খুব গোলমেলে, নিজেও ভাল জানি না। তবে আছে,এই ঢের।
এবারের গল্পের ও দুই দুস্কৃতির একজন হচ্ছেন আমার মেজদি । আমাদের দুজনের ই মেয়ে দুটি তখন সবে স্কুল যেতে শুরু করেছে ( মেজদির মেয়ে আর আমার মেয়ে প্রায় এক ই বয়েসি) । দুজনে মহা উত্সাহে তাদের স্কুলএ দিতে যাই,আনতে যাই।
স্কুলের প্রয়োজনীয় যে কোন জিনিস কিনতে দুজনে প্রায় রোজই নিউ মার্কেটে যাই । সে প্রয়োজন যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন । স্কুল থেকে ফিরে দুটি ক্ষুদেই খেয়ে দেয়ে ঘুমায়, আমরা সেই ফাঁকেবাইরের কাজটা সেরে আসতাম । তেমনি এক বিকেলে বাড়ির সামনে থেকে দুজনে রিক্সায় চেপেছি ( হেঁটে গেলে বড়জোর দশ মিনিট লাগে, কিন্তু আমি তখনো হাঁটাতে ততটা অভ্যস্ত নই, তাই রিক্সা ) ।
রিক্সা এই গলি ঐ ঘুঁজি দিয়ে ঘুরে চলেছে, একটা ছোট্ট লেন পেরিয়ে রিক্সা সদর স্ট্রিট এ ঢুকবে ।
লেন এর শেষ মাথায় রাস্তারপাশে একটা ছোট্ট শিবমন্দির, ওখানটায় পৌছুতে সামনে থেকে একটা ট্যাক্সি এসে সোজা ঠুকে দিলো আমাদের রিক্সাকে । ট্যাক্সিটি সদর স্ট্রিট থেকে ঐ লেনে ঢুকছিল, আমাদের বেচারা রিক্সাওয়ালা অনেক চেষ্টা করে সোজা উল্টে না দিয়ে বাম দিকেপাশ ফিরিয়ে রিক্সাটিকে ফেললো !!
আমি বসেছিলাম বাঁয়ে, কাজেই আমি পড়লাম আগে, আমার ওপরে মেজদি। আমি তখন ৭৫কেজি! মেজদি ও ৭৫ছুঁই ছুঁইকরছে। ফুটপাথ এর নীচে জমা ছিলো কিছু নোংরা জল, সেই জলের ওপরে আমি,আমার ওপরে মেজদি,আর আমাদের দুজনেরওপরে রিক্সা ! মেজদি চটপট আমার ওপর কনুই আর হাঁটু চেপে উঠে পড়েছে, কিন্তু আমি চেষ্টা করেও উঠতে পারছিনা, মেজদিআমার হাত ধরে টানাটানি করছে, কিন্তু ঐ ঢালমত জায়গায় তোবড়ানো রিক্সায় আমি আটকে গেছি। সাহাজ্যের জন্যে চারপাশথেকে ততক্ষনে বেশ কিছু হাত এগিয়ে এসেছে ।
মেজদি আমায় ধম্কালো, চেষ্টা তো কর উঠে আসার ! শেষমেষ আমি উঠেএলাম ! রিক্সাওয়ালা তখন বিষম ব্যস্ত, তার যে কোন দোষ নেই এটা চারপাশের লোকজনকে বোঝানোতে । মেজদি তখন আমার হাত ধরে আমাকে প্রায় হিঁচড়ে বাড়ির ফিরতি পথ ধরেছে, লোকজনের সাহায্যের হাত উপেক্ষা করে। আমি তখনো কথা বলার মত অবস্থায় নেই, কিন্তু মেজদির শাসানিগুলো কানের ভেতর গরম সীসের মত ঢুকছে, ম্যাডাম হাঁটতে পারেন না, রিক্সা চাই, বাড়িতে গিয়ে যদি কাওকে কিচ্ছুটি বলেছিস, তো জীবনে তোকে নিয়ে আর কোত্থাও যাবো না !
বাড়ি গিয়ে কাওকে কিছু বলার মনোবাসনা আমারো ছিলো না । তাই বলিওনি কাওকে। হাতের ২/৩ জায়গায় বিভিন্ন রঙেরউপস্থিতি দেখে কর্তা জিজ্ঞেস করেছেন, তুমি কি রানী'র (মেজদি) সাথে পান্জা লড়েছিলে নাকি ? লাগলো কিকরে ? (মেজদির আবার পান্জা লড়ার সখ ছিল!) আমি প্রবল প্রতিবাদ করেছি, যে আমি মোটেও পান্জা ( বানানটাকেকিছুতেই বাগে আনতে পারছিনা ) লড়িনি, রাতে অন্ধকারে দেয়ালে ধাক্কা খেয়েছিলাম, তাই লেগে গিয়েছে ! বলাই বাহুল্য, যেকথাটি তিনি বিশ্বাস করেননি ।
এর পর বেশ কিছুদিন শুধু স্কুল ছাড়া অন্য কোথাও যাইনি, আর সেই থেকে রিক্সা চাপাও বন্ধ! কিন্তু আমাদের গোপন কথাটি রহিলো না গোপন! প্রায় 1 বছর পরে, সেই রিক্সাওয়ালা অভিযোগ করেছে মেয়ের বাবার কাছে, সেদিনকার সেই দুর্ঘটনায় তার নাকি কোন দোষ ছিলোনা, ট্যাক্সি এসে বেমক্কা ধাকা মেরে রিক্সা উল্টে দিলো, কিন্তু তারপর থেকে ভাবীরা কেও আর তার রিক্সায় ওঠেন না ! একথা শুনে তিনি তো হা ! কবে ওল্টালো রিক্সা ? তখন জেরা করে জানতে পারলেন যে প্রায় বছরটাক আগেকার ঘটনা এটা । রাতে দুই ভাই মিলে আমাদের দুজনের ক্লাস নিলেন ! আর কত এরকম ঘটনা আমরা লুকিয়ে রেখেছি ??? কিছুতেই বিশ্বাস করাতে পারিনি, যে আর কিচ্ছু লুকানো নেই!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।