আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাজ্যের ডাক্তার এখন গুগল!

গুগল দেখে ওষুধ খাওয়ার প্রবণতা বেড়েই চলেছে। মাথা ব্যাথা বা জ্বর জ্বর ভাব? গুগলে গিয়ে সার্স দিয়ে বের করে নিচ্ছে সম্ভাব্য ওষুধ ও খাওয়ার প্রনালী। শুধু ছোট-খাটো অসুখেই নয়, অনেকে বড় কোন রোগের জন্যও ডাক্তারের কাছে না ছুটে মানুষ দ্বারস্থ হচ্ছে গুগলের।   সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গসহ ভারতের কয়েকটি প্রদেশের তরুণদের মধ্যে এ প্রবণতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে।

এ ঘটণায় বেশ চিন্তিত রাজ্যের সব বিশেষজ্ঞ ডাক্তাররা।

তাদের মতে এই অভ্যাসের ফলে প্রাণসংশয় হওয়াও বিচিত্র নয়। অনেকেই গাঁটে ব্যথা হলে ব্যথার ওষুধ খেয়ে তা তড়িঘড়ি কমানোর চেষ্টা করে। হেপাটাইটিস বি হলেও প্রথম দিকে গাঁটে ব্যথা হয়। সেক্ষেত্রে গুগল থেকে পেইনকিলারের নাম দেখে তা খেলে জীবনহানিও ঘটতে পারে।

তবে গুগল নির্ভর তরুণদের কথা- ওসুখ? গুগল হ্যায় না! রোগের ধরন বা নাম আর কী ওষুধ খাওয়া যেতে পারে, তার জন্য গুগলে সার্চ দিলেই হল! কোনও ওষুধের নাম জানতে পেরে তার কম্পোজিশন কী, কখন খাওয়া যেতে পারে, কোন কোন রোগ থাকলে খাওয়া উচিত নয়, এই সব প্রশ্নের উত্তরও দিয়ে দিচ্ছে গুগল।

তো ডাক্তারকে ফোন করার দরকারটা কী? আর এসব ব্যাপারে গুগল নিজেকে আপডেটও করে চলেছে প্রতিনিয়ত!

এ ব্যাপারে শহরের একাধিক চিকিৎসক জানান, তরুণ প্রজন্মের মধ্যেই ওষুধ সম্পর্কে বেশি সচেতনতা দেখে গেছে। গুগল দেখেই তারা এসব জেনেছেন বলে জানিয়েছেন তরুণরা। আবার হোস্টেলে বেড়ে ওঠা ছেলেমেয়েদের মধ্যে গুগল দেখে ওষুধ খাওয়া বা অন্যকে ওষুধ দেওয়ার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। প্রথমত বাড়ির বাইরে থাকায় অল্পতেই তাঁরা ব্যাকুল হয়ে পড়েন। সবসময় তাঁরা বুঝেও উঠতে পারেন না, কোন ডাক্তারকে দেখাবেন।

ফলে গুগল সার্চই ভরসা হয়ে দাঁড়ায়। বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে পরামর্শ করে ওই সব ওষুধ নিয়মিত খেতে শুরু করেন।

সদ্য ডাক্তারি পাশ করে প্রাইভেট প্র্যাক্টিস শুরু করা ডাক্তার জ্যোতির্ময় ঘাঁটা বিষ্ময় প্রকাশ করে বলেন, একদল রোগী আসেন, যাঁরা ওষুধ সম্পর্কে মোটামুটি সবই জানেন। কোন ওষুধ কেন দেওয়া হল, কেন এই ওষুধের পরিবর্তে ওই ওষুধ দেওয়া হল না, তা নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকেন।

আরও এক ধরনের প্রবণতা রয়েছে।

তা হল- ওষুধের নাম জেনে তার জেনেরিক নাম গুগলে সার্চ করে দেখে নেওয়া। তার পর কী কী নামের ওষুধ পাওয়া যায় জেনে নিয়ে একের পর এক খেয়ে ভাল-খারাপ যাচাই করা। কোনও রোগের নাম ডাক্তারের কাছ থেকে শুনে এসেও অনেকে গুগলে সার্চ মেরে দেখেন। তাতে রোগী বা তাঁর পরিবারের মনে অকারণ ভীতির সঞ্চার হয়। এতে মানসিক সমস্যা পর্যন্ত দেখা দেয়।

স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ সুরঞ্জন চক্রবর্তীর মতে, না-জেনে ওষুধ খাওয়ায় সবচেয়ে বেশি জটিলতার শিকার হন গর্ভবতী মহিলারা। একটু-আধটু ব্যথা হলেই নানা রকম অ্যানালজেসিক ট্যাবলেট বা সামান্য গ্যাস-অম্বলে অ্যান্টাসিড খাওয়ার প্রবণতা হয়। তাতে জটিলতা বাড়ে। বেশি অ্যান্টাসিড খেলে মেয়েদের শরীরে প্রোল্যাক্টিন হরমোনের ক্ষরণ বেড়ে যায়। যার থেকে গর্ভধারণে সমস্যা বা গর্ভবতী না-হয়েও স্তনবৃন্ত থেকে দুগ্ধক্ষরণের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে।

অস্থিরোগ বিশেষজ্ঞ সমর গুন্ত বলেন, হাড়ের ব্যথা শুরু হলে এমনিতে আমাদের দেশের বেশিরভাগ লোকই চিকিত্সকের কাছে অনেক পরে আসেন। তার আগে ইন্টারনেট দেখে একাধিক পেইনকিলার জাতীয় ওষুধ খান অথবা হাড়ের ব্যথা কমার বহু প্রচলিত ওষুধ কিনে খেতে শুরু করেন। সে ওষুধের অনেক সাইড এফেক্ট রয়েছে।

চিকিত্সক সুব্রত মৈত্র অবশ্য কিছুটা ভিন্ন মত পোষণ করে বলেন, গুগল দেখে বা পাড়ার দোকান থেকে ছোটখাট ওষুধ খাওয়া চলতেই পারে। তবে কোনও ক্রনিক বা দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা হলে চিকিত্সকের কাছে যাওয়া উচিত।

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.