১৯৯৫ সালে শুরু হওয়া এ বইমেলা নিয়ে আয়োজকদের যে অসহায়ত্ব, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক অসীম সাহার এই এক কথাতেই তা স্পষ্ট।
শুরুতে ‘ঢাকা বইমেলা’ নাম থাকলেও পরে এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি। অবশ্য তাতে ভাগ্য বদলায়নি। গত ১৮ বছরে ১৭ বার ঢাকার আটটি স্থানে বসেছে প্রকাশকদের এই মেলা।
এ বছর এক মাঠে তো পরের বছর আরেক মাঠে, এভাবেই বছর বছর বইয়ের স্টল সাজিয়ে বসছেন প্রকাশকরা।
আগামী ১২ থেকে ২১ ডিসেম্বর ঢাকা বইমেলার ঠিকানা হচ্ছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান।
সমস্যা কেবল মাঠ নিয়ে নয়, বিদেশি প্রকাশকদের সাড়া না মেলায় নামের সঙ্গে ‘আন্তর্জাতিক’ শব্দটি রাখার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত কয়েক বছর ধরে কয়েকটি দূতাবাসের প্রকাশনার স্টল ছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে তেমন কারো অংশগ্রহণ পায়নি ঢাকা বই মেলা। জনপ্রিয় না হওয়ায় গত বছর এ মেলা করা বাদ রেখে দুটি বিভাগীয় শহরে বইমেলা করেছে গ্রন্থকেন্দ্র।
অসীম সাহা জানান, ১৯৯৫ সালে ‘অনেক আশা’ নিয়ে বিজয় সরণি মাঠে ঢাকা বইমেলার শুরু।
এরপর চন্দ্রিমা উদ্যানের উত্তর পাশে, মোহাম্মদপুরের শারীরিক শিক্ষা কলেজ মাঠে, জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ড চত্বরে, বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গণে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় খেলার মাঠে আর সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে ১৭ বার বসেছে এ বইমেলা।
এই পথ পরিক্রমায় অর্জনের বদলে আয়োজক ও প্রকাশকদের মধ্যে জমেছে ক্ষোভ আর হতাশা। মেলা কেন জনপ্রিয়তা পাচ্ছে না- এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে আয়োজক ও প্রকাশকরা পরস্পরকে দোষারোপ করছেন।
অসীম সাহা বলেন, “সরকারি উদ্যোগের এ মেলা ঘিরে আগে খুব একটা সাড়া পাওয়া যায়নি। কেন পাওয়া যায়নি সেটা নিয়ে কিন্তু কেউ সেভাবে বিশ্লেষণও করেনি।
”
তার মতে, মেলা জনপ্রিয় না হওয়ার প্রধান কারণ হলো- একুশে বইমেলা ঘিরে প্রকাশকরা যেভাবে বাজারে নতুন বই আনেন, ঢাকা বইমেলায় তেমনটা হয় না। আর নির্দিষ্ট ঠিকানা না থাকায় এই মেলা ঘিরে পাঠক ও বইপ্রেমীদের আবেগও তৈরি হতে পারেনি।
পাশাপশি আন্তর্জাতিক মানের একটি বইমেলা আয়োজনে অপ্রতুল সরকারি বরাদ্দের কথাও উল্লেখ করেন গ্রন্থকেন্দ্রের পরিচালক।
অবশ্য অসীম সাহার সঙ্গে পুরোপুরি একমত নন জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ওসমান গণি।
তিনি বলেন, “প্রথমদিকে এ মেলা বেশ জমজমাট হয়ে উঠত।
কিন্তু সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়নি। ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাই এর সবচেয়ে বড় কারণ। ”
আন্তর্জাতিক মানের একটি বইমেলা আয়োজনের জন্য যে উদ্যম, পরিকল্পনা আর সমন্বয় প্রয়োজন- তার অভাবও আয়োজকদের মধ্যে প্রকট বলে মনে করেন এই প্রকাশক।
অন্যদিকে আয়োজকদের অভিযোগ, ঢাকা বইমেলায় কলকাতার প্রকাশকদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকায় দেশের প্রকাশকরা এ মেলার জনপ্রিয়তা নিয়ে খুব বেশি আগ্রহী নন। একুশে বইমেলায় শুধু বাংলাদেশের প্রকাশকরাই অংশ নেন।
এ কারণে তারা সব বই প্রকাশ করেন একুশে বইমেলাকে ঘিরেই।
এ অভিযোগ নাকচ করে ওসমান গণি বলেন, “১৯৯৫ সালে বিজয় সরণি মাঠে প্রথমবার অনুষ্ঠিত ঢাকা বইমেলায় সবচেয়ে বেশি ১৫টি বই প্রকাশ করে আমি পুরস্কার পেয়েছিলাম। প্রথম মেলায় অনেকগুলো বই প্রকাশিত হয়েছিল। ”
কিন্তু আয়োজকরা সেই ধারা ধরে রাখতে না পারার কারণেই প্রকাশকরা আর ঝুঁকি নিতে চান না বলে তিনি মন্তব্য করেন।
এই প্রকাশক বলেন, “বই প্রকাশ তো দূরের কথা, এখন এ মেলায় প্রকাশকরা অংশই নিতে চান না।
কেনাবেচা নেই, দর্শনার্থীও নেই। ”
আগামী প্রকাশনীর কর্ণধার ওসমান গণি বলেন, কলকাতার প্রকাশকদের ‘ভয় পাওয়ার’ কোনো কারণ বাংলাদেশের প্রকাশকদের নেই। বাংলাদেশের প্রকাশকরা এখন অনেক ‘সক্ষম’। তারাও চান, আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রকাশকরা বাংলাদেশের মেলায় আসুক।
অসীম সাহা জানান, মেলায় দেশীয় প্রকাশকদের অংশগ্রহণ ‘কার্যকর’ করতে এবার প্রত্যেক প্রকাশককে কমপক্ষে একটি নতুন বই আনার বাধ্যবাধকতা দেয়া হচ্ছে।
পরবর্তীতে নতুন বইয়ের এই শর্ত আরো বাড়ানোর পরিকল্পনাও রয়েছে।
এছাড়া মেলা ঘিরে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, লেখক-প্রকাশক-পাঠক আড্ডাসহ বিভিন্ন উদ্যোগ।
গ্রন্থকেন্দ্র পরিচালক বলেন, “একুশে বইমেলা বাংলা একাডেমি ও প্রকাশকদের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত হয়। ফলে ঢাকা বইমেলাই হচ্ছে সরকারি উদ্যোগের সবচেয়ে বড় বইমেলা। আমি দ্বায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই এ মেলা সফল করতে সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।
”
অসীম সাহার আশা, এবার আন্তর্জাতিক অঙ্গন থেকে ‘তেমন’ সাড়া না এলেও আগামীতে তা বাড়বে। আর এর পথ তৈরি করতে আয়োজন ও প্রচারে অর্থ বরাদ্দ বাড়ানোরও সুপারিশ করেন তিনি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।