পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি হবে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা। তবে শিক্ষানবিশ শ্রমিকেরা পাবেন চার হাজার ১৮০ টাকা। এ ছাড়া শ্রমিক ও কর্মচারীরা মূল মজুরির ৫ শতাংশ হারে বার্ষিক প্রণোদনা পাবেন।
নিম্নতম মজুরি বোর্ড গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পোশাকশ্রমিকদের জন্য নতুন মজুরিকাঠামোর এই সুপারিশ শ্রম মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। এতে সোয়েটার কারখানার শ্রমিকদেরও অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে।
নিম্নতম মজুরি বোর্ডের দশম সভায় এই সুপারিশ চূড়ান্ত হলো। রাজধানীর তোপখানা রোডে মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হওয়া দুই ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক শেষে চেয়ারম্যান এ কে রায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সুপারিশের বিষয়ে বিস্তারিত জানান।
বোর্ডের সুপারিশে খসড়া প্রস্তাবের মতোই নিম্নতম মোট মজুরি (গ্রেড-৭) ঠিক রাখা হলেও মূল মজুরি ২০০ ও চিকিৎসা ভাতা ৭০ টাকা হ্রাস এবং খাদ্য ভাতা ৩৫০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। ফলে পাঁচ হাজার ৩০০ টাকার মধ্যে মূল মজুরি হচ্ছে তিন হাজার টাকা, বাড়িভাড়া এক হাজার ২০০, চিকিৎসা ২০০, যাতায়াত ২০০ ও খাদ্য ভাতা ৬৫০ টাকা।
মজুরি বোর্ডের এই সুপারিশ শ্রম মন্ত্রণালয় যাচাইবাছাই করে গেজেট আকারে প্রকাশ করবে।
তারপরই এটি কার্যকর হবে। অবশ্য আগামী ১ ডিসেম্বর থেকে নতুন মজুরি কার্যকর হবে বলে ১৪ নভেম্বর জানিয়েছিলেন সাবেক শ্রমমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজু। সেটি হলে জানুয়ারি মাস থেকেই পোশাকশ্রমিকেরা নতুন মজুরি পাবেন।
প্রণোদনার বিষয়ে নিরপেক্ষ সদস্য মো. কামাল উদ্দীন বলেন, ৫ শতাংশ বার্ষিক প্রণোদনা কার্যকর হলে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পোশাকশ্রমিকদের নিম্নতম মজুরি হবে পাঁচ হাজার ৫১০ টাকা। এর মধ্যে মূল মজুরি হবে তিন হাজার ১৫০ টাকা।
বাড়িভাড়া হবে এক হাজার ২৬০ টাকা। এটি ইতিবাচক।
সুপারিশ অনুযায়ী, মজুরি বোর্ড ৭ নম্বর গ্রেডে শ্রমিকদের মোট মজুরি পাঁচ হাজার ৩০০, ৬ নম্বর গ্রেডে পাঁচ হাজার ৬৭৮, ৫ নম্বর গ্রেডে ছয় হাজার ৪২, ৪ নম্বর গ্রেডে ছয় হাজার ৪২০, ৩ নম্বর গ্রেডে ছয় হাজার ৮০৫, ২ নম্বর গ্রেডে ১০ হাজার ৯০০ এবং ১ নম্বর গ্রেডে ১৩ হাজার টাকা করার সুপারিশ করেছে। সর্বনিম্ন বা ৭ নম্বর গ্রেডে ৭৬.৭৬ শতাংশ মজুরি বাড়লেও অন্য গ্রেডগুলোতে বেড়েছে ৩৯ থেকে ৭১ শতাংশ। সর্বশেষ ২০১০ সালে শ্রমিকদের সর্বনিম্ন মজুরি নির্ধারিত হয়েছিল তিন হাজার টাকা।
অন্যদিকে শিক্ষানবিশ একজন শ্রমিক (একেবারেই নতুন) সব মিলিয়ে মাসে চার হাজার ১৮০ টাকা মজুরি পাবেন। এর মধ্যে মূল মজুরি দুই হাজার ২০০, বাড়িভাড়া ৮৮০, চিকিৎসা ভাতা ২৫০, যাতায়াত ভাতা ২০০ ও খাদ্য ভাতা ৬৫০ টাকা। এই শ্রমিকদের শিক্ষানবিশকাল হবে তিন মাস। তবে কাজের মানের উন্নতি না হলে মালিক সেটি তিন মাস পর্যন্ত বাড়াতে পারবেন। এরপর ওই শ্রমিক সংশ্লিষ্ট গ্রেডে স্থায়ী হিসেবে নিয়োগ পাবেন।
বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রথম আলোকে এ বিষয়ে বলেন, ২০১০ সাল থেকে ৭ নম্বর গ্রেডের বাইরে শিক্ষানবিশ বলে অনানুষ্ঠানিকভাবে নতুন একটি গ্রেড সৃষ্টি করা হয়েছে। এবার সেটিকে পূর্ণাঙ্গ স্কেল হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফলে পোশাকশিল্পে প্রারম্ভিক মজুরি আসলে চার হাজার ১৮০ টাকা। এটি বাদ দেওয়া উচিত।
মজুরি বোর্ডের সুপারিশে বলা হয়েছে, কোনো শ্রমিক যদি সরকারঘোষিত মজুরিকাঠামোর চেয়ে বেশি মজুরি এখন পেয়ে থাকেন তবে তা হ্রাস করতে পারবেন না মালিকেরা।
এ ছাড়া কোনো মালিক যদি নতুন কাঠামোর চেয়ে বেশি মজুরি দিতে চান সেটি তিনি পারবেন। অন্যদিকে সোয়েটার কারখানার শ্রমিকদের নতুন কাঠামো অনুযায়ী মজুরি সংশোধন করতে হবে, যেন তাঁরা বিভিন্ন শ্রেণীভুক্ত শ্রমিকদের জন্য নির্ধারিত মজুরি চেয়ে কম না পান।
মজুরি বোর্ডে মালিকপক্ষের সদস্য ও বিজিএমইএর পরিচালক আরশাদ জামাল বলেন, ‘সক্ষমতা না থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, শ্রমিক অসন্তোষের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা শিল্পকে বাঁচানোর জন্য এই মজুরি প্রস্তাব মেনে নিয়েছি। আর এ ছাড়া শতভাগ বাস্তবায়ন হচ্ছে কি না, সেটি বিজিএমইএ তদারকি করবে। ’
এদিকে বোর্ডের সুপারিশ করা পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা মজুরিতে সন্তোষ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী পরিষদ, জাগো বাংলাদেশ গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশনসহ সাতটি শ্রমিক সংগঠন।
অন্যদিকে গার্মেন্ট শ্রমিক শিল্প রক্ষা জাতীয় মঞ্চ ন্যায্য মজুরির দাবিতে গতকাল সভা চলাকালীন সময় মজুরি বোর্ডের কার্যালয়ের সামনের সড়কে বিক্ষোভ করে।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।