আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, সুন্দরবন ধ্বংশ হবে না


একটি আমেরিকান কয়লা বিদ্যুত প্ল্যান্ট বাংলাদেশ এখনো বিদ্যুত ঘাটতির দেশ। দেশটির ৪০ ভাগ লোক এখনো বিদ্যুতহিন। গত ৫ বছরে ৩ হাজার মেঃওয়াট থেকে ৮ হাজার মেঃওয়াট বৃদ্ধির পরও ঘাটতি ২ হাজার, দিন দিন চাহিদা বাড়ছে ঘাটতিও বাড়ছে। কারন ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশনের ও নতুন সংযোগের সাথে বিদ্যুত উৎপাদন বাড়িয়েও ঘাটতি কমানো যাচ্ছে না। ৬৩টি নতুন বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপিত হওয়ার পরও বিদ্যুত ঘাটতি মেটানো যাচ্ছেনা।

২১ শতকের মধ্যে আমদের দরকার ৩০ হাজার মেঃওয়াট বিদ্যুত। এই জন্য ১হাজার মেঃওয়াটের দুটি পারমানবিক বিদ্যুত কেন্দ্রের চুক্তি হয়েছে রাশিয়ার সাথে। ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র হবে রামপালে। ভারতের সাথে ৫০:৫০ যৌথ ভাবে। আমরা একাই করতে পারতাম, কিন্তু কয়লা তুলতে গেলে আমাদের মত ঘনবসতির দেশে বিশাল পরিবেশ বিপর্যয় হয়, তাই ভবিষ্বত প্রজন্মের জন্য আমাদের মাটির নীচের কয়লা মাটির নীচেই থাকবে বলে আপাত সিদ্ধান্ত।

তাই অপেক্ষাকৃত কম জনবসতি এলাকায় আমদানি করা কয়লাদিয়ে মেইন লোকালয়ের বাইরে ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্র করার পরিকল্পনা হয়। কিন্তু এখানেও বাধা! পরিবেশবাদি ও বামদলগুলো শুরু থেকেই এসবের প্রবল বিরোধিতা করে আসছে। প্রধান বিরোধিদল বলেছে তারা ক্ষমতায় আসলে প্রস্তাবিত পারমানবিক ও কয়লা বিদ্যুত প্রকল্পগুলো বাতিল করবে। এদের কথা বলে লাভ নেই এরা ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত ৭ বছরে ১ মেগাওয়াট বিদ্যুতও জাতীয় গ্রিডে যোগ করতে পারে নাই। ৫ বছর মেয়াদে টঙ্গিতে একটি ছোট ৩০০ মেগা তৈরি করেছিল ৩দিনেই বিকল হয়ে উৎপাদনে যেতে পারেনাই।

বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতি দেশ, দেশটিতে জমির দাম পৃথিবীর যেকোন দেশের চেয়েই বেশী। এদেশে যেকোন স্থাপনা তৈরি হলেই এর মাধমে দুষনের ইম্পাক্ট যে কোন দেশের চেয়ে বেশী হয়। জলবিদ্যুত ১০০% ধোঁয়া বিহীন, কিন্তু পরিবেশ বিপর্যয় করে সবচেয়ে বেশী। গ্রামের পর গ্রাম, বিশাল বনভুমি তলিয়ে যায় পানির নীচে। জেমস ওয়াট স্টিমইঞ্জিন আবিষ্কার করার পর বিশ্বের সব বিদ্যুতই কয়লা পুড়িয়ে তৈরি হত।

ঢাকা নগর কেন্দ্রেই একটি কয়লা বিদ্যুত চালিত বিশাল পাওয়ার হাউস ছিল হাতিরপুলে ১৯৭৩ পর্যন্ত চালুছিল, স্টিম লোকোমোটিভ টাইপ রেসিপ্রকেটিং steem ইঞ্জিন, উচু দুইটি চিমনি ছিল, এই কেন্দ্র দিয়ে সারা ঢাকার বিদ্যুত চলতো। তখনো ন্যাসানাল গ্রিড হয়নি। পরে উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টারবাইন ইঞ্জিন আসলে সকল রেসিপ্রকেটিং কয়লা ইঞ্জিন ডিকমশন করা হয়েছিল। হাতির পুল এখন সুধু কন্ট্রলরুম হিসেবে আছে। রামপাল প্রস্তাবিত বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে সুন্দরবনের দক্ষিন দিকে দুরত্ত ২১.২৫ কিমি, যা নিরাপদ দুরত্ত্ব 25 km এর খুব কাছাকাছি।

যা কিনা প্রকৃতি বা সুন্দরবনের উপর তেমন কোন বড় প্রভাব পরবারই কথা নয়। যারা এইটা নিয়ে সমালোচনা করেন তারা বলেন সুন্দরবন নাকি মাত্র ১০ কিমির মধ্যে। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ প্রথম আলো তে লিখেছেন সাধারণত বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সংরক্ষিত বনভূমি ও বসতির ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় না। ভারতের ‘ওয়াইল্ড লাইফ প্রটেকশন অ্যাক্ট, ১৯৭২’ অনুযায়ী, বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১৫ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় না। তিনি ও দুজন ভিআইপি ব্লগার দাবি করছেন আলোচিত বিদ্যুৎকেন্দ্রটির দুরত্ব ১০-১৫ কিমি।

অতচ একুরেট দুরত্ব 21.25 km. গুগল ম্যাপের নিখুত স্যাটেলাইট ম্যাপের মাপ। মানচিত্রটি দেখুন। গুগল ম্যাপ এটা স্যাটেলাইট ভিউ। যারা বিরোধিতা করছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পর্যায়ে কৃষি ও পরিবেশের উপর প্রভাব: ক্ষতিকর সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস: কার্বন ডাই অক্সাইড এর প্রভাব: পশুর নদী থেকে পানি প্রত্যাহার: পানি দূষণ, বায়ুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি: বিষাক্ত ছাই শব্দ দূষণ: পশুর নদি দিয়ে কয়লা পরিবহনের দুষন। কয়লাবাহি জাহাজের সার্চ লাইটের আলো ইত্যাদি।

মংলা পোর্ট থেকে রামপাল আরও ১৪.৬৯ কিমির মতো উত্তরে। বিশাল চওড়া পশুর নদি যেখান দিয়ে বন্দরের সকল জাহাজ আসা যাওয়া করে সেই ব্রীটিষ আমল থেকেই। আলচিত বিদ্যুতকেন্দ্রটির জালানি কয়লাও এই নদী দিয়েই পরিবহন করা হবে মংলা পোর্টের শতশত জাহাজ পশুর নদী দিয়ে মুলত সুন্দরবনের বিশাল চওড়া পশুর নদি দিয়ে যাওয়া আসা করছে, হরিন, বাঘ, কুমির ডলফিন ভয় পায় না কারন অনেক চওড়া নদি। যাতায়াত করে অন্যান্ন ছোটবড় নৌজান। এতে গত ৬০ বছরে নৌ চলাচলে পানি দুষিত হয় নি।

পরিবেশ যদি ক্ষতিই হয় জাহাজ চলাচলের জন্য নয়। বনে বসতি হওয়ার জন্য, বনখেকো পাবলিক সার্ভেন্টদের জন্য, দুর্নিতিবাজ রাজনিতিক ও কাঠচোরদের জন্য। ন্যাসানাল হাইওয়ে N7 এসে মিলিত হয়েছে মংলা পোর্ট এ। এর পাশে বিশাল ইন্ডাষ্ট্রিয়াল এরিয়া মংলা ইপিজেড চালুহয়ে গেছে কয়েক বছর আগেই, অনেক ফ্যাক্ট্রি বিদ্যুত-গ্যাসের অভাবে চালু হতে পারছেনা। N7 হাইওয়ের পাসে গড়ে উঠছে ছোট বড় ম্যানুফাকচারিং ইন্ডাষ্ট্রি, ৮-৯ টি সিমেন্ট ফ্যাক্ট্রি, একটি বিশাল LPG গ্যাস প্ল্যান্ট।

এলাকাটি মোটামোটি ইন্ডাষ্ট্রিয়াল জোন হয়ে গেছে। এসবের কারনে কাছের সুন্দর বন বা কারখানার ধোঁয়ার কারনে আসেপাশের কোন গাছ-গাছালির কোন ক্ষতি হয়নি। সুন্দরবনের তো দুরের কথা। আলোচিত বিদ্যুত কেন্দ্রটি চালু হলেও ক্ষতি হবে না। কোন বিদ্যুত প্লান্টের ঘাস গাছগাছালি মরেগেছে এমন কথা কেউ শুনেনি।

আমাদের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির সংলগ্ন বিদ্যুত প্লান্টের কারনে দুষন হয়েছে সত্য। তার কারন কয়লাখনির দুষন, বিদ্যুত প্লান্টের না। তবে দুষন এমন না যে পার্শবর্তি বসতি এলাকার হাস-মুরগি গাছগাছালি মরে গেছে। বিদ্যুতকেন্দ্র কুলিঙ্গের জন্য পানি ব্যাবহার করলে বিশাল পশুর নদীর পানি কমে যাবে এটা ভাবাই হাস্যকর। বায়ুর তাপমাত্রা বৃধি আরেকটি হাস্যকর! তাহলে এত পরিবেশ সচেতন যুক্তরাষ্ট্র কানাডার অর্ধেক বিদ্যুত কয়লা পুড়িয়ে করত না।

সুন্দরবন অঞ্চলে ৯ মাস বাতাস উত্তর মুখি প্রবাহ থাকে, শীতের মাত্র ৩ মাস দক্ষিনা প্রবাহ থাকে, এই মাত্র ৩ মাস 22 km দূরের সুন্দরবনের কি এমন ক্ষতি হয়ে যাবে বুঝি না। এটা তো নিরাপদ দুরত্ব ১৫ কিলোমিটার থেকে অনেক দূরে! কয়লা সবচেয়ে কার্যকর সাশ্রয়ি জালানি প্রমানিত। বিদ্যুত মুল্য হবে মাত্র ৩ টাকা ইউনিট। দেশের অতি মুল্যবান গ্যাস না পুড়িয়ে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত অনেক দিনের দাবি, কিন্তু কয়লা উঠাতে দিলে বাধা। পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি।

তাই কয়লা আমদানি করাই ভাল। আমাদের ডলারের অভাব নেই, পরিবেশের তেমন ক্ষতি নেই। ভারতের 60% বিদ্যুত কয়লা চালিত, চীনের 70% ভাগ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে 44.9% , বাংলাদেশ মাত্র .02 % যা বড়পুকুরিয়ায়, রামপাল চালু হলে 3% হবে মাত্র। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ হবে যারা ১০০% আমদানি করা কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্রের দেশ। কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুত তৈরি করার চেয়ে কয়লা খনি অনেক বেশী দুষন ও বিপর্যয় শৃষ্টি করে, আমরা মাগনা পেয়েও কয়লা না উঠিয়ে বিশাল বিপর্যয় এড়াতে পেরেছি।

পরিবেশবাদিরা ক্ষয়ক্ষতির যে কথা বলে সেখানে বিদ্যুৎ উৎপাদন হলে কি কি উন্নতি হবে তার কথা একবারও বলে না। কয়লা বিদ্যুতের একটি বড় সমস্যা ছাই বর্জ, বড়পুকুরিয়ার বর্জ্য বিপুল ছাই দেশের সিমেন্ট কারখানাগুলো কিনে নেয়। এই বিদ্যুতকেন্দ্রটির ছাই বর্জ্য উৎপন্ন হবে বড়পুকুরিয়ার প্রায় চারগুন। এখানে চীন ভারত ব্রীটেন যে ভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা করে সেভাবেই করা হবে। তাই এই বিদ্যুত প্ল্যান্টটি সুন্দরবন বা এলাকার পরিবেশের ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে যে দাবি করা হচ্ছে তা ভিত্তিহিন বলেই আমার ধারনা।


 

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.