নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংলাদেশে একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের যে বিচার চলছে, তা কোনো রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে হচ্ছে না বলে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কাতারভিত্তিক স্যাটেলাইট টেলিভিশন আল-জাজিরায় সদ্যপ্রয়াত খ্যাতনামা ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। শুক্রবার রাতে প্রচার হওয়া সাক্ষাৎকারটি সম্প্রতি ঢাকায় এসে নিয়েছিলেন ডেভিড ফ্রস্ট। 'স্বাধীনতার জনক বঙ্গবন্ধু' শীর্ষক একটি প্রামাণ্যচিত্রের কাজ করতে ফ্রস্ট ঢাকা সফরে এসেছিলেন।
বিচার কোনো প্রতিহিংসা থেকে হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'আপনি হয়তো শুনে থাকবেন যে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হচ্ছে।
এটি সত্য নয়। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে অনেক মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এ কাজে সহযোগিতা করেছিল দেশীয় কিছু দোসর। বিশেষত এ কাজে যেসব বাঙালি সহায়তা করেছিল, তাদের বিচার হওয়া উচিত। মুক্তিযুদ্ধে যারা স্বজন হারিয়েছেন, এ বিচার তাদের দাবি।
এ বিচার জনগণের কাছে আমাদের অঙ্গীকার। এ বিচার না হওয়া জাতির জন্য অভিশাপ। '
সাক্ষাৎকারের একপর্যায়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড এবং ২০০৪ সালের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, 'পঁচাত্তর সালে আমি আমার প্রিয় স্বজনদের হারিয়েছি। ২০০৪ সালে আমাকে হত্যার চেষ্টা হয়েছে। তারা ভেবেছিল আমাকে হত্যা করতে পারলে আমার কণ্ঠ রোধ করা যাবে।
' শেখ হাসিনা বলেন, 'জনগণের জন্য আমার বাবা জীবন উৎসর্গ করেছেন। আমিও প্রস্তুত রয়েছি তাদের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে। কারণ আমার বাবার অসমাপ্ত কাজ আমাকে শেষ করতেই হবে। '
শেখ হাসিনা বলেন, 'আমাদের দলটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল জনগণের অধিকার নিশ্চিত করতে। আমাদের সময় প্রতিটা নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয়েছে।
' তিনি বলেন, 'বিএনপির সঙ্গে আমাদের মাতাদর্শিক বিরোধ রয়েছে। কারণ আমরা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করি। যদি আপনি বিএনপির ইতিহাস দেখেন তবে দেখবেন, তাদের সময় প্রতিটি নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে। সে সময় রাস্তায় মানুষ হত্যা করা হয়েছে। ' বাকশাল সম্পর্কে বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, 'তিনি (বঙ্গবন্ধু) জনগণকে ভালোবাসতেন।
জনগণের একটি সুন্দর জীবন তিনি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন। তিনি মানুষের জন্য চিন্তা করেছিলেন এবং দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। ' একদলীয় শাসনব্যবস্থার ওই সরকার প্রসঙ্গে ডেভিড ফ্রস্টের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এটি বাস্তবিক পক্ষে একটি দল নয়। বরং তিনিই চেয়েছিলেন দেশের উন্নয়নের সবাইকে একত্র করতে। সেখানে গণতন্ত্র ছিল।
তবে তিনি তিন বছরের মধ্যে সংসদীয় গণতন্ত্রে ফিরতে চেয়েছিলেন। এ ব্যাপারে আমি বাবার কাছে জানতে চেয়েছিলাম। উত্তরে তিনি বলেছিলেন এ ব্যবস্থা তিন বছর থাকা উচিত। '
শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকারই ফ্রস্টের শেষ : ডেভিড ফ্রস্ট ৩১ আগস্ট মারা গেছেন। দীর্ঘদিন বিবিসিতে কাজ করার পর ২০০৬ সালে কাতারভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল আল-জাজিরার জন্মলগ্নে এর সঙ্গে যুক্ত হন ডেভিড ফ্রস্ট।
তিনিই একমাত্র টেলিভিশন ব্যক্তিত্ব, যিনি ১৯৬৪ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনরত আটজন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। পাশাপাশি ১৯৬৯ থেকে ২০০৮ সালের মধ্যে দায়িত্বে থাকা সাতজন মার্কিন প্রেসিডেন্টেরও সাক্ষাৎকার নেওয়ার অনন্য কীর্তি স্থাপন করেন তিনি। বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের সঙ্গেও জড়িয়ে গিয়েছিল ডেভিড ফ্রস্টের নাম। স্বাধীনতাযুদ্ধের পরপরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাক্ষাৎকার নেন তিনি। আর মৃত্যুর আগে তিনি জীবনের সর্বশেষ সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।