আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাবাকে হত্যার বিচার শুরুর দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে

দীর্ঘ ৩৮ বছরেও বিচার হয়নি বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফ হত্যার। এমনকি এই দীর্ঘ সময়ে কেউ তার হত্যার বিচারও চাননি। বরং চলছে নানা অপপ্রচার। তাই এই বিচার প্রক্রিয়া শুরুর দায়িত্ব আমাকেই নিতে হবে।

কথাগুলো বলেছেন মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফের জ্যেষ্ঠ তনয়া মাহজাবীন খালেদ মোশাররফ।

বাংলাদেশ প্রতিদিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে গতকাল এসব কথা বলেন সংক্ষুব্ধ মাহজাবীন। এ জন্য প্রয়োজনে সক্রিয় রাজনীতিতে নামারও প্রত্যয় ছিল মাহজাবীনের।

১৯৩৭ সালে জন্মগ্রহণ করা মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে খালেদ ২ নম্বর সেক্টরের কমান্ডার এবং 'কে-ফোর্স'-এর সর্বাধিনায়ক ছিলেন। বীরত্বের জন্য তাকে 'বীর উত্তম' উপাধিতে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর তিনি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করেন। এর মাত্র তিন দিন পরে ৭ নভেম্বর তিনি পাল্টা এক অভ্যুত্থানে নিহত হন। এই মহান বীরযোদ্ধার মেয়ে মাহজাবীন বলেন, 'বাবা এ দেশের জন্য জীবন দিয়েছেন অথচ তার মূল্যায়ন হয়নি। আমরা তিন বোন সে সময় বেশ ছোট ছিলাম। কিন্তু এখন বড় হয়েছি।

এটি বুঝতে পারি যে বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার ও তার প্রাপ্য মূল্যায়ন বাবাকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। কিন্তু ভেবে আশ্চর্য হতে হয়, আজ বাবার ৩৮তম মৃত্যুবার্ষিকী, এত বছর পরও তার হত্যার বিচার চাইছে না স্বজন বা চেনা-পরিচিত, সরকারে বা বাইরে থাকা রাজনৈতিক দলগুলো। সে কারণে মনে করি আমাদের তিন বোনকেই বাবার হত্যার বিচারের দাবি আদায়ের জন্য এগিয়ে আসতে হবে। তবে এ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সরকার আমাদের সহায়তা করবে বলে আমি শতভাগ আশাবাদী। সম্প্রতি যুদ্ধাপরাধী ও পিলখানা বিদ্রোহের বিচারের রায় ঘোষিত হয়েছে।

তাই যদি আমরা পরিবারের সদস্যরা এ সরকারের কাছে বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাই, তাহলে তারা আমাদের হতাশ করবে না। ' তিনি বলেন, '১৯৭৫ সালের পর রাজনীতি থেকে আমাদের পুরো পরিবার সরে এসেছিল। এ জন্য আমাদের অনেক কিছুর মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। আমাদের অবস্থা ছিল খুবই সাধারণ। বলা যায় মধ্যবিত্ত পরিবার।

মাঝে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হয়েছে। এত দিন সন্তানদের দেখাশোনা নিয়ে নানা পারিবারিক ঝামেলায় বাবার বিচারের দাবি জানানোর প্রক্রিয়া শুরু করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও পারিনি। কিন্তু এখন তা অনেকটাই কমে এসেছে। আমি তাই নিজে এবার বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া শুরুর দায়িত্ব নিতে চাই। খালেদ মোশাররফ তনয়া মাহজাবীন বলেন, 'আজ বাবার মৃত্যুর দিন।

প্রতিটি সন্তানের কাছেই তার বাবার মৃত্যুদিনটি অবশ্যই বেদনার। বাবা যখন মারা যান তখন আমার বয়স ছিল ৯ বছর। ছোট থাকায় সে সময়ের স্মৃতিগুলো আমার কাছে স্পষ্ট নয়। বাবাকে ঘিরে খুব অল্প ছোট ছোট কিছু স্মৃতি আছে। এ স্মৃতিগুলো আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ।

জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অন্যদের বাবাকে দেখে নিজের বাবার অভাব খুব বেশি অনুভব করেছি। কিন্তু আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা খালেদ মোশাররফের স্থানে আমি কখনোই অন্য কাউকে জায়গা দিতে পারিনি। একই সঙ্গে আমার কাছে ৭ নভেম্বরের তাৎপর্যও বেশি। আমি মনে করি বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছে দিনটি বেশ গুরুত্ব বহন করে। ' বাবার স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে মাহজাবীন বলেন, একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধ থেকে যুদ্ধ-পরবর্তী '৭৫ সাল পর্যন্ত দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে।

সে সময় বাবা বেশ ব্যস্ত সময় কাটাতেন। বাবার ব্যস্ততার কারণে তার সানি্নধ্য তেমন পেতাম না। হয়তো তিনি যখন বাড়ি আসতেন আমি ঘুমিয়ে থাকতাম। বাবা বেশ 'কঠোর' ছিলেন। তবে মেয়ে হিসেবে তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করতেন।

মনে পড়ে, ছুটির দিনগুলোতে যখন তিনি বাসায় অবস্থান করতেন, তখন আমরা পরিবারের সব সদস্যরা মিলে বাইরে ঘুরতে যেতাম। বাবা গাড়ি চালিয়ে সাভারে বেড়াতে নিয়ে যেতেন আমাদের। এ ছাড়া ছুটিতে নানাবাড়িতে বেড়াতে যেতাম। ' মাহজাবীন বলেন, 'আজ খালেদ মোশাররফের মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা রয়েছে। অনুষ্ঠানে সে সময় যারা তার সঙ্গে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন, তারা স্মৃতিচারণা করবেন।

তাদের সঙ্গে মিলে আজ এ হত্যাকাণ্ডের বিচারের দাবি জানাব। ' মাহজাবীন জানান, খালেদ মোশাররফ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে থেকে কাজ করেছেন। ফলে তিনি বঙ্গবন্ধুর চিন্তা-চেতনা ও মতাদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। বীর মুক্তিযোদ্ধার এই কন্যা বলেন, 'বাবা যে বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখতেন, তা এখনো গড়ে উঠেনি। তবে এখন যারা ক্ষমতায়, তারা চেষ্টা চালাচ্ছেন।

বিশেষ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর বেশ কয়েকবার হামলা হয়েছে। অনেক বাধা পেরিয়ে তিনি তার নেতৃত্বে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এটি আমাদের বড় অর্জন। ' মাহজাবীন জানান, রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়ার ইচ্ছা আছে তার। তিনি তার নিজ এলাকা জামালপুরে গিয়ে এলাকাবাসীর উন্নয়নে কাজ করতে চান।

তবে এ জন্য এমপি বা জনপ্রতিনিধি হয়েই যে এলাকাবাসীর সেবা করতে হবে তা নয়। তিনি বলেন, 'আমি দেশের জন্য কাজ করতে চাই। সে কারণেই রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হতে আগ্রহী। ' জানা যায়, মাহজাবীন এর আগে অন্ধ শিশুদের কল্যাণে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী কর্মসূচিতে নিয়মিত অংশ নিয়েছেন। এখন বাবার নামের প্রতিষ্ঠিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান উন্নয়নের পরিকল্পনা করছেন।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।