রাজধানীতে একের পর এক রাজনৈতিক নেতা খুনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা। এ ছাড়া চরম আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা। গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, নির্বাচনের আগে অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কেন্দ্র করে আরও খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। এসব ঘটনায় নিয়োগ হবে পেশাদার কিলার। আর এ ধরনের আশঙ্কায় অনেকেই দেশ ছেড়ে বিদেশ পাড়ি দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে নিশ্চিত করেছেন তাদেরই ঘনিষ্ঠজনরা।
গোয়েন্দারা বলছেন, যুবলীগ নেতা মিল্কি হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজনরা গ্রেফতার হলে তাদের কাছ থেকে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে একমত প্রকাশ করে নাম প্রকাশ না করার শর্তে মতিঝিল এলাকার কয়েকজন শীর্ষ পর্যায়ের যুবলীগ নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, মিল্কি খুনের বিষয়ে দলের অনেক নেতাই জানতেন। তাদের স্পষ্ট সিগন্যাল না থাকলে কখনো তারেক এ কাজ করার সাহস পেত না। কিলার তারেককে খুন না করলে অনেক মহারথীর নামই ফাঁস হয়ে যেত।
গত মাসেই অন্তত আটজন রাজনৈতিক দলের নেতা খুন হন। তবে বিভিন্ন মিডিয়ায় ওঠে এসেছে পাঁচটি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের খবর।
১১ জুলাই দৈনিক বাংলার মোড়ে আমির হোসেন কাঞ্চন (৪২) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে এলোপাতাড়ি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। আমির পল্লবী থানা যুবলীগের সদস্য। ১৭ জুলাই মিরপুরে ১৩ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগ সদস্য জহিরুল ইসলাম বাবু (৩৫) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে বাসা থেকে ডেকে নিয়ে ছুরিকাঘাত করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। ২১ জুলাই রামপুরা এলাকায় চাঁদা না দেওয়ায় সন্ত্রাসীরা গুলি করে উজ্জ্বল (২৫) নামে ছাত্রলীগের এক কর্মীকে হত্যা করে। উজ্জ্বল মধ্যবাড্ডা মডেল কলেজের ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র ও ছাত্রলীগের ৯৮ নম্বর ওয়ার্ডের কর্মী। ২৯ জুলাই হাজারীবাগ এলাকায় জসিম উদ্দিন (৫৫) নামে এক বিএনপি নেতাকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। তবে এসব ঘটনায় পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি। সর্বশেষ সোমবার রাতে গুলশানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রিয়াজুল হক
খান ওরফে মিল্কিকে (৪২) গুলি করে হত্যা করা হয়। গোয়েন্দাদের ধারনা, রাজধানীর মতিঝিল ও এর আশোপাশের এলাকায় আওয়ামীলীগ-যুবলীগের অভ্যন্তরীন কোন্দলের কারণে আরো বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা খুন হতে পারে। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, দখলবাজি নিয়ে তাদের মধ্যে তিন বছর ধরে চরম বিরোধ চলছে। যুবলীগ নেতা রিয়াজুল হক খান মিল্কি হত্যাকাণ্ডের পর সরকারে গুরুত্বপূর্ণ সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ উঠেছে। বুধবার রাতে জাহিদ সিদ্দিকী তারেক ক্রস ফায়ারে নিহত হওয়ার পর এর আশংকা আরো বেড়ে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানীর মিরপুর, কাফরুল, পল্লবী, মানিকদী, ভাষানটেক এলাকায় ডিশ ব্যবসা, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি, সরকারী জমি দখলের নিয়ন্ত্রণ নিতে যুবলীগের আশিকুল ইসলাম আশিক গ্রুপ ছাত্রদলের মফিজুর রহমান মামুন গ্রুপ মুখোমুখি অবস্থানে রয়েছে। তাদের ক্যাডাররা প্রতিনিয়তই এলাকায় শো-ডাউন দিচ্ছে। আতংক সৃষ্টি করতে ঘটাচ্ছে গুলির ঘটনা। ওই এলাকায় যে কোন মূহুর্তে খুনের ঘটনা ঘটতে পারে। র্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লে. কর্ণেল জিয়াউল আহসান জানান, নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক পেশী শক্তি ব্যবহার হতে পারে। এসময় অনেক খুন কিংবা বড় ধরনের দূর্ঘটনা ঘটার আশংকা করছেন তারা। তবে সব ধরনের আশংকা মাথায় রেখেই র্যাব সদস্যরা তৎপর রয়েছে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।