সাবেক ও বর্তমান অনেক সচিব দখল করে আছেন মন্ত্রীদের জন্য নির্ধারিত বাড়িগুলো। এ কারণে তিন মাসেও মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীসহ ভিআইপিদের অনেকেই সরকারি বাসভবন পাননি। ২০০৬ সালের আগ পর্যন্ত এরশাদ-খালেদা ও শেখ হাসিনার সরকারের আমলে মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের বাসভবন বরাদ্দে কোনো সংকট দেখা যায়নি। ওয়ান-ইলেভেন সরকারের আমলে একাধিক সচিব ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে ভবন বরাদ্দ নিয়ে এখনো বসবাস করছেন। সরকার বদল হলেও তাদের বাড়ি বদল হয়নি।
সরেজমিন ও অনুসন্ধান করে জানা গেছে, বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে শাহ আবুল হোসেন থাকতেন গুলশানের ১১৪ নম্বর রোডের ২৬ নম্বর বাড়িতে। বিএনপি সরকারের মেয়াদ শেষে এই সরকারি বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয় বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশারফ হোসেন ভূইয়াকে। তিনি এখনো এ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। সাবেক গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবির থাকতেন মিন্টো রোডের ৯ নম্বর বাড়িতে। সেখানে এখন থাকেন শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব খন্দকার শওকত আলী। বিভিন্ন সরকারের আমলে ১১ নম্বর মিন্টো রোডের বাড়িতে বাস করতেন মন্ত্রীরা। এ বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্যসচিব শেখ ওয়াহিদুজ্জামানকে। তিনি এখনো এ ভবনে আছেন। মিন্টো রোডের ৩৮ নম্বর বাড়িটিও সবসময় বরাদ্দ দেওয়া হতো মন্ত্রীদের। এখন বাস করছেন তথ্য ও প্রযুক্তি সচিব নজরুল ইসলাম খান। এ ছাড়াও মিন্টো রোডের ৪৩ নম্বর সরকারি বাসভবন একসময় মন্ত্রীদের নামে বরাদ্দ দেওয়া হলেও এখন বাস করছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব আবু আলম মোহাম্মদ শহীদ খান। সংশ্লিষ্ট সচিবরা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের সরকারি ফ্ল্যাট, রাজউকের প্লট পেলেও মন্ত্রীদের বাসভবন না ছাড়ায় মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের সরকারি বাসা বরাদ্দে সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক, সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, সমাজ কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট প্রমোদ মানকিন, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ইসমত আরা সাদেক, শ্রম ও কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী মুজিবুল হক চুন্নু, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক এখনো সরকারি বাসভবন পাননি। জানতে চাইলে সরকারি আবাসন পরিদফতরের পরিচালক ড. আশরাফুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'এখন পর্যন্ত বর্তমান মন্ত্রিপরিষদের সব সদস্যকে বাসা বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হয়নি। কারণ মানসম্মত সরকারি বাসা আবাসন পরিদফতরের নেই।' মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী (রিমুনারেশন অ্যান্ড প্রিভিলাইজেস) অধ্যাদেশ ১৯৭৩ (সংশোধিত ২০০৬) অনুযায়ী, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সংশ্লিষ্টদের আবাসনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা। আবাসন পরিদফতর সূত্র জানায়, মাত্র দুটি মিনিস্টারস এপার্টমেন্টে ২০টি ফ্ল্যাট ছাড়াও ৩১টি বাসভবন রয়েছে, যা দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের জন্য যথেষ্ট নয়। এর মধ্যে একটি মিনিস্টার এপার্টমেন্টের ১০টি ফ্ল্যাটে প্রতিমন্ত্রীরা এবং আরেকটি এপার্টমেন্টে বিচারপতিরা বসবাস করছেন।
জানা গেছে, সরকারি বাসভবনের সুযোগ গ্রহণ না করে মন্ত্রী ও মন্ত্রীর মর্যাদায় অনেকেই থাকছেন নিজের বাড়ি ও এপার্টমেন্টে। এদের মধ্যে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, বন ও পরিবেশ মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হোসেন মাহমুদ চৌধুরী এবং পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।