটার সামনে বাদিকে একটা ঠেলাগাড়ি কোনমতে একপাশে এসে থামলো। ঠেলাগাড়িটার পজিশন নিয়ে থামতে একটু সমস্যা হচ্ছিল।
ঠেলাগাড়িতো আর বিনাশুল্কে কেনা অটোমেটিক যান নয়! দাড়াতে একটু সময় লাগে। জীপের চালককে তাই ব্রেকটা সামান্য জোরে চাপতে হয়েছিল। মুহুর্তেই ঘটনাটা ঘটে গেল। জিপ থেকে বেরিয়ে এলেন বছর ত্রিশের মহামান্য অফিসার। বীরবিক্রমে প্রায় মিনিটখানেক ধরে ঠেলাগাড়ির চালকের দুইগালে চড় মেরে চললেন তিনি।
ভাবছিলাম থামে না কেন। অসহায় চালকের বোকা বোকা চেহারা দেখে তিনি হয়তো আরো বেশি অসহায় বোধ করছিলেন। হয়তো হিন্দী ছবির নায়কের কথা মনে পড়ছিল তার। এতো কোন রসালো মারপিটই হলো না! তাই ভেবেই কি তিনি একমুহুর্ত থামলেন? হ্যা... সত্যিকার বীরত্ব দেখাতে এগিয়ে চললেন তিনি ঠেলাগাড়ির পেছনদিকে। বার তেরো বছরের ছেলেটা ঠেলাগাড়ি চালাতে সাহায্য করে।
এতোক্ষন ভয়ার্ত চোখে সে এই দৃশ্য দেখছিল। এবার আমাদের হিরো এগিয়ে চললেন তার দিকে। আবারো শুরু করলেন তার নিজস্ব স্টাইলের কন্টিনিউয়াস চড়-থাপ্পড়।
সে দৃশ্য অসহ্য। আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না চারপাশের এই মানুষগুলো কিভাবে এই দৃশ্য সহ্য করছে! এই অন্যায় সহ্যশক্তির জন্যই কি উর্দিধারিরা এদেরকে বলে 'ব্লাডি সিভিলিয়ান'? জ্যামে আমি ছিলাম অন্যপাশে।
আমার ইচ্ছে হলো বাইকটা পাশে দাড় করিয়ে রেখে জানোয়ারটাকে ধরি আর এই শিশুটিকে বলি যে তোমার খুশিমতো চড়িয়ে এর গালদুটো লাল দাও। কিন্তু জ্যাম ছেড়ে দিল।
আমি ভাবছিলাম যে ব্যাকগ্রাউন্ড থেকেই আসুক না কেন একজন মানুষ কিভাবে এমন পশু হয়ে যেতে পারে? ৭১ -এর সেই নরপশুরা যখন সাধারন মানুষদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তো তখন কি ওই শিশুটির মতো অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকতো ওর পূর্বপুরুষেরা?
আমার চোখে জুলুমের একটাই রূপ। দেশী কিংবা বিদেশী জুলুম বলে কিছু চিনিনা আমি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।