জীবন গঠনে নিজেস্ব প্রতিক্রিয়ার দায় বেশি, ঘটে যাওয়া ঘটনার ভূমিকা সামান্য।
মুহাম্মদ (সা) এর নবী জীবনের তেইশ বছরের ঘটনা নিয়ে এ যাবতকালে একটাই মুভ্যি হয়েছে, '!@@!345425 !@@!345426'। ডকুমেন্টারি অনেক হয়েছি, কিন্তু এই একটাতেই চরিত্রগুলোতে অভিনেতারা অভিনয় করেছেন। 'দি ম্যাসেজ' পরিচালনা করেছেন !@@!345442 !@@!345443 নামের একজন সিরিয়ান ভদ্রলোক। আক্কাদ ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনা করেছেন আমেরিকায়।
মুভ্যিটা বানালেন এই পড়াশোনা এবং ইসলাম সম্পর্কে আবেগকে পুঁজি করে, পশ্চিমে ইসলামের নবী মুহাম্মদ (সা) কে পরিচিত করিয়ে দেয়ার জন্য। ১৯৭৬ সালে করা মুভ্যিটা আক্কাদের প্রথম মুভ্যি।
আজকে মুভ্যিটা পঞ্চম বারের মত দেখলাম। অনেক দিন পরে একই বই পড়লে বা একই মুভ্যি দেখলে কিছু ধারণা বদলে যায়। টের পেলাম আবারও।
প্রথম বার যেই মুগ্ধতা ছিল, এবার দেখে সেই মুগ্ধতা কিছুটা কাটল।
১৯৭৬ সালের মুভ্যি মানে অবশ্যই আর্থিক খরচ বেশি ছিল, টেকনলজিক্যাল এবং এনিমেশন সংক্রান্ত কাজে খরচ হতো বেশি, যদিও মানের বেলায় ছাড় দিতে হতো। এই সব বাদ দিয়ে তাই মুভ্যি টেকনিক নিয়ে পর্যালোচনা করবো।
ইসলামে মুহাম্মদ (সা) এর প্রতি সম্মান প্রদর্শনের জন্যই তাঁর চরিত্রে কেউ অভিনয় করতে পারে না। এখানে মুহাম্মদ (সা) এর চরিত্রে কেউ অভিনয় না করে তাঁর চলাফেরা দেখানো হয়েছে ক্যামেরার নাড়াচাড়ার মাধ্যমে।
কেউ মুহাম্মদ (সা) এর দিকে তাকিয়ে কথা বলতে চাইলে সে ক্যামেরার দিকে তাকিয়ে কথা বলে। মুহাম্মাদ (সা) হাঁটছেন বুঝাতে ক্যামেরা চলতে শুরু করে। উটের পিঠ থেকে মুহাম্মদ (সা) এর দৃষ্টি অনুসরন করে ক্যামেরা এদিক সেদিক দুলে, ক্যামেরার ফ্রেইমের নিচ থেকে মুহাম্মদ (সা) এর লাঠির একাংশ দেখা যায়। এই ব্যাপারটা বেশ ক্রিয়েটিভ ছিল। এছাড়া, চার খলিফার চরিত্রে কেউ অভিনয় করে নি।
যেটা ঠিক আছে, কারণ এই মানুষগুলোর চরিত্রে কারও অভিনয় করা মানে ওই বিশেষ ইমেজটা মানুষের মনে স্থির করে দেয়া, এতে হয়তো ভালোর চেয়ে খারাপই বেশি আছে।
কিন্তু একটা ব্যাপার কেমন কেমন যেন হয়ে গেল, যার কারণে আমার মনে হয়েছে মুহাম্মদ (সা) কে নিয়ে ডকুমেন্টারি করাই ঠিক আছে, মুভ্যি করলে ভুল ধারণা দেয়ার সম্ভবনা বেশি। মুহাম্মদ (সা) এর কথা না দেখিয়ে তাঁর বলা কথাগুলো অন্যদের দিয়ে বলানো হয়েছে এই মুভ্যিতে। তাতে যা হয়েছে--ধরুন একটা ভরা মজলিশ। বাস্তবে মুহাম্মদ (সা) সেখানকার নেতা ছিলেন বলে তিনিই সব ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন, তাঁকেই ঘিরে থাকতো সবাই।
তাঁর ব্যক্তিত্ব আর সব কিছুকে ছাপিয়ে বড় হয়ে থাকতো। কিন্তু মুভ্যিটাতে তাঁর কথাগুলো অন্যদের দিয়ে বলানোর ফলে যেই দর্শক ইতিহাস সম্পর্কে আগে থেকে অবহিত না, তিনি খুব সহজেই ভাবতে পারেন, অত বড় বড় সিদ্ধান্তগুলো আসলে হামযা (রা) বা যায়িদ (রা) এর দেয়া। একটা ভরা মিটিঙে, মুহাম্মদ (সা) এর উপস্থিতিতে হামযা (রা) সবাইকে নির্দেশ দিচ্ছেন: যে কেউ এ ক্ষেত্রে হামযা (রা) কে বা যায়িদ (রা) কে মুহাম্মদ (সা) এর চেয়ে বেশি প্রভাবশালী এবং বিচক্ষণ ভাববে, যেটা আসলে তখনকার প্রেক্ষিতে ঠিক ছিল না।
মুভ্যির নাম প্রথমে ছিল 'মুহাম্মদ, দ্যা ম্যাসেঞ্জার অফ গড', পরে পাল্টে করা হয়েছে 'দ্যা ম্যাসেজ'। যেটা আসলে মন্দের ভালো।
কারণ তাতে করে মুহাম্মদ (সা) এর শিক্ষায় ফোকাস করা হয়, ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা) এর উপরে না। আর এই মুভ্যিটা ব্যক্তি মুহাম্মদ (সা) কে ফুটিয়ে তুলতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। আবশ্য এর চেয়ে বেশি আর কি করতে পারতো আমি জানি না, তাই মনে হচ্ছে, মুভ্যির চেয়ে ডকুমেন্টারিই ভালো।
মোটামোটি প্রাথমিক পর্যায়ের ইতিহাস শিক্ষার জন্য খারাপ না 'দ্যা ম্যাসেজ'। হিযরত, বদর যুদ্ধ, উহুদ যুদ্ধ, মক্কা বিজয় সম্পর্কে মোটামোটি ধরণের ধারণা পাওয়া যায়।
তাই হয়তো বই পড়তে অনিচ্ছুকদের দেখতে উৎসাহিত করবো, কিন্তু একই সাথে প্রচন্ড রকমের ক্রিটিক্যাল হতে বলবো মুভ্যিটায় ইতিহাসের রিপ্রেজেনটেশন নিয়ে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।