আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যুদ্ধাপরাধী বিচারে মুক্তি যুদ্ধের বন্ধুদের সহায়তা চাই ॥ প্রধানমন্ত্রী



স্বাধীনতার ৪২ বছর পর রক্তস্নাত লাল-সবুজের উজ্জ্বল-উচ্ছ্বাসে বর্ণিল আয়োজনে একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে সহযোগিতার মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জনে বিশেষ অবদান রাখায় আরও ৫৯ জন ‘যুদ্ধবন্ধু’ বিদেশী নাগরিক ও এক প্রতিষ্ঠানকে আনুষ্ঠানিকভাবে সম্মান জানাল বাংলাদেশ। বিদেশী ‘যুদ্ধবন্ধু’দের সম্মান জানানোর ৭ম পর্বে মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশী বন্ধুদের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ ও ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ তুলে দেন। এবার মুক্তিযুদ্ধের বিশেষ অবদানের জন্য ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ফখরুদ্দীন আলী আহমেদ ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত গুলজারিলাল নন্দকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ এবং বাকি ৫৭ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। বিদেশী ‘যুদ্ধবন্ধু’দের সম্মান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ দেশের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশী বন্ধুদের অবদানকে অমূল্য ও চিরস্মরণীয় উল্লেখ করে বলেন, ন্যায়বিচার ও জনগণের অধিকার রক্ষায় আমরা কাজ করছি। একাত্তর সালে হত্যাসহ যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে জড়িত পাকিস্তানী দখলদার বাহিনী এদেশের রাজাকার-আলবদর-আলশামসসহ যারা মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধমূলক কাজ করছে তাদের যুদ্ধাপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

তাদের বিচার চলছে। এভাবে আমরা আলোকিত গন্তব্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শেষ করার লক্ষ্য পূরণে মুক্তিযুদ্ধের বন্ধুদের সহায়তা কামনা করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া দেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় বন্ধ করতে সহায়ক হয়েছে। বিচার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করছে। এই প্রক্রিয়া আমাদের নিজ নিজ ভূমিকা ও দায়িত্বশীলতা নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের সুযোগ করে দিয়েছে।

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ করাতে তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধকারীদের চার দশকের বেশি সময় পরে বিচারের সম্মুখীন করা একটি খুবই কঠিন কাজ। তবে আমরা দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ এবং এই কাজ শেষ করার জন্য আমরা আপনাদের সমর্থন চাই। স্বাধীনতার ৪২ বছর পরও বাংলাদেশ তার অকৃত্রিম বন্ধুদের ভোলেনি, এর জন্য যেন কৃতজ্ঞতার শেষ ছিল না সম্মাননা নিতে আসা ‘যুদ্ধবন্ধু’দের। তাঁরা বলেন, একাত্তরে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে পেরেছিলেন বলে তাঁরা নিজেরাই ধন্য, গর্বিতও। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে অবিস্মরণীয় দিনগুলোর কথাও স্মৃতিচারণ করেছেন কেউ কেউ।

স্বাধীনতার ৪২ বছর পর রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এমন বীরত্বপূর্ণ সম্মান দেখানোই সম্মাননা নিতে আসা বিদেশী অতিথিদের সবার কণ্ঠেই ছিল বাংলাদেশের জনগণের প্রতি বিনর্ম কৃতজ্ঞতা। মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে মহান মুক্তিযুদ্ধে বিশেষ অবদান রাখার জন্য বিভিন্ন দেশের সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ ও বিশিষ্ট নাগরিকদের বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা ও মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও সম্মাননাপ্রাপ্ত বিদেশী বন্ধুরা তাঁদের এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) এবি তাজুল ইসলাম অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন এবং পদক গ্রহণকারীদের পক্ষে ভারতের বুদ্ধিজীবী ও সমাজকর্মী প্রণব রঞ্জন রায় অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব এম মোশাররফ হোসেন ভূইঞা পদকপ্রাপ্তদের সম্মাননাপত্র পাঠ করেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় সংসদের স্পীকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রীবর্গ, প্রধানমন্ত্রী উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যবর্গ, কূটনীতিকবর্গ, এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিগণ বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানে যোগ দেন।

সব শেষে সন্মাননাপ্রাপ্ত বিদেশী বন্ধুরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ফটোসেশনে অংশ নেন। মঙ্গলবার বর্ণিল আয়োজনে ৭ম পর্বে এবার যে ৫৯ জনকে সম্মাননা দেয়া হয়েছে তাঁদের মধ্যে ৪৮ জন ভারতীয়, পাকিস্তানের ৩ জন, জাপানের দুইজন, মিসরের একজন, যুক্তরাজ্যের দুইজন, যুক্তরাষ্ট্রের দুইজন, তুরস্কের একজন এবং একজন শ্রীলঙ্কার নাগরিক রয়েছেন। এ ছাড়া আফ্রো-এশিয়ান পিপলস সোলিডারিটি অর্গানাইজেশন (এএপিএসও) নামক প্রতিষ্ঠানকে সম্মাননা জানানো হয়েছে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত ফখরুদ্দীন আলী আহমদের পক্ষে তাঁর পুত্র ড. পারভেজ আহমেদ এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী প্রয়াত গুলজারিলাল নন্দের পক্ষ তাঁর নাতি ড. তেজুস নায়েক রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ পদক গ্রহণ করেন। উল্লেখ্য, মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য পাঁচ শ’রও বেশি বিদেশী বন্ধু ও প্রতিষ্ঠানকে পদক দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

ইতোমধ্যে ছয় দফায় মোট ২৬৯ ব্যক্তি এবং ৯ প্রতিষ্ঠানকে ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা, ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ পদক দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ভারতের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মান ‘বাংলাদেশ স্বাধীনতা সম্মাননা’ এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জীকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ পদক দেয়া হয়েছে। সম্মাননা প্রদানের এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এই উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ব্যাপক আয়োজন করা হয়। মূল ভবন থেকে মিলনায়তন পর্যন্ত লালগালিচা ছিল।

যুদ্ধবন্ধুরা এই লালগালিচার ওপর দিয়ে হেঁটেই মিলনায়তনে প্রবেশ করেন। যেসব যুদ্ধবন্ধুরা মঙ্গলবার এ সম্মাননা গ্রহণ করেন তাঁরা হলেন- ভারতের চিকিৎসক ও রাজনীতিবিদ ডা. জয়নাল আবেদীন, কলামিস্ট ও সমাজকর্মী শ্রী স্বপন কুমার ভাট্টাচার্য, শিক্ষক ও সমাজকমী শ্রীমতি মৃম্ময়ী বোস, প্রযোজক ও অভিনেতা শ্রী বিশ্বজিৎ রঞ্জন চ্যাটার্জী, সমাজকর্মী শ্রী শ্যামল চৌধুরী, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব শ্রীমতি গৌরী ঘোষ, সংস্কৃতি ব্যক্তিত্ব শ্রী পার্থ ঘোষ, বিমানবাহিনীর উয়িংক কমান্ডার স্বরপ কৃষ্ণ কউল, মরণোত্তর লেখন ও সমাজকর্মী ড. আসগর আলী ইঞ্জিনিয়ার, মরণোত্তর সমাজকর্মী স্নেহাংশু কান্ত আচার্য, মরণোত্তর চিত্রশিল্পী সোমনাথ হোরে, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ ও ইসলামিক চিন্তাবিদ মাওলানা সৈয়দ আসাদ মাদানী, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী ভি কে কৃষ্ণ মেনন, মরণোত্তর সঙ্গীতশিল্পী সুচিত্র মিত্র পদ্মোশ্রী, মরণোত্তর সমাজকর্মী এন বি মুখার্জি, মরণোত্তর সমাজকর্মী রবীন্দ্র মোহন চৌধুরী, মরণোত্তর আইনজীবী ও সমাজকর্মী আবুল ফজল গোলাম ওসমানী, মরণোত্তর ভারতীয় সেনাবাহিনীর লে. কের্নেল কুলওয়ান্ট সিং, মরণোত্তর সাংবাদিক ও ফটোগ্রাফার কিশোর পারেখ, মরণোত্তর সাবেক সরকারী কর্মকর্তা অশোক রায়, মরণোত্তর কবি ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সুভাস মুখোপাধ্যায়, মরণোত্তর অর্থনীতিবিদ সমর রঞ্জন সেন, মরণোত্তর কূটনীতিক সরম সেন, ভারতীয় সেনাসদস্য শহীদ সুবেদার মালকিত সিং মহাবীর চক্র, মরণোত্তর সুকদেব সিং সান্ধু এবং মরণোত্তর লে. জেনারেল তপিশ্বর নারায়ণ রায়না মহাবীর চক্র। এ ছাড়া পাকিস্তানের মরণোত্তর রাজনীতিবিদ মাস্টার খান গুল, মরণোত্তর রাজনীতিবিদ খান আব্দুল ওয়ালী খান এবং মরণোত্তর রাজনীতিবিদ খান আব্দুল গাফ্ফার খান। জাপানের সমাজকর্মী কেন আরি মিতসু ও মরণোত্তর সেনা কর্মকর্তা ও সমাজকর্মী লে. জেনারেল লইচি ফুজিওয়ারা। যুক্তরাজ্যের সমাজকর্মী এলিন কনেট ও অধ্যাপক এবং সমাজকর্মী ড. পাউয়েল কনেট।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সমাজকর্মী ম্যারি ফ্রান্সিস ডুনহাম ও অধ্যাপক ড. আলফ্রেড সোমের এবং তুরস্কের মরণোত্তর সাংবাদিক ও সমাজকর্মী কেটিন ওজব্যার্ককে সম্মাননা দেয়া হয়। অধিকাংশ যুদ্ধবন্ধু নিজে উপস্থিত থেকে এবং বাকিদের পরিবারের স্বজনরা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সম্মাননা পদক গ্রহণ করেন।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.