আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্রোধ

বোকারা ভাবে তারা চালাক, চালাকরা ভাবে তারা চালাক। আসলে সবাই বোকা। বোকার রাজ্যে আমাদের বসবাস “আমি না আমার ছোট ভাইকে খুন করতে চাই” কথাটা শুনে আমার পিলে চমকে উঠল। নতুন টুইশনি, দীর্ঘ দুই মাস পরে আবার টুইশনি শুরু করলাম। মাঝে একেবারে বেকার হয়ে দুটি মাস কাতল।

একদিন রাস্তায় হঠাৎই সবিরের সাথে দেখা হয়ে গেল গত পরশু দিন। সবির আমার সাথে মেডিকেল ভর্তি কোচিং করেছিল। তখন ভালই খাতির ছিল। পরবর্তীতে সে চিটাগাং মেডিকেলে চান্স পেয়ে চিটাগাং চলে গেল, আমি কোথাও চান্স না পেয়ে ভর্তি হয়েছিলাম পাস কোর্সে। পড়ালেখা সাবসিডিয়ারি হয়ে মেজর হল টিউশনি আর আড্ডাবাজি।

যাই হোক, সবির তার ভাগ্নির জন্য টিউটর খুঁজছে, আমাকে বলতেই আমি রাজি হয়ে যাই। ক্লাস নাইনের স্টুডেন্ট, আমাকে সপ্তাহে তিনদিন ম্যাথ করাতে হবে। সবির বলেছিল যে, মেয়েটা একটু অন্যরকম, কিন্তু অন্যরকম বলতে সে কি মিন করেছিল তা আমি বুঝিনি। আমি আজ প্রথম মেয়েটিকে পড়াতে এসেছি। আমি বসেছিলাম, হঠাৎ একটি তের চৌদ্দ বছরের মেয়ে সামনে এসে দাঁড়াল এবং এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইল।

আমি অনেকখানি অবাক হলাম। সাধারনত নতুন টিউশনিতে স্টুডেন্ট জড়সড় হয়ে থাকে, নতুন টিচারকে বুঝতে সময় নেয়। কিন্তু এই মেয়েটি প্রথমেই যে কথাতি বলল, তা হল – “আপনিই নতুন টিচার? ও আচ্ছা...” তার সাথে আমার গত এক ঘণ্টা ধরে কথপকথন চলছে। আমাদের কথাবার্তার কিছু চুম্বক অংশ এইরকমঃ “আপনিই নতুন টিচার? ও আচ্ছা...” “হ্যাঁ আমি তোমার নতুন টিচার। আমার নাম রিতম।

তোমার নাম কি?” “আপনার নাম আমি জানি, আপনি ছোট মামার বন্ধু। আপনিও তো আমার নাম জানেন, তাই না! কেন বোকার মত কথা বলছেন...” আমি ঢোঁক গিললাম। একি মেয়েরে বাবা। এইটুকুন বাচ্চা একটা মেয়ের একি রূপ। আমাকে সবির যে সমস্যার কথা বলেছিল তাকি মেয়েটির বেয়দবির ব্যাপারে? আমি কথা ঘুরালাম- “তাইতো, আমি বোকার মত প্রশ্ন করে ফেলেছি।

দেখত কি জ্বালা, আমি শুরুতেই বোকামি করে ফেলেছি। তুমি ভাবছ এই বোকা টিচার কি পড়াবে...” আমার কথা থামিয়ে দিয়ে সে বলল, “স্যার, আমি না এক জায়গায় বসে থাকতে পারি না। আমি কি এখানে হাঁটতে হাঁটতে কথা বলতে পারি?” আমি মজা পেলাম। এতো আজীব চিজ! পুরো কমেডি সিনেমার ক্যারেকটার। “হ্যাঁ পার।

মন চাইলে তুমি দৌড়াতে দৌড়াতে পড়ালেখা করতে পারো। ” মেয়েটি হাসছে। সে আমার কথায় মজা পেয়েছে। “তোমার আর কি কি এমন অদ্ভুত ইচ্ছা আছে?” “একটা বিশেষ ইচ্ছা আছে...। আপনাকে বলব না” “কেন আমাকে বলতে অসুবিধা কোথায়?” “এটা খুব গোপন কথা, আপনি সবাইকে বলে দিবেন......” আমি প্রমোদ গুনলাম।

কি না কি গোপন কথা, থাক এই প্রসঙ্গ। আমি কিছুক্ষন তার সিলেবাস, পড়াশুনার অবস্থা এইসব আলোচনা করলাম। হঠাৎ সে বলে উঠলো, “স্যার জানেন, আমি না গত দুইদিন টানা ঘুমিয়েছি। ” “কেন? তুমি বোধহয় ঘুমাতে পছন্দ কর?” “না স্যার, ডাক্তারের দেয়া ওষুধ খাইয়ে আম্মু ঘুম পাড়িয়ে রেখেছিল। আজ আপনি আসবেন বলে আজকে ঘুম পাড়িয়ে রাখেনি।

” বলে কি পাগল মেয়েটা এসব। মেয়েটা ভয়ংকর ফাজিল টাইপের নিশ্চয়। আমার সাথে ফাজলামি করছে। টুইশনিতে এগুলো আমার কাছে নতুন নয়, আমি বহু ফাজিল স্টুডেন্ট পড়িয়েছি। “তোমাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখে কেন? তুমি কি মহা পাজী?” “না স্যার, আমার মাথায় সমস্যা... আমি একটা মেণ্টাল...হি...হিহি...” রাগে আমার গা জ্বলছে।

এতো মহা বেয়াদব একটি মেয়ে। “স্যার কি আমার কথায় রাগ করেছেন? সত্যি আমার মাথায় সমস্যা, আম্মু মানসিক ডাক্তার দেখাচ্ছে। ” “তাই নাকি, কি সমস্যা তোমার? বলতো দেখি?” “না আগে আপনি প্রমিজ করেন, কাউকে বলবেন না। ” “ঠিক আছে প্রমিজ, কাউকে বলব না” “আমি না আমার ছোট ভাইকে খুন করতে চাই। দুইবার চেষ্টা করেছি, রাতের বেলা।

আম্মুর সাথে ও ঘুমিয়ে ছিল। চাকু হাতে গিয়েছিলাম, আম্মু হঠাৎ জেগে উঠে আমায় দেখে ফেলে। মজার ব্যাপার আম্মু ভেবেছে আমি তাকে মারতে গিয়েছিলাম। তাই আম্মু আমার থেকে সাবধানে থাকে। কিন্তু আমিতো মারবো আমার ছোট ভাইকে...হাহা...হা” কথাটা শুনে আমার পিলে চমকে উঠল।

বলে কি? আমি চমকে উঠলাম মেয়েটির কথায় নয়, তার চাহনি দেখে। এযে খুনে চাহনি, রক্তের ঝিলিক চোখের কোনে। তার শিশুসুলভ হাসিটি হঠাৎ পিশাচের হাসি মনে হল। [গল্পটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত] ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।