আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ

ছাত্র

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এটিই মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের দণ্ডের বিরুদ্ধে আপিলের প্রথম রায়। প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বাধীন পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ রাষ্ট্রপক্ষ ও আসামিপক্ষের আপিলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ মঙ্গলবার এ রায় দেন। বেঞ্চের বিচারপতিরা হলেন বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গত ৫ ফেব্রুয়ারি কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছিলেন।

এ রায়ের পর তাঁর সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তরুণ সমাজের ডাকে শাহবাগে গড়ে ওঠে গণজাগরণ মঞ্চ। পরে দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিলের সমান সুযোগ রেখে ১৭ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) সংশোধন বিল, ২০১৩ জাতীয় সংসদে পাস হয়। আগে আইনে সরকারের দণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আপিল করার সুযোগ ছিল না। গত ৩ মার্চ সর্বোচ্চ শাস্তি চেয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। আর সাজা থেকে অব্যাহতি চেয়ে পরদিন আপিল করেন কাদের মোল্লা।

গত ১ এপ্রিল থেকে শুনানি শুরু হয়। আসামি ও সরকার—উভয় পক্ষের দুটি আপিলের ওপর ৩৯ কার্যদিবস শুনানি শেষে ২৩ জুলাই আপিল বিভাগ রায় অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন। শুনানি শেষ হওয়ার ৫৪ দিনের মাথায় আজ চূড়ান্ত রায় ঘোষিত হলো। ট্রাইব্যুনালের রায়: ট্রাইব্যুনাল-২ কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা মানবতাবিরোধী অপরাধের ছয়টি অভিযোগের মধ্যে মিরপুরের আলুব্দী গ্রামে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ এবং হযরত আলী, তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও ধর্ষণের দায়ে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। এ ছাড়া পল্লব হত্যা, কবি মেহেরুননিসা ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা, সাংবাদিক খন্দকার আবু তালেব হত্যার দায়ে তাঁকে ১৫ বছর কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

আর কেরানীগঞ্জের ঘাটারচর ও ভাওয়াল খানবাড়ি হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ থেকে তাঁকে খালাস দেওয়া হয়। আপিল ও শুনানি: রায় ঘোষণার ২৭ দিনের মাথায় ছয় অভিযোগের মধ্যে পাঁচটিতে দেওয়া সাজাকে অপর্যাপ্ত দাবি করে সর্বোচ্চ সাজা চেয়ে আপিল করে সরকার। পাশাপাশি একটি অভিযোগ থেকে তাঁকে দেওয়া খালাসের আদেশও বাতিলের আরজি জানানো হয়। অপর পক্ষে ট্রাইব্যুনালে দেওয়া যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ বাতিল ও সাজা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আপিল করেন কাদের মোল্লা। দুটি প্রশ্ন ও অ্যামিকাস কিউরি: শুনানিতে দুটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত প্রশ্ন ওঠায় জ্যেষ্ঠ সাত আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি (আদালতের আইনি সহায়তাকারী) মেনে মতামত নেন আদালত।

অ্যামিকাস কিউরিরা হলেন টি এইচ খান, রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আজমালুল হোসেন কিউসি এবং এ এফ হাসান আরিফ। প্রশ্ন দুটি হলো, দণ্ড ঘোষণার পর আইনে আনা সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য কি না এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন, ১৯৭৩-এর অধীনে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে কি না। সংশোধনী কাদের মোল্লার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে মত দেন রফিক-উল হক, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসি। প্রযোজ্য নয় বলে মত দেন টি এইচ খান এবং এ এফ হাসান আরিফ। প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রয়োগ প্রশ্নে রফিক-উল হকের মত, বাংলাদেশের বিচারব্যবস্থায় এবং ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইনে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন (কাস্টমারি ইন্টারন্যাশনাল ল) প্রয়োগের সুযোগ নেই।

এম আমীর-উল ইসলাম প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রয়োগের পক্ষে মত দেন। ১৯৭৩ সালের ট্রাইব্যুনাল আইনে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইনের প্রতিফলন রয়েছে বলে মত দেন রোকনউদ্দিন মাহমুদ। মাহমুদুল ইসলাম বলেন, সাধারণভাবে প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে না। একই ধরনের মত দিয়ে আজমালুল হোসেন বলেন, বিচারের ক্ষেত্রে এই আইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক প্রথাগত আইন সাংঘর্ষিক হলে দেশীয় আইনই প্রাধান্য পাবে। টি এইচ খানের মত ছিল, প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে।

তবে দেশীয় আইনের সঙ্গে আন্তর্জাতিক আইন সাংঘর্ষিক হলে সে ক্ষেত্রে দেশীয় আইন প্রাধান্য পাবে। প্রথাগত আন্তর্জাতিক আইন প্রযোজ্য হবে বলে মত দেন হাসান আরিফ। Click This Link

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.