আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনিশ্চয়তার আশঙ্কা বিএনপির কৌশলী আওয়ামী লীগ

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলীয় জোটের আন্দোলন ঠেকাতে আগামী ২৪ অক্টোবরের পরও জাতীয় সংসদের অধিবেশন বহাল রাখার কৌশল নিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার মধ্য থেকেই তফসিল ঘোষণা পর্যন্ত সংসদ চালানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। ক্ষমতাসীন দলের নেতারা বলছেন, অধিবেশন চালু থাকলে সংলাপ সমঝোতার সুযোগ থাকবে। এতে বিরোধী দল চাইলে সংসদেও নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আলোচনা হতে পারে। তবে বিএনপি বলছে, ২৪ অক্টোবরের পর অধিবেশন চালানো দুরভিসন্ধিমূলক।

এতে আওয়ামী লীগের লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে। জনবিচ্ছিন্ন আওয়ামী লীগের এসব কর্মকাণ্ডে জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায় চলে যাবে। এতে নির্বাচন নিয়ে আবারও অনিশ্চয়তা বাড়বে। বিএনপির দাবি একটাই, নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যথাসময়ে নির্বাচন হতে হবে। না হলে ২৪ অক্টোবরের পর টানা আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ে সরকারকে বাধ্য করা হবে।

প্রয়োজনে একতরফা নির্বাচন প্রতিহত করা হবে।

বর্তমান সংসদের প্রথম কার্যদিবস ছিল ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। সে হিসাবে সংসদের মেয়াদ ২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারি পর্যন্ত। সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী অনুযায়ী, সংসদের মেয়াদ পূর্তির আগের তিন মাস অর্থাৎ ২৪ অক্টোবর থেকে ২৫ জানুয়ারির মধ্যে সাধারণ নির্বাচন হতে হবে। তবে বুধবার সংসদে চলতি অধিবেশন ২৪ অক্টোবরের পরও চালিয়ে যাওয়ার জন্য স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন ক্ষমতাসীন মহাজোটের চার এমপি তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, মতিয়া চৌধুরী ও মঈন উদ্দীন খান বাদল।

তারা বলেন, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম খালেদা জিয়া ২৪ অক্টোবরের পর আন্দোলন শুরুর যে হুমকি দিয়েছেন, তা অসাংবিধানিক। সাংবিধানিকভাবে এ সংসদের মেয়াদ আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত আছে। সুতরাং ২৪ অক্টোবরের পরও সংসদ চলতে পারে। আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা গেছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল পর্যন্ত অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানোর ব্যাপারে সরকারেরও নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে।

আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য তোফায়েল আহমেদ বলেন, সংসদ চালু রাখার বিষয়ে সাংবিধানিক কোনো বাধা নেই।

যতক্ষণ পর্যন্ত তফসিল ঘোষণা না হয় ততদিন পর্যন্ত সংসদ চলতে পারে। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বলেন, আমরা চাই বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা করে সমস্যার সমাধান করতে। কিন্তু বিরোধী দল সে পরিবেশ ক্রমেই নষ্ট করছে। বিরোধী দলকে বলব, রাজপথে অনেক আন্দোলন করেছেন। আন্দোলন ছেড়ে সংসদে আসুন।

আলোচনার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান করি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা পরস্পরবিরোধী বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন। খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী ২৪ অক্টোবর পর্যন্ত সংসদের অধিবেশন চালানোর কথা বলেছেন এবং ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির মধ্যে আগামী নির্বাচন হবে বলে গণমাধ্যমে তাদের বক্তব্য এসেছে। আবার আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতারা ২৪ অক্টোবরের পরও অধিবেশন চালিয়ে যেতে স্পিকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এতেই বোঝা যায়, বর্তমান সংবিধান কতটা অকার্যকর, সাংঘর্ষিক ও অস্পষ্ট।

২৪ অক্টোবরের পর আবার অধিবেশন চালানো হলে আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতি এক অন্ধকার ও অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়বে। বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণ করছি। সংসদ এরকম কোনো সিদ্ধান্ত হলে পরিস্থিতি অনুযায়ী আমরা সিদ্ধান্ত নেব। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য দফতরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেন, ২৪ অক্টোবরের পর সংসদ অধিবেশন চলতে কোনো বাধা নেই। কতদিন পর্যন্ত অধিবেশন চলবে এটা নির্ভর করে স্পিকারের ওপর।

আওয়ামী লীগের আরেক নেতা জানান, বিএনপির সামনে এখন তেমন কোনো ইস্যু নেই। যে কারণে তারা আন্দোলন করতেও মনোবল পাচ্ছে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে তারা দীর্ঘদিন আন্দোলন করে দুর্বল হয়ে পড়েছে। এখন তারা এ বিষয়টি নিয়ে নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চায়। কিন্তু তাদের সেই সুযোগ দিতে চাই না।

আমরা চাই যে কোনোভাবে সমঝোতা হোক। আর তারা যদি সমঝোতায় না আসে তাহলে কীভাবে দমন করতে হয় তা আওয়ামী লীগের জানা আছে। তারা যদি আমাদের সঙ্গে রাজপথে মোকাবিলা করতে চায় তাহলে আমরাও কঠোর জবাব দিতে বাধ্য হব।

তবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন মনে করেন, সরকারের মাথা ঠিক নেই। ক্ষমতার মোহে অন্ধ হয়ে গেছে।

গণমাধ্যমের জরিপে জনপ্রিয়তার ধসে তারা পাগল হয়ে গেছে। তাই সরকারের নীতি নির্ধারকরা এখন আবোল-তাবোল বলছেন। তারা নিজেরাই সংবিধানে সংশোধনী এনে নিজেরাই তা লঙ্ঘন করতে চাচ্ছেন। এখন তারা ২৪ অক্টোবরের পরও সংসদ চালানোর অপচেষ্টা করছে। এটা ঠিক হবে না।

আমরা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ২৪ অক্টোবরের পর কর্মসূচি দেব। সরকার কি করবে না করবে, এটা তাদের বিষয়। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার মতে, ২৪ অক্টোবরের পর সংসদের অধিবেশনের মেয়াদ বাড়ানো হলে নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা বাড়বে। এটা সরকারের দুরভিসন্ধিমূলক সিদ্ধান্ত হবে।

তারা নির্বাচন না দিয়ে ক্ষমতায় চিরস্থায়ী থাকার চক্রান্ত করছে। এটা জাতির কাছে কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। বিএনপিও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে। সময় হলেই দলের অবস্থান তুলে ধরব। যুগ্ম মহাসচিব বরকতউল্লা বুলু এমপি বলেন, নিজেরাই সংবিধান সংশোধন করে আওয়ামী লীগ তা আবারও লঙ্ঘনের ষড়যন্ত্র করছে।

দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে তারা এ ষড়যন্ত্র করছে। অতীতেও তারা এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়েছে। এ ধরনের সিদ্ধান্ত হলে বিএনপির সংসদীয় কমিটি বসে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করবে। বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিনের ভাষায় তিনি বলেন, ২৪ অক্টোবরের পর সংসদ চলুক আর নাই চলুক_ নবম সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্দলীয় সরকারের ব্যবস্থা সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।

বিএনপির আন্দোলন ঠেকাতে ও জনগণকে বিভ্রান্ত করতে ২৪ অক্টোবরের পরে সংসদ অধিবেশন চালানোর ষড়যন্ত্র হচ্ছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.