আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুখে সংলাপ, অন্তরে বিভেদ

সংলাপ নিয়ে কৌশলের আশ্রয় নিয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। অন্তত গত কয়েক সপ্তাহের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করলে এই চিত্রই ফুটে উঠছে। উভয় দল নিজস্ব অবস্থানে অনড় থেকে কেবল মুখে সংলাপের কথা বলে চলছে। কিন্তু কোনো পক্ষই এ বিষয়ে আন্তরিকতার স্বাক্ষর রাখেনি।

দলের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত উভয় দলের কয়েকজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ নেতারা মুখে সংলাপের কথা বলে মূলত সাধারণ মানুষ ও কূটনৈতিক মহলকে জানাতে চান যে তাঁরা আলোচনার মাধ্যমে সংকট নিরসনে আগ্রহী।

কিন্তু তাঁদের কথাবার্তায়ই আবার বেরিয়ে পড়ছে, তাঁরা নিজস্ব রাজনৈতিক অবস্থানে ছাড় দিতে নারাজ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্বাচন-কালীন সর্বদলীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনিই থাকবেন সেই সরকারের প্রধান। তিনি আলোচনার জন্য বিরোধী দলের নেতা খালেদা জিয়াকে ফোনও করেছেন।

তবে দলীয় সূত্র জানায়, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনায় যাবে না দলটি।

তারা কেবল সর্বদলীয় সরকারের অংশীদারি, মন্ত্রণালয় বণ্টন ও নির্বাচন কমিশন নিয়ে আলোচনা করতে চায় বিএনপির সঙ্গে।

আর বিএনপি চায় নির্দলীয় সরকার। গত বৃহস্পতিবার বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এ বিষয়ে তিনি কোনো আপস করবেন না বলে জানিয়েছেন। আলোচনায় কোনো লাভ হবে না বলেও বলেছেন তিনি।

কিন্তু গত শুক্রবার বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দা রাজিয়া ফয়েজের জানাজা শেষে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বললেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন।

তবে ১০ নভেম্বরের পর চেষ্টা করেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে ফোনে পাননি তিনি। তাঁর অভিযোগ, সরকার সংলাপের ব্যাপারে আন্তরিক নয়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবের টেলিফোনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘মির্জা ফখরুল ইসলামের মোবাইল ফোন নম্বর আমার মোবাইলে সেভ (সংরক্ষণ) করা আছে। তাঁর নম্বর থেকে আমার মোবাইলে কোনো ফোন আসেনি। এমনকি শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি আমাকে ফোন করেছেন বলে যা জানিয়েছেন তাও ঠিক নয়।

আমি পরীক্ষা করে দেখেছি, তাঁর নম্বর থেকে আমার কাছে কোনো ফোন আসেনি। ’

সৈয়দ আশরাফ বলেন, ‘খালেদা জিয়া প্রেসক্লাবে বলেছেন, তিনি কোনো আলোচনা করবেন না। তাই মির্জা ফখরুল ইসলামের উচিত আগে তাঁর নেত্রীর সঙ্গে কথা বলে আলোচনা করার অনুমতি নেওয়া। তারপর আমাকে ফোন করা। ’

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক সহকারী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়ালে ঢাকা সফর উপলক্ষে হঠাৎ করেই শুক্রবার থেকে বিএনপি সংলাপে সমাধানের কথা বলছে।

গতকাল দুপুরে নিশা বিসওয়াল ঢাকায় এসে পৌঁছান। আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মনে করেন, বিএনপি মার্কিন এই কূটনৈতিককে দেখাতে চায় যে তারা সংলাপে সমাধান চাইলেও সরকার চায় না।

গতকাল প্রেসক্লাবে এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, তাঁরা নির্বাচনকালীন সরকার বিষয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপে বসতে রাজি আছেন। এত দিন সংলাপ নিয়ে কথা হলে বিএনপি বলত, তারা নির্দলীয় সরকার নিয়ে আলোচনা করতে চায়। কিন্তু গতকালের বক্তব্যে নির্দলীয় শব্দটি ছিল না।

আওয়ামী লীগের অনেকে মনে করছেন, মার্কিন কূটনীতিকের সফর উপলক্ষেই তিনি এ কৌশল নিয়েছেন।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কথা বলে জানা যায়, শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে কোনো আলোচনার প্রস্তাব দেওয়া হলে তারা সে আলোচনায় অংশ নেবে না। শেখ হাসিনা নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান থাকবেন তা ধরে নিয়েই আলোচনা হতে হবে। এটাই আওয়ামী লীগের অবস্থান।

আর বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিএনপিও আর সংলাপের পথে নেই।

খালেদা জিয়া নির্দলীয় সরকারের ব্যাপারে অনড় অবস্থান নিয়েছেন। তিনি কোনো আপস করবেন না বলে নেতাদের জানিয়ে দিয়েছেন।

 

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.