আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হাওয়া ভবনের রাজা এখন ফেরারি আসামি



হা্ওয়া ভবন দৃশ্যপটে আসে ২০০০ সালে। রাজধানীর বনানীর ওই ভবনের রাজার নাম পিনু। পিনু অবশ্য মানুষের কাছে ‘তারেক রহমান’ নামেই পরিচিত। তিনি সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে। এই ভবনেই তারেকের রাজনীতীতে আনুষ্ঠানিক হাতেখড়ি।

৮ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ২০০২ সালের ২২ জুন তিনি দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিবের পদ পান। তারপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তারেককে। সময় গড়ায় আর হাওয়া ভবন নিয়ে নানা জনশ্রুতি তৈরি হয়। মানুষের মুখে মুখে ফিরতে থাকে এমন সব মন্তব্য-‘দ্যাশ চালায় হাওয়া ভবন’, ‘হাওয়া ভবন এখন দ্বিতীয় গণভবন’, ‘নাটের গুরু তারেক’, ‘রাজনীতির কলকাঠি নড়ে হাওয়া ভবনের ইশারায়’ ইত্যাদি।

মানুষ বুঝে যায়, হাওয়া ভবনের একচ্ছত্র রাজা তারেক রহমান। কিন্তু এ রাজত্ব রেশি দিন টেকেনি। ২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় এলে রাজনীতির মোড় ঘুরে যায়। উদঘাটিত হয় হাওয়া ভবনের নানা রহস্য । ২০০৭ সালের ৭ মার্চ তত্বাবধায়ক সরকার তারেককে আটক করে।

তার বিরুদ্ধে করা হয় ডজন খানেক মামলা। ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় এসে তারেকের বিরুদ্ধে দায়ের করে আরো কিছু মামলা। বিভিন্ন থানা ও আদালতে ঝুলে আছে ১৭টি মামলা : তারেকের বিরুদ্ধে প্রথম মামলা করা হয় ২০০৭ সালের ৭ মার্চে। আইন-শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ এনে দ্রুত বিচার আইনে রাজধানীর কাফরুল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে এ মামলা করে। পরদিন ৮ মার্চ তারেকের বিরুদ্ধে আরো একটি মামলা হয়।

ব্যবসায়ী আমিন আহমেদ ভুইয়া বাদি হয়ে তারেকের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলা দায়ের করেন। এই মামলায় তারেক রহমানকে প্রথম রিমান্ডে নেওয়া হয়েছিল। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে তারেকের বিরুদ্ধে আরো ৭টি চাঁদাবাজির মামলা করা হয়। উচ্চ আদালতের আদেশে ঢাকার বিভিন্ন থানা ও আদালতে এ মামলাগুলোর বেশিরভাগই স্থগিত আছে। ২০০৯ সালে ন্যাটো স্টেট মামলায় বিদেশে অর্থ পাচার করার অভিযোগে দুদক বাদী হয়ে মামলা দায়ের করে।

২০০৭ সালে ৪ আগস্ট জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর আয়কর ফাঁকির অভিযোগে একটি মামলা করে। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বাদী হয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে কাফরুল থানায় মামলা করে। তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়েদা রহমানও এ মামলার আসামি। একই বছর বসুন্ধরা গ্রুপের কর্মকর্তা সাব্বির হত্যা মামলা ভিন্ন খাতে নিতে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আরেকটি মামলা করে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে। ২১ অগাস্ট গ্রেনেড হামলার মামলা : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলা এবং তাতে ২২ জন নিহত হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা করে পুলিশ।

এর একটি হত্যা মামলা ও আরেকটি বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলা। বর্তমান সরকারের আমলে এ দুটি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়। এ মামলার বিচারিক কার্য়ক্রমও প্রায় শেষের দিকে। তারেককে পলাতক দেখিয়েই ২১ আগস্ট-সংক্রান্ত দুটি মামলার কার্যক্রম চলছে। ২০১১ সালে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি ও মালামাল জব্দের পরোয়ানা জারি করা হয়।

একই বছরের ৮ আগস্ট আদালতে হাজির হতে তার বিরুদ্ধে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তিও দেওয়া হয়। এরপরও আদালতে হাজির হননি তিনি। নাইকো দুর্নীতি মামলা : নাইকো রিসোর্স কোম্পানিকে অবৈধভাবে কাজ পাইয়ে দেয়ার অভিযোগে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলায় প্রধান আসামি খালেদা জিয়া ও তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান। এ মামলার কার্যক্রমও হাইকোর্টের নির্দেশে বর্তমানে স্থগিত রয়েছ।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলা : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৪৩ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ এনে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এ মামলাটি করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ মামলায় খালেদা জিয়া, তারেক রহমানসহ ছয়জনকে আসামি করে ২০১০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে অভিযোগপত্র দেয় দুদক। বর্তমানে ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৩ এ অভিযোগ গঠন বিষয়ে মামলাটি শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে। সিঙ্গাপুরে অর্থ পাচার মামলা : ২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক মো. ইব্রহিম বাদী হয়ে ক্যান্টনমেন্ট থানায় মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০০২ এর আওতায় তারেক রহমান ও তার ঘনিষ্ট বন্ধু গিয়াস উদ্দিন আল মামুনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন। ২০০৯ সালের ৬ জুলাই দুদক তারেক ও মামুনকে আসামি করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

২০১১ সালে ৮ অগাস্ট তারেক ও মামুনের বিরুদ্ধে ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৩ এর বিচারক মো. মোতাহার হোসেন অভিযোগ গঠন করেন। আটকের পর দেড় বছর কারাভোগ করে তারেক উচ্চ আদালত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে জামিনে মুক্তি পান। মুক্তির পরপর উন্নত চিকিৎসার উদ্দেশে লন্ডনে যান। এরপর জামিনের মেয়াদ শেষ হলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিদেশে থাকার অনুমতি বাতিল করে বিজ্ঞপ্তি দেয়। তারপরও দেশে না ফেরায় ২৬ মে ঢাকা বিষেশ জজ আদালত-৩ ফৌযদারি কার্য়বিধির ৮৩ ধারায় তারেককে পলাতক দেখিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।

দুদকের প্রধান আইনজীবী মোশাররাফ হোসেন কাজল বলেন, তারেক এখন ফেরারি আসামি। তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি আছে। তবে এই অভিযোগ মানতে রাজি নন আসামি তারেকের আইনজীবী ও বিএনপির কেন্দ্রীয় গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া। তিনি এটিএন টাইমসকে বলেন, তারেক পলাতক নন, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনুমতি নিয়ে বিদেশে চিকিৎসায় আছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এটিএন টাইমসকে মুঠোফোনে বলেন, তারেক অসুস্থতার কথা বলে লন্ডনে রাজেনৈতিক কার্যক্রম চালাচ্ছে।

তাই তার বিদেশে থাকার অনুমতি বাতিল করা হয়েছে। এ নিয়ে বিএনপি আদালতে রিট পর্যন্ত করেছিল। আদালত আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন। এখন তারেক কেবল পলাতক আসামি। তারেক রহমান এখন ১৭টি মামলার অভিযোগ ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা মাথায় নিয়ে পরবাস যাপন করছেন।

তথ্যসূত্র: এটিএনটাইমস.কম


এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.