যা বুঝি, যা দেখি, যা শুনি এবং যা বলতে চাই
কেনো এই পোস্ট লিখছি, একথা জিজ্ঞেস করলে এককথায় কোনো উত্তর দিতে পারবো না। তবে ধর্মবিষয়ক মতবাদের আগের পোস্টটি লেখার পর মনে হলো আরেকটু অগ্রসর হই। ধর্মের দর্শন খুবই কঠিন একটি বিষয়। খুব কম মানুষই এই গোলকধাঁধাঁয় ঢুকতে চান। তার চেয়ে ভালো হাতের কাছে পাওয়া বাপ-দাদার ধর্মে বিশ্বাস করে প্রচলিত কিছু প্রথা মুখস্থ অনুসরণ করে যাওয়া।
অবশ্য ধর্মের দর্শনের এই জটিলতাও সবার জন্য নয়। তো যারা আগ্রহী জানতে চলুন আগের লেখার শেষ অংশ থেকে শুরু করা যাক। ইসরাইলে যে মনোথিইজমের জন্ম হয় তাই পৃথিবীতে এনে দেয় একক ঈশ্বরের ধারণা। ইহুদিদের সেই একক ঈশ্বর ধারণার হিব্রু ভাষ্যই বাইবেলের অল্ড টেস্টামেন্ট (Old Testament)-এ স্থান করে নিয়েছে। কিন্তু ইহুদি ধর্ম ও তাদের সমাজ চিরনত্দন ও সাংস্কৃতিক বহুইশ্বরবাদ (Polytheism) ও হেনোথিইজম ধারণা থেকে বের হয়ে আসার জন্য দীর্ঘ লড়াই করতে হয়েছে।
হিব্রুদের ঈশ্বর মূলত: স্থানীয় এক ঈশ্বর, ইসরাইলের জাওয়েহ (কাছাকাছি এলাকায় অন্যান্য এরকম ট্রাইবাল ঈশ্বরের নাম ছিল ডাগন ও চেমশ)। কিন্তু খ্রিস্টান যুগের আগে অষ্টম, সপ্তম, ও ষষ্ঠ শতাব্দীতে অনেক ধর্মীয় নেতা ইশ্বর জাওয়েহকে শুধু হিব্রুদের ঈশ্বর থেকে সমগ্র পৃথিবীর সব মানুষের ঈশ্বরের ধারণায় উত্তরণ ঘটান। এসব ধর্মীয় মহাপুরষদের মধ্যে রয়েছেন, আমোস, হোসিআ, প্রথম ঈসাই, জেরেমিয়া এবং দ্বিতীয় ঈসাই। হিব্রু ভাষার এসব নবীরা এই মতবাদটিকে এগিয়ে নিয়ে যান। তারা বলেন, যদিও ঈশ্বর তাদের জাতিকে এক বিশেষ দায়িত্ব দিয়েছেন ঈশ্বরের কথা পৃথিবীর সবাইকে জানান দিতে তবুও তিনি শুধু তাদের ঈশ্বর নন, বিদেশীদেরও ঈশ্বর।
অর্থাৎ তারা এই ধারণাটি প্রতিষ্ঠা করতে চেষ্টা করেছেন যে, এরকম একজন ঈশ্বর শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট বিশ্বাসের জনগোষ্ঠীর দায়িত্ব পালন করতে পারেন না, বরং তাকে হতে হবে সব জাতি ও জনগোষ্ঠীর।
ইহুদিদের তৈরি এই একক ঈশ্বরের ধারণাটি আরো বিশদভাবে দার্শনিক ব্যাখ্যাযুক্ত হয়ে স্থান নেয় খ্রিস্টান ধর্মে। ইহুদি-খ্রিস্টানদের এই একক ধারণার উপর নির্ভর করে পরবর্তীতে পৃথিবীতে অনেক নতুন ধর্মের জন্ম হয়েছে। তাছাড়া, কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুরনো অনেক স্থানীয় ধর্ম এই ধারণার দার্শনিকতাকে তাদের ধর্মচিন্তার মধ্যে গ্রহণ করে পুরনো ধর্মকে নতুন সাজ-পোশাক পরিয়েছে। তবে যেহেতু ধর্মসংক্রানত্দ এ্যাকাডেমিক আলোচনায় এই মনোথিইজমকে ইহুদি-খ্রিস্টানদের ঈশ্বরের একত্বের ধারণা বলেই আলোচনা করা হয় সেহেতু আমিও তাই করছি।
অসীম ও স্ব-স্বাধীন ঈশ্বর
ইহুদি ও খ্রিস্টানদের ঈশ্বর চেতনায় ঘুরে ফিরে একটি কথা আসে তাহলো ঈশ্বর অসীম, তার কোনো সীমা নেই। এই যে ঈশ্বরের অসীমতা ও সর্বব্যাপ্তিতা এই ধারণাকে আরো সুপ্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এই মতবাদের সমর্থকরা একটি গুরুত্বপূর্ণ ধারণা সামনে নিয়ে আসেন। সেটি হচ্ছে আমাদের বলা উচিত নয় যে ঈশ্বর আছেন কারণ এই বক্তব্যও ঈশ্বরকে সীমাবদ্ধ করে দেয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।