শ্বাসকষ্ট এমন এক উপসর্গ যাকে আমরা সাধারণভাবে হাঁপানি বলে আখ্যায়িত করে থাকি। শ্বাসকষ্ট নানাবিধ কারণে হতে পারে। তবে কারণ ভেদে শ্বাসকষ্টের ধরন ও তীব্রতার ভিন্নতা হয়ে থাকে। যেমন ছোট শিশুদের সর্দি জ্বরের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দিতে পারে, যাকে চিকিৎসকরা বেশ কয়টি ভাগে বিবেচনা করে থাকে। অ্যালার্জিজনিত ও নিউমোনিয়াজনিত শ্বাসকষ্ট, হাঁপানি/ অ্যাজমাজনিত শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগজনিত শ্বাসকষ্ট, কিডনি ফেইলুরজনিত শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি।
বয়স্কদের শ্বাসকষ্টের কারণ : বিশ্লেষণ করলে এভাবে বলা যায়, যখন কোনো বয়স্ক ব্যক্তি শ্বাসকষ্টে আক্রান্ত হন তখন আমাদের সমাজে সাধারণ মানুষ প্রথমেই ভেবে থাকেন এটা নিশ্চয়ই হাঁপানি জাতীয় অসুখ, বিশেষ করে যখন একই ধরনের শ্বাসকষ্ট প্রায়ই দেখা দিয়ে থাকে এবং যখন শ্বাসকষ্ট দীর্ঘস্থায়ী হয়। এসব রোগী সাধারণত অ্যাজমার চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেশিদিন থাকতে পারেন না। অনেক চিকিৎসকই এসব রোগীকে ইনহেলার জাতীয় মেডিসিন দিয়ে থাকেন। এখানে বলে রাখা ভালো, বাজারে পাওয়া যায় এমন অধিকাংশ ইনহেলারই শ্বাসকষ্টের উপসর্গ প্রশমন করার মতো মেডিসিন দ্বারা প্রস্তুত, তার মানে যে কোনো কারণেই শ্বাসকষ্ট হোক না কেন ইনহেলার ব্যবহারে কিছুটা কষ্ট লাঘব হবে। বয়স্কদের শ্বাসকষ্টের কারণ অধিকাংশ সময়ে কিন্তু অ্যাজমা বা হাঁপানিতে নয়, বিশেষ করে যদি কারও ৩০-৪০ বছর বয়সের পর দীর্ঘস্থায়ী ঘন ঘন শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়, তবে তার ৯০ শতাংশ কারণ হিসেবে হৃদরোগকে দ্বায়ী করা হয়।
হৃদরোগজনিত শ্বাসকষ্ট বোঝার উপায় : মধ্য বয়সের পর প্রথম শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়া। শ্বাসকষ্টের সঙ্গে হাত-পা ফুলে যাওয়া বা শরীরে পানি আসা। * ডায়াবেটিস রোগীদের শ্বাসকষ্ট হওয়া। * পরিশ্রমের সময় শ্বাসকষ্ট হওয়া এবং বিশ্রাম গ্রহণে শ্বাসকষ্ট কমে যাওয়া। * রাতে বিছানায় শুতে গেলে শ্বাসকষ্ট ও কাশির উদ্রেক হওয়া। * মধ্যরাতে শ্বাসকষ্টের জন্য ঘুম ভেঙে যাওয়া। * হার্ট অ্যাটাকের পরবর্তী সময়ে শ্বাসকষ্ট হওয়া। * দীর্ঘদিন থেকে উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভুগছেন এমন ব্যক্তিদের শ্বাসকষ্ট হওয়া। * বাইপাস অপারেশনের পর শ্বাসকষ্ট হওয়া। * হার্টে রিং পরার পরবর্তীতে শ্বাসকষ্ট হওয়া। * হার্টের ভাল্বের সমস্যা আছে এমন রোগীদের শ্বাসকষ্ট হওয়া। * শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বুকে ব্যথা হওয়া। * দীর্ঘদিন যে কোনোরূপ হার্টের অসুস্থতায় ভুগছেন এমন রোগীদের শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়া। * ইনহেলার ব্যবহার করে এবং অ্যাজমার চিকিৎসা গ্রহণের পরও শ্বাসকষ্ট আরোগ্য না হওয়া। * শ্বাসকষ্ট দীর্ঘস্থায়ীভাবে বিদ্যমান থাকা। * বুক ধড়ফড়ের সঙ্গে শ্বাসকষ্ট হওয়া। আপনার যদি এসব লক্ষণ পরিলক্ষিত হয়, তবে মনে রাখতে হবে যে, আপনার হৃদরোগ অনেক জটিল আকার ধারণ করেছে এবং এর জন্য আপনাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সঠিক চিকিৎসা গ্রহণ করা বাঞ্চনীয়। যদি কখনো পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয় এবং শ্বাসকষ্টের সঙ্গে বুকের ভেতর চাপ বা ব্যথা অনুভূত হয়, শরীর অত্যধিক ঘেমে যায়, তবে বুঝতে হবে যে এটা হার্ট অ্যাটাক বা হার্ট স্ট্রোকের লক্ষণ। এ ক্ষেত্রে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালে যেতে হবে, তা না হলে জীবন বিপন্ন হতে পারে। শ্বাসকষ্ট হৃদরোগের একটি মারাত্দক লক্ষণ, কাজেই সব ধরনের শ্বাসকষ্টকে অ্যাজমা বা হাঁপানি মনে করে টোটকা চিকিৎসা আপনার জটিলতা বৃদ্ধি করবে। হৃদরোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে বুকে ব্যথা বা চাপ অনুভূত হওয়া, শ্বাসকষ্ট এবং বুক ধড়ফড় অন্যতম লক্ষণ। প্রাথমিক অবস্থায় হৃদরোগীদের শ্বাসকষ্ট নাও হতে পারে, তবে রোগের প্রকোপ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে রোগীর শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায়।
ডা. এম. শমশের আলী
সিনিয়র কনসালটেন্ট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ
ও হাসপাতাল, ঢাকা। ফোন : ০৯১৭১-৫৬৫৭৬১
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।