আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

টিকফা আর হলোই না

দীর্ঘ সময় নিয়ে, অনেক যাচাই-বাছাই আর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মন্ত্রিসভায় অনুমোদন দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচিত টিকফা ('ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কো-অপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট') চুক্তিটি আর হলো না। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা জানান, এ কথা এখন নিশ্চিত করেই বলা যায়, বর্তমান সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিটি সইয়ের আপাতত কোনো সম্ভাবনা নেই। বাংলাদেশকে দেওয়া যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবের দীর্ঘ ১১ বছর পর গত জুনে টিকফা চুক্তিটির অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহায়ক একটি ফোরাম গঠনের লক্ষ্যে ২০০২ সালে প্রথমবারের মতো চুক্তি সইয়ের প্রস্তাব দেয় যুক্তরাষ্ট্র। প্রথম পর্যায়ে চুক্তিটির প্রস্তাবিত নাম ছিল টিফা (ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ফোরাম এগ্রিমেন্ট)। দুর্নীতি ও মেধাস্বত্বসহ বেশ কিছু ইস্যুতে বিতর্ক শুরু হলে 'টিফা'র বদলে 'টিকফা' নামে নতুন একটি চুক্তির প্রস্তাব পাঠায় দেশটি। এর পর একটি তত্ত্বাবধায়ক (দুই বছর মেয়াদি) সরকারসহ দুটি নির্বাচিত সরকারের মেয়াদ পার হয়েছে। চুক্তি সইয়ের দায়িত্ব কেউ-ই নেয়নি।

কর্মকর্তারা জানান, গত সেপ্টেম্বরে চুক্তি সইয়ের একটি সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। মন্ত্রিসভায় টিকফা অনুমোদনের পর ২৬ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল বি ফ্রম্যানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়োজিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আকরামুল কাদেরের বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত করা হয়। কথা ছিল, বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্যমন্ত্রী জি এম কাদের ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে বাণিজ্য প্রতিনিধি মাইকেল বি ফ্রম্যান এতে স্বাক্ষর করবেন। ঢাকায় চুক্তি স্বাক্ষর হলে এ উপলক্ষে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরিও সফরের সম্ভাবনা ছিল। ওয়াশিংটনে হলে যাওয়ার কথা ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। এর পর হঠাৎ করেই চুক্তিটির ব্যাপারে নীরব হয়ে যায় সরকার। সেই নীরবতা এখনো অব্যাহত রয়েছে।

চুক্তিতে স্বার্থবিরোধী কিছু নেই : ২০০২ সালে প্রণীত টিফার প্রথম খসড়ায় ১৩টি ধারা ও ৯টি প্রস্তাবনা ছিল। ২০০৫ সালে সংশোধিত আকারে দ্বিতীয় দফায় টিফার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হলে তাতে ৭টি ধারা ও ১৯টি প্রস্তাবনা অন্তর্ভুক্ত করা হয়। একই সঙ্গে সংশোধিত টিফায় ঘুষ ও দুর্নীতির বিষয়ে একটি ধারা যুক্ত করা হয়। সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় টিকফার যে খসড়াটি অনুমোদন দেওয়া হয় সেখানে ১৬টি অনুচ্ছেদ সম্বলিত একটি প্রস্তাবনা ও ৭টি আর্টিকেল রয়েছে। চুক্তি অনুমোদনের পর বাণিজ্য সচিব মাহবুব আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, চুক্তিতে যাই থাকুক স্পর্শকাতর ইস্যুতে চুক্তিবদ্ধ দুটি দেশ নিজ নিজ দেশের আইন, আন্তর্জাতিক কনভেনশন এবং ডাবি্লওটিওর বিধান মেনে চলবে। এর ফলে এ চুক্তিতে দেশের স্বার্থবিরোধী আর কোনো কিছু রইল না বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ছিল এ চুক্তি : ডাবি্লওটিও বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইর উপদেষ্টা মঞ্জুর আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকফা চুক্তি কেবল অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেই নয়, রাজনৈতিকভাবেও প্রয়োজনীয় ছিল। সাম্প্রতিককালে ভারত, চীনের মতো অর্থনৈতিকভাবে অগ্রসরমান দেশগুলো যখন এ ধরনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করছে তখন আমাদের মতো ছোট দেশের পিছিয়ে থাকার কোনো কারণ থাকতে পারে না। বরং দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক দৃঢ় হলে রপ্তানি খাতে আমাদের যারা প্রতিযোগী তাদের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হতো। এ ছাড়া জিএসপি প্রত্যাহারের পর এটি নিয়ে আলোচনার জন্যও একটি জায়গা পাওয়া যেত।

অন্তত বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সম্পর্কিত সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করার সুযোগ সৃষ্টি হতো।'

যখন চুক্তিতে জাতীয় স্বার্থবিরোধী কিছু নেই, যখন এটি হলে রাজনৈতিকভাবে ও অর্থনৈতিকভাবে দেশের লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা ছিল, তখন কেন সই হলো না চুক্তিটি?- এ প্রশ্নের উত্তর জানা যায়নি সরকারের সংশ্লিষ্ট মহল থেকে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সবাই এর উত্তর দিতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.