আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পোশাকশ্রমিকদের অবর্ণনীয় জীবন

বিবিসির আজ সোমবারের এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের পোশাকশিল্প কারখানার শ্রমিকদের এক নির্মম ও ভয়ংকর চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের অনেক পোশাকশ্রমিক দৈনিক সাড়ে ১৯ ঘণ্টার মতো কাজ করছেন। এত দীর্ঘ কাজ করা একজন শ্রমিকের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য যে ভীষণ ক্ষতিকর তা-ই নয়, কারখানার কর্মপরিবেশের অমানবিক দিকটিও তুলে ধরে।
রিচার্ড বিল্টনের করা প্রতিবেদনটির শিরোনাম ‘বাংলাদেশ ফ্যাক্টরি ওয়ার্কার্স লকড ইন অন নাইন্টিন আওয়ার শিফট’ (১৯ ঘণ্টার শিফটে কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রমিকেরা)।
প্রতিবেদক গোপনে হা-মীম স্পোর্টসওয়্যার কারখানার সামনে অবস্থান নিয়ে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, শ্রমিকেরা সকাল সাতটা থেকে রাত আড়াইটা পর্যন্ত কাজ করেছে।
সেদিন রাত সোয়া একটার সময় প্রধান গেটের প্রহরী এক ভয়ংকর কাজ করেছেন। তিনি মূল গেটে তালা লাগিয়ে দিয়ে আশপাশে ঘুরছিলেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই ঘটনার কয়েক সপ্তাহ আগে ওই কারখানায় আগুন লেগেছিল। যদি সেদিন রাতেও একই ঘটনা ঘটত, তবে অনেক শ্রমিককে আগুনে পুড়ে মরতে হতো।


সেদিন দুই দিন পরে প্রতিবেদক আবার হা-মীম স্পোর্টসওয়্যার কারখানায় যান। তবে সেদিন তিনি নিজেকে একজন বিদেশি ক্রেতা হিসেবে পরিচয় দেন। তিনি ফরমায়েশ দেওয়ার নিয়মকানুন জেনে নেন। একই সঙ্গে তিনি কারখানার কর্মপরিবেশ নিয়েও কথা বলেন। প্রতিবেদন লিখেছেন, ‘শিফট নিয়ে মালিকদের বক্তব্য কী, তা আমি জানতে চাই।

... আমাদের চারদিক ঘুরিয়ে দেখানো হয়। কারখানাটি জীর্ণ ও ঠাসা। একজন নারী টেবিলের তলায় বসে কাজ করছিলেন। ব্যবস্থাপকেরা সে সময়ের ফরমায়েশ অনুযায়ী চলমান একটি কাজ আমাদের দেখান: সুপার মার্কেট লিডলের জন্য সেখানে দেড় লাখ জিনস তৈরি হচ্ছিল। কর্মঘণ্টা সম্পর্কে জানতে চাই এবং নিশ্চিত হতে চাই যে কারখানা বিকেল সাড়ে পাঁচটায় বন্ধ হয়।

প্রধান গেট নিয়ে জানতে চাই। তাঁরা বলেন, গেটগুলো সব সময় খোলা থাকে। পরিষ্কার বুঝতে পারি, ফরমায়েশ দানকারীরা যা শুনতে চান, ব্যবস্থাপকেরা ঠিক সেগুলোই বলেন। ’
এভাবে কারখানা কর্তৃপক্ষ কেমন করে দুটি পৃথক খাতা ব্যবহার করে শ্রমিকদের কর্মঘণ্টা বিষয়ে মিথ্যাচার করে, সেটিও ওই প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
তাজরীন ফ্যাশনসের অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সাক্ষাত্কারও উঠে এসেছে প্রতিবেদনে।

সেখানে দাবি করা হয়েছে যে অনেক নামী পশ্চিমা কোম্পানির পোশাক তৈরি হয়ে বাংলাদেশের এমন সব কারখানায় যেগুলোতে কর্মপরিবেশ ঠিক নেই। অথচ শ্রমিকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে ওই সব বিদেশি কোম্পানি কোনো ক্ষতিপূরণ দিতে চায় না।
তাজরীন কারখানার অগ্নিকাণ্ডের পর কারখানার পুড়ে যাওয়া জিনিসপত্রের আলোকচিত্র থেকে দেখা যায়, সেখানে ব্রিটেনের এডিনবার্গ উলেন মিলের জন্য কাপড় তৈরি হচ্ছিল।
তাজরীন কর্তৃপক্ষ দাবি করেছিল, এডিনবার্গ উলেন মিল কর্তৃপক্ষ ওই সব নমুনা বাতিল করেছিল এবং পরে সেগুলো মালিকপক্ষের অজান্তে তাদের গুদামে সংরক্ষণ করা হয়েছিল।
এরপর প্রতিবেদকেরা সেসব ছবি কারখানার সাবেক শ্রমিকদের দেখালে তাঁরা সাক্ষ্য দিয়েছেন যে ওই সব পোশাক তাঁরা নিয়মিতই তৈরি করতেন এবং আগুন লাগার কয়েক মাস আগে শেষবারের মতো সেগুলো তৈরি করেছিলেন।


বিবিসির প্রতিবেদক বলেন, ‘বাংলাদেশে দেখলাম যে একটি শিল্প অনেক মানুষের রোজগার ও কাজের ব্যবস্থা করে দেশটিকে বদলে দিচ্ছে। ... অধিকাংশ কারখানাই নিরাপদ ও আধুনিক। কিন্তু তার পরও লাখ লাখ শ্রমিক বিপজ্জনক ও বেআইনি পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য খেটে চলেছেন। ’।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.