আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলার তরু-লতা-গুল্ম-১৭ : মানকচু

শরতের শুভ্র বিকেল। ভ্যাপসা গরমে ঘরে টেকা দায়। দাড়িয়াবান্ধা কিংবা গোল্লাছুটের আসর বসে বাড়ির উঠোনে। রোজ। তবে মাঝে মাঝে বাগড়া দেয় বড়রা।

উঠোন জুড়ে বাঁশের আড়া বানিয়ে তাতে শুকাতে দেয়া হয় সদ্য পাটখড়ির গা থেকে ছাড়িয়া আনা পাটের ভেজা আঁশ। অথবা পাটখড়ির বড় বড় ঝুটিগুলো দখল করে নেয় আমাদের খেলবার জায়গাটুকু। তখন বাধ্য হয়েই অন্য খেলার দিকে ঝঁকতে হয় আমাদের। বাছতে হয় এমন এক খেলা, যাতে জায়গা লাগে কম আবার খেলার আনন্দে এতটুকুও ঘাটতি না পড়ে। এ অবস্থায় সবচেয়ে মজার খেলাটার প্রধান উপাদান পাট, পাটখড়ি আর মানকচুর পাতা।

কয়েকটা মোটা পাটখড়ি কেটে তা দিয়ে তৈরি হত আমাদের খেলাঘরের খুঁটি, বেড়া, চাল এমনকী কাঠামোও। তারপর সেই চালের ওপর বিছিয়ে দেয়া হত গোটা তিনেক মানকচুর পাতা। ব্যাস, তৈরি আমাদের খেলাঘর। বৃষ্টির পানিও আর নাগাল পাবে না আমাদের । মানকচু নিয়ে এই ছিল আমাদের শৈশবের উজ্জ্বলতম স্মৃতি।

মানকচু এরপরেও ছিল, এখনো বহাল তবিয়তে আছে। কত খেয়েছি, গাল ধরেছে, কিন্তু সেসব কোনো স্মৃতিই শৈশবের খেলঘরের ছবিকে ম্লান করতে পারেনি। প্রিয় সচল, নিশ্চয়ই এতক্ষণে বুঝে গেছেন, আজ আমি মানকচুর প্যাঁচাল পাড়তে চাচ্ছি।
বাংলাদেশের কচুগুলোর ভেতর এর আলাদা একটা কদর আছে, সেটা এর বিশাল আকারের জন্য। আর কোনো কচুগাছ এতো বড় আর এত মোটা হয় বলে আমার জানা নেই।

আর অন্য জাতের কচুর সাথে এর তুলনা করতে গেলে লিলিপুট আর গালিভারের কথা মনে পড়ে যাবে আগে।
মানকচু সকলসহা, তাই সবকালে সবখানে বেড়ে উঠতে পারে। মানে বারোমাসি উদ্ভিদ আর কি। শুকনো খটখটে মাটিতে যেমন স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে, তেমনি ভেজা কিংবা ছায়াযুক্ত মাটিতে এদের অবাধ বংশবিস্তারেও বাধা নেই। তবে স্থানভেদে এদের স্বাদের তারতম্য হয়।

ছায়াযুক্ত কিংবা ভেজা মাটিতে যেসব কচু বেড়ে ওঠে সেগুলো খেলে গালচুলকানো সম্ভবনা অনেক বেশি। অন্যদিকে শুকনো-উর্বর মাটির কচুতে গাল ধরার সম্ভবনা খুবই কম।
মানকচু গাছ স্থানভেদে ০.৫ থেকে ১২ ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। ছায়াযুক্ত, অনুর্বর ও আর্দ্র মাটির কচুগাছ খুব বেশি লম্বা লম্বা হয় না। শুকনো-উর্বর মাটির গাছ বেশ লম্বা হয়।

তাছাড়া কাল ভেদেও মানকচুর উচ্চতা ভিন্ন হয়। সাধারণত বর্ষাকালে মানকচুর উচ্চতা সর্বোচ্চ হয়। গ্রীষ্ম ও শীতকালে মানকচুর উচ্চতা সবচেয়ে কম হয়। মানকচু বহুবর্ষজীবি উদ্ভিদ।
মানকচু ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ।

এর আলাদা কোনো কাণ্ড নেই--মূলের যে অংশটুকু মাটির ওপরে থাকে সেই অংশটাকে এর কাণ্ড বললে বোধকরি খুব বেশি ভুল হবে না।
কাণ্ডসহ এর পুরো মূল ২-৫ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। মূলের বেড় ১০ ইঞ্চি পর্যন্ত হতে পারে। মূলের মাটির ভেতরকার অংশের রং ধূসর, তবে কাতলে ভেতরটা সাদা। মাটির উপরকার অংশের রং সবুজ।


মানচুর শাখা-প্রশাখা থাকে না, সরাসরি মূল বা কাণ্ড থেকে প্রথম পাতাটা বের হয়। প্রতিটা পাতার গোড়ার দিকটা বেশ ফোলা থাকে। সপ্তাহ খানেকের মধ্যে পাতার সেই ফোলা অংশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে জড়ানো নতুন পাতা।
মানকচুর পাতা বেশ বড়। বাংলাদেশে মানকচু পাতার চেয়ে বড় পাতা কেবল কলাগাছের।

মানকচুর পাত উপবৃত্তাকার। গাছের উচ্চতানুযায়ী পাতা ৪ ইঞ্চি থেকে ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। প্রস্থ সর্বোচ্চ ২ ফুট পর্যন্ত হতে পারে।
পাতার বোঁটা ৪ ফুট পর্যন্ত লম্বা আর ৬ ইঞ্চি মোটা হতে পারে। পাতা সরল।

পাতার বোঁটার দিকটা দুই ভাগে বিভক্ত। পাতা বোঁত বেশ নরম এবং একেবারে মসৃণ। পাতার রং গাঢ় সবুজ, কচিপাতার রং হালকা সবুজ।
পাতা শুকিয়ে ঝরে যায় না, বরং পাতায় প্রচুর পানি থাকে বলে বয়স্ক পাতা পচে-গলে কাণ্ড থেকে খসে পড়ে।
মানকচুর ফুল-ফল হয় না।

সাধারণত অঙ্গজ প্রজননের মাধ্যমে বংশবিস্তার ঘটে। কচুর মূল থেকে সরাসরি নতুন চারা জন্মে। তাই একটা গাছ কোথাও জন্মলে কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে বহু নতুন চারা জন্মে মানকচুর ঘন ঝাড় তৈরি করে ফেলে। মানকচুর ইংরেজি নাম Giant Taro. বৈজ্ঞানিক নাম Alocasia macrorrhiza.

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.