আরাফাত রহমান কোকোর রায়, শীর্ষ নেতাদের রিমান্ড ও সরকারের দমন-পীড়ন- সব মিলিয়ে অর্থপাচার মামলার রায় কী হতে পারে তা মোটামুটি সবাই ধারণা করে রেখেছিলেন। কিন্তু আদালত গতকাল দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে মুদ্রা পাচার মামলায় 'বেকসুর খালাস' দিয়েছেন। এ 'অপ্রত্যাশিত' রায়ে শুধু স্বস্তিই নয়, সেই সঙ্গে বিস্ময় প্রকাশ করা হয়েছে বিএনপির পক্ষে। প্রথমটায় আদালতে উপস্থিত বিএনপির আইনজীবী নেতারা যেন নিজের কানকেই বিশ্বাস করতে পারেননি। একজন আইনজীবী বলেন, যখন বিচারক ঘোষণা করলেন, তারেক রহমান বেকসুর খালাস, তখন মনে হলো ভুল শুনলাম কী! বিস্মিত চোখে আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে আছি। এই বিস্ময়ের মধ্যেও বিজয়ের 'ভি' চিহ্ন প্রদর্শন শুরু হয়ে যায়। তখন বিস্ময়ে বিহ্বল নেতা-কর্মীদের আনন্দধ্বনিতে মুখরিত আদালতের বহিরাঙ্গন। এদিকে চলমান রাজনৈতিক অচলাবস্থার মুহূর্তে এ রায় ঘোষণার আগে গত দুই দিন ধরে বিএনপির নেতারা বলে আসছিলেন, তারেক রহমানকে সাজানো মামলায় রায় দেওয়া হবে। সরকারের সিদ্ধান্তই রায়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করার ষড়যন্ত্র হচ্ছে। এ আশঙ্কা নিয়ে গতকাল সকালে রায় ঘোষণার আগ মুহূর্তে বিএনপিমনা আইনজীবীদের পাশাপাশি ছাত্রদল ও যুবদলের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী ঢাকার নিম্ন আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হন। রায় বিপক্ষে গেলে এর প্রতিবাদে ব্যাপক বিক্ষোভের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিলেন তারা। শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই নেতা-কর্মীরা একই পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। নয়াপল্টনে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আগাম সংবাদ সম্মেলন ডেকে রায়ের প্রতিক্রিয়া জানানোরও অপেক্ষায় ছিলেন। কি বলবেন সেই বক্তব্য তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অপ্রত্যাশিত রায়ে সব কিছু পাল্টে যায়। ক্ষোভের পরিবর্তে বিস্ময়, আর হতাশার বদলে আনন্দে উদ্বেলিত হতে থাকে বিএনপি। এর আগে বিচারক রায় প্রদানের সময় মামলার অপর আসামি তারেক রহমানের বন্ধু ব্যবসায়ী গিয়াসউদ্দিন আল মামুনকে সাত বছর সাজা ও ৪০ কোটি টাকা জরিমানার রায় ঘোষণা করলে আদালতে উপস্থিত আসামি পক্ষের আইনজীবীরা ধরেই নেন, তারেক রহমানের বিরুদ্ধেও বোধহয় একই রায় হতে যাচ্ছে। কিন্তু মুহূর্তেই পাল্টে গেল গোটা পরিবেশ। বিক্ষোভের পরিবর্তে আদালত চত্বরে শুরু হয় আনন্দ মিছিল। উল্লাসে ফেটে পড়েন আইনজীবী ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। মিষ্টি বিতরণের ধুম পড়ে যায় আদালত চত্বরে। সারা দেশে শুরু হয় মিষ্টিমুখ আর আনন্দ মিছিল। এদিকে রায় ঘোষণার আগের দিন শনিবার সরকারের পক্ষ থেকে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তার আগের দিন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহও বলেছিলেন, তারেক রহমানের মামলার রায়ে কী আছে বা থাকতে পারে, তা জানা আছে। কিন্তু রায় ঘোষণার পর আদালত প্রাঙ্গণে বিএনপির অনেক নেতাকে বলতে শোনা যায়, ঈদের আনন্দের মতো লাগছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, আমরা এই রায়ের জন্য আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করছি। এই রায়ে প্রমাণ হয়েছে, তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মহলবিশেষের অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যুগ্ম মহাসচিব রিজভী আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, তারেক রহমান যে কোনো ধরনের দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন না, এ রায়ে তা প্রমাণ হয়েছে। তবে কেউ কেউ আবার আন্তর্জাতিক মহলের বিশেষ চাপের মুখে সরকার এই রায় দিতে বাধ্য হয়েছে বলেও উল্লেখ করেন।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।