ভৌতিক এলাহী একজন পংকজ। ষাটের দশকের লজিং মাস্টার। তখন চুল ছিল, চুলের সঙ্গে দড়ি বেঁধে চাতালের কড়ি কাঠে বেঁধে সিএসপি হবার পড়ালেখা করেছে। ইনফেরিয়র লজিং মাস্টার সুপিরিয়র সার্ভিসে গিয়ে সামাজিক সিঁড়ি বেয়ে ততকালীন কথিত সম্ভ্রান্ত পরিবারে বিবাহ করে রাতারাতি এলিট হয়ে পড়ে। দাদা পালকি বাহক ছিল।
পালকির চারধার ধরে রাখার কারণে তার নাম হয়ে যায় চৌধুরী। জন্ম হোক যথা তথা কর্ম হোক ভালো। হাতে দস্তয়ভস্কির ড জিভাগো নিয়ে ঘুরে খানিকটা আঁতেল সিএসপির তকমা এঁটে নেয়। মুক্তিযোদ্ধা জিয়া, বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মতো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়।
মুজিবনগর সরকারের কলম পেশকার যোদ্ধা ভৌতিক এলাহীকান্ড কাজ করতো দার্শনিক রাজা তাজউদ্দীনের অধীনে।
কিন্তু খোন্দকার মুশতাক এক ভ্রষ্ট রাতে গভীর ভালবাসার আশ্লেষে একজন মীরজাফরের ইনজেকশন দিয়ে দেয় ভৌতিকের কালো ঠোঁটে।
বঙ্গবন্ধু সদ্য শত্রু মুক্ত দেশে মাথায় সারাক্ষণ দার্শনিক রাজার শাসনের জন্য কীভাবে বাংলাদেশকে তৈরী করা যায় সেই চিন্তা নিয়ে ঘুরতেন। চারপাশে অশিক্ষিত চাটার দল, সার্টিফিকেট ধারী বানরের পাল দেখে বিরক্ত হতেন। সন্ধ্যেটা খালি রাখতেন মেধাবী ছাত্রদের জন্য। কেউ বিদেশে পড়তে যাচ্ছে শুনলে ৩২ নম্বরে ডেকে পাঠাতেন।
একটু মিষ্টিমুখ করিয়ে বলতেন, দেখ রাজু বুয়েটের টিচার হিসাবে তোকে ভাল বেতন দিতে পারিনা বাপ। একটু গুছিয়ে নিই। তখন পারবো। তুই পিএইচডি করে ফিরে আসিস বাবা। তোরা সোনার ছেলেরা দেশে না ফিরলে আমরা আত্মনির্ভর হবো কী করে বল।
পিতাকে রাজু কথা দেয়। অবশ্যই ফিরে আসবো। তারপর মুজিবীয় হিউমার, হ্যারে রাজু তুইনা বাংলায় লেটার পাইছিলি, তুই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লি কেন। চোর চেহারা দেখলে বাংলার প্রভাষক মনে হয়। রাজু অবাক হয়ে যায়।
একথা সে নিজেই ভেবেছে অনেকবার।
রাজুরা পড়তে চলে যায়। বাজেরা থেকে যায়। সেই পড়ে থাকা ছাই ফেলতে ভাঙ্গা কূলো ভৌতিকেরা। নতুন দেশ; অনেক পদ শূণ্য।
ভৌতিক এলাহী কান্ড, ফ্যাসাদউদ্দৌলা সব প্রোমোটি কায়দায় প্রমোশন পায়। একজন ডেপুটি সেক্রেটারীকে রাতারাতি সেক্রেটারী হিসেবে পদায়ন করলে ছাগল দিয়ে হালচাষের মতো ফলাফল দাঁড়ায়। তো সেই ছাগু ভৌতিক এলাহী কান্ড অনেকটা কাপড় ধোয়ার রীন সাবানের মতো। শেষ হয়না কাপড় ধোয়া; যদি না পায় রীনের দোয়া। এখন এই অন্তর্জলী যাত্রার বয়সেও জালানো উপদেষ্টা হিসেবে সিক্সটি নাইনের রসিক বুড়ো সুন্দরবনকে বিয়ে করেছে।
মরে গেছে ভেবে এই রসিক সুজনকে চিতায় তোলার পর হঠাত জেগে উঠে দাঁত কেলিয়ে বলে, আমি সুন্দরী বিয়ে করবো; ঐটাই এই জীবনে শেষ ইচ্ছা। রামপালের আয়নায় মুখ রেখে সুন্দরীরে জিজ্ঞাসিল, সুন্দরী আমি কী সত্যিই সুন্দর।
ভৌতিক এলাহীকান্ডের মাথার খুলির চাঁদিটি ক্রিকেটের ঘাসহীন পিচ হয়ে যাওয়ায় তা পর্যবেক্ষণ সহজ। একটি যুক্তিবিদ্যা বই বের করে বুদ্ধাংক চ্যাপটারে গিয়ে বিভিন্ন ধরণের আইকিউ-এর মানুষের মাথার খুলির গঠন পর্যবেক্ষণ করুন। মিলিয়ে দেখুন ভৌতিকের মাথার খুলি মোরণের একটু ওপরের খুলি।
তো এই ক্ষীণ বুদ্ধির লোকেরা পরিবেশ বা এনার্জী সম্পর্কে ষাটের দশকে কিছু সিলেবাসের বই মুখস্ত করেছিল। মিডিওকার টেক্সট বুক ওয়ার্মরা যা করে। মুখস্ত করতে গিয়ে ঠোঁট সাদা করে ফেলে; টেনশনে আকিজ বিড়ি ফুঁকে আবার তা পোড়ামুখ করে তোলে।
ঐসব বই এতোটাই তামাদী হয়ে গেছে যে নীলক্ষেতের বইয়ের দোকানও তা সরিয়ে ফেলেছে। আজকে ভৌতিকের একটা পরিবেশ বিষয়ে লিখিত পরীক্ষা নিলে সে ফেল করবে।
এনার্জীভাবনার প্যারাডাইম শিফট করছে গ্রীণ এনার্জির দিকে; গ্রীণ গভর্ণ্যান্স অন্যতম নিয়ামক হিসেবে স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশগুলোর দুর্নীতি সূচক প্রায় শূণ্যে নিয়ে এসেছে। নেদারল্যান্ডসের মত গতিশীল ইউরোপীয় দেশটি এখন বলছে, কোথাও যাওয়ার আমার কোন তাড়া নেই। আমরা পরিবেশ আর প্রকৃতির সঙ্গে রাখি বেঁধেছি।
এইদিকে অষ্টাদশ শতাব্দীর জ্ঞান নিয়ে উন্নয়নের কুইকি করে বেড়াচ্ছে ডায়াবেটিসে নীল হয়ে যাওয়া ভৌতিক এলাহী কান্ড। একটা ডেট এক্সপায়ার্ড এক্সপার্ট সবাইকে বুঝাচ্ছে সুন্দরবনের কাছে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প করলে সুন্দরবনের গায়ে ফুলের টোকাও লাগবে না।
এরমাঝে দেশে পিএইচডির সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বেড়েছে। একজন ৪৫ এ ইনিংস গুটানোর আগে আরেকবার ফুঁসে উঠতে চায়। ড আম্বিয়া সুলতানা এখনো ফুরিয়ে যায়নি। সিরিজ লিখে ফেললো, ভৌতিকই ঠিক; বাকী সবাই ভুল। তারপর সেই একাডেমিক কন্সটিপেটেড অভিসন্দর্ভ, ক,খ,গ; ১২৩, পাদটীকা, সহায়ক লিংক, রেফারেন্সের মাসল দিয়ে প্রমাণ করে দিল, সূর্য পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে।
রামপাল ঠিক আছে।
সঙ্গে সঙ্গে জাস্টফিকেশন মামুরা তোতা পাখির মত বলে উঠলো, রামপাল ঠিক আছে; ঠিক নাই কইলে তুই চিংকু বাম। চুলকানি রায় এসে বলে এরা আইএস আই এর দালাল। চুলকানিউদ্দি এসে বললো, রামপাল বিরোধীদের কিউরিয়াস মাইন্ড ওয়ান্টস টু নো, জামাতের কাছে কয় প্যাকেট বিরিয়ানী খাইছুন। সঙ্গে সঙ্গে অন্য বানরেরা খিলখিলিয়ে উঠলো।
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এক পুরোহিত এসে বলে দিল, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র একাত্তরের চেতনার সঙ্গে পরস্পর প্রবিষ্ট। রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প না হলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিপক্ষের এই ছাগুরা রামপালের নাম রামপাক করে দেবে।
ভৌতিক এলাহীকান্ড মমতা শিবছত্রীকে ফোন করে বললো, দিদি কাজ হয়ে গেছে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রী আন্টি ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়েন, পবিত্র কুরান পাঠ করে্ন, আগত অভুক্ত গোপালীদের জন্য খিঁচুড়ী রাঁধেন। কিছু ফাইল সই করেন।
লোকজন হাজার খানেক দরখাস্ত দিয়ে যায়, কারো একটা মশারী প্রয়োজন, কারো প্লাস্টিকের বালতি, কারো একটা প্রেসার কুকার। বুবুবাড়ির আবদার আর কী। শরীরটা খারাপ লাগে। একটু লনে নেমে ব্যাডমিন্টন খেলেন। তারপর চট করে রেডি হয়েই বাড়ির পাশে থ্রী পেনী অপেরা কিন্ডারগার্টেন সংসদে গিয়ে প্রেসেন্ট প্লিজ বলেন, নবরত্ন সভার বিশেষণে ক্লান্ত হয়ে, নাখাল পাড়ায় অফিসে যান।
কিছুক্ষণের মধ্যে নাটকুর জানা কেরির ফোন। যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দিন। তারপর বোঁচু বান কী মুন; সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করুন।
কিছু ফাইল সই করে; ফিতা কাটার আসরে যাওয়া। এইভাবে অতীন্দ্রিয় পিং পং বলের ক্লান্তিকর দিন শেষে ছনভবনে পৌঁছে দেখেন, সেই মুখ পোড়া ভৌতিক লনে হাঁটাহাঁটি করছে।
সে ড আম্বিয়ার লেখার প্রিন্ট আউট দিয়ে বলে; দেখেন; অনেক দেশে রামপাল হয়েছে, জার্মানী, অস্ট্রেলিয়া এমনকি মঙ্গলগ্রহে।
প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞেস করেন, তাহলে এতো প্রতিবাদ কেন?
ভৌতিক সেই চুলকানি বংশের উদ্দি; বলে, এরা জামাতের পয়সা খেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল করার নীল নক্সা। শোনা যায় রামপাল লংমার্চে বিরিয়ানী আসছে লাহোর থেকে।
প্রধানমন্ত্রী আরেকবার বলেন, তবুও দেখে নিন।
টাকলু নানা চলে গেলে প্রধানমন্ত্রী একটু টিভি ব্রাউজিং করেন।
টকশো হচ্ছে, সমাজ বিজ্ঞানী পিয়াস করিম রামপালের জন্য কাঁদছেন, আরেক চ্যানেলে নুরুল কবির আহারে সুন্দরবন বলে টাকে হাত দিয়ে বসে। আরেক চ্যানেলে আসিফ নজরুল ভারতের প্রতি নতজানু সরকার বলে রামপালের চুঙ্গা গরম করছেন।
প্রধানমন্ত্রী ভাবলেন তাইতো, ভুত ভাই তো ঠিকই বলেছেন। মোবাইলে একটা রিং করেন। ভৌতিক তখন কাওরানবাজারে কেঁচকি মাছ কিনছে।
ডায়াবেটিসের কারণে ডাক্তার বলেছেন, শুধু করলা আর কেঁচকি মাছ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনি রামপালে কাজ শুরু করেন।
ভৌতিক বাসায় ফিরে সুজাতাকে ফোন করে। এমনিই। কোন কাজে না।
রাত দশটা বাজলেই মোবাইলে সেভ করা নারী নম্বরগুলোতে টোকা দিতে ইচ্ছা হয়।
অনেকে ভাবে হয়তো ভৌতিক টাকা খেয়েছে, ভৌতিককে ভারত কিনে নিয়েছে; কিন্তু এসব কিছু না। এই বয়সে কোন দুই পাক্ষিক বৈঠকে দিল্লীয়াইট কোন তেঁতুলের শাড়ীর আঁচল খেয়ালী হয়ে গেলে, অন্তর্জলী যাত্রার চিনি দাদু ভৌতিকের পোস্ট মোরণ মাথার খুলিতে বাজ ভেঙ্গে পড়ে, দ্রুত ওয়াশরুমে গিয়ে একটা ডায়াবেটিসের ওয়াসীম আকরাম ইনজেকশন দিয়ে আসে।
দিল্লিয়াইট বুঝে যায়; মজা করে বলে, ভুতু দা, এই প্রজেক্ট হয়ে গেলে আপনাকে সবাই দেখবেন অর্জুন রামপাল বলে ডাকবে।
ভৌতিক এলাহীকান্ড সিদ্ধান্ত নেয়; রামপাল; নাউ অর নেভার!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।