আমি একজন বাংলাদেশী মুসলিম বাঙ্গালী।
আলোচনায় বসতে চাচ্ছে সরকার , প্রধানমন্ত্রী তাগিদা দিয়েছেন ... আলোচনা হতে পারে যত্র তত্র; বিরোধী দলের ইচ্ছায়... তাহলে নিশ্চয়ই অবস্থার উত্তরণ হচ্ছে ? আসলেই কি...
এটা নিয়েই একটা ক্ষুদ্র বিশ্লেষণ এবং কিছু থিওরিঃ
১, সরকার প্রকৃত অর্থে সংকট নিরসন চাচ্ছে, তবে... সরাসরি তত্ত্বাবধায়ক না হয়ে সেটা বিকল্প উপায়ে। সম্ভবত সেই উপায়ের নাম অন্তর্বতীকালীন সরকারে বিরোধী জোটের সক্রিয় অংশগ্রহণের সুযোগ তৈরি করে দিয়ে বিশ্বস্ততা অর্জন করা;কিছুটা হলেও।
২, সরকারের যেহেতু হাতে এখন বেশি সময় নেই, মাস ছয়েক আছে, তাই যতটুকু সম্ভব আসন্ন সমস্যা নিয়ন্ত্রণে এবং অতীতের সমস্যাগুলোকে আড়াল করে দিতে নতুন একটা ইস্যু তৈরি করে রাখা, যাতে কালক্ষেপণের সুযোগ হয়।
৩, নিতান্তই ভেলকিবাজি করা।
এবার ছোট্ট করে ব্যাখ্যায় যাই।
প্রথম তত্ত্বের কথা যদি ধরে নেই, তার মানে সরকার সংকট নিরসনে উদ্যোগী হতে চাচ্ছে প্রশংসনীয় উদ্যোগ ! তবে সেটা কি আদৌ সম্ভব? অর্থাৎ বলতে চাচ্ছি যে তত্বাবধায়ক না দিলে বিএনপি মেনে নেবে অন্য কিছু? এটাই সরকারের কাছে অনেকটা "লিটমাস টেস্ট" এর মতই মনে হচ্ছে। কেননা বিএনপির নেতৃত্বটা সাধারণত বলা হয়ে থাকে উদারপন্থী। কিছু নেতা আছেন এতোটাই উদার যে তারা প্রয়োজনে নিজেদেরকেও উজাড় করে দিতে পারেন, খুব বেশি দিন আগের নয়, ১/১১ এর পরের সময়ের সংস্কারপন্থীদের কথা মনে করলেই চলবে। সেই সাথে যারা মূল দলে ছিলেন তারাও কিন্তু কম যান না ! দলের সেই বিভেদের সময় তারাও নিজেদের মধ্যেই বিভেদ করেছেন (হান্নান শাহ্ আর খন্দকার দেলোয়ার হোসেনের কথা বলছি); আরও স্পষ্ট হবে যদি ২০০৬ এর শেষ পর্যায়ে এসে একসাথে বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যের বিএনপি থেকে বের হওয়ার মনোভাব এবং কয়েকজনের বের হয়ে আসা ! (প্রসঙ্গত, আশা করি জানেন দলের ঐ ভাঙ্গনের জন্যে কিভাবে কাজ করেছে আওয়ামীলীগের একটা গোষ্ঠী !! ) তাই বলছিলাম, সরকার চাইছে যে এরকম একটা অংশকে যদি তত্বাবধায়ক সরকারের বদলে বিকল্প উপায়ের টোপ গেলানো যায় তাহলে 'দূর্বল' বিএনপির ঘরের মধ্যেও আগুনের ছিটে ছুটাছুটি শুরু করবে ! ক্ষতি কি???
দ্বিতীয় তত্ত্বের কথায় আসি, গত চার বছরে ইস্যুর অভাব ছিলনা, বলতে গেলে সেগুলো নিয়ে আরেকটা লেখা লিখতে বসতে হবে, এরকম অসংখ্য ব্যর্থতার মালায় গাঁথা ইস্যু আড়ালের জন্য এর আগেও নতুন কাউন্টার ইস্যু এসেছে, এটাও সেরকম কিছু।
এর সাথে যোগ হয়েছে হেফাজতে ইসলামের অকল্পনীয় আন্দোলন কিংবা বিস্ফোরণ ! দাবি না মানলে পতনের এক দফার হুমকিও দিয়ে রেখেছেন তারা। খুব ক্রিটিকাল একটা মৌসুম, এমন মৌসুমে শুধু তত্বাবধায়কের দাবিতে অটল থাকা বিএনপি (চার বছরে রাজপথের আন্দোলনে বিএনপির অবস্থান নিতান্ত গৌণ ছিল অন্যান্য ইস্যুতে) এর সাথে সমঝোতার আভাসের ইস্যু পরিস্থিতি ঘুরিয়ে দিবে এটা চিন্তা করা স্বাভাবিক। হাতে যেই অল্প সময় আছে সরকারের আলোচনার ব্যানার ঝুলিয়ে চা পানের মাধ্যমে আর আলোচনাটাকে চায়ের পিরিচের সাথে পাচকখানায় পাঠিয়ে সময় ক্ষেপণ করে যদি শেষ ২-৩ মাসে নেয়া যায় গদি হয়তো বর্তমান সরকারের দখলেই রাখা যাবে ! মোদ্দা কথা, সরকার চাচ্ছে না হেফাজতের সাথে বিএনপির ও এক দফা আন্দোলন এতোটা তরান্বিত হোক।
“৩য় তত্ত্বের ব্যাপারে আলাদা করার দরকার কি? ওটা তো ২য়টার ই প্রতিশব্দ !”
যদি এটা ভেবে থাকেন তাহলে নিছক বোকার স্বর্গে বাস করছি আমরা ! বাংলাদেশের রাজনীতির ইতিহাস আওয়ামী লীগ সম্পর্কে দুইটা কথা বলে,
১, তারা যে কোন সময় বর্ণ বদলাতে পারে (৮৬ এর এরশাদের নির্বাচন, ৯৬ এ জামায়াত প্রীতি, যেই বামেরা আওয়ামীলীগকে রাস্তা ঘাটে ঘা দিয়েছে তারাই এখন আওয়ামী হর্তা কর্তা ইত্যাদি)
২, আওয়ামীলীগ কখনোই অন্য দলের দাবি বিন্দুমাত্র মেনে নেয়না ( ৯৬ এ অন্তর্বতীকালীন সরকারের রূপরেখা নিয়ে স্যার নিনিয়ান এর সাথে আলোচনায় বিন্দুমাত্র ছাড় না দেয়া এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ)
সুতরাং ইতিহাসকে সাক্ষী মানলে জনতার আদালতে ভাববার অবকাশ ই নেই যে আওয়ামী লীগ তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে। আর এজন্যই "ভেলকিবাজি" শব্দের আগমন ! জানেন তো, তত্বাবধায়ক বাতিলের আগে সংসদীয় কমিটির আহ্বানে সাড়া দিয়ে যেসমস্ত সম্পাদক এবং সাংবাদিক গিয়েছিলেন তারা প্রায় সকলেই এর পক্ষে মত দিয়েছিলেন, এমন কি আদালতে অ্যামিকাস কিউরির একজন ব্যতীত সকলেই এর পক্ষে মত দিয়েছিলেন।
তারপর গত ২ বছরে এ নিয়ে বহুত জনমত হয়েছে। আপনার কি ধারণা গোয়েন্দা সংস্থার বরাতে এসব খবর প্রধানমন্ত্রীর দফতের কড়িকাঠ পেরোয় না? অবশ্যই পেরোয়... তাহলে...
শেষমেষ কিছু প্রশ্নের মূলো ঝুলিয়ে যেতে চাইঃ
১, আলোচনার কথা বারবার বলা হচ্ছে বিভিন্ন মিটিং বৈঠকে,সম্ভাব্য ঘোষিত তারিখ নেই কেন?
২, আলোচনার তারিখ/সময় না বলে বারবার “স্থান” এর উপর জোর দেয়া হচ্ছে কেন?
৩, ধরে নিলাম, মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠক হবে। আওয়ামীলীগের সৈয়দ আশরাফ আর বিএনপির কে থাকবে?
৪, বিএনপি বলছে আলোচনা হতে হবে “তত্বাবধায়ক নিয়ে”, আওয়ামীলীগ কেন বলছে “যেকোন কিছু নিয়ে” ?
৫, আমার ঘরের সব সম্পত্তি আপনি মগের মুল্লুক ভেবে আমাকে থাপ্পড় দিয়ে নিয়ে গেলেন, এরপর আপনি বললেন, “আসো ভাই, আমরা আলোচনা করি”।
প্রশ্ন হলো ক্যামনে কি?
উত্তর গুলো খোঁজার আগে একটা শব্দ মাথায় রাখবেন, শব্দটা ৫ অক্ষরের; শুরুতে ‘ভ’ এবং শেষে ‘জ’ ! দেখবেন ঠিক ঠিক উত্তর পেয়ে যাবেন ...
যাই হোক প্রধানমন্ত্রীর আজকের বক্তব্য দেখে একটা গল্প মনে পড়ে গেলো, স্কুলে থাকতে পড়েছিলাম সেটা। ঐ যে...
দুই ইদুর মিলে একটা কেক যোগাড় করেছে, তাও আবার অনেক কষ্টে।
কিন্তু তারা সেটা কিভাবে নিজেদের মধ্যে সমান ভাগ করে নেবে সেটা বুঝে উঠতে পারছেনা কোনভাবেই। এমন সময় সে পথ দিয়েই যাচ্ছিল একটি বানর। বানরকে দেখে তারা রীতিমত ধরেই বসলো এবং বলল যে এটা ভাগ-বাটোয়ারা করে দিতে। বানরটাও রাজি হল। সে প্রথমে দু ভাগ করলো, সাথেই সাথেও বলে উঠলো,"আহা এ ভাগটা দেখি অপরটার তুলনায় বড় হয়ে গেছে, সমান করে দিচ্ছি।
" বলেই সে মুখ দিয়ে কামড়িয়ে সে ভাগ থেকে একটু খেল। এবার অপর ভাগ বড় হয়ে গেছে দেখে সেখান থেকেও কামড় বসিয়ে দিয়ে সমান করার ফন্দি ফিকির এর নামে নিজের ভূড়িভোজ করলো। এভাবে সে সমান করার নামে খেয়েই যাচ্ছে কেক। অসহায় হয়ে তাকিয়ে থাকা ইদুরদ্বয় হঠাৎ সম্বিত হলো। যখন কেক প্রায় শেষ হয়ে যাচ্ছে এমন সময় একটা ইদুর বলে উঠলো," থাক থাক, তোমার আর ভাগ করা লাগবেনা, বাকিটুকু আমরাই করে নেবো।
" "কি বলো এটা, তোমাদের জন্য এতক্ষন কষ্ট করলাম না? এইটুকুন তো তাহলে আমার ই" বলে যেই অল্প অংশ ছিল তাও খেয়ে হেলতে দুলতে বানরটি চলে গেলো ......... !!!!
সুতরাং সময় থাকতেই সাধু সাবধান !
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।