আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মাদরাসা শিক্ষা সংকোচনের নীলনকশা.



ফারুক হোসাইন : মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংসে চলছে নানা ষড়যন্ত্র। এ শিক্ষা সংকোচন ও ধ্বংসে তৈরি করা হয়েছে চূড়ান্ত নীলনকশা। ষড়যন্ত্রের গোমর ফাঁস করে দিয়েছেন খোদ প্রধানমন্ত্রীর পুত্র ও তার তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি মন্তব্য করেছেন, আমরা দেশে মাদরাসা ছাত্র কমানোর আন্দোলন শুরু করেছি। যদিও এর সূচনা অনেক আগেই হয়েছে বলে মনে করছেন ইসলামী চিন্তাবিদরা।

আন্দোলনের অংশ হিসেবেই শিক্ষার্থীদের মাদরাসাবিমুখ করতে এবং ইসলামী জ্ঞান অর্জনে নিরুৎসাহিত করতে নেওয়া হয়েছে নানা পদক্ষেপ। এবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, মাদরাসায় লাইব্রেরিয়ান নিয়োগসহ মাদরাসা শিক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতির ফুলঝুড়ি ছড়ালেও বাস্তবায়ন হচ্ছে না কোনটিরই। অথচ শিক্ষা আইনের (খসড়া) মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে মাদরাসা শিক্ষা সংকোচনের চূড়ান্ত নীলনকশা। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যেই জাতীয় সংসদ অধিবেশনে পাস করানো হবে এ আইন। প্রণীত আইন পাস হলে সংকুচিত হয়ে যাবে মাদরাসা শিক্ষা (আলিয়া) ব্যবস্থা।

স্বকীয়তা হারিয়ে ফেলবে শিক্ষার এ ধারাটি। থাকবে না ইসলামী চিন্তা-চেতনা ও মূল্যবোধ। স্কুল-কলেজের পাঠ্যসূচিতেই পাঠদান করা হবে মাদরাসা শিক্ষার্থীদের। এছাড়া মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি না করেই নেওয়া হয়েছে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা। কৌশলে মাদরাসা বন্ধের মাধ্যম হিসেবেই শিক্ষা আইন-২০১৩ (খসড়া) কে দেখছেন ইসলামী শিক্ষাবিদরা।

এছাড়া কওমী মাদরাসা শিক্ষাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার কওমী মাদরাসা শিক্ষা কর্তৃপক্ষ আইন -২০১৩ নামে অপর একটি খসড়া আইন প্রণয়ন করেছে। এ নিয়ে কওমী অঙ্গনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। কওমী সমাজ এ উদ্যোগ প্রতিহত করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের দেশে ইসলামী শিক্ষা অর্জনের প্রধান মাধ্যম হলো মাদরাসা শিক্ষা। অথচ এ মাদারাসা শিক্ষাকে নিয়ে একরকম বিরোধিতাপূর্ণ মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়।

তিনি গত শুক্রবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আমরা মাদরাসা ছাত্র কমানোর আন্দোলন শুরু করেছি। তিনি বলেন, পঁচাত্তরের পর দেশে স্কুল তৈরি বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। এর ফলে প্রতি তিনজন স্কুলছাত্রের বিপরীতে এখন একজন মাদরাসার ছাত্র তৈরি হয়েছে। এটা কমিয়ে দিতে আমরা ইতোমধ্যে আন্দোলন শুরু করে দিয়েছি। তার এ বক্তব্যের পর সারাদেশে নিন্দার ঝড় শুরু হয়েছে।

অনেকেই জয়কে (জীবনী) নিয়ে ময়নাতদন্ত শুরু করে দিয়েছেন। ফেসবুক, ব্লগসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তার এ বক্তব্য নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ব্যাপক বিতর্ক। অনেকেই মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে বিরোধিতার জন্য তার ধর্ম পরিচয় নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। দৈনিক ইনকিলাবের ওয়েবসাইটে গতকালকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে কাজী বসির আহমেদ মন্তব্য করেছেন সজীব ওয়াজেদ কখনো বাংলাদেশে পড়াশুনা করেননি, বাংলাদেশের সাথে তার যোগাযোগ কতটুকু ছিল তা তার জীবনী থেকে জানা যায়। এছাড়া তিনি একজন অমুসলিমকে জীবন সঙ্গী হিসেবে নিয়েছেন।

রুহিদ নামে এক পাঠক মন্তব্য করেছেন মাদরাসায় পড়াশুনা করলে কুরআন হাদিসের শিক্ষা বিস্তার করবে ফলে ইসলাম ধর্মের প্রসার লাভ করবে তাই তিনি মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে। সরকারের শিক্ষানীতি, পরিবর্তিত নতুন প্রস্তবানা ও মাদরাসা শিক্ষা সংকোচন নিয়ে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মন্তব্য প্রসঙ্গে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. এ এম আনোয়ার বলেন, শিক্ষানীতি নিয়ে যারা বিশেষভাবে কাজ করেছেন তাদের অনেকেই ধর্মবিদ্বেষী ব্যক্তি। ইসলামী শিক্ষা সংকোচনই তাদের নীতি। তারা শুরুতে একরকম, মধ্যে একরকম আর সবশেষে এখন আরেক রকম নীতি প্রণয়ন করে মানুষকে ধোকা দিয়ে চলেছেন। প্রধানমন্ত্রীর পুত্র জয়ের বক্তব্যে এ প্রতারণার কথা প্রকাশ পেয়ে গেছে।

তিনি বলেন, আমি রাজনীতি করিনা, তবে এ বিষয়টির সাথে যেহেতু জাতির ভবিষ্যত জড়িত তাই কিছু আক্ষেপ ও বেদনার কথা না বলে পারছি না। আমরা জানি বঙ্গবন্ধু এ দেশের ধর্মপ্রাণ মানুষের কথা ভেবেই ড. কুদরত-ই-খুদা শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন না করে সেটি ওয়েস্ট পেপার বাস্কেটে ফেলে দিয়েছিলেন। তিনি মাদরাসা শিক্ষাবোর্ড স্থাপন করেছিলেন। বাংলাদেশের মুসলিম পরিচয় ধরে রাখার সকল ব্যবস্থা আন্তরিকভাবে করেছিলেন। সেসব কথা প্রধানমন্ত্রী এবং তার দলের নেতারা গর্ব ভরে উল্লেখ করে থাকেন।

কদিন আগেও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তার সরকার ইসলামী শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে তার ভূমিকা অনেক। তিনি ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। কিন্তু কৌশলপূর্ণ নীতিমালা করে মাদরাসা বন্ধ করে দেয়া, ছাত্র কমানোর আন্দোলন শুরু করা, মাদরাসা শিক্ষা ধীরে ধীরে তুলে দেয়া ইত্যাদি নিয়ে কিছু নেতা, আমলা ও বুদ্ধিজীবী যেভাবে কাজ করছেন তা দেখে মানুষ উদ্বিগ্ন। প্রতারিত হওয়ার আশংকায় ধর্মপ্রাণ জনগণ চরম আতঙ্কিত।

বিশেষ করে জয়ের কথা তার মা ও নানার নীতির সম্পূর্ণ বিপরীত। এর ফলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে। ধর্মীয় শিক্ষার বিরুদ্ধে কোন ষড়যন্ত্রই এ দেশে সফল হবে না বলে তিনি মন্তব্য করেন। মাদরাসা শিক্ষায় প্রতিবন্ধকতা: একই দেশে, একই সংবিধানের অধীনে একজন সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা যেসকল সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে থাকেন। সেই দেশে এবং সংবিধানের অধীনে একই ধরণের সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছেন না মাদরাসা শিক্ষায় শিক্ষিত শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা।

মাদরাসা শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি, শিক্ষকদের সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত করা ও অবকাঠামোসহ সকল ক্ষেত্রে অবহেলিত করে রাখা হয়েছে শিক্ষার প্রাচীন এই ধারাকে। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে মাদরাসা শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের যোগ্যাতার স্বাক্ষর রাখলেও বর্তমান সরকারের সময়ে প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্দিষ্ট কিছু বিষয় ছাড়া বাকিগুলো ভর্তি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ধারার শিক্ষা ব্যবস্থায় সরকারি ও বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের নানা সুযোগ-সুবিধা, বেতন-ভাতা দেওয়া হলেও অবহেলিত ও বঞ্চিত রাখা হয়েছে মাদরাসা শিক্ষকদের। ৮ হাজার মাদরাসাতে দেওয়া হচ্ছে না বেতন-ভাতা। ৩ হাজার ১১ জন এবতেদায়ী শিক্ষকের মধ্যে মাত্র ১ হাজার ৫০০ জনকে দেওয়া হচ্ছে নামমাত্র ১ হাজার টাকা করে মাসিক বেতন।

অথচ একই পর্যায়ের প্রাথমিক শিক্ষকদের দেওয়া হচ্ছে উচ্চ হারে বেতন-ভাতা। প্রতিটি উপজেলায় ন্যুনতম একটি করে সরকারি মাধ্যমিক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও সরকারি মাদরাসা প্রতিষ্ঠার কোন উদ্যোগের এখনও নেয়নি সরকার। আর অবকাঠামো নির্মাণ, মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন, বৃত্তি প্রদানসহ সব ক্ষেত্রেই অবহেলিত এ ধারাটি। মাদরাসা শিক্ষার আলিয়া ধারার পাশাপাশি নতুন করে কওমী ধারাকেও নিয়ন্ত্রণে আইন প্রণয়ন করছে সরকার। কওমী মাদরাসা নিয়ন্ত্রণ, সংকোচন ও ধ্বংসের জন্য সরকার নীরবে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র মুহাদ্দীস আল্লামা খালেদ আনসারী।

দিনাজপুরের কওমী মাদরাসার এ প্রধান শিক্ষক বলেন, তিনদিনের মধ্যে জাতিকে চমক দেখাবেন বলে চাঞ্চল্যকর ঘোষণা দিয়ে জয় সাহেব তার ধর্মবিদ্বেষী চেহারা জাতির সামনে উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এর আগেও তিনি ইসলামী জীবনধারা, মাদরাসা শিক্ষা, নারীর পর্দা-হিজাব-বোরকা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন। বাংলাদেশকে জঙ্গী রাষ্ট্র হিসেবে চিহ্নিত করা, সেনাবাহিনীকে অপবাদ দিয়ে বদনাম করা তার কীর্তি। ব্যক্তিগত জীবনেও তার শিক্ষা, সংস্কৃতি, ধর্মীয় আচার, বিয়ে-শাদি এক অবোধগম্য রহস্যে আবৃত। বাংলাদেশের ধর্মপ্রাণ দেশপ্রেমিক জনগণ তার বিষয়ে অনেক কৌতূহল লালন করে।

তার কথাবার্তা, ভঙ্গি ও আচরণ জনগণের কাছে ভালো ঠেকছে বলে মনে হয় না। তাকে আরও চিন্তা করে চলতে হবে। নানা বঙ্গবন্ধু, মা শেখ হাসিনার নীতি ছেড়ে ধর্মবিদ্বেষী আদর্শের পতাকাবাহী হলে চলবে না। এসব বিদেশের সেমিনার ও গবেষণায় চলতে পারে। তৌহিদী জনতার বাংলাদেশে নয়।

আলিয়া, কওমী বা সাধারণ শিক্ষার কোন ক্ষেত্রেই ইসলামবিদ্বেষী নীতিমালা চলবে না। জনগণ সচেতন আছে। প্রয়োজনে কওমী আলিয়া এক হয়ে দূর্বার গণআন্দোলনের মাধ্যমে ধর্মবিদ্বেষী চক্রান্তকে প্রতিহত করা হবে। তিনি বলেন, কওমী মাদরাসা নিয়ন্ত্রণে আইন করা থেকে বিরত না হলে, এ ইস্যুতেই সরকারকে চলে যেতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের এবাদত-বন্দেগী, ধর্মকর্ম, নামাজ, দোয়া, কোরআন, কালাম শিক্ষার কাজটিকে সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার এ অপচেষ্টাই হবে আওয়ামী লীগের ধ্বংসের কারণ।

ক্ষমতার দাপটে প্রধানমন্ত্রীর পুত্র যে ভাষায় কথা বলছেন, তা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পীড়া দিচ্ছে। তিনি নিবৃত না হলে জনপ্রিয়তা তলানিরও তলে চলে যাবে। তৌহিদী জনতা কওমী মাদরাসা ধ্বংসের ষড়যন্ত্র রুখতে যে কোন ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত। তাছাড়া ইসলামবিদ্বেষী খোদায়ী শাস্তি তো আছেই। প্রতিশ্রতিতেই সীমাবদ্ধ: বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই মাদরাসা শিক্ষার উন্নয়নে দিয়ে গেছে একের পর এক প্রতিশ্রুতি।

শিক্ষাক্ষেত্রের সাফল্যেও অর্জন হিসেবে দেখানো হয়েছে এসব প্রতিশ্রুতিকে। অথচ এই সরকারের পুরো মেয়াদে এখন পর্যন্ত সকল এবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হচ্ছে না। যাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে তা নামমাত্র এক হাজার টাকা। ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সকল কিছু সম্পন্ন হলেও জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের জন্য উত্থাপন করা হচ্ছে না। প্রতিটি মাদরাসাতে লাইবেরিয়ান নিয়োগের কথা বললেও এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়নি শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সরকার।

আর তার মধ্যে সজীব ওয়াজেদ জয়ের মাদরাসা ছাত্র কমানোর ঘোষণাকে মাদরাসা শিক্ষা সংকোচনের নীলনকশা হিসেবেই দেখছেন ইসলামপ্রিয় মানুষরা। মাধ্যমিকে নতুন বিভাগ ইসলাম শিক্ষা: আগে মাধ্যমিকের সকল বিভাগের শিক্ষার্থীদের জন্য ইসলাম শিক্ষা বাধ্যতামূলক ছিলো। শিক্ষার্থীদের নৈতিক শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে এই বিষয়টি শিক্ষার্থীদের পাঠদান করানো হতো। কিন্তু এবছরের ২১ মে শিক্ষামন্ত্রণালয় ইসলাম শিক্ষা নামে নতুন একটি বিভাগ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এর মাধ্যমে কেবল এই বিভাগের শিক্ষার্থীরাই ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে পড়তে পারবেন।

অন্যরা আর আগের মতো ইসলাম ও নৈতিক শিক্ষা বিষয়টি পাচ্ছেন না। এছাড়া নতুন শিক্ষা বর্ষে প্রণীত ইসলাম শিক্ষা বইয়ে আল্লাহর সাথে দেবদেবীর তুলনা ও বিভিন্ন ভুল বিষয় উপস্থাপনকেও মাদরাসা শিক্ষার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে মনে করছেন মাদরাসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। পাসের অপেক্ষায় শিক্ষা আইন: গত ৫ আগস্ট জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ এর সুপারিশের আলোকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় শিক্ষা আইন-২০১৩ এর খসড়া প্রণয়ন করে। যা ইতোমধ্যে বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। আর এই খসড়া আইনের মাধ্যমেই অতি কৌশলে মাদরাসা শিক্ষাকে সংকোচনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

যা চলতি জাতীয় সংসদে পাস করা হবে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। সূত্রটি জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের অধিবেশনে যোগ দিতে আমেরিকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হওয়ার আগেই আগামী ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে এ বিলটি পাস করানো হবে। এর ফলে সংকুচিত হয়ে যাবে মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থা। খসড়া শিক্ষা আইনে দেখা যায়, মাদরাসা শিক্ষাকে এ আইনে অত্যন্ত অবহেলিত করে দেখানো হয়েছে। অনেক স্থানে মাদরাসার শ্রেণিস্তর ও মাদরাসার বিষয়গুলো উল্লেখ করা হয়নি।

এছাড়া মাদরাসা ও সাধারণ শিক্ষার জন্য অভিন্ন পাঠ্যপুস্তক ও শিক্ষা ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি উল্লেখ করে প্রকারান্তে মাদরাসা শিক্ষাকে বিলুপ্ত করার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে বলে মাদরাসার শিক্ষকরা অভিযোগ করেন। শিক্ষা আইনের ধারা ২ এর (চ) উপধারায় কেবল বিদ্যালয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। মাদরাসা বিষয়ে কোন কথা উল্লেখ করা হয়নি। ধারা ৭ এর (১) উপধারায় বলা হয়েছে, প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক এবং এবতেদায়ী শিক্ষার জন্য সকল শিক্ষা ধারায় নির্ধারিত বিষয়সমূহের অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণয়ন করা হবে। এই অভিন্ন শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যসূচি প্রণীত হলে মাদরাসা শিক্ষা তার নিজস্ব চিন্তা-চেতনা ও স্বকিয়তা হারাবে বলে মনে করেন শিক্ষাবিদরা।

মাদরাসা শিক্ষাকে তার নিজস্ব ধারায় গতিশীল রাখতে এনসিটিবি পৃথক বই প্রণয়ন করতে পারে বলে তারা মন্তব্য করেন। এই ধারারই (৪) উপধারায় বলা হয়েছে প্রাথমিক স্তরে শিক্ষার সকল ধারা (সাধারণ, মাদরাসা ও কিন্ডারগার্টেন) নির্বিশেষে নির্দিষ্ট শ্রেণির পাঠ্যসূচিতে বাংলা, ইংরেজি, ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, বাংলাদেশ স্টাডিজ, গণিত, পরিবেশ-পরিচিতি, তথ্যপ্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান বাধ্যতামূলক হবে। এই ধারাতেও মাদরাসা শিক্ষাকে অত্যন্ত কৌশলে এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। সকল ধারার শিক্ষার্থীদের জন্য একই পাঠ্যসূচি হলে মাদরাসা শিক্ষা তার স্বকিয়তা হারাবে। এজন্য মাদরাসা শিক্ষকরা মনে করেন মাদরাসার সকল বিষয় ঠিক রেখে অন্যান্য বিষয়গুলো মাদরাসার শিক্ষার্থীদের জন্য অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে।

এছাড়া কুরআন, হাদীস ও ফিক্হ বিষয়গুলো যারা অধ্যয়ন করবে তাদের জন্য নৈতিক শিক্ষা বিষয় অন্তর্ভূক্ত করার কোন প্রয়োজনীয়তাই নেই। ধারা ১২ এর (২) উপধারায় পিএসসি এবং জেএসসি/ জেডিসি পরীক্ষার কথা বললেও উল্লেখ নেই এবতেদায়ী সমাপনী পরীক্ষার কথা। মাদরাসা শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন তাহলে কি এবতেদায়ী শিক্ষাকে অস্বীকার করা হচ্ছে? নাকি কৌশলে এই শিক্ষাকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। ধারা ১৪ এর (৪) উপধারায় বলা হয়েছে মাদরাসা শিক্ষার এবতেদায়ী পর্যায়ের প্রথম শ্রেণি হতে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠদানকারী শিক্ষকদের ডিপ্লোমা ইন এডুকেশন এবং ষষ্ঠ শ্রেণি হতে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বিএমএড ডিগ্রি অর্জন করতে হবে। অথচ মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশিক্ষণের কোন ব্যবস্থা করা হয়নি।

জেলায় জেলায় স্কুলের শিক্ষকদের জন্য প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট থাকলেও বিভাগীয় শহরেও নেই মাদরাসা শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। ধারা ১৬ এর (২) উপধারায় প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের আওতায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন ইউনিট স্থাপন করার কথা বললেও এবতেদায়ী শিক্ষা অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার কথা এখানে উল্লেখ নেই। ধারা ২০ এর (২) উপধারায় স্কুল-কলেজের শিক্ষা ধারার কথা উল্লেখ থাকলেও উল্লেখ করা হয়নি মাদরাসা শিক্ষার কথা। ২১ নং ধারার (১) উপধারায় সাধারণ, মাদরাসা ও কারিগরি ধারায় সমতার ভিত্তি সৃষ্টির লক্ষ্যে মৌলিক বিষয়সমূহে অভিন্ন পাঠ্যসূচি বাধ্যতামূলক এবং অভিন্ন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয়। মাদরাসা শিক্ষকদের প্রশ্ন হলো তাহলে কি মাদরাসায় প্রশ্ন করার মতো শিক্ষক নাই? তারা মনে করেন মাদরাসায় স্কুল-কলেজের চেয়ে অনেক যোগ্যতা ও দক্ষতা সম্পন্ন শিক্ষক রয়েছে যারা এসব বিষয়ে প্রশ্ন প্রণয়ন করতে পারেন।

৫৭ নং ধারার (৪) উপধারায় বলা হয়েছে প্রতিটি উপজেলায় অন্তত একটি সরকারি মাধ্যমিক স্কুল ও একটি সরকারি কলেজ নিশ্চিত করা হবে। এখানে দাখিল মাদরাসা ও আলিম/ফাজিল মাদরাসা উল্লেখ নাই। আরা ৫৮ (১) উপধারার ঝ- তে বলা হয়েছে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এসএসসি এবং এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষায় পরপর দুই বৎসর শতকরা ৭০ ভাগের নিম্মে উত্তীর্ণ হলে (পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২৫ এর কম হতে পারবে না) শিক্ষক ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতার সরকারি অংশ এবং প্রতিষ্ঠানের এমপিও সাময়িক বন্ধ, আংশিক বা সম্পূর্ণ কর্তন বা বাতিল করা হবে। প্রশ্ন হলো এই পদ্ধতি কেবল বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য কেন? সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে এর অধিনে আনা হয়নি। এছাড়া এবতেদায়ী স্তরের মাদরাসা শিক্ষকের সংখ্যা যেখানে ৩ হাজার ১১জন সেখানে তাদের ১ হাজার ৫০০ জনকে দেওয়া হয় নামমাত্র ১ হাজার টাকা বেতন।

৮ হাজার মাদরাসা শিক্ষকের বেতন-ভাতা নাই। কোন সুযোগ-সুবিধা নাই। এই অবস্থায় কিভাবে তারা পাসের হার ৭০ শতাংশ করবে। প্রতিনিধি নিয়োগে ইসলামী শিক্ষা অবমূল্যায়িত: সরাদেশে বিবাহ নিবন্ধনের জন্য কাজী নামে একটি পদ রয়েছে। এই পদটিতে সাধারণত মাদরাসা শিক্ষিতরাই সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য বলে সর্বজনস্বীকৃত।

কিন্তু বর্তমান সরকারের সময়ে এই পদে নিয়োগদানে ধর্মীয় শিক্ষাকে কোন যোগ্যতা হিসেবে দেখা হচ্ছে না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এছাড়া মসজিদ কমিটি ও স্কুল-কলেজের সভাপতি ও সদস্য পদগুলোও রাজনৈতিক যোগ্যতায় বণ্টনের নীতি গৃহিত হয়েছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.