আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নোবেল পিস সেন্টার

নোবেল পিস সেন্টার
নরওয়েতে আমার যে রাস্তাটি সবচেয়ে প্রিয় সেই রাস্তাটি শুরু হয়েছে নোবেল পিস সেন্টারের ঠিক সমনে থেকে। এর ডান দিকের রাস্তাটি চলে গেছে ন্যাশনাল থিয়েটারের দিকে আর বাম দিকের রাস্তাটি শেষ হয়েছে মর্ডান আর্ট মিউজিয়ামে গিয়ে। লম্বা এই রাস্তার আসেপাশে ভ্রমন পিয়াসী মানুষদের জন্য কম করে হলেও একডজন দর্শনীয় স্থান আছে। তাই এখানে বার রকমের মানুষের আনাগোনা। পিস সেন্টারের ঠিক বিপরিত দিকের জায়গাটি ছোট একটি সমুদ্র বন্দর।

সেখানে ইঞ্জিনের নৌকা, ছোট-বড়-মাঝারি জাহাজ, ফেরি, ভাসমান রেস্তোরাঁ আর মানুষের এলো মেলো চলাফেরা; সব মিলিয়ে জায়গাটায় একটা উৎসব মুখর পরিবেশ থাকে প্রতিদিন। ছুটির দিনে সময় পেলে এখানে চলে আসি। প্রায় সময়েই দেখি কোন এক জায়গায় জটলা এবং সেখানে নিশ্চিত ভাবে কোন বিশেষ কিছু হচ্ছে। সেদিন দেখলাম নোবেল পিস সেন্টারের সামনে ভীর স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি। কাছে গিয়ে বুঝলাম এন্ট্রি ফ্রি করে দিয়েছে আজ।

এর আগে প্রায় দু´বছর আগে একবার টিকেট কেটে ঢুকেছিলাম। তখন প্রথম বার এসেছি নরওয়েতে, তাও আবার ইন্টারভিউ দিতে, তিন দিন ছিলাম, ফাঁকে ফাঁকে দর্শনীয় কিছু জায়গা ঘুরে গিয়েছিলাম। এর মধ্যে এই পিস সেন্টারটিও ছিলো। ইন্টারভিউর টেনশনে তখন মনযোগ দিয়ে কিছুই দেখতে পারিনি। এবার ঢুকে ভালো মত দেখলাম।


ভেতরে ঢুকে একটু এগিয়ে গেলেই চোখে পরে উজ্জল লাল রং এর দেয়ালে ঘেরা একটি জায়গা। সেখানে নানারকম স্যুভেনিয়র বিক্রি হয়। বিগত বছর গুলোতে শান্তি পুরুস্কার প্রাপ্ত লরিয়েটদের উপর লেখা বই সহ, ভিউকার্ড পোস্টার ফেস্টুন ইত্যাদি পাওয়া যায়।
পিস সেন্টারের সামনে বাক্স ভর্তি আলু রাখা আছে ড্রামে কাঠ কয়লা দিয়ে আগুন ধরানো। যার ইচ্ছে সে আলুপোড়া খাচ্ছে।

(তবে এ ব্যবস্থা প্রতিদিনের জন্য নয়)
ঢোকার মুখে এই লোহালক্করের সাংবাদিক মার্কা রোবটের মত মূর্তিটি আপনাকে ক্যামেরা কাধে অভ্যর্থনা জানাবে
এটি খুব সম্ভবত আগের ভাস্কর্য্যেটির পরিবার; রোদে কালো হয়ে যাবার ভয়ে ছাতা মাথায়।
সিমেন্টের ব্যাগ থেকে বানানো অফিস ব্যাগ; এটি বাংলাদেশের একটি সুভ্যেনিয়র। এটির দাম এখন বাংলাদেশি টাকায় চার হাজার পাঁচশত টাকা মাত্র
লোকজন ঘুরে ঘুরে স্যুভেনিয়র দেখছে। কেউ কিনছে বলে মনে হলো না।
বিগত বছর গুলোর নোবেল লরিয়েটদের ভিউকার্ড।

ভিউকার্ডের যুগ প্রাইমারী স্কুলে পড়ার সময় চলে গেছে; তাই কেউ আর এগুলো কিনে না। নিজের দেশের লরিয়েট থাকলে তাঁর একটা ছবি তুলে নেয় শুধু।
পিস সেন্টারটির নিচের তলায় নানারকম প্রদর্শনী চলে সারা বছর। এবার চলছিলো ইউরোপিয়ান আইডেনটিটির উপর একটি ফটোগ্রাফিক ছবির প্রদর্শনী। ছয় জন (নাকি ৫ জন? ভুলে গেছি এখন।

) ফটোগ্রাফারদের বলা হয়েছে এমন কিছু ছবি তুলতে যাতে সেই ছবি গুলোতে আইডেনটিটি ফুটে উঠে। তারা বিভিন্ন জন বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে নানারকম ছবি তুলেছেন। কেউ ইউরোপের প্রকৃতিকে ছবির উপজীব্য করেছে, কেউ তারুণ্য কে, কেউ করছে ইউরোপিয়ান শহরের ক্রম বর্ধমান ইমিগ্রেন্ট জনগনকে। এসব ক্রিয়েটিভ চিন্তার আরেকটু এডভান্স লেভেলে গিয়ে আরেকজন ফটো গ্রাফার ইউরোপের কোন ছবি তুলেনি! তিনি সরাসরি চলে গিয়েছেন হলিউডে। তার বক্তব্য হচ্ছে বর্তমান জেনারেশনের সব চিন্তা ভাবনা, পোষাক পরিচ্ছদ সব কিছুই যেহেতু আসলে প্রভাবিত হচ্ছে হলিউড থেকে তাই ইউরোপিয়ান আইডেন্টেটেটির ছবি তুলার জন্য সে হলিউড কে বেছে নেয়! নিচে সেই এক্সিবিশনের ছবি গুলোর ছবি গুলোর কিছু ছবি তুলে দিলাম।














উপরের তলাতে সর্বশেষ নোবেল বিজয়ীর কাজের উপর ভিত্তি করে পুরো হল ঘরটি একটি মিউজিয়ামের মত করে সাজানো থাকে। এই ঘরের প্রতিটি জিনিস প্রদর্শনীর পেছেনে একটি গল্প থাকে। সর্ব শেষ শান্তি পুরস্কারটি যেহেতু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন পেয়েছিল তাই প্রদর্শনীর থীম ইউএন কে নিয়ে।
বিশ্ববাসী প্রতি বছর আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে নোবেল পুরস্কারের খবর জানার জন্য। এবার পুরস্কার ঘোষনার কে পুরস্কারটি পায় তা নিয়ে।

এ বছরের ঘোষণাটি আসবে আর মাত্র কিছুদিন পর। সাহিত্য বাদে আর সব গুলো বিষয়ের উপর নোবেল প্রাইজ ঘোষনার দিনক্ষণ ঠিকঠাক এখন শুধু ঘোষণাটি বাকি।
শরীর বিদ্যা বা ঔষধ- ৭ই অক্টোবর, সোমবার সকাল ১১ঃ৩০ পদার্থ বিজ্ঞান- ৮ই অক্টোবর, মঙ্গলবার সকাল ১১ঃ৪৫ রসায়ন বিজ্ঞান- ৯ অক্টোবর, বুধবার সকাল ১১ঃ ৪৫ শান্তি- ১১ই অক্টোবর, শুক্রবার সকাল ১১ঃ০০
অর্থনীতি- দিনক্ষণ পরবর্তীতে ঠিক করা হবে (টেকনিকালি এটি নোবেল প্রাইস না। আলফ্রেড নোবেল স্মরনে সুইডেনের একটি ব্যাঙ্ক পুরস্কারটি দেয়। এইটুকু পার্থক্য ছাড়া আর সবকিছুই বাকি নোবেল প্রাইস গুলোর মতই।

)
উপরের প্রত্যেকটি পুরস্কার সুইডেন থেকে দেয়া হলেও শান্তির পুরস্কারটি নরওয়ের অসলো থেকে দেয়া হয়। আলফ্রেড নোবেল তার জীবদ্দশায় কখনো অসলোতে আসেননি। তবু কেন তিনি পুরস্কারটি দেয়ার দায়িত্ব নরওয়েকে দিয়েছিলেন সেটা এখনো একটি রহস্য। হয়তো সে সময় ইবসেন সহ আরো বেশ কয়েক জন পিস এক্টিভিস্টদের কাজে উৎসাহিত ছিলেন। হয়তো ভেবেছিলেন এখান থাকে পিস প্রাইজ দিলে তারাও এটির সাথে যুক্ত হবেন।

এসবই শুধু মাত্র ধারনা। আলফ্রেড কেনো নোবেল শান্তি পুরস্কারটি অসলো থেকে দিতে বলেছিলেন এখন আর হয়তো তা কোন দিনই জানা যাবে না। এসব ঐতিহাসিক ব্যাপার জানা যাক আর না যাক। বাংলাদেশ থেকে আমরা একটি পুরস্কার পেয়েছি অলরেডি তাতে আমি খুশি। আবার কেউ পেলে আবারও খুশি হব।


কাল থেকে নোবেল প্রাইস ঘোষনা শুরু। অদূর ভবিষ্যতে বিজ্ঞানের কোন বিষয়ে বাংলাদেশের কেউ নোবেল প্রাইস পাবে এমন একটি দিনের স্বপ্ন নিয়ে আছি।

সোর্স: http://www.sachalayatan.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.