আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

দাঁড়াও মানুষ, প্রতিহত করো ধর্ষকের কালোহাত

দাঁড়াও মানুষ, প্রতিহত করো ধর্ষকের কালোহাত ফকির ইলিয়াস ================================== একটি ছোট্ট ঘটনা দিয়ে শুরু করি। নিউইয়র্কের একটি গভীর রাত। একজন মহিলা মদের বারে মদ খেয়ে বুঁদ হয়ে যান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে গাড়ি না পেয়ে পরে পুলিশের গাড়ির প্রতিই হাত তোলেন। পুলিশ সেই ‘ড্রাংক’ মহিলাকে তার বাসায় পৌঁছে দেয়।

পরদিন সেই মহিলা বুঝতে পারেন, যে দুজন পুলিশ তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়েছিল, ওরা তাকে শারীরিক হেনস্তা করেছে। অন্য ভাষায় বলা যায় তাকে রেপ করেছে। তিনি আদালতের দ্বারস্থ হন। বাধে বিপত্তি। আইনি গতি চলতে থাকে।

পরে ঐ মহিলার এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় দেখা যায়, ঐ দুজন পুলিশ এর পরে আরো তিনবার ঐ রাতে মহিলার বাসায় যাতায়াত করেছে। তল্লাশিতে প্রমাণিত হয়, দুজন পুলিশ মহিলাকে হেনস্তা করেছে ‘ড্রাংক’-এর সুযোগ নিয়ে। ২০১২-এর নভেম্বর মাসে ঘোষিত রায়ে দুজন পুলিশেরই সাজা হয়েছে। রায়ে মাননীয় বিচারক বলেছেন- ‘নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ গণমানুষের রক্ষক। এরাই ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবে তা যুক্তরাষ্ট্র মেনে নেবে না।

ঘটনাটি গোটা মানবসভ্যতার জন্যই কলঙ্কজনক। ’ ধর্ষণ এই সময়ে বিশ্বে একটি আলোচিত বিষয়। কেন এর প্রবণতা বেড়েছে, তা নিয়ে সমাজকে ভাবা দরকার। ইউরোপ আমেরিকায় ধর্ষণ বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নেয়া হয়। কোনো জনবহুল আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন স্টেশনে যদি ক্রাউডের মাঝে কেউ কোনো মহিলার গায়ে হাত দেয় তারও কঠিন শাস্তির ব্যবস্থা আছে।

কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এর কঠিন শাস্তি না থাকার কারণেই এটি ছোঁয়াচে রোগের মতো বাড়ছে প্রতিদিন। ভারতে ‘ভারতকন্যা’ ইস্যুটি গোটা বিশ্বব্যাপী ঝড় তুলেছে। অতীতপানে ফিরে তাকালে দেখা যাবে, ভারতে এর আগেও এমন রাষ্ট্র কাঁপানো ধর্ষণ-কা- ঘটেছে। ১৯৭২ সালে ষোলো বছরের আদিবাসী মেয়ে মথুরাকে তার ভাই ও অন্যান্য কয়েকজন আত্মীয় মহারাষ্ট্রের একটি পুলিশ চৌকিতে নিয়ে আসে। তারা মনে করেছিল, মথুরা কম বয়সী।

তার প্রেমিকের সঙ্গে পালিয়ে যাবার চেষ্টা করছে। যে দুজন পুলিশ ডিউটিতে ছিল, তারা ওর ভাই ও আত্মীয়দের বলে যে, মথুরার জবানবন্দি ওর কাছ থেকে আলাদাভাবে নিতে হবে। ভাই ও আত্মীয়রা যখন বাইরে অপেক্ষা করছে, তখন দুই পুলিশ থানার ভেতরে মথুরাকে ধর্ষণ করে। দুজন পুলিশের বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়। সেশন আদালত আসামিদের মুক্তি দেয়, কারণ আদালতকে বলা হয় যে, মথুরা মিথ্যাবাদী এবং যেহেতু সে যৌনসঙ্গমে অভ্যস্ত, সুতরাং তার সম্মতি ছিল বলেই ধরে নেয়া যেতে পারে।

অর্থাৎ শুধু যৌনমিলন হয়েছে প্রমাণ করা যাবে, কিন্তু ধর্ষণ প্রমাণ করা যাবে না। মুম্বাই হাইকোর্ট পরে সেশন আদালতের এই রায় বাতিল করে এবং দুই আসামির একজনকে ৫ বছর ও অন্যজনকে ১ বছরের জন্য সশ্রম কারাদ-ে দ-িত করে। হাইকোর্ট রায় দেয় যে, ভয় দেখিয়ে সম্মতি আদায় করা আর স্বেচ্ছায় যৌনমিলনে সম্মতি দেয়া এক নয়। কিন্তু পরে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট আসামিদের মুক্তি দেয়। রায়ে বলা হয় যে, মথুরা চেঁচামেচি করেনি এবং ওর দেহে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি, অতএব সে বাধা দেয়ার চেষ্টা করেনি।

এই হলো ভারতে ধর্ষণ আইনের অবস্থা। ভয় পেয়ে বাধা না দেয়া আর স্বেচ্ছায় সম্মতি দেয়া দুটো এক নয়Ñ মথুরা মামলা নিয়ে প্রচুর হৈচৈ সে সময়ে হয়। তারই ফলে ১৯৮৩ সালে ভারতীয় সাক্ষ্য আইনে আর একটি অনুচ্ছেদ ঢোকানো হয়। সেখানে বলা হয় যে, যদি কোনো নারী থানায়, কারাগারে, হাসপাতালে বা অন্যকোনো সরকারি সংস্থার তত্ত্বাবধানে থাকাকালীন সংস্থার কোনো কর্মচারী বা কর্তৃপক্ষের কারোর কাছে ধর্ষিতা হয়েছে বলে অভিযোগ করে এবং প্রমাণিত হয় যে অভিযুক্ত সেই নারীর সঙ্গে যৌন-সংসর্গ করেছে, তাহলে আদালত ধরে নেবে যে, তাতে নারীটির সম্মতি ছিল না। শুধু তাই নয় সাজার ক্ষেত্রেও তত্ত্বাবধানে থাকাকালীন ধর্ষণের শাস্তি অপেক্ষাকৃত কঠোর হবে।

সাধারণভাবে ধর্ষণ ঘটেছে প্রমাণিত হলে, তার সাজা অন্তত ৭ বছরের কারাবাসÑ যা দশ বছরও হতে পারে। যদি ধর্ষিতা নারী গর্ভবতী থাকে বা তার বয়স ১২ বছরের কম হয়, অথবা সে গণধর্ষণের শিকার হয়, কিংবা তত্ত্বাবধানে থাকাকালীন ধর্ষিতা হয়, সেক্ষেত্রে শাস্তি হবে কমপক্ষে ১০ বছরের কারাবাস। বিশেষ কারণ থাকলে আদালত অবশ্য শাস্তির পরিমাণ কমাতে পারে। ভারতে ধর্ষণ আইনের সংস্কার নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই নানান আলোচনা চলছে। সুপ্রিম কোর্টের নিযুক্ত আইন কমিশন তাদের ২০০০ সালে পেশ করা ১৭২তম রিপোর্টে শুধু ধর্ষণ নিয়ে চিন্তা না করে সমস্যাটি আরো ব্যাপকভাবে, যৌন-অত্যাচার হিসেবে বিবেচনা করেছে।

ভারতে বর্তমান আইনের বহু পরিবর্তনের প্রস্তাব এই রিপোর্টে করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই কমিশনের দেয়া বিভিন্ন প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ২০০২ সালে লোকসভায় শুধু একটিই গৃহীত হয়েছে। তবে সমাজ সংস্কারকরা মনে করছেন, শুধু আইনের পরিবর্তনই সমস্যার সমাধান নয়। আইনের সুপ্রয়োগ তখনই সম্ভব হবে, যখন তার ধারক ও বাহকদের মধ্যে পূর্ণভাবে সমাজ সচেতনতা আসবেÑ চিন্তাধারার মধ্যে জাত, ধর্ম, লিঙ্গ, শ্রেণী ইত্যাদির ভেদাভেদ লুপ্ত হবে। এক্ষেত্রে মুখ্য শক্তি হলো পুলিশ, ডাক্তার, সরকারি উকিল, প্রভৃতি যাদের শীর্ষে রয়েছেন মাননীয় বিচারক।

ভারতে বিচারক কৃষ্ণ আয়ার একটি ধর্ষণ মামলায় রায় দিতে গিয়ে বলেছিলেন, ‘পুরুষদের বলৎকার রোধ করার জন্য শ্রেষ্ঠ বর্ম আইনের গোলমেলে লম্বা লম্বা বিধিনিষেধ নয়, সেই বর্ম হলেন একজন সমাজ সচেতন বিচারক। ’ নেপালে একজন সৌদি ফেরত মহিলা শ্রমিককে পুলিশরা ধর্ষণ করেছে। তা নিয়ে নেপালেও আন্দোলন হচ্ছে। সে খবর আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। বাংলাদেশে এর মাঝেই কয়েকটি ধর্ষণের ঘটনা দেশব্যাপী তোলপাড় তুলেছে।

ভারতের সাম্প্রতিক চিত্র আরো ভয়াবহ। কলকাতা পুলিশের পরিসংখ্যান বলছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখ্য মন্ত্রিত্বের প্রথম সাড়ে দশ মাসে (২০১১-এর ১৩ মে থেকে ২০১২-এর ৩১ মার্চ) শুধু কলকাতায় মহিলাদের অপহরণ, ধর্ষণ ও যৌন নিগ্রহের ঘটনা ঘটেছে ৩৭৩টি। এর মধ্যে ধর্ষণ-গণধর্ষণের ঘটনা ৬৪টি ১৬৮ জন মহিলা যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন আর অপহৃত হয়েছেন ১৪১ জন। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৫১৯ জন। আবার পার্ক স্ট্রিট নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর ‘সাজানো ঘটনা’র তত্ত্বের বিপরীতে হেঁটে কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা প্রধানের পদ থেকে সরতে হয়েছে দময়ন্তী সেনকে।

বিশ্বব্যাপী শান্তি ও বন্ধুত্ব প্রসারের লক্ষ্য নিয়ে কাজ শুরু করে যে মার্কিন পিস কোর সেটি ইতোমধ্যে অর্ধশতাব্দী পূর্ণ করেছে। দীর্ঘ এই সময়ে, স্বেচ্ছাসেবী এই সংস্থার ২ লাখেরও বেশি সদস্য ১৩৯টি দেশের মানুষের সঙ্গে আমেরিকানদের উন্নত সম্পর্ক ও বন্ধুত্ব প্রসারের কাজ করেছে। বর্তমানে ৭৭ দেশে স্থানীয় সম্প্রদায়ের সঙ্গে কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের ৮ হাজার ৬৫৫ স্বেচ্ছাসেবী। কিন্তু দীর্ঘ এই যাত্রায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে সংস্থার নারী সদস্যরা নানা অপ্রীতিকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। যৌন হয়রানির পাশাপাশি কেউ কেউ ধর্ষিতও হয়েছেন।

এমনকি তাদের খুনের ঘটনাও ঘটেছে। বিশেষ করে ২০০০ সাল থেকে ২০০৯ পর্যন্ত এ জাতীয় ঘটনা অনেক বেশি ঘটেছে। সংস্থার এক রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই সময়ে গড়ে প্রতি বছর পিস কোরের ২২ নারী ধর্ষিত বা তাদের ধর্ষণের চেষ্টা করা হয়। ওই বছরগুলোতে ২২১ নারী সদস্যকে ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানির চেষ্টাসহ সহগ্রাধিক নারী যৌন হয়রানির শিকার হন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই সংখ্যা আরো বেশি।

কেননা অনেকেই তাদের ওপর এই আক্রমণের বা হয়রানির খবর প্রকাশ করেন না। অন্যদিকে ঘটনার শিকার সদস্যরা দেশে ফিরে যাওয়ার পর সংস্থার কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিরূপ আচরণেরও শিকার হয়েছেন। প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাননি তারা। অন্য দেশে পিস কোরের সদস্য হয়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে যে সব নারী সদস্য নির্যাতিত হয়েছেন তাদের অনেকেই এখন এই অপ্রীতিকর পরিস্থিতি রোধে করণীয় বিষয় এবং ভুক্তভোগীদের প্রয়োজনীয় সহায়তাদানে কাজ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশে ২০০৪ সালে কাজ করতে এসে জেস স্মোচেক ধর্ষিত হন।

তিনি জানান, ছুরির মুখে তাকে ধর্ষণ করা হয়। তখন তার বয়স ছিল ২৩ বছর। ছয় সপ্তাহ চিকিৎসা শেষে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে যান। কিন্তু সেখানে ফিরে যাওয়ার পর পিস কোর কর্মকর্তারা তার সঙ্গে নির্দয় আচরণ করেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। নারীর প্রতি এই যে হায়েনাপনা তা রুখতে গোটা বিশ্বব্যাপী কঠোর হবার সময় এসেছে।

মৌলবাদীরা রাজনীতিকরা এর সুযোগ নিতে চাইবে। তারা নারীদের বাইরে আসার দরকার কি! ওরা ঘরেই থাকুক। এমন তত্ত্ব মৌলবাদী কীটেরা বিতরণ ইতোমধ্যে শুরু করেছে। প্রতিবাদের, প্রতিরোধের, মহিলাদের সম্মান-সুরক্ষার এই দায়িত্ব কেবল মহিলাদের হতে পারে না। সমাজের সব অংশের মানুষকে সমবেতভাবে মানবতার ওপরে এই আক্রমণকে রুখে দিতে হবে।

ভাবতে অবাক লাগছে, পরিবর্তনের ধুয়া তুলে যে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতায় ক্ষমতায় এসেছিলেন সেই মুখ্যমন্ত্রীই আবার ঠিক করে দিচ্ছেন নারীর ‘ইজ্জতের দাম’। মমতা ব্যানার্জি ঘোষণা করছেন, নাবালিকা ধর্ষিতার হলে সরকার তাকে ৩০ হাজার টাকা দেবে এবং প্রাপ্তবয়স্কা কোনো নারী ধর্ষিতা হলে সরকার তাকে দেবে ২০ হাজার টাকা। কোনো মহিলাকে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা যদি তাকে খুন করে, তাহলে সেই দুর্বৃত্তদের চরম শাস্তি দেয়ার বিষয়টি সুনিশ্চিত করার বদলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সেই নিহত মহিলার জীবনের দাম দুই লাখ টাকায় বেঁধে দিচ্ছেন! এই যদি উপমহাদেশের রাজনীতির মাপকাঠি হয়, তাহলে মানুষ দাঁড়াবে কোথায়? বাংলাদেশের কোন দল রাষ্ট্র শাসন করছে কিংবা করেছে, সে প্রশ্নে না গিয়ে এটা বলা যায়, ধর্ষণকারীদের কোনো জাতপাত নেই। এরা ম“ পেয়েছে কিছু রাজনীতিকদের কাছ থেকেই। দিল্লিতে যখন ‘ভারতকন্যা’ নিয়ে তোলপাড় হয়েছে একই সময়ে রাঙ্গামাটির কাউখালী উপজেলার ১৫ বছর বয়সী কিশোরী তুমা চিং মারমা বাড়ির কাছেই ধর্ষিত ও নিহত হয়।

মা তাকে বিকালবেলা পালিত গরুগুলো আনতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়ে আর ফেরেনি। ঘটনাটি ঘটেছে ২১ ডিসেম্বর, ২০১২। অথচ এ পর্যন্ত কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। এর কয়েক মাস আগে, লংগদু উপজেলার পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী সুজাতা চাকমাও একইভাবে গরু আনতে গিয়ে ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়।

অভিযুক্ত স্থানীয় যুবক মোঃ ইবরাহিম একই এলাকার অন্য এক পাহাড়ি শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় আট মাস জেলে থেকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে ফিরে এসেছিল। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) কর্তৃক প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলছে, ২০১০ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০১১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বান্দরবান জেলায় ২২টি, খাগড়াছড়ি ও রাঙ্গামাটি জেলায় ১৭টি করে নারী নির্যাতন মামলা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার শুনানি হয়েছে বান্দরবানে দুটি এবং রাঙ্গামাটিতে চারটি। বান্দরবান ও রাঙ্গামাটিতে দুটি করে মামলার রায় হলেও কোনো দোষী ব্যক্তির সাজা হয়নি। অন্য একটি মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে গত বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত তিন পার্বত্য জেলায় আদিবাসী নারী ও শিশু ধর্ষণের শিকার হয়েছে ২১ জন।

২০১১ সালে আদিবাসী নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছে ১০ জন। সংখ্যাটি কেবল বাড়ছে, কিন্তু দৃষ্টান্তমূলক বিচারের পরিসংখ্যান হতাশাজনক। না, আমরা একাত্তর সাল পার করছি না। আমাদের দেশে কোনো হায়েনা শক্তি দখলদারিত্ব করছে না। তাহলে কেন এমন কালোহাত আমাদের প্রজন্মকন্যাদের মুখ চেপে ধরবে? কেন আমরা এর প্রতিবাদ করছি না।

প্রতিহত করছি না এদের। প্রজন্মকে মেরুদ- সোজা করে দাঁড়াতে হবে। আমরা খবরে দেখেছি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকভিত্তিক সংগঠন ‘জাস্টিস ফর বাংলাদেশ’ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ দিকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেছে। সংগঠনের দাবি, দেশে ২০১২ সালে ৭৭১ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৫৭ জনই গণধর্ষণের শিকার হয়।

তাদের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে ধর্ষিত এই সাত শতাধিক নারীর মধ্যে ১০৬ জনকে নৃশংসভাবে হত্যা করে ধর্ষণকারীরা। এমন অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতা দুজনেই মহিলা। তাই তাদের বিবেকের কাছে প্রশ্ন রেখে বলতে চাই, ধর্ষণকারী যেন কোনোভাবেই রাজনৈতিক প্রশ্রয় বাংলাদেশে না পায়। ত্রিশ লাখ শহীদ রক্ত দিয়ে এই দেশ স্বাধীন করেছিলেন তাদের উত্তরসূরিরা সামাজিক সম্মান নিয়ে বাঁচবে বলে।

আপনারা সেই সম্মান রক্ষা করুন। কঠোরতম আইন পাস করুন, ধর্ষকদের বিরুদ্ধে। ---------------------------------------------------------------- দৈনিক ভোরের কাগজ / ঢাকা / শনিবার, ১২ জানুয়ারি ২০১৩ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।