আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জামায়াত প্রশ্নে দুই ভাগে বিভক্ত বিএনপি

দেশি-বিদেশি চাপের মুখে ১৮-দলীয় জোটের শরিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নিয়ে চরম অস্বস্তিতে বিএনপি। একদিকে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার দাবিতে আন্দোলনে দলের অস্তিত্বের প্রশ্ন, অন্যদিকে জামায়াত ছাড়ার শর্তে সংলাপ নিয়ে সরকারের সিদ্ধান্তে বেকায়দায় বিএনপি। এরই মধ্যে নানা সহিংসতার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) পার্লামেন্টও জামায়াত থেকে বিএনপিকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে। একই ইস্যুতে অধিকাংশ রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের প্রশ্নবাণে জর্জরিত বিএনপি। দলের অভ্যন্তরেও মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া প্রগতিশীল এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার নেতারা এ মুহূর্তে জামায়াতকে জোটে রাখার বিপক্ষে। দলের যুব ও তরুণ নেতাদেরও একই মত।

জানা গেছে, ভেতরে ভেতরে ক্ষুব্ধ হলেও এ নিয়ে প্রকাশ্যে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সামনে কোনো নেতাই মুখ খোলেন না। বেগম জিয়াও জামায়াত ইস্যুতে কৌশলী ভূমিকা পালন করছেন। দলেরপ্রগতিশীল ও অতি ডানপন্থি নেতাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে পক্ষে-বিপক্ষে নানা বক্তব্য এলেও এ ইস্যুতে বেগম জিয়া নিজেই দায়িত্ব নেন। তবে সরকার ও দেশি-বিদেশি চাপে আপাতত জোট থেকে জামায়াতকে বাদ দেওয়ার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন দলের উভয় পক্ষের নেতারা। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার শর্ত দিয়েছিলেন। এরপর সোমবার রাতে ভয়েস অব আমেরিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, জামায়াতের সঙ্গে তাদের জোট সম্পূর্ণ কৌশলগত। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী দৈনিক নিউইয়র্ক টাইমসের সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, জামায়াতের সঙ্গে এটি স্থায়ী কোনো জোট নয়। সময় হলে জানানো হবে জামায়াতের সঙ্গ কখন ছাড়া হবে। সোমবার ১৮-দলীয় জোটের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠকের সময় জামায়াতকে নিয়ে আলোচনা হয়। জামায়াত ইস্যুতে সরকার ও দেশি-বিদেশি নানা বক্তব্যও বৈঠকে উঠে আসে। জামায়াতের একজন প্রতিনিধিও বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। জানা গেছে, একপর্যায়ে প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেন, জামায়াতকে সঙ্গে রাখলে যদি আমাদের ভোট কমে যায় তাতে প্রধানমন্ত্রীর মাথাব্যথা কেন? সমাজে আমরা ঘৃণিত হলে তাতে ভোট কমবে আমাদের, প্রধানমন্ত্রীর সমস্যা কী? বিএনপির প্রগতিশীল নেতারা জানান, জামায়াত ইস্যুতে আটকে আছে সরকারবিরোধী আন্দোলনে বিএনপির বৃৃহত্তর ঐক্য প্রক্রিয়া। এ কারণেই সরকারের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকলেও প্রগতিশীল দলগুলোকে এক মঞ্চে আনা যাচ্ছে না। বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকেও ওইসব দলের নেতারা এ আপত্তির কথাটি তুলেছেন। কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম, জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব, বাসদ, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বেশ কয়েকটি বাম দল এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনসহ কয়েকটি ধর্মভিত্তিক দলও জামায়াত থাকার কারণে বিএনপির সঙ্গে কোনো ঐক্য গড়তে প্রকাশ্যে আপত্তির কথা জানিয়েছে। বিএনপির এ অংশের নেতারা বলেন, বর্তমানে যে রাজনৈতিক সংকট চলছে তাতে জামায়াতকে জোটে রাখলে বিএনপিকে সামনে আরও সমস্যায় পড়তে হবে। দলের যে জনপ্রিয়তা রয়েছে, সাংগঠনিক সক্রিয়তা বাড়িয়ে তা ঠিকমতো কাজে লাগাতে পারলে জামায়াতের মতো একটি প্রশ্নবিদ্ধ দলের কোনো প্রয়োজন নেই বলে মনে করেন তারা। অন্যদিকে, বিএনপির ডানপন্থি অংশের নেতারা বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটে ফাটল ধরাতে সরকারের পাশাপাশি দেশি-বিদেশি একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয়। কোনোমতে, বিএনপি থেকে জামায়াতকে আলাদা করতে পারলে ক্ষমতাসীন দল ভিন্ন খেলায় মেতে উঠবে। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত জামায়াতকে লুফে নেবে আওয়ামী লীগ। তখন আর বাংলাদেশে কেউ যুদ্ধাপরাধী থাকবে না। তা ছাড়া দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে আন্দোলন করে আসার এ মুহূর্তে জামায়াতকে ছেড়ে দিলে একধরনের বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে বলেও মনে করেন তারা। এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জামায়াতের সঙ্গে বিএনপির জোট চিরস্থায়ী নয়। আর তাদের আন্দোলনের সঙ্গে বিএনপির আন্দোলনকে এক করে দেখলে চলবে না। বিএনপি তার নিজস্ব আদর্শ নিয়ে চলে, জামায়াত তার নিজস্ব আদর্শে চলে। দুটোকে একসঙ্গে মেলালে চলবে না। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সরকার বিএনপিকে জামায়াতের সঙ্গ ছাড়ার জন্য বলছে অথচ একটি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমেই তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করতে পারে। তারা জামায়াতকে নিষিদ্ধ করলে তো আমরা বাঁচি। তখন সবাই বিএনপি হয়ে যাবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.