আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

যেদিন আমি মাকড়সা হয়েছিলাম

হ্যাঁ। সত্যি সত্যি একটা মাকড়সা। আমার আটটা পা গজাল শরীরের নানা জায়গা দিয়ে। ভুল বললাম, আটটা পা নয়, নতুন গজাল আসলে চারটি পা। দুটো পা তো আমার আগে থেকেই ছিল।

আর আমার হাত দুটোও পা হয়ে গেল। আটপা নিয়ে বড্ড বিপদে পড়লাম আমি।
ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম, পৌনে পাঁচটা বাজে। অথচ এত আগে আমার ঘুম ভাঙার কথা নয়। প্রতিদিনই আমি ঘুম থেকে দেরি করে উঠি।

আপু এসে প্রতিদিন আমার ঘুমের বারটা বাজায়। ছয়টা বাজলেই আমার ঘরে এসে দরজায় কড়া নাড়ে। আমার সাড়া না পেলে জানালা দিয়ে ডাকাডাকি করে। তাতেও যদি আমি সাড়া না দেই, আমার গায়ে পানি ছুড়ে মারে। বড্ড বিরক্ত লাগে আমার।

উফ! আপুটা আমাকে একটা সকালেও শান্তিতে ঘুমোতে দিল না। আজ সুযোগ পেয়েছি। আপুর আগে ঘুম ভেঙেছে আমার। তার উপর আমি হয়ে গেছি একটা মাকড়সা।
হুঁ।

মাকড়সাই তো। ওই তো আয়নায় দেখতে পাচ্ছি আমাকে। আমার পড়ার টেবিলের পাশে একটা লম্বা আয়না। ওটা আগে ছিল মায়ের আয়না। মা নতুন একটা ড্রেসিং টেবিল কেনার পর আয়নাটা আমাকে দিয়ে দেন।

অথচ আয়না আমার মোটেও দরকার ছিল না। শুনে মা বলেছিলেন, “বলিস কী! আয়না দরকার নেই মানে?”
“ছেলে মানুষ আমি। আয়না দিয়ে কী করব? ওটা তো মেয়েদের কাজে লাগে। ”
“বাহ! মাথা আঁচড়ে আয়নায় দেখিস না?”
“না তো!”
“তবে কী করে বুঝবি, মাথাটা ঠিক মতো আঁচড়ানো হল কি না?”
“ও এমনিতেই বোঝা যায়। মাথায় হাত দিলেই বুঝতে পারি।


“তাছাড়া নতুন জামাকাপড় পরে তো আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে দেখতে হয়, ঠিক আছে কি না। ”
“আমার দেখতে হয় না। ঠিক না থাকলে আমি বুঝতে পারি। আমার অস্বস্তি হয়। ”
“আহ! এত কথা বলিস না তো! আয়নাটা রাখার মতো আর কোনো জায়গা নেই ঘরে।

তোর ঘরটা ফাঁকা আছে। এটা ওখানে থাকবে। বুঝেছিস?”
খানিকটা চেঁচিয়েই বললেন মা। বুঝলাম, আয়নাটা আমার ঘরে রাখতেই হবে। উপায় নেই।

কোনো দিন ভেঙে গেলে তবে ঘর থেকে বিদায় হবে। কতদিন ভেবেছিলাম ভেঙে ফেলব। কিন্তু এমনি এমনি তো ভাঙা যাবে না। মা কষ্ট পাবেন। ভাগ্যিস ভাঙিনি।

ভাঙলে তো মাকড়সা হওয়ার পর আর নিজেকে দেখতে পেতাম না! এমনকি হয়তো টেরই পেতাম না যে আমি মাকড়সা হয়ে গেছি। ভালোই হল। আপুকে ভয় দেখাতে পারব আজ। আপু মাকড়সাকে ভীষণ ভয় পায়। আট পায়ে গুটি গুটি হেঁটে আপুর ঘরের দিকে এগিয়ে গেলাম।

আপুর ভয় পাওয়া মুখের ছবি ভেসে উঠল আমার চোখে। কী মজা! কী মজা!
আটপায়ে গুটি গুটি করে আমি এগিয়ে গেলাম আপুর ঘরের দিকে। আপুর ঘরের দরজা বন্ধ। কী করি? আমি কি দেয়াল বেয়ে উঠতে পারব? মনে হয় পারব। আমি তো এখন মাকড়সা।

দেয়াল বেয়ে উঠতে চাইলাম। খানিকটা উঠেও গেলাম। তারপর ধুপ করে পড়ে গেলাম নিচে।
আবার উঠলাম। আগের চেয়ে বেশ খানিকটা উপরে।

আরেকটু উঠতে পারলেই আপুর ঘরের ঘুলঘুলি দিয়ে দেখতে পাব ভেতরে।
কিন্তু বেশিদূর উঠতে পারলাম না। পড়ে গেলাম আবারও। এবার শব্দ হল আগের চেয়ে বেশি। কিন্তু আমি কোন ব্যথাই পেলাম না।

অবাক হলাম। ব্যথা না পাওয়ায় উপরে ওঠার সাহস আরও বেড়ে গেল। যে করেই হোক, দেয়াল বেয়ে আমাকে উঠতেই হবে। আবারও দেয়াল বেয়ে উঠতে যাব, অমনি আপুর ঘরের দরজা খুলে গেল। ঘুম ঘুম চোখে ঘর থেকে বেরিয়ে এল আপু।

আর বেরিয়েই দেখতে পেল আমাকে। আমাকে দেখেই চিৎকার দিয়ে উঠল, “ও মা-আ-আ-আ গো-ও-ও-ও..., বা-আ-আ-বা গো-ও-ও-ও...। ”
তারপর ঠাস করে পড়ে গেল দরজার সামনে। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে তাকানোরও সময় পেলাম না। বাবা-মায়ের ঘরের দরজা খোলার শব্দ পেলাম।

সঙ্গে সঙ্গে দেয়াল বেয়ে উঠে গেলাম একেবারে উপরে। আশ্চর্য! এবার আর দেয়াল থেকে ছিটকে পড়লাম না।
উপর থেকে দেখতে লাগলাম আপুকে। মা আর বাবা দৌড়ে এসে আপুকে দেখতে লাগলেন। বাবা আপুকে নিয়ে ঢুকে গেলেন আপুর ঘরে।

মা গেলেন পানি আনতে। হুড়োহুড়ি পড়ে গেল ঘরে। আমি বেশ মজা পেলাম। যাক, আপুকে ভীষণ ভয় পাইয়ে দিতে পেরেছি।
অনেকক্ষণ দেয়াল আঁকড়ে থাকতে থাকতে বেশ ক্লান্ত হয়ে গেলাম।

কী করা যায় ভাবছি। নিচে নেমে আসব? যদি মা ভয় পান? মাকে ভয় পাওয়ানোর ইচ্ছে আমার একটুও নেই। মাকে আমি ভীষণ ভালোবাসি। তবে বাবাকে সামান্য ভয় দেখানো যায়। আমাকে নিয়ে কথা উঠলেই বাবা আপুকে সমর্থন করেন সবসময়।

কাজেই আপুর মতো বাবাকেও খানিকটা ভয় দেখানো যায়। আহ! আজ আমি বাবাকেও ভয় দেখাব। কী মজা! কী মজা!
মা ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন পানি আনতে। এই সুযোগে আমি আপুর ঘরে ঢুকলাম। আটপায়ে গুটি গুটি হেঁটে চলে এলাম একেবারে আপুর বিছানার কাছে।

বাবা আপুকে বিছানায় শুইয়ে মাথায় বাতাস করছেন পেপার দিয়ে। যদিও মাথার উপর ফ্যান ঘুরছে। আমি তখন বাবার পিছনে। বাবা সমানে বলে যাচ্ছেন, “পাপিয়া মামণি, কী হয়েছে তোর? চোখ খোল মা। ”
হঠাৎ চোখ খুললেন আপু।

আর চোখ খুলে আবারও দেখতে পেলেন আমাকে। আর আমাকে দেখে আবারও সেই আর্তচিৎকার বেরোল তার গলা দিয়ে, “বা-আ-আ-বা গো-ও-ও-ও...। ”
মনে হয় বাবাকে দেখে এবার শুধু বাবার নাম নিয়েছে ও। নইলে মায়ের নামও নিত। আর বাবার নাম নিয়ে আবারও জ্ঞান হারাল আপু।


ভাগ্যিস বাবা তখন পিছনে তাকাননি। তাকালেই আমাকে দেখতে পেতেন। ওদিকে পানি নিয়ে যে কোনো সময় মা চলে আসবেন। আমাকে দেখে মা ভয় পান, আমি চাই না। তাড়াতাড়ি আটপায়ে হেঁটে আপুর ঘর থেকে বেরিয়ে গেলাম আমি।


নাহ! আপুটার জন্য বাবাকে ভয় দেখানো গেল না। একটা মানুষ এত ভয় পেলে চলে? আমি নিজের ঘরে এসে ঢুকলাম। দরজা আটকে বিছানায় গেলাম। একটু শুয়ে থাকি। দুবার দেয়াল থেকে পড়েছি।

তাছাড়া আটপায়ে হেঁটে বড্ড ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি। আমার মনে হল, যে প্রাণীর পা যত বেশি, সে প্রাণী হাঁটতে গিয়ে তত বেশি ক্লান্ত হয়। ভাগ্যিস মানুষের দুটো পা।
দরজা আটকে শুয়ে রইলাম বিছানায়। আট পা নিয়ে বড্ড বিপাকে পড়েছি।

কোন পা কোথায় রাখব বুঝতে পারছি না। আমার খাটজুড়ে কেবল পা আর পা।
এদিকে ছটা বেজে গেছে অনেকক্ষণ আগে। আজ আর আমাকে ডাকতে আসেনি আপু। আমি এখন ইচ্ছে করলে আরও ঘণ্টাদুয়েক বিছানায় গড়াগড়ি খেতে পারি।

কিন্তু এতগুলো পায়ের জন্য আরাম করতে পারছি না। কী করি বুঝতে পারছি না। তবু সবগুলো পা মেলে দিয়ে শুয়ে রইলাম। বেশ ক্লান্ত আমি। ঘণ্টাখানেক তো শুয়ে থাকতে পারব!
নাহ! বেশিক্ষণ শুয়ে থাকতে পারলাম আর কই।

হঠাৎ দরজায় ঠক-ঠক-ঠক! এখন কী করি? আরে! এতক্ষণ ধরে তো ভুলে ছিলাম, আমাকে এ ঘর থেকে বের হতেই হবে। সকালের নাস্তা খাওয়ার সময় বের হতে হবে। স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হতে হবে। বিকেলে বন্ধুদের সঙ্গে মাঠে যাওয়ার সময়ও বের হতে হবে। মাকড়সা হয়ে বেরুব কেমন করে?
তখনই মনে পড়ল স্পাইডারম্যানের কথা।

অবাক করা মানুষ-মাকড়সা সে। মানুষটা মাকড়সা হয়ে গেল কেবল মুখোশে। শরীরে কোনো পরিবর্তনই হল না তার! মানুষের মতোই দুটো পা নিয়ে মাকড়সা হয়ে ঘুরে বেড়াতে লাগল। দুনিয়ার মানুষও বোকা হতে পারে বটে! একটা মানুষকে মাকড়সা বলে চালিয়ে দিল, আর সবাই তাকে মাকড়সা-মানব হিসেবে মেনেও নিল। হাহ! এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর কী হতে পারে? সত্যিকারের মাকড়সা-মানব তো আমি।

কিন্তু আমায় কে চিনবে? আমাকে কে দাম দেবে? আসলের মূল্য আসলেই নেই।
আবারও দরজায় ঠক-ঠক-ঠক। সঙ্গে মায়ের গলা, “শাকিল। অ্যাই শাকিল। শিগগির উঠে পড়।

এতক্ষণ শুয়ে থাকতে নেই। স্কুলে যাবি না?”
কিছুক্ষণ ঝিম মেরে রইলাম। দেখি মা আর কতক্ষণ ডাকাডাকি করেন। কিন্তু মায়ের অসীম ধৈর্য্য। একনাগাড়ে ডেকেই চলেছেন, “শাকিল।

ও শাকিল। উঠবি না?”
আমি তবু ঘাপটি মেরে রইলাম। টু শব্দ করলাম না। এবার দরজা ধাক্কানোর শব্দ পেলাম। ধাক-ধাক-ধাক।

মায়ের চাপড়ে অত জোর নেই। বাবা হলে এতক্ষণে দরজা ফাটিয়ে ফেলতেন। খানিক পরে দরজা ফাটানোর শব্দই পেলাম। এবার বাবার গলা, “শাকিল। দরজা খোল শাকিল।


বাবার গলা বেশ চড়া। মনে হয় খেপে যাচ্ছেন। কী করি এখন? ভাবতে লাগলাম। আমাকে মাকড়সা হিসেবে দেখে তাঁরা কী করেন কে জানে! কিন্তু আমার বড্ড ভয় হচ্ছে। কেন হচ্ছে জানি না।

বিশেষ করে বাবাকে। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে বাবা আমাকে পিটিয়ে মেরেই ফেলবেন। বাবা মাকড়সা দেখতে পারেন না। দেখলেই মেরে ফেলেন। আমাদের গোসলখানার দরজার পিছনে ইয়া বড় একটা মাকড়সা ছিল।

সবার আগে আমিই দেখেছিলাম। কিন্তু কাউকে বলিনি। কয়েকদিন গোসলখানায় ঢুকে ওই মাকড়সার সঙ্গে কথাও বলেছি আমি। আমার সঙ্গে এক ধরনের বন্ধুত্ব তৈরি হয়ে গিয়েছিল মাকড়সাটার। আমাকে দেখলেই দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসত।

আর আমি জানতে চাইতাম, “ভালো আছেন জনাব মাকড়সা?”
মাকড়সাটা প্রথম দুটো পা তুলে এদিক-ওদিক নাচাত। বুঝতাম ওটাই হচ্ছে ওর ভাষা। এভাবেই ও আমার সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান করত। তারপর জানতে চাইতাম, “আর কতদিন এভাবে লুকিয়ে থাকবেন জনাব?”
মনে হত মাকড়সাটা এ কথার জবাবে যেন মুখ লুকাত। ইয়া বড় পেট নিয়ে নড়তেও ভীষণ কষ্ট হত ওর।

একদিন কেমন করে যেন বাবা টের পেয়ে গেলেন। সেদিন আমি গোসলখানায় ঢুকতেই দরজায় বেশ জোরে জোরে করাঘাত। বাবা বাইরে থেকে চেঁচিয়ে যাচ্ছেন ক্রমাগত, “এতক্ষণ কী করছিস গোসলখানায়?”
আমি জবাব দিলাম, “কিছু না। ”
“তাহলে দরজা খোল। ”

সত্যিই যে আমি কিছু করছি না, সেটা বোঝানোর জন্য চট করে দরজা খুলে দিলাম।

আসলে এটা ছিল একটা ফাঁদ। আমি দরজা খুলতেই হন্তদন্ত হয়ে গোসলখানায় ঢুকলেন বাবা। তারপর দরজার পিছনে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলেন। বিশাল বপুর এক মাকড়সা! আমি আসার শব্দ পেয়ে মাকড়সা কেবল গোপন জায়গা থেকে বেরিয়েছিল। লুকিয়ে থাকার জন্য ওটার একটা গোপন জায়গা আছে।

সেই গোপন জায়গাটা যে কোথায় আমিও জানি না। মাকড়সা দেখেই চিৎকার দিয়ে ওঠলেন বাবা। আমি জানতাম না, বাবা মাকড়সা ভয় পান। সেদিনই জানলাম প্রথম। আর ভয় থেকে মানুষ কতটা ভয়ংকর হতে পারে, সেটাও জানলাম।

হাতের কাছে থাকা মগ দিয়ে মাকড়সাটাকে...।
থাক। অত বলে আর লাভ নেই। এরপর টানা কয়েকদিন আমার মন খারাপ ছিল ভীষণ। আমি ঠিকমতো খেতে পারতাম না, ঘুমোতে পারতাম না।

গোসলখানায় ঢুকলেই আমার ফুঁপিয়ে কান্না পেত। মানুষ এতটা নিষ্ঠুর হয় কেমন করে! আমি ভাবতাম আর অবাক হতাম। বিশেষ করে আমার বাবাকে এতটা নিষ্ঠুর হতে দেখে, আমি আরও বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম।
বাবার ডাকাডাকি বেড়েই চলল, “শাকিল। ও শাকিল।

এখনও ঘুমুচ্ছিস নাকি?”
খানিক পরে মায়ের গলা, “বাবা শাকিল, দরজাটা খোল। এত বেলা পর্যন্ত ঘুমুতে হয় না। উঠে পড়। ”
তারপর আবার দরজায় ঘা। প্রচণ্ড জোরে।

মনে হয় দরজাটা ভেঙেই ফেলবেন বাবা। কিন্তু দরজা ভাঙা এত সোজা নয়। সেগুন কাঠের দরজা। বেশ শক্তপোক্ত। ডাকাতরা এসেও কিছু করতে পারেনি।

তিনদিন আগেই ডাকাতি হয়েছিল আমাদের ঘরে। আমরা যে বাড়িতে থাকি সেটা ছয়তলা। আমরা থাকি চারতলায়। পেছনের দিকে। ডাকাতি হওয়ার আগের দিন আমার ছোটমামা এলেন বাসায়।

জাপান যাওয়ার অনেক চেষ্টা করছেন ছোটমামা। একটা সুযোগ পেয়েছেন। এ জন্য নগদ পাঁচ লাখ টাকা দিতে হবে। মামা টাকাটা নগদই এনেছিলেন। এনেই দিলেন মায়ের হাতে, “নে বুবু, টাকাটা তোর কাছে রাখ।


“এতগুলো টাকা!”
হাত বাড়িয়ে টাকাটা নেওয়ার সময় মায়ের হাত কাঁপছিল। ছোটমামা হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “এ কী বুবু! ভয় পাচ্ছিস নাকি?”
মা বলেছিলেন, “এতগুলো টাকা, ঘরে রাখা কি ঠিক হবে? এমনিতেই দিনকাল ভালো নয়। কখন কী হয় বলা যায় না। ”
ছোটমামা বলেছিলেন, “কে জানবে? কাল সকালেই তো পার্টি চলে আসবে। ”
“এখানে?”
“হ্যাঁ।

এখানে। আমি তো তোদের বাসার ঠিকানা দিয়েছি ওদের। এখান থেকেই টাকা গুনে নিয়ে যাবে। ”
“ব্যাংকে রাখলে হত না?”
“ঢাকায় আমার কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই। ”
“এখন তো অনলাইনে ব্যাংকিং হয়।

দেশের যে কোনো জায়গা থেকে টাকা তোলা যায়। ”
“বুবু, এ ব্যাংকে অনলাইন সার্ভিস কেবল ঢাকায় আছে। আমাদের যশোরে নেই। ভয়ের কিছু নেই। তুই খামোখা ভয় পাচ্ছিস।


তখনই আমার দিকে চোখ পড়ল মায়ের। আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, “শাকিল, তোর মামাকে সঙ্গে নিয়ে তোর ঘরে যা। টাকাটা তোর বুকসেলফের ভেতরে নিয়ে রাখ। আমি আলমারিতে রাখতে পারব না। কখন কী হয় বলা যায় না।


মায়ের ভয়টা খামোখা ছিল না। সত্যি সত্যি আমাদের মহল্লায় ইদানিং ডাকাতি বেড়ে গিয়েছে। আর চুরি তো যখন-তখন হয়। গত তিন মাসে ছয়টা ডাকাতি হয়েছে। এলাকার সবাই বেশ আতঙ্কে আছে।


আমি ছোটমামাকে নিয়ে আমার ঘরে ঢুকলাম। আমার বুক সেলফটা বিশাল। বই জমানোর শখ আমার। বাবারও এক সময় ছিল। বাবার কেনা কিছু বইও আছে আমার সেলফে।

আর বইমেলা থেকে প্রতিবছর বই তো কেনা হয়-ই। তবে আমার চেয়ে আপু বেশি বই পড়ে। আপুর অনেক বই। সবই আমার সেলফে। চারটা তাক আছে সেলফের ভেতর।

আপুরই দুটো। দুটোই বইয়ে ঠাসা। আমার তাকটা এখনও অনেকখানি খালি পড়ে আছে। আরেকটা তাকে বাবার ছোটবেলার বই। আমি কেবল আমার আর বাবার তাকের বই পড়ার অনুমতি পেয়েছি।

আপুর তাকের দিকে তাকানোও নিষেধ। ওখানে নাকি বড়দের বই। ওগুলো পড়ার বয়স আমার এখনও হয়নি।
হুঁহ! আমার বুকসেলফে বই রেখে আবার আমাকেই নিষেধ করা! আপুর উপর আমার রাগের এটাও একটা কারণ। এক রাতে আপুর চোখ রাঙানি-নিষেধ শুনলাম না।

চুপি চুপি আপুর বইয়ের তাক থেকে একটা বই নিয়ে পড়ার চেষ্টা করেছিলাম। ভালো লাগল না। আপুর বইয়ে অ্যাডভেঞ্চারের গন্ধটুকুও নেই। অ্যাডভেঞ্চার না থাকলে আমি ওই বই পড়ি না। কী সব ছাইপাশ পড়ে আপু, বুঝি না।


আমার বুকসেলফের এক কোণায় টাকাটা লুকিয়ে রাখলেন ছোটমামা। টাকার কথা কেবল আমি, মা আর ছোটমামা জানি। বাবা আর আপু কিছুই জানে না। কিন্তু আমি নিশ্চিত রাতে মায়ের কাছ থেকে বাবাও জানবেন।
পরদিন সকাল বেলা ডাকাত পড়ল আমাদের বাড়িতে।

বাবা অফিসে চলে গেছেন ঘণ্টাখানেক আগে। আপু গেছেন কলেজে। ঘরে আমি, মা আর ছোটমামা। মামার পার্টি আসার কথা বিকেলে। কথা ছিল তার আগেই বাবা অফিস থেকে ছুটি নিয়ে চলে আসবেন।

এতগুলো টাকা দেওয়া হবে, বাবাকেও থাকতে হবে। হঠাৎ বাসার দরজায় করাঘাত। বিদ্যুৎ ছিল না বলে বেল বাজেনি। দরজায় করাঘাত হতেই ছোটমামা লাফ দিয়ে উঠলেন দরজা খোলার জন্য। আমরা তিনজনই তখন আমাদের ড্রয়িং রুমে বসে আছি।

ঘরের সদর দরজা ড্রয়িং রুমের সঙ্গে। মা কিছু একটা বলতে গিয়েও বলতে পারলেন না। ততক্ষণে মামা দরজা খুলে দিয়েছেন, আর তিনটে লোক ঢুকে পড়েছে আমাদের ঘরে। কী সুন্দর ফিটফাট তিনটে মানুষ। দাড়িগোঁফ কামানো।

শার্ট-প্যান্ট-জুতো পরা। ইস্ত্রি করা শার্ট, পলিশ করা জুতো। এদের দেখে কে বলবে এরাই ডাকাত! আমরাও প্রথমে বুঝতে পারিনি। একটা লোক চট করে সদর দরজা আটকে দিল। আরেকটা লোক মামাকে জাপটে ধরল।

আর মামার কপালে পিস্তল ঠেকাল। পিস্তল আমি চিনি। সিনেমায় দেখেছি। পিস্তল থেকে গুলি বের হয়। গুলিতে মানুষ মারা যায়।

মামার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে লোকটি বলল, “টাকাটা কোথায় রেখেছিস, শিগগির বের করে দে। নইলে খুলি উড়িয়ে দেব। ”
মা থরথর করে কাঁপতে লাগলেন। মনে হয় অজ্ঞান হয়ে যাবেন। কোনো রকমে সোফার একটা হাতল ধরে পড়ে যাওয়া ঠেকালেন।

আমি চিৎকার করে এগিয়ে গেলাম মায়ের দিকে, “মা, তোমার কী হয়েছে?”
বলতে না বলতেই ঠাস করে পড়ে গেলেন মা। জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। আর ওদিকে ডাকাতগুলো মামার কপালে পিস্তল ঠেকিয়েই রেখেছে। এবার অন্য এক ডাকাত চেঁচাল, “শিগগির টাকাগুলো বের করে দে। ”
মামা বললেন, “কিসের টাকা?”
তৃতীয় ডাকাত মুখ খুলল এবার, “ন্যাকামো হচ্ছে! কিসের টাকা জানিস না? পাঁচ লাখ টাকা কোথায় রেখেছিস? বের করে নিয়ে আয়।

যা। ”
এবার থতমত খেয়ে ঢোক গিললেন মামা। ওরা কেমন করে জানল, আমাদের ঘরে পাঁচ লাখ টাকা আছে! মামা জবাব দেওয়ার আগেই বাকি দুজন চলে গেল বাবা-মায়ের ঘরে। ও ঘরে আলমারি। তবে তালা মারা।

ও ঘর থেকে একজন ছুটে এসে মামাকে বলল, “আলমারির চাবি দে। নইলে ভেঙে ফেলব। ”
আমি কিন্তু মাকে ছেড়ে যাইনি। কেবল ভাবছি কী করা যায়? ডাকাত দলের বিরুদ্ধে কিছুই করার নেই। টাকাটা বের করে দিলেই মনে হয় ভালো হয়।

তাহলে মামা রেহাই পাবেন। ডাকাতরা চলে গেলে মায়েরও জ্ঞান ফেরানো যাবে। ছুটে গেলাম আমার ঘরে। আর ঘরে ঢুকেই হঠাৎ বুদ্ধি এল মাথায়। টাকাটা দেওয়া যাবে না।

বরং ঘরের দরজা আটকে বসে থাকি। দেখি ডাকাতরা কী করে? পুরো ঘর খুঁজেও ওরা টাকা পাবে না। আর না পেলেই চলে যাবে।
আমি ঘরের দরজা লাগিয়ে দিতেই হুঁশ হল ডাকাতদের। সঙ্গে সঙ্গে আমার ঘরের দরজায় আঘাত করতে লাগল ওরা।

ভীষণ জোরে। এত জোরে শব্দ করতে লাগল যে, আমাদের পাশের বাড়ির লোকও শুনতে পেল। আর শুনেই তারা বুঝে ফেলল, কিছু একটা হচ্ছে এ বাড়িতে। বিদ্যুৎ না থাকায় সদর দরজা বাদে বাকি দরজা জানালা সব ছিল খোলা। উঁকিঝুঁকি মেরে নিশ্চয়ই তারা বুঝে গিয়েছে আমাদের ঘরে ডাকাত পড়েছে।

ব্যস, কেউ পুলিশে খবর দিয়েছে। খানিক পরে পুলিশের গাড়ির সাইরেন শুনতে পেলাম আমি।
সাইরেনের শব্দেও ডাকাতগুলো নড়ল না। আমার ঘরের দরজায় আরও জোরে আঘাত করতে লাগল। কিন্তু শক্তপোক্ত দরজা।

এত সহজে ভাঙা সম্ভব না। খানিক পরে চুপচাপ আমাদের ঘর থেকে বেরিয়ে গেল ডাকাতদল। তারপর কোথা দিয়ে যে পালিয়ে গেল, আমরা টেরই পেলাম না। আমরা তখন ব্যস্ত ছিলাম মাকে নিয়ে। চোখেমুখে পানি দিয়ে জ্ঞান ফেরালাম মায়ের।

ততক্ষণে অনেক মানুষ আমাদের ঘরে। আমাদের বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটের মানুষ তো এলেনই, আশপাশের বাড়ি থেকেও অনেকে এসেছেন। নানান রকম হইহল্লা ঘরজুড়ে। পুলিশে ফোন দেওয়ার কৃতিত্ব অনেকেই নিলেন। আর সবার মুখে একটাই কথা, টাকাটা ওরা নিতে পেরেছে? পাঁচ লাখ টাকার কথা এর মধ্যেই জেনে গিয়েছে সবাই।

বাবাকে খবর দেওয়া হল।
জ্ঞান ফেরার পর মা প্রথমেই জানতে চাইলেন, “ওরা কি টাকা নিয়ে গেছে?”
ডাকাতরা সেদিন টাকার হদিস পায়নি। খবর পেয়েই হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন বাবা। টাকাটা ব্যাংকে নিজের একাউন্টে রাখতে চেয়েছিলেন বাবা। বিকেলে পার্টি আসবে বলে আর রাখা হয়নি।

কিন্তু সেদিন বিকেলে আর পার্টি আসেনি। দুদিন পর আসবে বলে জানাল। বাবা ওই পার্টির সঙ্গে যোগাযোগ করতে নিষেধ করে দিলেন মামাকে। বাবার ধারণা, ওরাই ডাকাত পাঠিয়েছে। নইলে টাকার কথা ডাকাতরা জানল কেমন করে? পুলিশের কাছেও সে কথা জানিয়েছিলেন।

তবে আমাদের ঘরে টাকা থাকার কথা একেবারেই স্বীকার করেননি বাবা। দিব্যি দিয়ে বলেছেন, ঘরে কোনো টাকা নেই। আমাদেরও নিষেধ করে দিয়েছিলেন, যাতে কাউকে না জানাই। বাবার নাকি কোনো কিছুতেই আস্থা নেই।
সে যাই হোক, পরের দিনই গ্রামের বাড়িতে চলে গেলেন মামা।

আর টাকাটা রয়ে গেল আমার বুকসেলফের ভিতরেই। তবে বুকসেলফের চাবিটা চলে গেল বাবার কাছে। বাবা লুকিয়ে রেখেছেন। সেলফের ভিতর থেকে টাকাটা সরানোর পর আবার সেলফের চাবি পাব আমি। কিন্তু তার আগেই তো মাকড়সা হয়ে গেলাম আমি।

সেলফের চাবি পেলেই কি আবার বই পড়তে পারব? মাকড়সারা কি কখনও বই পড়ে?
দরজায় এবার ভীষণ জোরে আঘাত পড়তে লাগল। কেমন যেন হইহল্লার শব্দ শুনলাম। অন্য কারও গলাও শুনতে পেলাম। তবে কি ছোটমামা ফিরে এসেছেন? কিন্তু ছোট মামার গলা তো এমন নয়! তবে কে এল আমাদের বাড়িতে? হঠাৎ শুনলাম, কে যেন বলছে-- ওই ঘরেই টাকাটা আছে ওস্তাদ। আমি নিশ্চিত।


মায়ের আর্তচিৎকার শুনলাম এবার। বাবার টু শব্দও নেই। আপুর গলাও আর শুনতে পাচ্ছি না। তবে কি আবার ডাকাত পড়ল আমাদের বাড়িতে? সকাল সকাল!
নাহ! এবার আর চুপ করে থাকা যায় না। দরজাটা মনে হয় ভেঙেই ফেলবে ডাকাতগুলো।

ভাঙুক গে। তবু আমি দরজা খুলব না। আমি তো মাকড়সা। মাকড়সা হয়ে দরজা খোলাটা ঠিক হবে না। আবার ভাবলাম, যদি ডাকাতগুলো দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে পড়ে, তখন কী করব? নাকি ছাদে গিয়ে ঘাপটি মেরে থাকব।

সেটাই ঠিক হবে। আমি আট পায়ে পিলপিল করে দেয়াল বেয়ে সিলিংয়ে গিয়ে উঠলাম। আর সিলিংয়ে উঠতে না উঠতেই ভেঙে গেল আমার ঘরের দরজা। আমি উপর থেকে দেখলাম, দুটো ডাকাত হুড়মুড়িয়ে ঢুকল আমার ঘরে। তাদের পিছন পিছন বাবা।

বাবার কপালে পিস্তল ঠেকানো। বাবার পিছনে আরেকটা ডাকাত। পিস্তলটা ওই ডাকাতই ধরে রেখেছে। আর সমানে চেঁচিয়ে যাচ্ছে, “টাকাটা কোথায় রেখেছিস, বের করে দে। শেষবারের মতো বলছি।

নইলে খুলি উড়িয়ে দেব। ”
সিলিং থেকে তাকিয়ে চিনতে পারলাম ডাকাতদের। সেদিনের সেই ডাকাতদল। মামাকেও একই কথা বলেছিল সেদিন। ডাকাতি করার জন্য মনে হয় কেবল কিছু কথা মুখস্ত করলেই হয়ে যায়।

বেশি কথা বলার দরকার হয় না। কিন্তু মা আর আপু কোথায়?
বুঝতে পারছি না, আমি এখন কী করব। এভাবেই ঘাপটি মেরে থাকব? তাছাড়া তিন ডাকাতের বিরুদ্ধে আর কী করতে পারি আমি। তবে বেশ ভয় পেলাম আমি। ভয়ে আমার হাত-পা কাঁপতে শুরু করেছে।

ভুল বললাম। আমার তো হাত নেই। ভয়ে আমার আট পা-ই কাঁপতে শুরু করেছে। আমি আর ছাদ আঁকড়ে থাকতে পারছি না। মনে হচ্ছে নিচে পড়ে যাব।

এবং ঠিকই ধুপ করে নিচে পড়ে গেলাম আমি। আর জ্ঞান হারালাম। তবে জ্ঞান হারানোর আগে একটা গুলির শব্দ শুনতে পেলাম। এমন গুলির শব্দ এর আগে আমি অনেক শুনেছি। তবে সিনেমায়।


 
২.
চোখ খুলেই অনেকগুলো চেহারা দেখতে পেলাম আমি। প্রথমেই মায়ের মুখের দিকে তাকালাম। মা আমাকে তাকাতে দেখে খুশি হয়ে উঠলেন। তাঁর দুচোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল। বাবার চোখেও পানি।

কিন্তু বাবা আর মা কাঁদছেন কেন? আপুকেও দেখলাম। বেশ কঠিন মুখ করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। তবে কি ডাকাতরা টাকাটা লুট করে নিয়ে গেছে? আমি জানি আমার নানা জমি বেচে ওই টাকা জোগাড় করেছেন। ছোটমামা বিদেশ যাবেন। অনেক টাকা আয় করবেন।

আবার নানা জমি কিনতে পারবেন। কিন্তু তার আগেই যদি ডাকাতরা টাকা নিয়ে যায়, তাহলে কেমন করে হবে? আমি জানতে চাইলাম, “ওরা কি টাকাটা নিয়ে গেছে মা?”
মা বললেন, “নিতে আর পারল কই? ওই অলক্ষুণে টাকা, নিলেই বরং ভালো হত। ঘর থেকে আপদ বিদেয় হত। ”
বাবা বললেন, “কী যা তা বলছ। টাকা অলক্ষুণে হতে যাবে কেন?”
আপু বলল, “যা দেখিয়েছিস না তুই? একেবারে তিন ডাকাতের ঘাড়ের উপর পড়েছিস।

দুটোর তো ঘাড়ই ভেঙে গেছে। হাসপাতালে আছে দুটো। আরেকটা পালিয়ে গেছে। তবে পুলিশ ওটাকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। ধরে ফেলবে নির্ঘাৎ।

এর মধ্যে ওদের আস্তানার খবর পেয়ে গেছে। ”
তবে টাকাটা ওরা নিতে পারেনি! যাক। কিন্তু গুলির শব্দ শুনলাম যে একটা? ওটা কোথায় লাগল? আমি জানতে চাইলাম, “গুলি...?”
আপুই বলল, “গুলি তো তোকেই করেছিল। তোকে নাকি উড়ে আসতে দেখেই গুলি চালায় ডাকাতটা। আমাকে আর মাকে একটা ঘরে আটকে রেখেছিল ডাকাতগুলো।

কেবল বাবার কপালে পিস্তল ঠেকিয়ে টাকা নিয়ে চম্পট দিতে চেয়েছিল। ভাগ্যিস তুই ঠিক সময়ে ঝাঁপ দিয়েছিলি। কিন্তু এত জোরে ঝাঁপ দেওয়া শিখলি কোথা থেকে বল তো?”
আমি যে আপুকে ভয় দেখিয়েছিলাম, সেটা কি তবে আপু ভুলে গেছে?
আবার বলতে শুরু করল আপু, “তোর পায়ে গুলি করার পর তুই তো ধপাস করে পড়লি। তোর একটা পায়ে গুলি লাগল। রক্তে ভেসে গেল ঘর।

তোকে নিয়ে হাসপাতালে আসার পর সবাই অবাক, তোর কোনো পায়েই গুলির দাগ নেই। বাবাও অবাক। তবে গুলিটা লাগল কার? ওই ঘরে যারা ছিল তাদের কারও গায়ে লাগেনি। বাবাও দেখেছেন, তোর পায়েই গুলি করেছিল ডাকাতটা। কিন্তু কোথায়? এত রক্তই-বা এল কোথা থেকে?”
তখনই আমার মনে পড়ল, আরে, তাই তো? আমি তো তখন মাকড়সা হয়ে গিয়েছিলাম।

আট পায়ে পিলপিল করে হেঁটে আপুকে ভয়ও দেখিয়েছিলাম। আট পা নিয়ে বড্ড মুসিবতে পড়েছিলাম। এখনও কি আমি মাকড়সা হয়েই আছি? এখনও কি আমার আটটা পা?
ধড়মড়িয়ে উঠে বসলাম আমি। পা নাড়লাম। হাত নাড়লাম।

হুঁ। এই তো আমার হাত। দুটো হাত। আর দুটো পা। তবে তো আবার আমি আগের মতো হয়ে গেছি।

মাকড়সা থেকে মানুষ। কিন্তু কেমন করে হলাম? আমি জানি না। আর মাকড়সাই-বা হয়েছিলাম কেমন করে, সেটাও জানি না। কোনোদিন জানতেও পারিনি।
কদিন পর সেই টাকা আবার নানাকে দেওয়া হয়েছে।

নানা জমি বায়না দিয়ে টাকা নিয়েছিলেন। বায়নার টাকা ফেরত দিয়ে আবার জমি উদ্ধার করেছেন। ছোটমামা এখন নানার জমি চাষবাস করেন। একটা মুরগির খামার দিয়েছেন। বিশাল খামার।

সেই খামার থেকে বেশ ভালো আয় হয় ছোটমামার। ছোটমামা এখন ভালো আছেন। বেশ ভালো আছেন। কেন যে মামা বিদেশ যেতে চেয়েছিলেন, কে জানে?

সোর্স: http://bangla.bdnews24.com     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।