ব্রিটিশ শাসন থেকে মুক্ত হওয়া রাষ্ট্রগুলোকে নিয়ে গড়ে উঠেছিল কমনওয়েলথ। আজ পর্যন্ত বিশ্বের বা সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যকার কোনো বিষয় নিয়ে সংগঠনটিকে কখনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি। ‘দ্য ইকোনমিস্ট’ সাময়িকীর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ব্রিটেনের রানিকে আজীবন প্রধান করে গঠিত সংগঠনটি কাগজে-কলমে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিলেও প্রয়োজনের সময় চিরকালই চুপ থেকেছে।
অনেকে মনে করেন, কমনওয়েলথ যে একটি সংগঠন হিসেবে এখনো টিকে আছে, সেটিই এর সবচেয়ে বড় সাফল্য। অনেকে এটিকে সরকারপ্রধানদের ‘পিকনিক পার্টি’ বলে মনে করেন।
প্রতি দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত বৈঠকে সাবেক ঔপনিবেশিক প্রভু ব্রিটেনের রানির পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তোলাকেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন রাষ্ট্রনেতারা।
লন্ডন ঘোষণার মাধ্যমে ১৯৪৯ সালে ৫৩ সদস্যের কমনওয়েলথের যাত্রা শুরু। প্রথম দিকে বিশ্বের এক-তৃতীয়াংশ জনসংখ্যাসমৃদ্ধ এ সংগঠনটির মূল লক্ষ্য ছিল সদস্য রাষ্ট্রগুলোর সার্বিক উন্নয়নে কাজ করা।
তা ছাড়া সদস্য দেশগুলোর মধ্যে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও আইনের শাসনের চর্চা বাড়ানো এবং দেশগুলোর মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিসর বাড়ানোও ছিল সংগঠনটির গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
অথচ সংগঠনটি বর্তমানে সদস্য রাষ্ট্রগুলোর জন্য চার বছরে একবার কমনওয়েলথ গেমসের আয়োজন, বার্ষিক সাহিত্য পুরস্কার প্রদান ও শিক্ষার্থীদের জন্য অল্পস্বল্প শিক্ষাবৃত্তি দেওয়া ছাড়া আর কোনো কাজে খুব সক্রিয় নয়।
সংগঠনটির বার্ষিক বাজেটের পরিমাণও নিতান্তই ছোট, মাত্র ২ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
‘দ্য ইকোনমিস্ট’ বলছে, কমনওয়েলথের নিষ্ক্রিয়তার প্রধান কারণ হলো এর সদস্য দেশগুলো সংগঠনটির তাত্পর্য বুঝতে ব্যর্থ হয়েছে। দীর্ঘদিন উপনিবেশ থাকার অভিজ্ঞতা, একই রকমের আইনকানুন ও ভাষার চল থাকায় এ সংগঠনভুক্ত দেশগুলোর বাণিজ্য প্রসারিত হতে পারে। একটি হিসাবে দেখা গেছে, কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর আন্তবাণিজ্যের খরচ অন্তত ২০ শতাংশ কম।
সংগঠনটি গঠনের সময়ই কথা ছিল, এটি গণতন্ত্র ও মানবাধিকার প্রসারে কাজ করবে।
১৯৯৫ সালে কেন সারো-উইবাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার পর সংগঠনটি নাইজেরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করে এবং ১৯৯৯ সালে সেনা অভ্যুত্থানের পর পাকিস্তান কমনওয়েলথ ত্যাগ করে। কিন্তু আরও বহু দেশে অসংখ্য সামরিক অভ্যুত্থান, সরকারবিরোধীদের নৃশংসভাবে দমন এবং মানবাধিকারের পরিপন্থী আইন প্রণয়ন করা হলেও কমনওয়েলথকে টুঁ-শব্দটি করতে দেখা যায়নি।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে সংগঠনটি প্রশাসনিক দুর্বলতার কারণে এসব অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এর বড় উদাহরণ হলো শ্রীলঙ্কা সরকারের ৪০ হাজারের বেশি তামিলকে হত্যা। মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক দাতাগোষ্ঠী থেকে চাপ থাকা সত্ত্বেও কমনওয়েলথ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দা রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
কমনওয়েলথের ব্যর্থতার দায় অনেকাংশেই এর নেতৃত্বে থাকা যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশগুলোর ওপর বর্তায়। এ দেশগুলো কমনওয়েলথের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় গতি আনতে পারছে না। সমালোচকেরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সংগঠনটির অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাবে। তাই দাবি উঠছে সংগঠনটির প্রশাসনিক ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার।
কার্যকর পরিবর্তনের জন্য দরকার কমনওয়েলথ সচিবালয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ভারতের মতো বড় দেশগুলোর আরও সক্রিয় অংশগ্রহণ।
এ ক্ষেত্রে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, নাইজেরিয়া, বাংলাদেশ ও বার্বাডোসের মতো উন্নয়নশীল রাষ্ট্রগুলোরও অবদান রাখার সুযোগ রয়েছে। সংস্থাটিকে আরও গণতান্ত্রিক ও আমলাতন্ত্রমুক্ত করার দাবিও খুব সংগত।
তাই সামনের দিনে সদস্য দেশগুলোর মধ্যেকার সম্পর্কোন্নয়ন ও বাণিজ্য বৃদ্ধিই এ ‘অদ্ভুত’ সংগঠনটিকে টিকিয়ে রাখতে পারে।
।অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।