একটা মেয়ের একটু কথা।
আজকে বনলতার জন্যে ছিল জরিমানা দিবস। সক্কাল থিকাই শুরু জরিমানা!
সক্কাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখি বাজে পৌনে আটটা। ক্লাস ছিল সাড়ে নয়টা থেকে। অতএব লেপের নিচে ঢুকে গেলাম।
সকালের এই সময়টার ঘুম হলো আমার মতো কুড়ে দের জন্যে স্বর্গবাস। একটু পরে আবার লেপের নিচ থেকে মাথা বের করে দেখলাম পৌনে আটটা বাজে। আমার মাথায় সবসময়েই আজাইরা চিন্তা ঘুরে। ভাবলাম সময় হয়তো ধীর হয়ে গেছে আমার ঘুম হয়ে গেছে ফার্স্ট। আবার লেপের তলে।
আরেকটু পরে দেখলাম আবার সেই পৌনে আটটাই বাজে। এবার টিউব্লাইট জ্বললো। পাশের রুমে দেখি নয়টা বাজে। আমার রুমের ঘড়ির ব্যাটারি ইন্তেকাল করছে। এতএব কিভাবে কলেজে পৌঁছালাম আল্লাহই জানেন।
প্রথম ক্লাসে লেট কুড়ি মিনিট অতএব স্যার ঢুকতে দিলেন না। সুটেড বুটেড এই স্যার সদ্য বিসিএস পাশ করে ঢুকেছেন কিনা! একটু বেশীই সৎ। ইনি যখন মুড়ি খাইবার মতো মচমচ করে জুতায় শব্দ তুলে হেটে যান তখন ছেলে মেয়ে নির্বিশেষে ইদানিং সবাই হাসি লুকায়। কারণ ইনার নিক নেম (আমাদের দেয়া) হলো ডেস্টিনি স্যার। বিস্তারিত নিশ্চয় বুঝে গেছেন।
যাই হোক পুরান স্যারেরা হলে কিছু বলতেন না। ক্লাসের বাইরে দাইড়য়ে নিজেরে থ্রি ইডিয়টস এর রেঞ্চো মনে হইতাছিল। একটু ভাব নিলাম। দেখি ডিপার্টমেন্টর হেড স্যার আসতাছেন(আমার সবচেয়ে প্রিয় স্যার)।
এবার ভাবলাম কই পলাই! আমার চেষ্টা ব্যার্থ করে দিয়ে ইনি আমাকে পাকড়াও করলেন।
স্বভাব মতো একগাদা লেকচার শুনিয়ে দিলেন।
পরের ক্লাস ট্যাক্সেশন। করঘাত আর করপাতের মাঝ খানে হাবুডুবু খাচ্ছি এমন সময় শুনলাম হিন্দি গান ‘ক্যারেক্টার ঢিলা হ্যায়’ বাজে। মুখে হাসি নিয়ে চারিদিকে তাকালাম কারণ এটা আমার রিংটোন তো মোটেই না। আর যার ফুন বাজে তারে নিক দিতে হইবো যে! কিন্তু সবাই আমার দিকে তাকায়।
আমি ব্যাগ থেকে বের করে চক্ষু ছানাবড়া করে দেখি আমার ফোন বাজে। এইটা কবে থেকে ক্যারেক্টার ঢিলা হয়ে গেল! বুঝলাম না কিছুই। অবশ্য কখনই বুঝিনা সময় মতো। কারণ অই যে টিউব্লাইট!
যাই হোক বনলতা এবার লজ্জাবতী লতা হয়ে গেল। আজকাল বখাটে ছেলেদের রিং টোনও ক্যারেক্টের ঢিলা হয় না।
ক্লাসের ম্যাডাম ও একগাদা লেকাচার শুনালেন। ‘ক্লাসে ফোন বন্ধ রাখবা.....মেয়েরা যদি এমন করে তাহলে ছেলেরা কি করবে...ব্লা ব্লা... আমি এদিকে মাথার ফোল্ডার গুলা সার্চ করতেছি কখন এই আকাম ঘটলো। বাট.. টিউব্লাইট জ্বলে না।
আবার ক্লাস আরম্ভ হলো। পরের ক্লাস একাউন্টিং আর স্ট্যাটিসটিক্স এ মন দিতে পারলাম না।
মনে শঙ্কা ক্লাসের বন্ধুরা যে পরিমান ফাজিল আমারে এখন থিকা ক্যারেক্টার ঢিলা নিক দিয়া না বসে! তারাতাড়ি বের হলাম কিন্তু পিছন থিকা ডাক দিয়া দুষ্টু ছেলে মেয়েরা আমার আশঙ্কা সত্যি প্রমান করলো! আমি বললাম -খবরদার এক্কেরে ফাডাইলামু কিন্তু! বাট কে শোনে কার কথা! কিন্তু ওদিকে আমার টিউব্লাইট আর জ্বলে না। কেমনে ঘটলো এই কাম! ভাবলাম মেন্টোস খাইলে দিমাগ কি বাত্তি জ্বলতে ও পারে!
বের হইলাম মেন্টাসের খোঁজে। এদিকে মা জননী কলের পর কল দিতাছেন আর আমার মোবাইলে ক্যারেক্টার ঢিলা চলতাছে। ক্লাসে রিংটোনটা চেঞ্জ করতেও ভুলে গেছি।
রিসিভ করলাম:
- হেল্লো আম্মা এত ফোন দেও কেন?
- আজ তোর কোচিং আছে?
- হ আছে বিকালে।
- তাইলে বাসায় আয়। শপিং এ যামু। কাল রাতে লিস্ট বানাইছিলাম। কেনাকাটা করতে হইবো।
বইলা নিই আম্মার সাথে শপিং এ যাবার থেকে মজা ডোবায় লাফ দেওয়া ও ভাল।
গতকল্য তিনদফা শপিং এ গেছেন আমারে নিয়া। এই মহিলা এত্ত দামাদামি করতে পারেন! যাবার সময় রিকশাওয়ালা থিকা শুরু কইরা প্রত্যেক দোকানির সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা দামাদামি কইরা পাঁচ টেকা দাম কমাইয়া এমন ভাবে তাকায় যেন বিশ্ব জয় করছেন! ওদিকে আমার মাথা প্রচন্ড বেথা শুরু হয়া যায়।
আমি কইলাম:
- আম্মা এই সামান্য কেনাকাটা তো আমি একলাই করতে পারুম। তোমার যাওন লাগবো না।
- পারবি তো? দোকানি তোরে ঠকাইয়া দিবে।
- না আম্মা আমি পারুম।
অতএব বাসায় গিয়া টেকা নিয়া সাথে আম্মার ফ্রি উপদেশ শুনতে শুনতে বাসা থিকা বের হলাম। রিকশা আম্মা ঠিক কইরা দিলেন যথারীতি আধঘন্টা দামাদমি করার পরে দুই টেকা কমে একজন রাজি হইলেন! আমি গজ গজ করতে করতে উঠলাম।
প্রথমেই লিস্টিতে দেখলাম ফলের নাম আপেল, কলা। এই শীতে যে আম্মার কেন ফল খাইতে মন চাইলো ভাইবা পাইলাম না।
এখানে ভাল ফল পাওয়া যায় আনন্দবাজারে। কিন্তু দেখলাম রাস্তার পাশে কত মানুষ ফল নিয়া বসে আছেন রিকশা থামাইয়া কিনলাম কলা এক কাঁদি আর আপেল এ কিলো। আমি দামাদামি করি না কখনই। দোকানি যে দাম চাইলো তার থিকা একটু কমাইয়া কিনলাম। আপেল গুলা কেমন চকচক করতাছে।
প্রত্যেকটাতে একটা কইরা স্টিকার লাগানো। কয়েকটাতে দুই তিনটা কইরা ও লাগানো দেখলাম। কলাগুলাও কেমন সুন্দর দেখতে।
তারপর মুখ ভোঁতা কইরা গেলাম ছাতিপট্টিতে বাটার শো রুমে। কারণ আমার পায়ের সাইজের জুতা এখানেই পাওয়া যায় কিনা! বাটা ছাড়া কোন জুতা লাগে না পায়ে।
কিন্তু এখনে পছন্দ হইলো না। গেলাম এপেক্স গ্যালারিতে। ঢুকার সময় মনে হইতাছিল ফল গুলা পরে কিনলেই হইতো! জুতা কিনতে লাগলো একঘন্টা। পছন্দ হয় তো পায়ে লাগে না, পায়ে লাগলে পছন্দ হয় না। দোকানি ঘাইমা গেলেন।
শেষমেষ হালকা কালারের একজোড়া পছন্দ হইলো। দোকানির দিকে তাকাইয়া নিয়া নিলাম। রিকশায় চইড়া সপ্নলোক প্লাজায় গেলাম। নিজেরে কেমন জানি হালকা হালকা লাগতাছিল তখন। কিন্তু আমার টিইব্লাইট জ্বলে না।
ওখানে গিয়া আম্মার ফরমায়েশ মতো জিনিস পত্র কিনলাম। দোকানি যে দাম চাইলো আম্মারে ফলো করতে গিয়া এর চেয়ে অর্ধেক দাম বললাম। দোকানি একটু চপড় চপড় কইরা শেষতক রাজি হইলেন। ভাবলাম- আরে বাহ্ আমার মাথায় কত্ত বুদ্ধি! আম্মা হুধাই ক্যাচাল করে দাম নিয়া! হ্যাহ্!
বের হইবার সময়ে আবার ক্যারেক্টার ঢিলা গান বাজে। রিসিভ করলাম না।
চেইত্তা বন্ধ কইরা দিলাম ফোন।
কি মনে কইরা ভালাম একবার সুপার মার্কেট হইয়া যাই তো! সেখানে গিয়া কিছুক্ষণ ঘুরার পরে বুঝলাম সপ্নলোক থিকা তিনগুণ দাম রাখছে আমার কাছ থিকা! আমি অর্ধেক বলার পরেও কেন রাজি হইলো এতক্ষণে বুঝলাম! মনে চাইতাছিল এক্কেরে ফাডাইলাইতে! ঢুকার সময়ে নিজেরে হালকা হালকা কেন লাগতেছিল সেটাও বুঝলাম একটু পরে। জুতার দোকানে ফল গুলা ফেইলা দিয়া আসছি! অতএব দামাদামি না কইরা একখান রিকশা ঠিক কইরা গেলাম ওখানে। ফলগুলা সহি সালামতে ছিল দেইখা জানে পানি আসলো। দোকানিরে ধন্যবাদ জানাইয়া ভাবলাম যে ফলগুলা কিনছি সেগুলা কতগুণ বেশী দামে কিনছি একটু যাচাই কইরা যাইতো! বেকুবের মতো আনন্দ বাজারে গেলাম।
ওখানে ফলের মিষ্টি গন্ধ পাইয়া খিধা লইগা গেল। গিয়া মেজাজ ঠিক হইলো কারণ এখানে ফলের দাম অনেক। আমি যতদাম দিয়া কিনছি এখানে এর দ্বিগুণ দাম। ভাবলাম যাক একদিকে তো জিতলাম।
একটু দুরে একটা রেস্তোরা দেখলাম।
আজকাল ব্যাঙ্গের ছাতার মতো রেস্তেরা দেখা যায়। এই চিপায় রেস্তোরা কেন বানাইলো ভাবতে ভাবতে গিয়া ঢুকলাম দেখলাম ভিত্রে আন্ধার। বললাম- এত অন্ধকার কেন ভাই? উত্তর আসলো- অন্ধকার কই? দেখেন না ডিমলাইট জ্বালানো?
আরে হাচাই তো! কিন্তু ডিমলাইট কেন জ্বালানো ভেবে পেলাম না। আমি অর্ডার দিলাম কড়া এককাপ চায়ের। মাথা ব্যাথা শুরু হয়ে গেছে তো।
ওয়েটার বললো
- আপনে একলা ম্যাম?
- আমি বললাম কেন আমার পাশে কি কাওরে দেখতে পাইতাছেন?
সে কিছু বললো না। আমি ভাল কইরা চারিপাশ দেইখা বুঝলাম ওয়েটারের প্রশ্ন আর ডিমলাইটের রহস্য কি। পুরাই তব্দিত হইয়া গেলাম। এইটা ডেটিং স্পট! টেবিলে জোড়া জোড়া বইসা আছে। ইদানিং ডেটিং করার লাগি যে আলাদা রেস্তরা খুলতেছে দেইখা টাস্কিত হইলাম।
হটি ছেলেমেয়েরা কত রকম নটি একশান নিতাছে এর কাছে সানি লিওনি ফেইল! মাথায় নতুন চিন্তা ঢুকলো এই খান থিকা বের হইবার সময় যদি পরিচিতো কেউ দেইখা ফালায় তাইলে আমার মানসম্মানরে ইটের চাড়া বানাইয়া কুতকুত খেলতে হইবো!
দুপুর বেলা তিতা বিষ চা ডাবল দামে খাইয়া বের হইবার সময় সাবধনতা অবলম্বন করলাম। কিন্তু আমার আজ ব্যাডলাক খ্রাপ। দেখলাম পাশের বাড়ির রাসেল চাচ্চু নতুন গার্লফ্রেন্ড নিয়া বাইর হইতাছেন। একদম মুখোমুখি হইয়া গেলাম। আমি আর উনি দুজনেই দুজনেরে না চিনার ভান করলাম।
বড় বাঁচা বাঁইচা গেছিরে- বইলা হাটা ধরলাম।
ফেরার সময় দামাদামি কইরা(আম্মু স্টাইল) একটা রিকশা নিলাম। একটু দুরে এত্ত জ্যামে পড়লাম যে রিকশা আগায় না! ওদিকে কিসের জানি স্লোগান শুনা যাইতাছে। মিছিল মনে হয় ভাইবা আমি বেকুবের মতো রিকশা ছাইড়া দুইহাত ভর্তি ব্যাগ নিয়া হাটা দিলাম শর্টকাটে। যাবার পথে দেখলাম কত রকমের গাছ বেঁচতাছে আমি আবার এসবের প্রতি দুর্বল।
তিনখান ফুলগাছ কিনলাম। পকেট থিকা আরো টেকা বাইর হইলো। সবগুলা ব্যাগ একহাতে আরেক হাতে তিনটা চারা কেমনে নিমু চিন্তা কইরা কুল পাইলাম না। এদিকে রিকশা ও পাইনা। শেষ মেষে ভাঙ্গা একখান রিকশা ডাবল ভাড়ায় পেলাম।
অতএব চললাম। পথে দেখলাম কচি ডাব বেঁচতেছে। নিলাম একহালি। উল্লেখ্য যে ডাব না কাটায়া নিছি।
বাড়ি ফিরার পরে সব নিয়া ঢুইকা আম্মারে ডাক দিলাম।
আম্মা দাম জিগাইতে লাগলো। আমি আর যাই হোক আম্মার লগে তো মিথ্যা বলতে পারি না। হড়হড় কইরা সব বললাম। ফল কিনা যে জিতছি সেটা বললাম।
হাজির হইলো আমার বিরোধী পার্টি আমার ছোট ভাই।
সে আপেলের স্টিকার গুলা খুইলা দেইখা ব্যাপক হাসি শুরু করলো। সবাই দেখলাম যে আপেলগুলার গায়ে ইন্দুরের খাবলা। এইটা কেমনে সম্ভব ইন্দুর কি আপেল খায় নাকি?
বলতেই ছোট ভাই বললো - আরে গাধা আপেল গুলার নষ্ট অংশ গুলাতে স্টিকার লাগাইয়া বেঁচে আর তোমারে বেকুব পাইয়া গছাইয়া দিছে। আর শোন দোকানি এগুলাতে মুখের ছেপ মাইখ্যা চকচক্যা কইরা রাখে! যেন তোমার মতো বেক্কল গুলারে ঠকানো যায়!
কথাটার ২য় অংশটারে নিয়া ঝগড়া লাগতে যামু এমন সময় আম্মা আগুন দৃষ্টিতে তাকাইলেন। বললেন- তোরে ডাব কিনতে কে কইছে? যথারীতি ছোট ভাই ইন একশান।
কইলো - এই আকাটা ডাবগুলা প্রতিপিস বিশ টেকা কইরা কিনা আনছো? কাটা ডাবই তো দশ টেকা কইরা বেঁচে! আরে অতপর শুরু হইলো মা জননীর লেকচার। কি আর করা। মন চাইতাছিল ফলওয়ালারে এক্কেরে ফাডাইলাইতে!
নিজ রুমে আইসা মোবাইল খোলার পরে দেখি মেসেজ আসছে জিপি থিকা কেমনে টেকা খসানি যায় আরকি! মনে হইতাছিল এক্কেরে ফাডাইলাইতে! এরপর ছোট বোনেরে জিজ্ঞাসাবাদ করার করার পর বাইর হইলো আমার ফোনের রিংটোন ক্যারেক্টার ঢিলা কেমনে হইলো। কি আর করমু!
বিকালে নয়া জুতা পায়ে দিয়া কোচিং এ যাইতাছি কেলাস নিমু। এমন সময় রাসেল চাচ্চুর সাথে দেখা।
তিনি আমার দিকে চাইয়া একখান লুলিয় হাসি দিয়া কইলেন -ইউ নটি গার্ল! সাথে কে ছিলরে?
মেজাজ বিলা হইয়া গেল।
ইচ্ছা হইতাছিল এক্কেরে ফাডাইলাইতে! এই লুলেরে শেষমেষ হুমকি দিছি যে আমারে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা করলে বর্তমান গার্লফ্রেন্ডেরে আগের গুলার কথা কইয়া দিমু। আমারে চিনেনা হ্যাহ্ এক্কেরে ফাডাইলামু! আমি নাটোরের বনলতা না বনের কাঁটাওয়ালা বুনোলতা!
(কাহিনী এক্কেরে সইত্য। ) ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।